somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীত এবং সামান্য শীত।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় শীতকালের থেকে ভাল কাল আর কিছু ছিলনা। শীতকাল আসলেই মনটি ভরে যেত। “ একটি শীতের সকাল “ আমার অন্যতম প্রিয় রচনা ছিল। কিন্তু মায়ের চোখ রাঙ্গানির কারনে “ প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান” কিংবা “অধ্যবসায়” এর মত বিরক্তিকর রচনা গুলা উত্তর দেওয়া লাগত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় মুখস্থ বিদ্যার গুরুত্ব অনেক। ভাষার উপর কার কত দখল এটা জানার থেকে কে কত করে স্যারদের নোট মুখস্থ করে লিখতে পারবে এটাই গুরুত্বপূর্ণ বেশি ছিল। পারত পক্ষে এই জিনিসকে সমর্থ করার কোন কারণ নেই। কিন্তু এটা না করেও উপায় নেই। নম্বর তো পাওয়া লাগবে। একবার অবশ্য আমার নিজের থেকে লেখা একটি ভাব-সম্প্রসারন ভিকারুন্নেসা স্কুলের ফেরদৌসী ম্যাডামের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। তবে বানান ভুল সংক্রান্ত জটিলতার কারনে নম্বরের স্বল্পতা ছিল। ম্যাডামের কাছে কলেজ জীবনে বাংলা পড়তে আর মেয়ে দেখতে যাওয়া হত।

ছোটবেলায় শীতকাল পছন্দ করার অন্যতম কারণ লেখাপড়া থাকতনা। বছরের এই সময়টা হল নতুন ক্লাসে উঠার আগের সময়। বাবা-মার দেওয়া আইনে শিথিলতা ছিল। সারাদিন ক্রিকেট খেলার পর রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা স্বাধীনতা ছিল। এর বাইরেও খুব ছোট যখন ছিলাম অভিযান নামক একটি অভিনব খেলা খেলতাম। বেইলি স্কোয়ার কলনীতে থাকার সময়। এই খেলার আবিষ্কারক ছিলেন ইমন ভাই। ১২ জন মিলে ৬ তালা ২ ইউনিটে করে দাড়াতাম। প্রতি তালায় দু’জন করে থাকত। ৬ তালায় কলিং বেল দিয়ে ২ জন নিচে নামত তখন ৫ তালায় যারা থাকত তাদের কলিং বেল দেওয়ার পালা, এবং এভাবেই সবাই নিচে নামবে। প্রচন্ড ক্লাইমেক্সের একটি খেলা ছিল অভিযান। একবার এক অঘটন ঘটল। এক লোক সিড়ি দিয়ে মিস্টি আর দইয়ের হাড়ি নিয়ে উঠল। আমরা কলিং বেল দিয়ে পালানোর স্রোতে তার দইয়ের হাড়ি ভেঙ্গে যায়।





শীতকালে ফ্যাশন স্টাইল করা যেত। জ্যাকেট কিনার ধুম ছিল। যত শীতই লাগুক জ্যাকেটের চেইন লাগানো যাবেনা। সঞ্জয় দত্ত থেকে শুরু করে আজিজুল হাকিম পর্যন্ত এই স্টাইল- সেটাকে ভাঙ্গা যাবেনা। সেই জ্যাকেট পড়ে তীলো এক্সপ্রেস ( নামটা কি এরকমই ছিল!!) খেলা হত। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে তে নো বল করা যেমন ভয়ংকর, তীলো এক্সপ্রেসে রঙ কল করা তেমনি ভয়ংকর ব্যাপার ছিল। রঙ কল মানে হল উধোকে কল করার পর যদি দেখায় যায় সেটা ছিল বুধো- তাহলে সেটা রঙ কল।

শীতকালের অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করার আরও অনেক ক্ষেত্র ছিল। পিকনিক বা বনভোজন তার মধ্যে অন্যতম। কলনীর পিকনিক এর পাশাপাশি পারিবারিক ভাবে লঞ্চের পিকনিকও উপভোগ্য বিষয় ছিল। তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকতনা। চোলি কি পিছ কেয়া হ্যায়- এই গানটা সব পিকনিকের থিম সং কেন থাকত। পিকনিকের নাম শুনলেই আমার সেটার কথা মনে পড়ে। একটি বাস। বাসের সামনে হলুদ ব্যানারে লেখা বনভোজন। বাসের উপরে মাইক। মাইকে চোলি কি পিছে ক্যায়া হ্যায় – গানটা বেজে যাচ্ছে। গানটির অর্থের ব্যাপারে সম্ভবত তেমন কারও মাথা ব্যাথা ছিলনা। শব্দ দূষন না হলে সেটা কোন পিকনিকই হত না। পিকনিকের লটারী অংশটার সময় মন খারাপ করা ছাড়া উপায় থাকতনা। সাবান, শ্যাম্পু টাইপ পুরষ্কার ভাগ্যে জুটতনা।

কয়েকদিন ধরে যে পরিমান শীত পড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কোনরকমে সঙ্কুচিত হয়ে গোসল করতে যাই। এই শীতে গোসল করার জন্য পানির বদলে আগ্নেয়গিরির লাভা হলে ভাল হত। সাবুর সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। নাইলে বলতাম দূরে দাঁড়িয়ে ক্রোধ প্রকাশ করতে যাতে কাছে কোন আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়। বাসার ওভেনটা ছোট। নাহলে ওভেনে ঢুকে বসে থাকতাম। ফ্রিজে থাকলেও শীত কম লাগতে পারে। আপেক্ষিক ভাবে সেখানে থান্ডা কম। প্রচন্ড শীতের কারনে আমি অবশ্য এখন আর সাধারন মানব নই। আমার স্পর্শে গরম জিনিশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। স্পাইডার ম্যানের মত আমি এখন আইস-ম্যান বরফ-মানব হয়ে গিয়েছি। ( শেষ প্যারাটির অংশগুলি ফেসবুক পেজের স্ট্যাটাসে কেউ আগেই দেখে থাকতে পারেন, সেগুলো স্ট্যাটাস হিসেবে দিয়েছিলাম)

ছোটবেলায় বাসার কাজের লোক মমতাজ বুয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার কোন কাল খুব প্রিয়। বুয়াও বলল শীতকাল। আমিও খুঁশি হলাম। তবে বুয়ার নিশ্চয়ই শীতকালে আমার মত বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার মত ব্যাপার ছিলনা। বুয়ার অসাম্যবাদী উত্তর- আমরা গরীব, আমাদের আপনাদের মত ফ্রীজ নেই, শীতকালে খাবার পঁচেনা। বস্তুত গরীব হওয়ার অনেক সমস্যা। উপভোগ করা অনেক পরের ব্যাপার জীবন মানেই তাদের কাছে সংগ্রাম। মাঝে মাঝে ভাবি রাস্তায় যে লোকগুলা থাকে তাদের কি কষ্টই না হয়। শীত আমাদের কাছে সৌখিনতা, তাদের কাছে সংগ্রাম। তারপরেও আশা করি সবাই ভাল থাকুক।

শীতকালে আমার দুটি প্রিয় কাজ হছে কম্বল গায়ে জড়িয়ে গল্পের বই পড়া আর ভাপা পিঠা খাওয়া। ভাপা পিঠার আবিষ্কারককে অনেক ধন্যবাদ। গরম ভাপা পিঠার সাথে তুলনীয় আর কিছুই নেই।




সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০৩
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×