somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ অভিজ্ঞতাঃ ঢাকা টু কলকাতা (বাই বাস)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্ডিয়াতে পড়তে যাওয়ার সুবাধে আমার ঢাকা থেকে ইন্ডিয়ায় যাওয়া হয়। স্টুডেন্ট হওয়ার কারণে কম খরচে কিভাবে যাওয়া যায় সে চিন্তা থেকেই ঢাকা থেকে কলকাতা বাসে যাওয়ার চিন্তা করি। ভিসা হাতে পাওয়ার পর কমলাপুর থেকে বাসের টিকেট কাটি। ঢাকা থেকে কলকাতা সরাসরি...

বাসের নামঃ সোহার্দ্য (ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন লিমিটেড), ভলভো বাস।

ভাড়াঃ ১৯০০ টাকা।



রাতে রওনা হওয়ায় বাসের ছবি তোলা হয় নাই, এইটা সল্ট লেক, কলকাতায় পৌছার পর তোলা
আমরা সবাই রাত ১০ টায় বাসে উঠি। বাসের সিটে পানির বোতল, পাতলা কাথা রাখা ছিলো।


শ্যামলী ড্রিঙ্কিং ওয়াটার

কমলাপুর থেকে রাত ১০ঃ১৫ মিনিটে বাস ছাড়ে। বাসের আরামবাগ কাউন্টার থেকে যাত্রী পিকাপ করার পর বাস সরাসরি কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড এ গিয়ে থামে। এখান থেকে যাত্রী পিকাপ করা হয়। মোটামোটি এখানেই বাস ফুল হয় যায়। এখান থেকে আমাদের একটা বক্সে খাবার দেওয়া হয়।


ভি. আই. পি. বক্স

বক্সে একটা মিষ্টি, একটা কলা, দুইটা ব্রেড ছিলো। পেট ঠান্ডা রাখার জন্য যথেষ্ঠ।


একটা মিষ্টি, একটা কলা, দুইটা ব্রেড

বাসের এয়ার কন্ডিশনের অবস্থা বেশ ভালো ছিলো। নো লিক। অন্ধকারে কিছু পড়তে চাইলে পার্সোনালি লাইট ব্যবহার করার অপশন ও ছিলো বাসে।



পা রাখার যায়গাটাও বেশ কমফোর্টেবল ছিলো।



কল্যাণপুর থেকে যাত্রা শুরু হয়। মাঝপথ থেকে দুই একজন যাত্রী তোলা হয়। আগে টিকেট বুকিং করে রাখছিলো মেবি। বাস ড্রাইভার ছিলো পাঞ্জাবী (ফুল বাংলা বলতে পারে), কন্ট্রাক্টর কলকাতার। ঢাকা থেকে গাবতলী হয়ে বাস আরিচা ফেরিঘাটে এসে পৌঁছায়। এখানে বাসের অনেক লম্বা সারি ছিলো। কিন্তু আমাদের বাস রং সাইড দিয়ে সরাসরি ঘাটে চলে যায়। পথে পুলিশ বা অন্য কোনো বাস ইন্টারফেয়ার করতে দেখি নাই। বাসের ইমার্জেন্সি সাইরেন ছিলো।

আসল সমস্যা শুরু হয় ফেরিঘাটে। রং সাইড দিয়ে আগে আসলেও আমাদের ফেরিঘাটে অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হয়। অনেকক্ষন মানে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা। তারপর ফেরিতে উঠার সুযোগ হয়। নদী পার হতে আধা ঘন্টা লাগে। গাড়ি আনলোড করতে আরো আধা ঘন্টা সময় লাগে। মোট সাড়ে ছয় ঘন্টা চলে যায় এখানেই। তারপর উপরে আসার পর বেশ ভালো স্পীডে গাড়ি টেনে চলে আসি ফরিদপুরে। ফরিদপুর থেকে বেনাপোল বর্ডারে। বাস পথিমধ্যে কোথাও থামানো হয় নাই। আসলে এই রাস্তায় ভালো কোনো হোটেল বা রেস্তোরা নাই।


বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিস

বেনাপোল আসার পর ট্রাভেল ফেয়ার নেওয়া হয় আমাদের কাছ থেকে। ট্রাভেল ফেয়ার ছিলো ৫০০ টাকা। ট্রাভেল ফেয়ারের একটা রিসিট পাবেন। আর পাসপোর্টে বাংলাদেশ ইমেগ্রেশন থেকে একটা সিল পড়বে। আর ১০০ টাকা এক্সট্রা নেওয়া হয়। আমাদের নামতে হয়নাই। সবকিছু বাসের লোকই করে দিছে। সেজন্যই হয়তো ১০০ টাকা এক্সট্রা নেওয়া হইছে... বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন অফিসে কোনো ঝামেলা নাই।

তারপর বর্ডারের গেট খুলে দেওয়া হয়। চলে আসি ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে। এখানে সব কাজ নিজেরি করতে হয়। বাস থেকে নামতে হলো। নিজের লাগেজ বের করে চেকিং এ নেওয়া হলো। আসল ঝামেলা শুরু এখানেই।

চেকিং এ আমি আটকে যাই ডলার এন্ডোর্সমেন্ট নিয়ে। আমি আসলে জানতাম না আসল ব্যাপারটা। অনেকে বলছিলো ডলার এন্ডোর্স কোনো ব্যাপার না, এগুলা বর্ডারে ধরে না, এন্ডোর্স করলে দুইশ ডলার করো, হ্যান ত্যান। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, বর্ডারে গার্ডগুলা, চ্যাকররা বসে থাকে কিভাবে আপনাকে ফাঁদে ফালানো যায়... একটু ভুল পাইলেই আপনাকে তারা আটকাবে, মোটা অঙ্কের টাকা ডিমান্ড করবে। বেশি এন্ডোর্স করলেও আটকাবে, কম করলেও আটকাবে। একটু এদিক সেদিক হইলেই আটকাবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হইছে।

আপনি শুধু বাংলা টাকা এবং এন্ডোর্স করা ডলার সাথে ক্যারি করতে পারবেন। রুপি ক্যারি করতে পারবেন না। ভালো হয় সাথে কিছু টাকা রাখা... বিপদে বেশ কাজে আসে। আবার পরে ভাঙ্গায়ে রুপিতে নিয়ে যেতে পারবেন সহজেই। কোনো ব্যাংক থেকে ডলার কিনে সেটা পাসপোর্ট এ এন্ডোর্স করিয়ে নিবেন। এর বেশি ডলার/টাকা লাগলে সেটা টাকা হিসাবে ক্যারি করবেন, তাইলে কোনো সমস্যা হবে না। আর লাগেজ চ্যাকিং এর সময় বাসের লোক সাথে থাকে। আপনি তখনি লাগেজ চ্যাকিং এ দিবেন যখন আপনার বাসের লোক ঐখানে থাকবে। তারা যেহেতু এখানকার সবকিছু জানে, তাই আপনাকে এখানে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

আমাকে হিন্দীতে বললো দুইশ আর পনেরশো কি এক? ভিতরে আটকে যাবে, পাসপোর্টে ছিল হবে না, হ্যান ত্যান। আসলে ভিতরে তেমন কিছুই হয় না। যাই হউক আমার কাছে বললো বাংলাদেশী টাকা কত আছে? আমি বললাম দুশ হবে। বললো দুইশয়ে হবে না। একটা কাজ করো আমাদের একটা নোট দিয়ে দাও। আমার কাছে সব ১০০ ডলারের নোট ছিলো। আমি বললাম এটা কিভাবে সম্ভব। আমি দরকার হলে চলে যাবো, এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না। যাই হউক কিছুক্ষন পর ডলার ভাঙানোর একজন নিয়ে আসলো সেখানকার চ্যাকার। দালালের মাধ্যমে ডলার ভাঙ্গায়ে উনারা আমার কাছ থেকে ২৫০০ রুপি নিলো। এভাবেই এখানকার ঝামেলা শেষ করতে হলো।

তারপর লাগেজ চ্যাকিং করার পর পাসপোর্টে সিল পড়লো। লাগেজ চ্যাকার, আর পাসপোর্টে সিল মারার লোকগুলা যথেষ্ট ভদ্র ছিলো। ওখানে টাকা মারার ধান্ধায় থাকে গার্ডগুলাই।

মনে রাখবেন এখানে অনেক দালাল থাকে যারা আপনাকে ডলার ভাঙ্গাতে বলবে। আপনার পাসপোর্ট কোনোভাবে আপনার কাছ থেকে নিয়ে আপনাকে তাদের কাছ থেকে ডলার ভাঙ্গাতে বাধ্য করবে। ভাই পাসপোর্ট দেখি বলেই নিয়ে যাবে। সো সাবধান থাকবেন এখানে। এখানে ডলার ভাঙ্গালে বিপদে পড়বেন। রেটও কম দিবে আবার সাথে জাল নোট ধরায় দিতে পারে। কিছুই করার থাকবে না।

তারপর লাগেজ আবার গাড়িতে রাখার পর আমরা গাড়িতে উঠি। গাড়ি তারপর সোজা কলকাতা সল্ট লেকে চলে আসে। সল্ট লেক থেকে আমরা ডলার ভাঙ্গাই। এখানে একদম রেগুলার রেট পাবেন ডলারের। তারপর শ্যামলীর একটা বাসে আমাদের উঠিয়ে দেওয়া হয়। এটা দিয়ে আমরা সরাসরি মারকিউস স্ট্রিটে চলে যাই। এক্সট্রা কোনো ভাড়া লাগে নাই।

পূর্বে আমার ব্লগে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×