[ আইসিসি'র আয়ের অন্যতম উৎস এই আরব আমিরাত, এছাড়াও ২০০৫ সাল থেকে আইসিসি'র হেডকোয়ার্টার আরব আমিরাতেই অবস্থিত। ক্রিকেট বিশ্বে আরব আমিরাত যতটা প্রভাবশালী, সেই অনুপাতে তাদের ক্রিকেট ততটা অগ্রসর হয়নি। কিন্তু আরব আমিরাত ক্রিকেটিয় প্রতিভার ঘাটতি নেই, ইতিমধ্যে অনেক ক্রিকেটার তাদের জাত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেখিয়েছেন। তাদের তুলে ধরার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস ]
শাইমান আনোয়ারঃ
পাঞ্জাবের পাকিস্তান অংশে জন্ম এই ক্রিকেটারের। সেখানে জন্মের সুবাদে ক্রিকেটে দিক্ষা টা ভালই পেয়েছেন। খেলেছেন পাকিস্তানের ঘড়োয়া ক্রিকেটে শক্তিশালী শিয়ালকোট মূল দলের হয়ে। সেখানে তার পারফর্মেন্স ও ছিল চোখে পরার মত। একটি শিপিং কোম্পানি তে চাকুরির সুবাদে আমিরাতে পাড়ি জমান শাইমান। সেখানে আরব আমিরাত এ দলের হয়ে মূল পথচলা শুরু।
২০১১-১৩ মৌসুমে আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ(আইসিএল) চ্যাম্পিয়নশিপ এ ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করে সকলের নজর কাড়েন। তারপরের বছরেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন। তার দল ২০১৫ বিশ্বকাপের খেলার যোগ্যতা অর্জন করে সেবছর এবং বিশ্বকাপের মূল দলে তাকে ডাকা হয়। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ে কে প্রায় কাপিয়ে দিয়ে ৬৭ রান করেন ৫০ বলে। পরের ম্যাচেই আয়ারল্যান্ড এর বিরুদ্ধে করেন ১০৬ রান, খরচ করেন মাত্র ৮৩ বল। তিনি ছিলেন আমিরাতি ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শতকের মালিক এবং প্রথম ক্রিকেটার যিনি বিশ্বকাপে শতক অর্জন করেন আমিরাতি হিসেবে! ১৫টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে তার রানসংখ্যা ৫৮৭, প্রায় ৪৩ গড়ে! ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক টি-২০ তে গড় ১২০ এর উপর। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ন ক্রিকেটার আমিরাত দলের। এছাড়াও ৩৬ উর্ধ্ব এই ক্রিকেটার প্রমান করেছেন খেলার মাঠে বয়স কোন ব্যাপার হতে পারে না।
খুররম খানঃ
এই ক্রিকেটার হলেন সবচেয়ে বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরীর মালিক! সেইসাথে আরব আমিরাতের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রথম শতকের মালিক ও এই বাহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি আরব আমিরাতের অধিনায়ক হিসেবে অসাধারন রেকর্ডধারী ও বটে!
শুরুটা ছিল বোলার হিসেবে। ২০০১ আইসিসি ট্রফি তে বাহাতি স্পিনে নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট। সেখানে ৮ ইনিংস এ ২৪৩ রান করলেও তার বোলিং টাই মূলত নজরে এসেছিল। ২০০৪ সালে তাকে আইসিসি ছয়-জাতি চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্ট এর জন্য আরব আমিরাতের অধিনায়ক ঘোষনা করা হয়। ২০০৪ সালের এশিয়া কাপেও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সেইসময়ের ক্রিকেট দেবতাদের মাঝে নিজের আনকোরা দলকে নেতৃত্ব দেয়া ছিল কঠিনের ও বেশি কিছু। নিজে কিন্তু ছিলেন উজ্জ্বল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে ৪উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আইসিসি ইন্টারকন্টিন্যাটাল কাপ ক্যারিয়ার তার বেশ উজ্জ্বল। দুইবার অংশ নিয়ে তিনি ৩২৯ রান এবং ৮উইকেট তার ঝুলিতে রেখেছেন।
তার অধিনায়কত্বে আরবা আমিরাত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে যায়। এরপর তার অধিনায়কত্বে ভর করেই আরব আমিরাত চলমান ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপে আয়ারল্যান্ড কে হারিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কে বিদায় জানান ৪৩ বছর বয়সে।
মানজুলা গুরুগেঃ
শ্রিলঙ্কায় জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার বর্তমানে আমিরাতি ফাস্ট বোলিং এর মূল স্তম্ভ! আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাই ২০১৪ টুর্নামেন্টে অভিষেক ম্যাচেই ৩উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি, এবং তার দল ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।
বাহাতি এই ফাস্ট বোলার পাওয়ার প্লের প্রথম দশ অভারের জন্য দারুন কার্যকরী। রান আটকাতে পারেন ভালই, সেইসাথে ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের ভালই নাকাল করেছেন আচমকা বাউন্সারে।
৭টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে তে ১২উইকেট অর্জন করা এই ক্রিকেটার বহু দূর যাওয়ার দাবি রাখেন। সেইসাথে টি-২০ খেলায় শেষের দিকে যদি ইকোনমি রেট ভাল রাখতে পারেন তাহলে হতে পারেন দারুন কার্যকরী।
আমজাদ আলিঃ
বাহাতি এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান এর অভিজ্ঞতা বেশ ভালই। খেলেছেন পাকিস্তানের ঘড়োয়া ক্রিকেটে লাহোরের হয়ে। উইকেট কিপার হলেও কালেভদ্রে তাকে ডানহাতি মিডিয়াম পেসে উইকেট পেতেও দেখা যেত।
২০০২ সালে অংশ নিয়েছেন পাকিস্তানের বিখ্যাত ঘড়োয়া আসর কায়দ-ই-আজম ট্রফি তে। ২০০৭ সালে আরব আমিরাতের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপে। ১৭টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে তার রান ৫শতাধিক, সর্ব্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৯৮।
আরব আমিরাতের বেশিরভাগ ক্রিকেটার পাকিস্তান থেকে উঠে আসা। কিন্তু বর্তমানে ক্রিকেটের জোয়ারে তাদের সরকার ও নিজেদের ক্রিকেটের পাইপলাইন শক্তিশালি করার কাজে নেমেছে। তার ফল তারা পেয়েছেও সাম্প্রতিক সময়ে। তারা বর্তমানে আইসিসির সহযোগি দেশের মর্যাদা প্রাপ্ত। সেইসাথে তারা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ানডে স্ট্যাটাস ও অর্জন করে রেখেছেন। আমরা আশা করবো আরব আমিরাত অনেকদুর এগিয়ে যাবে
ছোট দলের তারকারা : প্রথম পর্ব(আফগানিস্তান)
ছোট দলের তারকারা : দ্বিতীয় পর্ব(কানাডা)
ছোট দলের তারকারা : তৃতীয় পর্ব(বারমুডা)
ছোট দলের তারকারা : চতুর্থ পর্ব(কেনিয়া)
ছোট দলের তারকারা : পঞ্চম পর্ব(নেদারল্যান্ডস)
ছোট দলের তারকারাঃ ষষ্ঠ পর্ব(আয়ারল্যান্ড)
ছোট দলের তারকারাঃ সপ্তম পর্ব(নেপাল)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০