[ ক্রিকেটে বর্তমান বিশ্ব এশিয়া সবচেয়ে এগিয়ে, এশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি দেশ ক্রিকেটের দানব-রূপে চারন করছে বিশ্বে! পাশাপাশি সহযোগি দেশ কোটায় ও এশিয়া-পেসিফিক সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের মধ্যে নতুন উঠে আসা নেপাল অগ্রগন্য। টেস্ট-খেলুড়ে দেশ বাদে আরব আমিরাত, আফগানিস্তান এর পরেই তাদের নাম আসে বর্তমানে। তারা ২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের মূল বাছাই পর্বেও অংশ নেয়। ইতিমধ্যে বেশকিছু মেধাবি ক্রিকেটার দেখিয়েছে হিমালয়-কন্যা নেপাল। তাদের বেশিরভাগের নামই কেউ জানে না। তার একটু তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা ]
পরশ খাড়কাঃ
নেপাল ক্রিকেট দলের বর্তমান এই ক্রিকেটারের ম্যান অব দ্য সিরিজ এবং ম্যান অব দ্য ম্যাচ এর ঝুলি দেখলেই যে কারো চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য! আইসিসি'র অনুমোদিত খেলায় এযাবতকালে ২৪ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ৪বার সিরিজ সেরার পুরষ্কার হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি!!
নেপাল অনুর্ধ্ব-১৫ এবং ১৭ দলের অধিনায়কত্ব করে আসা এই ক্রিকেটার বলতে গেলে ক্রিকেট খেলাই শুরু করেন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব দিয়ে! ২০০৫ সালে এসিসি অনুর্ধ্ব-১৯ কাপ টুর্নামেন্ট এ নেপাল চ্যাম্পিয়ন হয় তার ঔজ্জ্বল্লে। পরের বছরেই নেপাল অনুর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে আসে এক বিস্ময়ের নাম হয়ে! তারা অস্ট্রেলিয়া কে হারিয়ে প্লেট জিতে নেয়, এর আগে তারা গ্রুপ পর্বে দক্ষিন আফ্রিকা কে হারিয়ে আসে! একটা আনকোরা দল হয়ে দুইটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের যুবাদের হারিয়ে দেয়া যথেষ্ট বিস্ময়কর বটে! নেপথ্যে ছিলেন খাড়কা, ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ও ছিল অসাধারন। ২০১০ সালে তার অধিনায়কত্বে নেপাল জিতে নেয় ওয়ার্ল্ড লিগ ডিভিশন ফাইভ। ২০১২ সালে নেপাল জয় করে আইসিসি এলিট ট্রফি, সেখানে খাড়কার পারফর্মেন্স ছিল অনবদ্য! সেখানে তার গড় ছিল ৭২.৭৫! ২০১৩ এসিসি টি-২০ কাপে তিনি টুর্নামেন্ট সেরার খেতাব অর্জন করেন। সেখানে তার গড় ছিল ৪১.৪০! ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আসেন টি-২০ বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্ব খেলতে। স্বাগতিক বাংলাদেশে এবং হংকং এর বিরুদ্ধে উভয় স্থানেই ৪১ রান করে করেন। হংকং এর বিরুদ্ধে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট ও তুলে নেন! তারপর ইএসপিএন তাকে নেপালের কপিল দেব হিসেবে বিশেষায়িত করেছিল। তখন থেকেই ব্যাটিং এর পাশাপাশি মিডিয়াম পেসেও শান দিতে শুরু করেন। ১১টি আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলা এই ক্রিকেটার অপেক্ষায় আছেন নেপালের ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার।
শক্তি গৌচানঃ
এই বাহাতি স্পিনার নেপালি হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার এযাবতকালের! ২০১২ আইসিসি টি-২০ কোয়ালাফায়ার এ দুর্দান্ত পারফর্মেন্স এর জোরে তিনি ডাক পান আইপিএল এর দল রাজস্থান রয়্যালস এর ক্যাম্পে। সেখানে তার বোলিং দেখে মুগ্ধ হন রাহুল দ্রাবির এবং ব্র্যাড হজ। সেখান থেকেই অনেকে শক্তি কে চিনতে শুরু করে।
ক্রিকেটে তার পদচারনা ২০০২ থেকে। বাহাতি অর্থোডক্স স্পিনের সাথে ব্যাটিং টাও খারাপ করেন না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্বিতীয় নেপালি হিসেবে ইতালির বিরুদ্ধে তার একটি শতক রয়েছে। কিন্তু মূল জাদু তার বাহাতি স্পিনে, রান আটকাতে দারুন পারদর্শী তিনি। নেপাল এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র টি-২০ স্ট্যাটাস অর্জন করেছে, তাই তাদের মূল খেলা এটাই। টি-২০'র এ যুগে তিনি দুর্দান্তভাবে রান আটকিয়ে দলকে বাচাচ্ছেন বড় রান তাড়া করার হাত থেকে। তার পেছনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার বেশ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। প্রায় সব রকমের পর্যায়ে খেলে জাতীয় দলে এসেছেন। এ পর্যন্ত ৯টি আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলে নিয়েছেন ৮টি উইকেট, কিন্তু তার ইকোনমি রেট ই তাকে সকলের উর্ধ্বে রেখেছে। নেপালের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হ্যাট-ট্রিকের মালিক এই শক্তি গৌচান।
সোমপাল কামিঃ
মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠা ভারতের পাঞ্জাবে, পিতার চাকুরীর সুবাদে ক্রিকেট চারনক্ষেত্র পাঞ্জাবে বেড়ে ওঠেন তিনি। সেখানেই তার প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে। পরবর্তীতে নেপালের আঞ্চলিক এক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এ খেলার জন্য সেই দল তাকে নেপালে প্রবেশের অনুমতি গ্রহন করে। এভাবেই পরবর্তীতে নেপালের কোচ পুবুদু দেশনায়েকে তাকে আবিষ্কার করেন এবং জাতীয় দলে ডেকে পাঠান।
মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার সর্ব্বোচ্চ গতি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪০ কিমি/ঘন্টা! ১১টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে তার সংগ্রহে আছে ১২ উইকেট। সাথে আবার ব্যাটিং টাও ভালই পারেন কামি। আন্তর্জাতিক টি-২০ তার স্ট্রাইক রেট ১০৮ এর উপর, সর্ব্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি তার ৭৮ রানের। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় নেপাল বেশ একজন প্রতিভাশালী অল-রাউন্ডার কে পরিচয় করাতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে।
জ্ঞানেন্দ্র মাল্লাঃ
নেপাল দলের সহ-অধিনায়ক কে বলা হয় নেপালের দ্রাবির! খেলেন মাথা ঠান্ডা রেখে, চাপ সামলাতে পারেন বেশ ভালভাবে। টি-২০ দল বলা হয় নেপালকে, এই ফরম্যাটের সাথে তার ব্যাটিং টা অনেকাংশে যায় না বলে দাবি করা হলেও তিনি খেলে যান বেশ সুনিপুনভাবে, যখন তখন হাল ধরতে পারেন দলের পক্ষে।
তার মূল সাফল্য লক্ষ্য করা যায় ইন্টারকন্টিন্যান্টাল কাপে। ৩বার এই টুর্নামেন্ট এ অংশ নিয়ে টি-২০ নির্ভর দলের পুরোভাগে ছিলেন তিনি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২০১৪ টি-২০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৩ম্যাচে ৮৩ রান করে দলের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। ১১টি টি-২০ ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটারের রান সংখ্যা কিছুটা কম হলেও মাঝে মধ্যে কিছু অপরিচিত শট খেলে ভড়কে দিতে পারেন বিপক্ষের বোলারদের।
১৯৮৮ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করা নেপাল এ পর্যন্ত মাত্র টি-২০ স্ট্যাটাস অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স বেশ স্বয়ংসম্পূর্ন। নেপাল থেকে উঠে আসছে মেধাবি ক্রিকেটাররা। এছাড়া অন্যান্য সহযোগি দেশদের মত নেপাল অন্য দেশ থেকে আগত ক্রিকেটারদের উপর নির্ভরশীল নয়। তাদের ক্রিকেটার উঠে আসার পাইপলাইন বেশ শক্ত, কেননা নেপাল সরকার ক্রিকেটের উপর বেশ সুনজর দিয়েছে ইদানিংকালে। আমরা আশা রাখি খুব শিঘ্রই ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করবে সার্ক অধিভূক্ত নেপাল
ছোট দলের তারকারা : প্রথম পর্ব(আফগানিস্তান)
ছোট দলের তারকারা : দ্বিতীয় পর্ব(কানাডা)
ছোট দলের তারকারা : তৃতীয় পর্ব(বারমুডা)
ছোট দলের তারকারা : চতুর্থ পর্ব(কেনিয়া)
ছোট দলের তারকারা : পঞ্চম পর্ব(নেদারল্যান্ডস)
ছোট দলের তারকারাঃ ষষ্ঠ পর্ব(আয়ারল্যান্ড)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮