[ ক্রিকেট টা ব্রিটিশ খেলা হিসেবে নেদারল্যান্ডস এর মানুষের কাছে তেমন নতুন কিছু না। কিন্তু ক্রিকেটে যতটুকু এগিয়ে থাকার কথা তাদের সেই অনুযায়ী তারা এগিয়ে নেই। কিন্ত বেশকিছু রুপকথার জয় যে তাদের আছে তা অনেকেই জানেন। এছাড়াও তাদের এমন কিছু ক্রিকেটার রয়েছে যারা বিভিন্ন সময়ে কাউন্টি এবং বিভিন্ন ঘড়োয়া আসর মাতিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। তাদেরকে তুলে ধরার একটূ ক্ষুদ্র প্রয়াস ]
টম কুপারঃ
ইনি এমন একজন ক্রিকেটার যিনি অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এবং নেদারল্যান্ডস এর জার্সি গায়ে, দুই দলের হয়েই খেলে গিয়েছেন সমান তালে। জন্ম তার অস্ট্রেলিয়ায়, সাউথ অস্ট্রেলিয়া রাজ্য দলের হয়ে ক্রিকেটে অভিষেক। দারুন পারফর্মেন্স ছিল তার অস্ট্রেলিয়ান ঘড়োয়া ক্রিকেটে।
এদিকে তার মা ছিলেন ডাচ, সেই সুবাদে নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ড সেই সুযোগটি কাজে লাগায়। ২০১০ সালে তিনি কমলা জার্সি গায়ে মাঠে নামেন প্রথমবার। অভিষেক ম্যাচেই অপরাজিত ৮০ রান করে ফর্ম ধরে রাখেন। এখানেই শেষ নয়, তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ম্যাচে ৩টি অর্ধ-শতক তুলে নেন।
২০১১-১২ মৌসুমে বিগ ব্যাশে প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের। পরবর্তি মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত মেলবোর্ন রেনেগেডস এর সাথে চুক্তিতে আছেন। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া এ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরেও যান। এদিকে ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নেন নেদারল্যান্ডস এর হয়ে! এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপ ও খেলেন নেদারল্যান্ডস এর জার্সি গায়ে।
মাত্র ২৩টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে তে খেলে তার গড় ৪৮+! এর মাঝে ৮টি ফিফটি এবং ১টি সেঞ্চুরী। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ও বেশ স্বয়ংস্বম্পূর্ন, ২টি ফিফটি সহ মাত্র ১২ম্যাচে ৩৮০+ রান! ব্যাটসম্যান হলেও সময়ে হাত ঘুড়ান অফস্পিনে! উইকেট ও নেন নিয়মিতভাবে!
রায়ান টেন ডোয়েসচেটঃ
তাকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে সহযোগী দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম সেরা সৃষ্টি হিসেবে! একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৩বার আইসিসি সহযোগী দেশের সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দক্ষিন আফ্রিকাতে। ২০০৩ সালে কাউন্টি দল এসেক্স এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর নাগরিকত্ব আইন এর বলে নেদারল্যান্ডস দলে ডাক পান ২০০৫ সালের আইসিসি কাপে।
তিনি একজন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, সেই সাথে দারুন কার্যকরি ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে। মাত্র ৩৩ ওয়ানডে তে তার সেঞ্চুরী ৫টি এবং ফিফটি ৯টি! এবং তার ব্যাটিং গড় যা কারো চোখ কপালে তুলে দিবে এবং তা হল ৬৭.০০!! ওয়ানডে এছাড়াও রয়েছে ৫০ এর অধিক উইকেট। ২০১১ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ডাচদের পক্ষে সর্বাধিক রান-সংগ্রাহক। ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে তার রানসংখ্যা প্রায় ১০হাজার! ফিফটি আছে ২৫ টি এবং সেঞ্চুরী ২০টি! বিপরীতে উইকেট সংখ্যা ১৮১টি!
আইপিএল, বিগব্যাশ সহ এমন কোন ঘড়োয়া টি-২০ আসর নেই যেখানে টেনডো অংশ নেননি! ঘড়োয়া ক্রিকেটে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একটা ছেদ পরে, তাই বোর্ডের সাথে কিছুটা মনোমালিন্য ঘটে যায়! তারপর থেকেই নেদারল্যান্ডস দলে একরক্ম ব্রাত্যই বলা চলে তাকে। কিন্তু ঘড়োয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছেন দুর্দান্তভাবে!
মাইকেল সোয়ার্টঃ
বর্তমান ডাচ ক্রিকেট দলের সহ অধিনায়ক এক সময় অস্ট্রেলিয়া অনুর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে খেলেছেন এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্য দলের প্রতিনিধি। তার বাবা নেদারল্যান্ডস এ জন্মানোর সুবাদে তাকে ২০১০ টি-২০ বিশ্বকাপে খেলার আমন্ত্রন জানায় ক্রিকেট নেদারল্যান্ডস, কিন্তু তিনি রাজ্য দলে তার জায়গা পাকাপোক্ত করার জন্য ব্যস্ত ছিলেন এবং স্বপ্ন নিয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলে খেলবেন, তাই সেই আমন্ত্রন তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু বছর না ঘুড়তেই তিনি পিতার জন্মভূমির হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ২০১১ বিশ্বকাপে দলে ডাক পান।
ওয়ানডের চেয়ে তার আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্যারিয়ার বেশি সমৃদ্ধ। ১৮ টি ২০অভারের ম্যাচে তার ফিফটি আছে ৩টি, ২৮ এর কাছাকাছি গড়ে!। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান মারকাটারি ব্যাটিংয়ে বেশ ভাল ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও দরকারের সময় অফস্পিনে হাতটাও ঘুড়ান প্রায়ই। ডাচ জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুবাদে তিনি তার রাজ্য দলের জায়গা হারাবেন তিনি জানতেন, কিন্তু তিনি আর পেছন ফিরে তাকাননি। নেদারল্যান্ডস এর হয়ে খেলে যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে।
পিটার সিলারঃ
হাতেগোনা অল্প কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে সিলার অন্যতম, যিনি নেদারল্যান্ডস এর হয়ে বয়সভিত্তিক প্রতিটি দলে খেলে জাতীয় দলে এসেছেন। এই বাহাতি স্পিনারের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০৬ সালে।
২০০৮ সালে তিনি যখন প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামেন সেই ম্যাচটি তিনি সহ দলের আরো ৯জন ক্রিকেটারের জন্য ছিল প্রথম টি-২০ ম্যাচ! ইউরোপিয়ান দলগুলো খুব একটা সুযোগ দিতে চাননা স্পিনারদের, তাই সেখানে স্পিনারদের ভাল করার সুযোগ কম। কিন্তু সিলার এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম, তিনি সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন। ২০১১ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস এর সুযোগ পাওয়ার পেছনে সিলারের অবদান অনেক। ২০১০ সাল থেকে চলে আসা ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ৪০-অভারের একটি টুর্নামেন্ট এ ১৮টি ঘড়োয়া দলের সাথে নেদারল্যান্ডস ও একটি সহযোগি দেশ খেলার সুযোগ পায়। তারা প্রথম বার অংশ নিয়েই ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। এর পেছনেও সিলারের অবদান অনবদ্য।
৩৭টি ওয়ানডে তে তার উইকেট সংখ্যা ৪২টি। কিন্তু তিনি মূলত রান আটকানোতে মনোযোগ দিয়ে থাকেন বেশি। তাই টি-২০ তে বেশ কার্যকারী ও বটে। তার ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ, সেখানেও তার ইকোনমি রেট ই তাকে সকলের থেকে আলাদা করে রেখেছে।
নেদারল্যান্ডস এর মত দলের খেলোয়ারেরা বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন মূলত কাউন্টি ক্রিকেটের পেছনে! তাই তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাও হয় কম। কিন্তু যখনই মাঠে আসেন তারা, তাদের সর্বোচ্চ উজার করে দেন। এর জন্যই নেদারল্যান্ডস সহযোগী দেশ হলেও টেস্ট খেলুড়ে দেশরাও তাদের যথেষ্ট সমীহ করে চলে
ছোট দলের তারকারাঃ প্রথম পর্ব(আফগানিস্তান)
ছোট দলের তারকারাঃ দ্বিতীয় পর্ব(কানাডা)
ছোট দলের তারকারাঃ তৃতীয় পর্ব(বারমুডা)
ছোট দলের তারকারাঃ চতুর্থ পর্ব(কেনিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২