somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাঁড়াল হাসানের মহাআবিস্কার(...)

২১ শে মে, ২০০৬ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পটা পুরোনো, অনেক পুরোনো গল্প এটা

কোনো এক গ্রামে থাকতো 2 ভাই, বাবা মারা গেছে, মারা যাওয়ার আগে পৈতৃক সম্পদ বাটোয়ারা করে দিয়েছে 2 ভাইকে। বড় ভাইয়ের কপালে জুটেছে ঘোড়া এবং ছোটো ভাইয়ের কপালে জুটেছে গাড়ী,
তারা 2 ভাই এক রাতে শহরে গিয়েছইলো, বড় ভাইয়ের মাদী ঘোড়ার বাচ্চা হলো, সেই বাচ্চা গড়িয়ে চলে গেলো গাড়ীর নীচে, পরদিন সকালে 2 ভাইয়ের ভিতরে বিষম ক্যাঁচাল। বড় ভাই বলে আমার ঘোড়ার বাচ্চা, ছোটো ভাই বলে আমার গাড়ীর বাচ্চা- বাকবিতন্ডা, গালাগালি থেকে হাতাহাতি, লাঠালাঠি পর্যন্ত গড়ালো, বিজ্ঞ এক ব্যাক্তি এসে বললো, ঠিক আছে মহারাজার কাছে বিচার নিয়ে যাও।
মহারাজা সব বিচার করে কিছুতেই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না- এই পর্যায়ে ডাক পড়ে দাঁড়াল হাসানের।
ও দাঁড়াল হাসানের পরিচয় তো আপনাদের দেওয়াই হয় নি, দাঁড়াল হাসানএকজন প্রোগ্রামার, পিতৃত্বনির্ণয়ের জন্য একটা সফটওয়ার তৈরি করে সেই রাজ্যবিখ্যাত হয়েছিলো সে। তাকে ডাকা হলো কেনো বিজ্ঞ মহল এ প্রশ্ন করলে আমি বিপাকে পড়বো, কারন সমস্যাটার শুরু হয়েছিলো মাতৃত্ব নির্নয় নিয়ে, মাতৃত্ব কার এটা নিয়েই আসল প্রশ্নটা ছিলো, যাই হোক দাঁড়াল হাসান এসে প্রথমেই তার থুতনির গোটা চারেক দাড়ি নেড়ে বললো মাতৃত্র নির্ণয়ের আগে বিচার করতে হবে পিতা কে, যেহেতু এটা ঘোড়া ইশা মাশিহ নয় তাই তার একজন বাবা থাকবে, সেটা যে কেউ হতে পারে, আমি সবাইকেই সন্দেহ করি এইখানে।
এই রাজ্যে কুমারি মেয়ের আকাল পড়ার পর থেকে নিরিহ জীব জন্তুর উপরে মানুষঅোর যৌনকামনা নিবৃত করার যেই অপচেষ্টা শুরু হয়েছে সেখানে যেকোনো শালাই এই বাচ্চার বাপ হতে পারে। রাজা একটা ফিয়াট গাড়ীতে 15 ভোলটের ব্যাটারি লাগিয়ে সেখানে কম্পিউটার সমেত তুলে দিলো দাঁড়াল হাসানকে, দাঁড়াল হাসানের কম্পিউটারের সাথে যন্ত্র লাগানো, ওটাই পিতৃত্ব নির্নয়ের কাজ করে।

দাঁড়াল হাসানের মাস্টার্সের থিসিসে লেখা আছে এই যন্ত্রের কর্মপদ্ধতি, সেখান থেকেই চোথা মেরে দেই, যারা বিজ্ঞান কম বুঝে তাদের বুঝে কাজ নেই, অযথা প্রেসার নেওয়া ঠিক হবে না,
ফেরোমোন বলে একটা বিষয় আছে , এক ধরনের উৎসেচক, গন্ধও বলা যায়, যখন পশুদের যৌনকামনা জাগ্রত হয় তখন শরীর থেকে ফেরোমোন নিসৃত হয়, এই ফেরোমোন বিপরীত লিঙ্গের কাছে আসন্নসংগমবারতা পৌঁছে দেয়, আমরা যদি এই ফেরোমোনটাকে নির্দিষ্ট করতে পারি তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো কে কে এই ফেরোমোনে যৌনউত্তেজিত হয়, এবং সেখান থেকেই আমরা বুঝে নিবো অন্তত কতজনের বাবা হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছিলো, এর পর সেই সব পিতৃত্বের দাবীদারদের কাছ থেকে আমরা জোড় করে তথ্য আদায় করে অবশেষে পিত্বরত্ব নির্ধারন করতে পারি।
তার গবেষণাঅধ্যক্ষ অবশ্য খানিক গাঁইগুঁই করেছিলো, তার কথা হলো ডি এন এ টেষ্ট করেই তো নিশ্চিত বুঝা যায় সন্তানের বাবাকে, এটার জন্য আইন আদালত পুলিশের হ্যাপা, জেরা জবরদস্তি কেনো, দাঁড়াল হাসানের অকাট্য যুক্তি, বিজ্ঞান সামনের দইকে আগায়, সব সময় নিত্য নতুন ব্যাবহারের পথ উন্মুক্ত না করলে কিভাবে বুঝা যাবে বিজ্ঞান আগাচ্ছে। সমস্যা হলো এই ফেরোমোনকে আলাদা করা, জীব জগতের সবারই নিজস্ব মেটিং সিজন বিদ্যমান, সবাইতো মানুষ না যখন তখন সংগম করবে, তারা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উত্তেজিত হয়, নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা দেয়, হাসান অবশ্য মাসিক মদিনা ঘেটে গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ করে ফেলে। সেখানে পায়ুকাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কেনো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ বিষয়ে মৌলানা ছালাউদ্দিন সফি বেশ ভালো লিখেছেন, তিনি বলেছেন যৌনউত্তেজনাট ঘাঁটি এখানে( কানে কানে একটা কথা বলি ছালাউদ্দিন সাহেবের বাসা নোয়াখালী) দাঁড়াল হিসাব করে দেখেন কথা অতীব সত্য, কোরানের পায়ুকামীদের ভৎর্সনা করা হয়েছে, আল্লার কোরানে ভুল নেই কোনো, পায়ুকাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এর পেছনো অবশ্যই বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে, অবশেষে তিনি আবিস্কার করেন, আধুনিক বিজ্ঞান এখনই ফেরোমেন নিসৃত হয় কি কারনে এটা বাহির করতে পারে নাই, এবং ছালাউদ্দিন সাহেবের বিশ্লেষনের পর তার নিশ্চিত মনে হয় পায়ুপথেই ফেরোমেন তৈরি হয়, ওখানেই ফেরোমোনের ঘাঁটি। তিনি আরও খেটেখুটে যেসব তথ্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন, ফেরোমোন 10 থেকে 200টা ভিন্নভিন্ন রাসায়নিক যৌগের সমাহার, একটা প্রানী থেকে অন্য প্রানীতে রাসায়নিক যৌগের পরিমান, অনুপাত এবং সংখ্যা বদল হয়, একটা নির্দিষ্ট প্রানীর একটা নির্দিষ্ট মাপের রাসায়নিক নিঃসরণ হয়, এটা জেনেটিক প্রোফাইলের মতোই স্থির একটা বিষয়, মৌমাছির ফেরোমোন আর গুবরে পোকার ফেরোমোন এক নয়, এসব তথ্য নিয়ে তিনি অবশেষে যন্ত্র তৈরিতে হাত দেন, খুবই সাধারন একটা যন্ত্র, 2টা ধাতব শলাকা আছে, এই 2টো ধাতব শলাকা থেকে 2টো তার গেছে কম্পিউটারের এনালগ ইনপুটে, মাঝে কিছু গন্ধনির্ধারক যন্ত্র আছে যা এই সব রাসায়নিক যৌগের পরিমান নির্নয় করে, এবং এই 2টা শলাকার রাসায়নিক যৌগের পরিমান নির্নয় করে কম্পিউটারে তুলনা করে তিনি খুব সহজেই বের করতে পারবেন কোন ফেরোমোন কোনটার সাথে খাপ খায়।
তিনি যন্ত্র পরীক্ষার জন্য বেছে নিলেন মিল্কভিটার খামার। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড় দিয়ে বিভিন্ন গাভীকে গর্ভবতি করা হয়, উন্নত মানের বাছুর তৈরি হয়, তিনি একটা শলাকা ঢুকালেন বাছুরের পায়ুপথে, অন্যটা ষাঁড়ের পায়ুপথে, এবং কম্পিউটারে দেখলেন রাসায়নিক যৌগের পরিমান প্রায় কাছাকাছি, একেবারে খাপে খাপে মন্টুর বাপের মতো মিলে না গেলেও কাছাকাছি উপাত্ত, এমন 40টা উপাত্ত দিয়ে তিনি তার গবেষনা নিবন্ধ শেষ করে তার মাস্টার্স পেয়ে গেলেন। দেশ বিদেশের নামিদামি কনফারেন্সে বক্তিমে দিলেন, দেশের সাড়া জাগানো এই ভাবিষ্যত বিজ্ঞানি পরে একটি বিদেশি ফার্মে এনালিস্ট পদে যোগ দেন,
অবশ্য এনালিস্ট শব্দটার উৎপত্তির কারন ভিন্ন, বিশ্লেষক নয় তার আসল কাজ হলো পায়ুপথ ছেদন, এনাল থেকে এনালিস্ট এসেছে আসলে তার পদবীতে, অবশ্য তার এই পদের বাহারে বিবি হয়েছে, ভারিককি বিবির ফেরোমোন নির্নয় করার কাজটা এবং সে গল্পটা আমাদের এই রচনায় বিবেচ্য নয়। আশা করি তিনি একটি সন্তানের জনক হবেন পরে, এবং পিতৃপরিচয় নির্ধারনের জন্য তিনি তার যন্ত্রও ব্যাবহার করতে পারেন, কথায় আছে কম্পিউটার বিশারদদের বৌদের বাচ্চার নাকি বাবাদের সাথে ডি এন এ প্রোফাইলে মিলে না।
যাই হোক এই যন্ত্র ব্যাবহার করতে করতে তিনি কিছু উদ্ভাবনও করেছিলেন, যেমন একই বাবার সন্তনদের ফেরোমোন প্রোফাইল একই রকম, হতেই হবে, গাড়ীর আগে ঘোড়া লাগানোর নিয়ম ঘোড়ার আগে গাড়ী না, বাপ এক হলে ফেরোমোনে মিল হবে এটাইতো স্বাভাবিক বিষয়,
রাজার দেওয়া ফিয়াটে চেপে তার স্বউদ্ভাবিত পিতৃত্ব নির্নয় যন্ত্র নিয়ে তিনি দেশ ভ্রমনে বাহির হইলেন, বিভিন্ন প্রানির পায়ুপথ ছেদন করে করে তিনি অনেককেই পিতৃত্বের দাবি থেকে বাতিল ঘোষনা করলেন, অবশেষে পৌছালেন ঢাকা শহরে, সেখানে এক কম্পিউটার ফার্মের সামনে দেখেন এক রাম ছাগম গম্ভিরমুখে কাঁঠাল পাতা চিবাচ্ছে, রাগী রাগী চেহারা।
তার ফিয়াটের দিকে তেড়ে আসলো শিং উঁচিয়ে, তিনি জানতেন ফেরোমোনের কাজ যৌন উত্তেজন তৈরি করা, তাই তিনি খুব সহজেই হিসাব কষে বের করে ফেললেন এই ফেরোমোনের প্রভাবেই উত্তেজিত হয়েছে রামছাগল, মানে একেও সাম্ভাব্য পিতার তালিকায় রাখা যায়। তিনি ছাগলটিকে কষে বেঁধে রাখলেন, পায়ুপথ ছেদন করলেন ঠিকমতো, ফেরোমোন তালিকা দেখলেম, কম্পিউটারে রক্ষিত অন্য এক ডাটার সাথে সাক্ষাৎ মিলে যাচ্ছে, কম্পিউটার ইশ্বরের মতো, ভুল করতে পারে না কোনো হিসাবেই, তিনি ডাটাটা খুললেন, একি এযে তার ডাটা-
রাম ছাগলের ফেরোমোনের সাথে তার ফেরোমোনের এত মিল, 100% মিল এই একটা ক্ষেত্রেই সম্ভব হলো, তিনি বিষন্ন বদনে চারপাশ দেখেন আর চিন্তা করেন, তবে কি এই রাম ছাগল এবং আমার বাবা মা একই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×