somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরও একজন যে ছিল।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বন্ধু বান্ধবের নামগুলা কোনটাই ঠিক মত উচ্চারন হয়না। বাংলা ব্যাকরনে অসমীভবন কিংবা ধ্বনির বিপর্যয় না কি জানি আছে সেরকম ব্যাপার। রিকশা হয়ে যায় রিশকা। অগ্রনী হয়ে যায় অরগনী। তেমনি আমার বন্ধু ইকবালকে ডাকা হত বাল। এই ভয়াবহ নামে ডাকার জন্য তার আপত্তি তোলার তেমন অবকাশ নেই কারন আমরা সবাই এরকম নামে পরিচিত। বাল শুনতে বেশি খারাপ শোনায় তাই মাঝখানে একটা "ও" দিয়ে তাকে ডাকা হয় বাওলা। বাওলা আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন। তার হাতে দায়িত্বে ভরপুর। ক্লাশ শেষ হওয়ার পর টেবিল ক্লথ আর বোর্ড মুছার রুমাল নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তার। তবে সুবিধাজনক ক্ষেত্রবিশেষে সেই দায়িত্ব মাঝে মাঝে আবার আরেকজনের উপর বর্তাত। তার পুরা নাম মুনতাসির ইউসুফ। এই নামে তাকে ডাকা ঠিক হচ্ছেনা। বন্ধুদের পরিসরে তারও আলাদা নাম ছিল। বাবা মায়ের দেওয়া নামের একটা বর্ধিত নাম সে করে গিয়েছিল। আপাতত টেবিল ক্লথ আর রুমালের কাহিনী শেষ করি। মুনতাসিরের বাসা ছিল স্কুলের সাথেই। ঢাকা কলেজের বিপরীতে। তাই কখনো ইকবালের পক্ষে সম্ভব না হলে টেবিল ক্লথ নিয়ে যাওয়া কাজটা মুনতাসির করে রাখত। একবার কি জানি হল। মুনতাসির আমাকে বলে গেল। আমারও কি জানি হল। আমি ভুলে গেলাম। ক্লাস টিচার তখন মিজান স্যার। তাকে কখনো ডাকা হওয় এটিপি কখনো এমআরএফ। এটিপি মানেই অনেক ভয়াবহ ব্যাপার। অল টাইম প্রেগনেন্ট। মুনতাসিরের দেওয়া কাজ আমি ভুলে গেলাম। পরেরদিন টেবিল ক্লথ হারানো গেল। মার খেল মুনতাসির। অপমানিত হল মুনতাসির। খারাপ লাগল আমার। সে চাইলে আমাকেও মার খাওয়াতে পারত। সেই কাজ সে করেনি। খালি একবার বলল, "তোকে না বললাম টেবিল ক্লথ নিয়ে যেতে?"।

স্কুলের ঘটনা আর বলতে চাচ্ছিনা কিছু। কলেজে উঠার পর আমার জীবনের প্রথম জন্মদিন করা হল। না করে উপাই নাই। তখন নতুন ট্রেন্ড। সবার জন্মদিন খাওয়া হয়েছে আমারটা বছরের শেষে বাসায় আয়োজন করা হল। একসাথে ২৫ জন বন্ধুকে দাওয়াত দিলাম। মেয়ে মহল আমাকে দেখলেই বিরক্ত হয় তাই দাওয়াত দেওয়ার মত মেয়ে বন্ধু নেই। বাসায় আসল সবাই। গিফট পেলাম বেশ কয়েক। বডি স্প্রে গিফট পাইলে খুঁশি হওয়া উচিত না অপমানিত বোধ করা উচিত এই যখন চিন্তা করছিলাম তখনা আম্মা বলল মুনতাসির নাকি আমার জন্য আনা গিফট আম্মাকে দিয়েছে। কি গিফিট? খুব সুন্দর মলাটের একটা কোরান শরীফ। বাংলা তর্জমাসহ। আমার আম্মার আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস সবসময়। নামাজ পরলে আল্লাহ তার কথা শুনতে বাধ্য এমনটা বিশ্বাস করেন। ভোররাতে যদি কখনও ডাইনিং স্পেসের লাইট জলে তাহলে বুঝতে হবে আম্মা কোরান পড়ছেন। আম্মার মুনতাসিরের দেওয়া কোরানটা খুব পছন্দ হল। এখানে জানিয়ে রাখি মুনতাসিরের তখন ইসলামের প্রতি বেশ অনুরাগ। আমি আগেই বলেছি মুনতাসির ইউসুফ বলে তাকে ডাকা ঠিক হচ্ছেনা। কারন সে নিজে তার নাম এফিডেফিট করে রেখেছে মোহাম্মদ মুনতাসির ইউসুফ। খোদাকে বিশ্বাস করতে ভয় পেতে সে পছন্দ করে। রাসুলের জীবনী পড়তে পছন্দ করে। নবী (সঃ) জীবনীকে অনুকরন করতেও সে পছন্দ করে। ২০০২ সালের পর থেকে তাকে এ পথে একটুও বিচ্যুত হতে দেখিনি।

২০০৭ সালের দিকে আমরা স্কুলে একটা রি-ইউনিয়ন করলাম। যেহেতু মুনতাসিরের বাসা স্কুলের সাথেই তাই ঠিক হল রাতে তার বাসায় থাকা হবে। মানে যারা ভলান্টিয়ার তারা। তবে ১২ জনকে বাসা থেকে খেয়ে আসতে বলা হল কিন্তু কোন কারনে আমি না খেয়ে গেলাম। এই ব্যাপারটা গোপন থাকলনা। মুনতাসির বুঝতে পারল। সে আমাকে টেনে নিয়ে গেল , যা বেটা তোর খিদা বেশি লাগে খেয়ে নে। রাতে মুনতাসিরের বাসায় থাকার পর পরেরদিন রি-ইউনিয়ন। সময় ভাল কাটল। ২০০ জন পুরানো বন্ধুরা সবাই আবার পুরানো তীর্থক্ষেত্রে ভাল সময় কাটালাম। স্বীকার করতে হচ্ছে মুনতাসির ছাড়া এটা সম্ভব হতনা।




( মুনতাসিরের সাথে আমি। ছবিটা ২০০২ সালে আমার বাসায় তোলা। ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা না। স্ক্যান করা ছবি)


মুনতাসির ধানমন্ডির একটা জায়গা থেকে বাসায় ফিরার পথে রিকশাকে ডাক দিল। ঠিক একই সময়ে আরেক মেয়ে ঐ রিকশাকেই ডাক দিল। নাটক সিনেমায় এমন হওয় বাস্তবে হয়না। কিন্তু হল। কিভাবে হল জানা নেই কিন্তু হল। তার দুইজন একই রিকশায় উঠল সম্ভবত তাড়া ছিল দু'জনেরই। মেয়েটা সিটি কলেজে নেমে গেল। এই জায়গায় অনেক ছেলেই প্রেমে পড়ে মুনতাসিরও পড়ল। তবে সেই কথা সে কাউকে বলেনি।
মাঝেমাঝেই সিটি কলেজের সামনে বসে সে সময় কাটাত। কাউকেই বিরক্ত করতনা। একবার খালি যদি মেয়েটাকে দেখা যায়। কখনো দেখা হত কখনো না। চেষ্টা করত যাতে মেয়েটা না দেখে। মুনতাসিরের এই সুপ্ত ভালবাসার খবর মেয়েটা না পেলেও পাড়ার এক ছেলে দেখে ফেলল। মুনতাসিরকে খোঁচাতে লাগল ভাই এইভাবে হবেনা। অন্য কিছু করেন। কিন্তু একটা ভদ্র ছেলে আর যাই হোক- অভদ্রতা করতে পারনা। কোনভাবেই সে চায়না মেয়েটা বিরক্ত হোক। ইতিমধ্যে অন্য কাহিনী ঘটল। মেয়েটা কই জানি ফ্লেক্সিলোড করতে গেল। পাড়ার ঐ ছেলে দেখে ফেলল। ফ্লেক্সিওয়ালাকে পটায় নম্বর নিল। তারপর ফোন দিল। পরিচয় দিল তার নাম মুনতাসির। কাজের কাজ কিছুই হয়নায়। মেয়েটা উলটা জেনে গেল মুনতাসির সিটি কলেজের সামনে দাঁড়ায় থাকে। একদিন তারপর সত্যিকারের মুনতাসির ফোন দিল। মেয়েটা ধমক দিল। বাজে ব্যবহার করল। বলল আর কখনও ফোন দিবেননা আর জালাতন করবেননা। মুনতাসির মনে কষ্ট পেল। কারন সে সম্ভবত এটা বলতেই ফোন করেছিল যে সে কখনো ফোন করেনি। তবে পাড়ার ছেলেটাকে মুনতাসির কিছু বললনা। বলার কথাও না। ক্ষমা করে দেওয়ার এই গুণ তার আছে। আমাকেও ১০ বছর আগে করেছিল সে। মুনতাসির সে মেয়েটাকে মনে হয়না আর ফলো করেছিল। সে চায়না কেউ তার জন্য বিরক্ত হোক। অভিমানী ছেলে সে। এতই অভিমানী যে তার ক্যান্সারের খবরটাও আমরা পেলাম না। পেলাম যখন অভিমান করে দুনিয়াটাই সে ছেড়ে দিল।

ইদানিং স্কুলের বন্ধুদের বিয়ে খাচ্ছি আর হটাৎ করে এটাই খেয়াল করছি কেউ একজন নেই। কোথায় জানি শুনেছি আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকেই আগে তুলে নেন। মুনতাসির যে আল্লাহর পছন্দের কেউ তা কি আর আলাদা ভাবে বলার আছে? মরব তো আমরা সবাই। পরকালেও নিশ্চয়ই আমরা রি-ইউনিয়ন করব। হয়ত সে কারনেই সে আগে চলে গিয়েছে। সেখানে গিয়েই গোছগাছ শুরু করে দিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর আমরা এখানে বসে তার কথা মাঝে মাঝে চিন্তা করি। মোহাম্মদ মুনতাসির ইউসুফ নামে আরও একজন যে ছিল।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৪০
৩৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×