somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনষ্ট

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাপের ভিটা বাড়ি আর জমি জমা দেবেন্দ্র আর নরেন্দ্র এর মধ্যে ভাগাভাগি করা ছিল। সেটা তাদের পিতা এমন ভাগে সমবন্টন করেছিলেন যে তাতে কারও অখুশি হওয়া উচিত নয়। তবে সম্পত্তি দু’ভাগ করা যায়। মানবিক গুনাবলি না। মানুষ অনেক কিছু দিয়ে তৈরি। লোভ, লালসা, হিংসাসহ আরও অনেক কিছু। দেবেন্দ্র আর নরেন্দ্র দু’জনেরই যখন যথাসময়ে বিয়ে হল তখন তারা যার যার মত নিজেদের অংশ ভাগ করে নিল। খালি মুল ভিটা বাড়িটা কোন দিকে যাবে সেটা ভিটা বাড়ির নিজের সিদ্ধান্তের জন্য তারা বসে ছিল কিনা কে জানে!

সারিদা দেবী ছিলেন দেবন্দ্রের বউ। নরেন্দ্রের বড় ভাইয়ের বউ। তিনি সাধাসিধে ভাল মানুষ। স্বামীব্রত। স্বামীকে সেবাযত্ন করেন। নরেন্দ্রকেও করেন। নরেন্দ্র অলস প্রকৃতির বলে সব সময় বাপের কাছে লাঞ্জনা বঞ্চনা শুনতে হত। ক্ষেতে খামারে কাজে মন ছিলোনা। কিছু মানুষ থাকে কুড়ে স্বভাবের। গ্রামের দূর-দুরান্তে বসে সময় কাটানো ছিল তার প্রধান কাজ। এক ব্রাক্ষনের ছেলে রামের সাথে ছিল তার সখ্যতা। কোন মানুষের নাম রাম রাখলেই সে দেবতা রাম হয়ে যায়না। রামের নাম শুনলে ভুত তাড়ানো যায়। কিন্তু নরেন্দ্রের বন্ধু রাম নিজেই অনেকটা দুষ্ট একজন ভুত।

সারিদা দেবী একবার চিন্তা করেছিলেন নরেন্দ্রেকেও বিয়ে দেওয়ার কথা। চিন্তাটা সৎ মানুষের সৎ চিন্তা। তবে এই চিন্তাই কাল হয়ে দাড়াল। নরেন্দ্রের বিয়ে দেওয়া হল। শান্তি নামের এক মেয়ের সাথে। শান্তির নামক মেয়েরা অশান্তি আনবে এমনটা কেউ ভাবেনি। কিন্তু শান্তি আর রাম এই দুয়ের মিশ্রনই কাহিনীর খারাপ অংশ।

দেবেন্দ্রের কাজ করতে করতে ঐদিন শরীর খারাপ লাগছিল। বাসায় আসতে আসতে সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। তার দেহ থাকল। কিন্তু আত্মা পরলোকে চলে গেল। সেই খবর নরেন্দ্রের কানে যাওয়া মাত্র সে দাদাকে দেখতে ছুটে এল। সাথে এল শান্তি আর রাম। ভিটাবাড়ি লোকেলোকারন্য। তখন অন্দর মহলে রাম গিয়ে শান্তিকে আসল বুদ্ধিটা দিল। কিভাবে নরেন্দ্র পুরা ভিটা বাড়িটা পেতে পারে। যদি সারিদা দেবী না থাকে। সারিদা দেবীকে কিভাবে সরানো যায়। স্বামীকে যখন আগুনে পুড়ানো হয়, স্ত্রী সেই আগুনে পোড়ানোর ব্যাথা হৃদয়ে অনুভব করে - কথাটা এমন থাকা উচিৎ। যহেতু যুগে যুগে ধর্মকে বহু মানুষ ব্যাবহার করে আসছে তাই রামও সেটার আশ্রয় নিল এবং নরেন্দ্রকে বোঝানো হল- যেই কাষ্ঠে দেবেন্দ্রকে পোড়ানো হবে, সেখানেই যদি সারিদা দেবীকে পোড়ানো হয়, তাহলেই দেবেন্দ্রের যন্ত্রনা কমবে।

নরেন্দ্র কি জানি চিন্তা করল। সারিদা দেবী তখনও স্বামীর লাশের পাশে কাঁদছে। একটু পরেই লাশ পোড়ানো হবে। নরেন্দ্র ভিটাবাড়ির দিকে একবার তাকাল। এই বাড়িটা থাকলে তার সব চিন্তা দূর হয়ে যায়।

দেবেন্দ্রকে পোড়ানোর পর সেখানেই টেনে হিচরে সারিদা দেবীকে আনা হল। সারিদা দেবী বাক্য হারা হয়ে গিয়েছে। স্বামীর ইহকাল ত্যাগে হৃদয় তার আগুনে দাহ্যমান। আর হৃদয়হীন মানুষের কারনে এখন তার শরীরও আগুনে পুড়বে।





সতিদাহ প্রথার মত হৃদয়হীন কোন কিছু ধর্মের অংশ হতে পারেনা। পৃথিবীতে সব ধর্মই মানুষের কল্যানের কথাই বলে। তবে সব ধর্মেই কিছু কিছু মানুষ ধর্মকে নিজের কাজে ব্যবহার করে। মুসমান ধর্মে তাদেরকে বলা হয় মুনাফেক। আমার ধারনা সতিদাহ প্রথার সৃষ্টির পিছনে মূল কারণ এই গল্পের মতই কিছু একটা।

১৮২৯ সালের ডিসেম্বর ৪ এ বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এসময় বেঙ্গলের গভর্ণর ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। অবশ্য এ আইনী কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলতঃ রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই।

তবে এর আগে জানা যায় অল্প সংখ্যক স্ত্রী স্বপ্রণোদিত হয়ে আত্তাহুতি দিয়েছেন। গ্রিক জেনারেল ইউমেনেস এর এক ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায়; এ ঘটনা ঘটে খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালে। কিন্তু তার মানে এটা না যে সবাইকে জোর করে এরকম করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:৫৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×