somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্যালারী মঞ্চ। ( ম্যাচ- ১, বাংলাদেশ বনাম ভারত)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২ মাস আগেই ব্লগে জানিয়ে রেখেছিলাম বিশ্বকাপের সব ম্যাচ গ্যালারীতে বসে দেখতে চাই। লাল সবুজ উড়াতে চাই। তা প্রথম ম্যাচটা প্রায় মিস হয়ে গিয়েছিল বলে। কারন এই খেলার টিকেটটাই যে শেষ মুহুর্তে হাতে এসে পৌছাল। ততক্ষনে যা অঘটন ঘটার ঘটে গেছে। টাইগারদের জার্সিটা ধুয়ে রাখা হয়নি। সব কাপড় লন্ড্রীতে। কয়েকদিন আগে বন্ধুর গায়ে হলুদে পাওয়া পাঞ্জাবী গায়ে জড়িয়েই দৌড় দিলাম মিরপুর- হোম অফ ক্রিকেট। গোল চত্বরে নেমে হেটে যাওয়া লাগবে। নীল পাঞ্জাবী দেখে মানুষজন আবার ভারত মনে না করে তাই কপালে বাঁধার পতাকা কিনলাম। খুব লাভ হলনা। ঐ জিনিস সম্ভবত বিশালাকার মাথার জন্য বানানো হয়নি। গিট লাগছেনা।

ক্যামেরা এবং মোবাইল ক্যামেরা দুইই নাকি নেওয়া যাবেনা। আমার মোবাইল সেট দুটি। দুটিতেই ক্যামেরা আছে। তাই বুয়াকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। বুয়া আপনার সেটটা একদিনের জন্য দেওয়া যাবে কিনা? বুয়া জানাল তার মোবাইলেও ক্যামেরা আছে। আমার উপর তালার আঙ্কেলের মোবাইলে অবশ্য ক্যামেরা নেই। গাছ থেকে শিকড় আলাদা করা যায়না কিন্তু মোবাইল থেকে সিম আলাদা করলে যে মোবাইল সেটের কিছু হয়না তেমনটা তিনি বিশ্বাস করতে পারলেননা বিধায় সেই চিন্তাটাও দূর হল। অগ্যতা কি আর করার। নিজ মোবাইল নিয়েই রওনা দিলাম। তবে আগেই জানতাম হেডফোন নেওয়া যাবেনা। ঐ জিনিস রেখে গেলাম।

অনেকক্ষন হাটার পর হোম অফ ক্রিকেটে হাজির হলাম। সবার গায়ে লাল-সবুজ আর লাল-সবুজ। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হল। কিন্তু কি আর করার। প্রথমে সিকিউরিটি এর প্রথম ধাপ পেরুলাম। ভিতরে ঢুকেও চক্ষু চড়ক গাছ। বাংলাদেশের স্টেডিয়ামে এরকম প্র্যাক্টিস ফ্যাসিলিটিজ। ভিতরের প্র্যাকটিসের জায়গাটা সেরকম সুন্দর। তবে তখনো কিন্তু স্টেডিয়ামের ভিতর প্রবেশ করতে পারিনি। সিকিউরিটির এলাহি কারবার। একজন কোন রকমে গোপন অঙ্গ ছাড়া বাকি সর্বাঙ্গ হাতড়ালো। কিছু না পেয়ে মনে হল সে হতাশ। ভিতরে ঢুকলাম। টিকিট নম্বর অনেকটা লালমাটিয়া বা বনানী অঞ্চলের মত। নর্দান, ব্লকঃ ও লেভেলঃ আপ রোঃ কে সিট; ২৯। জায়গায় গিয়ে দেখলাম ইতিমধ্যে কেউ একজন ২৯ নম্বর সিটে বসে আছে। বুঝলাম ভুল ব্লকে চলে গিয়েছি। নিজ ব্লকে যাওয়ার পর বুঝলাম এখনা আমাকে ইন্ডিয়ান মনে করা থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। আমার আশে পাশে সব ইন্ডিয়ান আর আমি নিজেই নীল পাঞ্জাবী পড়া।আমার পাশের লোক কোলকাতা থেকে আসছেন এবং দেখতে পুরা কোলকাতার নায়ক চিরঞ্জিতের মত। কোলকাতার এলজিতে (লাইফস গুড) চাকুরী করার সুবাধে টিকিট পেয়েছেন। তার ছেলে ইন্ডিয়ান টিমের হাত ধরে আসা বাচ্চাগুলার মধ্যে একজন। আমাদের দেশের দলের সাথে বাংলাদেশের বাচ্চারা। এ কি নিয়ম কে জানে। আমাদের দেশে খেলা। ২২ জন বাচ্চাই আমাদের দেশের হওয়া উচিত। যাই হোক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মত ঘটনা ঘটল। ঐ ইন্ডিয়ান দর্শকরা ভুল ব্লকে আসছেন। এক শিখ পাজির (এই পাজি মানে শয়তান না) নেতৃত্বে তারা তাদের ব্লকে চলে গেল। খেলা শুরুর আগে আগে স্টেডিয়াম কানায় কানায় পরিপূর্ণ। টস হল। সাকিব ফিল্ডিং নিল। খেলা শুরু হল। খেলার বিবরন সবাই জানে দেখে সেটার গল্প আর না করি। গ্যালারিতে উৎসাহ উদ্দীপনার কোন অভাব ছিলনা। ৮০% দর্শকই লাল-সবুজ পড়ে আসায় চোখ জুড়িয়ে গেল। আমার মত ২-৪ তা বেকুব অবশ্য নীল পড়ে গিয়েছিল। স্টেডিয়াম গেলে গালি দেওয়া জায়েজ। তাই যখনই শ্রীশ্রান্ত আমাদের সামনে ফিল্ডিং দিতে আসল ছেলে-মেয়ে-বাপ-মা-ভাই-বোন সবার একই সুরে চিৎকার শ্রীশ্রান্ত সাক্স, শ্রীশ্রান্ত সাক্স। আমাদের চিৎকারে কিনা ৫ ওভারে ৫৭ দিয়ে ফেলল।

স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে ঢোকা যায়না। ভিতরে খাবার ব্যবস্থা ভাল যদি পকেট ভাল থাকে। দেড় লিটার পানির দাম মনে হয় ৬০ টাকা। মোরগ পোলাও পাওয়া যায়। তা সেখানে মোরগের পিস একটা দেয় সেটা যেমন গোনা যায়, পোলাওয়ে কয়টা চাল দেয় সেটাও গোনা যায়। ওই জিনিসের দাম ১৫০ টাকা। ভাবলাম না খেয়েই কাটায় দেই। স্টেডিয়ামে গেলে মানুষজনের মন কিন্তু বড় হয়ে যায়। আমার পাশে এক সুইট কাপল বসেছিল। আমি ভাই ভাবি করে তাদের সাথে সম্পর্ক পাতিয়ে ফেললাম। তাদের সাথে থাকার কারনে ইএসপিএন এ ১৮০ কোটি দেশের লোকজনা আমাকে ১০ সেকেন্ডের জন্য দেখল। পাতানো ভাই প্রাণ শক্তিতে ভরপুর। ভাবীর কাছে মানিব্যাগ , মোবাইল রেখে দিয়ে নিজে তারস্বরে লাফাচ্ছিল আর গালি গালাজ করছিল। স্টেডিয়ামে যেটা খুবই স্বাভাবিক। তারা যখন বার্গার কিনে আনে সেটার ভাগ তারা আমাকে দেয়। তাদের পেপসি, পানি সব কিছুর ভাগ পেলাম। খেলায় হারজিত থাকবেই। কিন্তু এইসব কি আর বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায়?

স্টেডিয়ামের পরিবেশের প্রশংসা না করে উপায় নেই। ঠিক মত ব্যবস্থাপনা থাকলে যে বাঙ্গালিও শৃংখলাবদ্ধ থাকে সেটাই দেখলাম। সব বয়সী লোকজন ছিল। এমনকি মেয়ে-মা একসাথে খেলা দেখতে এসেছে এরকমও ছিল। ভাল কথা অনেকে শুধু ক্যামেরা না, হ্যান্ডি ক্যাম নিয়েও ঢুকেছিল। সিগারেট নেওয়া নিষেধ হলেও কয়েকজন আন্ডার-ওয়ারে করে ঐ জিনিস নিয়ে গেল। এরকম অবশ্য হবেই।

এত কষ্ট করেও খেলায় বাংলাদেশকে জিতাতে পারলামনা এটা আফসুস। তবে যেহেতু খেলার সাথে কুসংস্কারটা অন্তত পক্ষে বাংলাদেশের খেলায় মানতে হয় তাই আমার ধারনা নর্দান গ্যালারীতে থাকার কারনে বাংলাদেশকে জিতাতে পারলাম না। তবে পরাজয়ে ডরে না বীর। আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলায় সাউদার্ন ব্লকঃ এফ লেভেলঃ আপার রোঃ জে সিটঃ ২০ এ থাকব ইনশাল্লাহ। দেখেন তো কেউ ধারে কাছে থাকবেন কিনা।

বাংলাদেশের জার্সি ধুইতে দেওয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের সাথে ইনশাল্লাহ লাল-সবুজ নিয়েই যাব।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৫৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×