somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর বাঙ্গালার নামকরণ

২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১৯৫২ সাল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করল উর্দু হবে সমগ্র পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তথা বাংলার দামাল ছেলেরা এই ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি। শুরু করে আন্দোলন। এরপরের ঘটনা সবারই জানা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে দীর্ঘদিন যুদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠিত হয়। ৭১ এর ৭ ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের আভাস পাওয়া গেলেও প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার বীজ বহু আগেই বপিত হয়েছিল এই বাংলায়। তখন শুধু সঠিক সময়ে ফেঁপে উঠেছিল।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ছিল একটা সাধারণ ব্যাপার। যা জালেম-মজলুমের চিরন্তন দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা যায়। এই অর্জনের পেছনে সাধারণ স্বাধীনতার চেতনা ছাড়া অন্যকিছুই ছিল না। অর্থাৎ, এটা বিজয়ে হলেও বিপ্লব ছিল না। তাই চেতনার ফেরিওয়ালারা কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেনি। এমনকি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনায় খুব একটা তফাৎ নেই। আদতে বিপ্লব না হলে তফাৎ হওয়াটা অস্বাভাবিক।

বাঙালি মুক্তমনা শাহবাগী খগেনরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বেড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই খারাপ কিছু না। কিন্তু কারা কতটুকু কি প্রচার করছে সেটা দেখার বিষয়। তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেরি করা চেতনা ও রমনার বটমূলে ঘন্টার পর ঘন্টা বাংলা জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি উপাসনা করা অধিকাংশ ব্যক্তিবর্গগণ জানেন না বাংলার পূর্ব ইতিহাস। এদের কাছে বাংলা উপস্থিত হয় ৭১ এর পর থেকে। তাই তো এরা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে সংক্ষিপ্ত করে রাখতেই বেশি উৎসাহী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে বাংলার নামকরণ নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করব, যা এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে দুর্লভ। এরপর ইনশাআল্লাহ এই অঞ্চলের সীমানা নিয়ে আলোচনা হবে।

গঙ্গার দক্ষিণ-পূর্ব মোহনায় অবস্থিত একটা বিশাল অঞ্চলকে বাঙ্গালা বা বাংলা বলা হয়। বাঙ্গালা নামটি মুসলিম আমলে প্রচলিত হয়। ইতিপূর্বে এই জনপদের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। যেমন: উত্তর বঙ্গ প্রথমে পুণ্ড্র, পরে বরেন্দ্র; পশ্চিম বঙ্গ প্রথমে সুম্ম, পরে রাঢ়; পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল বঙ্গ এবং মেঘনা-পূর্ববর্তী এলাকা সমতট নামে পরিচিত।

ভারতের এই পূর্ব জনপদের নাম ছিল গৌড়। মুসলিম বিজয়ের সময় এর নাম হয় লক্ষণাবতী। তাই ফার্সী ইতিহাসে এর নাম লখনৌতি হয়। খুব সম্ভব প্রাচীন গৌড় নগরের এ লক্ষণাবতী নামকরণ মহারাজা লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক করা হয়েছিল। রেভার্টির মতে রামানুজ লক্ষণের নামের সঙ্গে সংযুক্ত। যদিও এই অনুমানের কোনো ভিত্তি নেই।

সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ (৭৪০-৭৫৯/১৩৩৯-১৩৫৮) সর্বপ্রথম সমগ্র জনপদ একক শাসনাধীনে আনলে এর নাম হয় বাঙ্গালা এবং তিনি ‘শাহ-ই বাঙ্গালা’ ও ‘সুলতান-ই বাঙ্গালা’ উপাধি লাভ করেন।এরপর থেকে বাঙ্গালা নাম প্রচলিত হয়ে যায় এবং মোঘল আমলে সারা সাম্রাজ্য কয়েকটি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত হলে এই প্রদেশ সুবা বাঙ্গালা নাম ধারণ করে।

আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী গ্রন্থে বাঙ্গলা নামকরণের ব্যাপারে একটা বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি লিখেন, “বাঙ্গলাদেশের নাম পূর্বে বঙ্গই ছিল, পরে আল শব্দ তাহাতে যুক্ত হয়। এই আল শব্দের অর্থ জল প্রতিরোধের বাঁধ। বঙ্গদেশে অনেক নিম্নভূমি আছে। সেখানে বাঁধ বা খাল বাঁধিতে হইত; সেই জন্য বঙ্গ শব্দের সহিত এই ‘আল’ শব্দের যোগ হইয়া বাঙ্গাল শব্দ নিষ্পন্ন হইয়াছে। এই বাঙ্গাল শেষে বাঙ্গলাতে পরিণত হইয়াছে।”

এটা ছিল অখণ্ড বাংলার নামকরণের উপর কিঞ্চিৎ আলোকপাত। যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাংলার চেতনা ফেরি করে চলে তারা আদতে চেতনার কোনো সঠিক দাবিদাওয়া দেখাতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। বাংলা কোনো বিপ্লব নয়; বাংলা একটি অঞ্চলের নাম।

তথ্যসূত্র:
১. বাংলার ইতিহাস - আবদুল করিম
২. আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী - আবুল ফজল
৩. History of The Muslims of Bengal - Muhammad Mohar Ali
৪. তবকাত-ই নাসিরী - মীনহাজ-ই সিরাজ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৩
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×