somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ক্রিপচার রিভিউ- দ্য আরাবিক কোরআন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(কোরআনের বিষয়বস্তু এত ব্যাপক যে এক জীবনে সবকিছু জানা এবং লেখা সম্ভব নয়। আমি মুলত অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব। কোরআনের বিষয়বস্তু নিয়ে এখানে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব না, আমি মুলত কোরআন সম্পর্কিত লিখব, সরাসরি কোরআনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে না)

কোরআন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র গ্রন্থ। ইসলাম ধর্মের মুল বিধান হচ্ছে কোরআন। এই কোরআন নবী মোহাম্মদের উপর অবতীর্ন হয়েছে। কোরআন মুলত ১১৪ টি অধ্যায় রয়েছে (৯ নম্বর চ্যাপ্টার কে একটি পৃথক চ্যাপ্টার হিসাবে ধরে)। সধারনভাবে এর চ্যাপ্টার গুলিকে সূরা এবং বাক্য গুলিকে আয়াত বা ভার্স বলা হয়। কোরআনের আয়াতের সংখ্যা নিয়ে কিছু মতপার্থক্যের কারনে এর সঠিক আয়াত সংখ্যা কত তা বলা যাচ্ছে না।

যদিও সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ কোরআন পাঠ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই না বুঝে পাঠ করছেন (তোতা পাখির মত আবৃত করা)। মুলত কোরআন পাঠ করলে সোয়াব পাওয়া যাবে এই আশায় মানুষ না বুঝে কোরআন পাঠ করে। আমি কোরআন পাঠ করে “কোরআন পড়লে সোয়াব পাওয়া যাবে” এমন কোন কথা কোরআনে পাইনি। বরং যেটা বুঝেছি, কোরআন মানুষকে কিছু গাইডলাইন দিয়েছে, এবং কোরআন মানুষকে এই গাইডলাইনগুলি ফলো করেতে বলেছে যাতে করে মানুষ ঐ গাইড লাইন গুলি ফলো করে ব্যাক্তি জীবনে উৎকর্ষতার পাশাপাশি একটি আদর্শ সমাজ এবং রাস্ট্র ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে পারে, এবং এর মধ্যেই ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণ নিহিত।

১। কোরআনের উৎপত্তি বা সময়কালঃ
কোরআন সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? এর উত্তর হচ্ছে কোরআন সম্পর্কে আমরা খুব অল্পই জানি। আমরা কোরআনের বয়স, অবতীর্ণের স্থান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। আব্রাহা ইনস্ক্রিপশন থেকে আমরা যেটা দেখতে পাই তা হচ্ছে প্রচলিত গল্প “ইয়ার অফ এলিফ্যন্ট” একটা বানানো গল্প ছাড়া কিছুই না। "ইয়ার অফ এলিফ্যান্ট" এবং "আব্রাহা ইনস্ক্রিপশন" কারন আব্রাহা কোনদিন মক্কা আক্রমণ করতে যায়নি এবং উত্তর এবং দক্ষিণ আরবে পাওয়া প্রচুর ইনস্ক্রিপশনে মক্কা নামে কোন শহরের নাম নেই, যদিও ছোট বড় মিলিয়ে প্রচুর শহরের নাম ঐ ইনস্ক্রিপশন গুলিতে পাওয়া যায়। অষ্টম শতাব্দীর আগে মক্কা নামক কোন শহরের রেফারেন্স পাওয়া যায় না।

এইজন্য কোরআনের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করলে আমরা একটা টাইমলাইন দাড় করাতে পারি। যেমনঃ
কোরআন যখন অবতীর্ণ হয় তখন তওরাত এবং ইঞ্জিল তার মুল ভার্সনে বিদ্যমান ছিল। এটা খুবই গুরত্ব পূর্ণ একটা পয়েন্ট। হিব্রু বাইবেল এবং তওরাত এক জিনিষ না স্ক্রিপচার রিভিউ- হিব্রু বাইবেলএবং গ্রীক বাইবেল এবং ইঞ্জিল এক জিনিষ না।স্ক্রিপচার রিভিউ- দ্য গ্রীক বাইবেল/ নিউ টেস্টামেন্ট। সুতারং কোরআন যখন অবতীর্ণ হচ্ছিল তওরাত এবং ইঞ্জিল মুল ভার্সন বিদ্যমান ছিল। শুধু এই পয়েন্টের উপর নিরপেক্ষ গবেষণা করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসার কথা। এই ক্ষেত্রে টাইমলাইন এবং জিওগ্রাফিকাল সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এছাড়াও, কোরআনে রোমানদের কথা বলা হয়েছে। সাধারণত মানুষ ধারণা করে যে কোরআন বাইজেন্টাম রোমানদের কথা বলছে। এর কোন কনক্রিট প্রমান নেই। কোরআন প্যাগান রোমানদের কথাও বলে থাকতে পারে। প্যাগান রোমানরা আরাবিয়াতে বিভিন্ন সময় অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে যা প্রথম শতক থেকে ষষ্ট শতক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া, কোরআনে বর্ণিত যুলকারনাইনের, আল কাহাফের গুহায় ঘুমিয়ে থাকা বিশ্বাসীদের কথা, শেবার মারিব ড্যাম ভেঙ্গে বন্যা, অলিভ তেল দিয়ে গ্লাসের বাতি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়াদির কথা বলা হয়েছে। এর থেকে অনুমান করা যায় কোরআন দ্বিতীয় শতক থেকে ষষ্ট শতক এর মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছে। এই বিষয়ে পেশাধারী প্রত্নত্ত্ব গবেষণা হওয়া দরকার। কিন্তু বর্তমান সৌদি আরাবে উহা কঠোর ভাবে নিষিদ্ব।

২।কোরআন সংকলনঃ
কোরআন সংরক্ষণের ব্যাপারে কোরআন এবং বিভিন্ন সহিহ হাদিস পরস্পর বিরোধী মুখোমুখি অবস্থানে বিদ্যমান। যদিও কোরআনে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনিই এর সংরক্ষক, বিভিন্ন হাদিসে আমরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখতে পাই। হাদিস অনুসারে কোরআন বিভিন্ন সময়ে এডিট, রি-এডিট হয়েছে, বিভিন্ন শব্দ, আয়াতের বানান ভুল, বিভিন্ন আয়াতের অন্তর্ভুক্তি, বিচ্যুতি (যেমনঃ রজমের আয়াত ছাগলে খেয়ে ফেলা, ১০ বার, ৫ বার সাকলিং ভার্স ইত্যাদি) এমনকি গোটা একটা চ্যাপ্টার অন্তর্ভুক্তি এবং বিচ্যুতি হয়েছে। এই সকল হাদিস সরাসরি কোরআনের অথেন্টিসিটিকে কে প্রশ্নবিদ্ব করে। সুতরাং এই সব হাদিস (তা যত সহি পুস্তকেই থাকুক না কেন ) এবং কোরআন একই সাথে সত্য হতে পারেনা। প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। “রাশেদ খলিফা” নামটা অনেকেই শুনেছেন। সে নিজেকে নবী দাবী করেছিল এবং কোরআনের চ্যাপ্টার নয়ের শেষ দুইটা আয়াত কে মুল কোরআনের নয় বলে দাবী করেছিল। সে যে ভন্ড ছিল সেটা ঠিক আছে। “রাশেদ খলিফা” আততায়ীর হাতে নিহত হন। বেশীরভাগ মুসলমান (একটা স্বতন্ত্র দল ছাড়া) তাকে ভন্ড মনে করে (আমিও এরকম একজন)। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ইবনে মাসুদ এবং উবাই ইবনে কাব তাদেরও নিজস্ব কোরআনের ভার্সন ছিল, প্রথম জন কোরআনের শেষ দুইটা চ্যাপ্টার কোরআনের অন্তর্ভুক্ত নয় বলেছেন এবং শেষেরজন অতিরিক্ত দুইটা চ্যাপ্টার কে কোরআনের বলে অভিমত দিয়েছেন যা কোরআনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তারা “রাশেদ খলিফা”র মত একই অপরাধে অপরাধী কিন্তু মুসলিম বিশ্ব “রাশেদ খলিফা”কে যেমন ঘৃনা করে তেমনি শেষর দুজনকে পুজনীয় মনে করে। এইটা একটা পরিষ্কার হিপক্রেসি।

৩।কোরআনের লিখিত এবং পঠিত রুপঃ
যদিও আরবী ভাষা অনেক প্রাচীন ভাষা কিন্তু আরবী বর্ণমালা তার ভাষার তুলনায় প্রাচীন না। প্রাচীনকালে আরাবিক ভাষা লিখার জন্য বিভিন্ন বর্ণমালা ব্যাবহার করা হত যেমন নাবাতিয়ান আরামিক, সাবাইক, মুসনাদ ইত্যাদি। আরাবিক বর্ণমালা নাবাতিয়ান আরামিক না মুসনাদ থেকে এসেছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। (আমার মতে দক্ষিণ আরাবিক বর্ণমালা মুসনাদ থেকে এসেছে)। আরাবিক বর্ণমালা যেখান থেকেই আসুক সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। যেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে আরামিক, হিব্রু যা আরাবিক এর ক্লোজ কাজিন তাঁদের বর্ণমালা হচ্ছে ২২ টা যেখানে আরাবিক বর্ণমালা হচ্ছে ২৮ টা, অর্থাৎ ৬ টা বর্ণ বেশী। এটা সবাই জানে যে যে আরামিক, হিব্রু বা আরাবিক লেখার সময় কোন স্বরবর্ণ ব্যাবহার করা হত না। এখনো আরাবিক স্বরবর্ণ ছাড়াই লেখা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে আগে আরাবিক বর্ণমালায় ডট ব্যাবহার করা হত না। ডট ব্যাবহারের প্রচলন আরও পরে এসছে। সেইজন্য মুল আরাবিক বর্ণমালায় “বা, তা, ছা, নুন” – এইগুলি আলাদা করা কঠিন ছিল। আরও আছে যেমন ঃ “হা, খা, জিম” আরেকটা হচ্ছে “সোয়াদ, দোয়াদ”, অথবা “রা, যা” ইত্যাদি। এই বর্ণগুলি মুলত একটা দুইটা, তিনটা ডট দ্বারা পরে সেপারেট করা হয়েছে যাতে সহজে একই রকম বিভিন্ন বর্ণকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে কখন থেকে এই ডটের প্রচলন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে পুরাতন আরাবিক ম্যানুস্ক্রিপ্ট যেখানে ডটের ব্যাবহার করা হয়েছে তা হচ্ছে PERF No. 558 (The Dotting Of A Script And The Dating Of An Era) যার সময়কাল আনুমানিক ৬৪৩ খৃষ্টাব্দ।


( এই ম্যানুস্ক্রিপ্ট শুধু মাত্র ডটের জন্য বিখ্যাত না। এই ম্যানুস্ক্রিপ্টের উপরে বা দিকের কোনায় দেখেন একটা ক্রশ দেওয়া আছে। এর একটা ইমপ্লিকেশন আছে। আর দুইটা তারিখ বর্ণনা করা আছে যা প্রচলিত ইসলামিক ক্যালেন্ডার কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। )

ট্র্যাডিশন থেকে আমরা জানি যে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ (৬৯৪-৭১৪) এই ডটের প্রচলন করেছিলেন কোরআনের কোরআনের বর্ণমালাগুলিকে পৃথকভাবে শনাক্ত করণের জন্য এবং উনি কোরআন অল্প এডিট করেন। (অল্প হোক আর বেশি হোক একই কথা)। কিন্তু এই ট্র্যাডিশন এই ম্যানুস্ক্রিপ্টের বিপরীত কথা বলে। আমার মতে কোরআনের মুল টেক্সট (ব্যঞ্জন বর্ণের দ্বারা গঠিত শব্দ) অবিকৃত রয়ে গেছে। কিন্তু এই ডট এবংস্বরবর্ণের প্রয়োগের ফলে কোরআনের মেসেজের পরিবর্তন হতে পারে । এইজন্য কোরআনকে সম্পূর্ণ আগের ফর্মে নিয়ে যেতে হবে (স্বরবর্ণ এবং ডট ছাড়া)। সেখান থেকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলেই কোন রকম বিকৃতি হয়েছে কিনা তা ধরা পরবে।

৪। কোরআনের ভার্সনঃ কোন কোরআন?
আমরা জানি কোরআন একটি একক গ্রন্থ। এর কোন ভিন্ন ভার্সন নেই। কিন্তু সত্যি হচ্ছে কোরআনের দুইটা ভার্সন ছিল এবং এখনো বিদ্যমান। । এই ভার্সন দুইটা হচ্ছে হাফস (Hafs )এবং ওয়ার্স (Warsh) । যদিও হাফস ভার্সন অধিক প্রচলিত (৯৪-৯৬%), আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে ওয়ার্স ভার্সন এখনো প্রচলিত আছে। যদিও দুইটা ভার্সনের পার্থক্য সামান্য, তারপরেও কিছু পার্থক্য আছে। পার্থক্য এসেছে মুলত উপরে বর্ণিত ডট এবং স্বরবর্ণের ব্যাবহারের ফলে। সুতরাং আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন আমি কোরআন কে আগের ফর্মে নিয়ে তারপর আবার এর মেসেজ উদ্বার করতে বলছি।

৫। কোরানিক ইনিশিয়ালঃ
এইটা একটা মজার ব্যাপার। কোরআনের বিভিন্ন চ্যাপ্টারের আগে কিছু কথিত ইনিশিয়াল এসেছে। যেমন দুই নম্বর চ্যাপ্টারের প্রথমে “আলিফ, লাম, মীম”। এইগুলি কি অর্থ বহন করে তা নিয়ে প্রচুর মতবাদ আছে, আছে বিভিন্ন রকম হাদিস। কেউ বলে মুস্তাবিহাত। সারা দুনিয়ার মানুষ এইটাকে কিভাবে পড়ে? আলিফ, লাম, মীম -এইভাবে তিনটা পৃথক অক্ষর হিসাবে পড়ে। আরবী বর্ণমালার একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে বর্ণমালা গুলি দিয়ে যখন শব্দ গঠন করা হয় তখন বর্ণমালা গুলি শব্দের বিভিন্ন স্থান ভেদে ভিন্ন রুপ ধারন করে।


যদি আলিফ, লাম, মীম -তিনটা পৃথক বর্ণ হিসাবে লেখা হত তবে লেখা হত ا ل م। কিন্তু এইভাবে লেখা না হয়ে লেখা হয়েছে الم অর্থাৎ যুক্তাক্ষর। তার মানে হচ্ছে এইখানে পৃথক তিনটা অক্ষর না, একটা শব্দ বুঝানো হয়েছে। এইটা একটা শব্দ।এবং যেহেতু এইটা একটা শব্দ, সেহেতু এইটার অবশ্যই একটা অর্থ আছে। যেহেতু এই শব্দটাতে স্বরবর্ণের প্রয়োগ গঠানো হয়নি, তাই উচ্চারন হয়ে গেছে আলিফ, লাম, মীম, আসল উচ্চারণ হারিয়ে গেছে। সুতরাং এইটা কোন অলোকিক কিছু না। এইটা ভাষার কোডিফিকেশনের মানুষ কর্তৃক সৃস্ট সমস্যা। কোরআনে চ্যাপ্টার ৭:১ আছে المص এইটা নিঃসন্দেহে একটা শব্দ। পৃথক চারটা বর্ণ হলে আলাদা করে বর্ণ গুলি লেখা হত। খুব সিম্পল একটা ব্যাপার। ছবিতে বর্ণমালা গুলির অবস্থানভেদে আকার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝবেন। সুতরাং এইরকম হবার কারন কি? আমার একটা হাইপোথিসিস হচ্ছে আরবী ভাষা যেহেতু সাধারণ জনগণের ভাষা ছিল সেহেতু এই ভাষা অনেক পরে কোডিফাই হয়েছে। এই কডিফিকেশনটা করেছে পার্সিয়ানরা। একটা সাধারণ জনগণের কথ্য ভাষাকে কোডিফাই করে স্ট্যান্ডার্ড এলিট ভাষা করতে গিয়ে কিছু শব্দ যা লিখিতভাবে স্টনাডারডাইজড করা যায়নি, তারা সেটাকে যেমন আছে তেমন রেখে দিয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে শুধুমাত্র একটা বর্ণ দিয়েও কথ্য ভাষার শব্দ হয়। এইটা আমার একটা হাইপোথিসিস।

৬। কোরআনের বিভিন্ন চ্যাপ্টারের নামকরণঃ

কোরআন অবতীর্ণের সময় এর চ্যাপ্টার গুলির কোন নাম ছিলনা। এই নামকরন পরবর্তীতে হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই নাম করন কত পরে হয়েছে? ট্র্যাডিশন অনুযায়ী নবী মোহাম্মদের সময়কালেই এই নামকরণ করা হয়েছে। ইবনে কাছিরের কোরআনের তফসিরে এর পরোক্ষ কিছু প্রমান পাওয়া যায়। যেমন কোন এক ঘটনার প্রেক্ষাপটে (সম্ভবত যুদ্বের ময়দানে) পলায়নরত মুসলমানদের কে উদ্দেশ্য করে বলা “হে বাকারার আয়াত ধারীরা......” (সঠিক টা মনে নেই, তফসির খুলে দেখতে ইচ্ছা করছে না)। বার্মিংহাম ম্যানুস্ক্রিপ্ট আবিস্কার হবার আগে, কোরআনের প্রাচীনতম ম্যানুস্ক্রিপ্ট ছিল “সানা ম্যানুস্ক্রিপ্ট” (৬৭১ খৃষ্টাব্দের আগে ৯৯% একুরেসি সহ। যারা পরিসংখ্যান পড়েছেন তারা বুজবেন ৯৯% একুরেসি এর মানে কি) । সানা ম্যানুস্ক্রিপ্টে কোন চ্যাপ্টারের নাম উল্লেখ করা নাই। হালে আবিস্কৃত বার্মিংহাম ম্যানুস্ক্রিপ্টে (৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ ৯৫.৪% একুরেসি সহ) কোন চ্যাপ্টারের নাম নেই। সুতরাং কোরআনের চ্যাপ্টারের নাম অনেক পরে হয়েছে।


(সানা ম্যানুস্ক্রিপ্ট। চ্যাপ্টারের কোন নাম নাই)


(বার্মিংহাম ম্যানুস্ক্রিপ্ট। ১৯ তম চ্যাপ্টারের শেষ এবং ২০ তম চ্যাপ্টারের শুরু। ২০ তম চ্যাপ্টারের শুরুতে চ্যাপ্টারের কোন নাম নেই)

৭। কোরআনের প্রথম আয়াতঃ
লেখার শুরুতেই বলেছি কোরআন সম্পর্কে সত্যিকার অর্থে খুবই কম জানি। বহুল প্রচলিত মতবাদ হচ্ছে কোরআনের আয়াত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। এইটার সত্যতা কতটুকু আমি জানি না। এটা হতে পারে আবার নাও পারে। এইটা নিরপেক্ষ গবেষণার দাবী রাখে। একটা উদাহরণ দেই, প্রচলিত মতবাদ হচ্ছে একটা বহুল প্রচলিত গল্প যার প্রেক্ষিতে কোরআনের ৯৬ নম্বর চ্যাপ্টারের “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” অবতীর্ণ হয়েছে। আমিও একসময় এইটাই মনে করতাম। কিন্তু মজার বিষয় হল বুখারিতে একটা হাদিসে আছে যেখানে বলা হয়েছে কোরআনের প্রথম আয়াত ৭৪:১ (বুখারী , বুক ৬, ভলিউম ৬০, হাদিস ৪৪৪)। সুতরাং কোনটা বিশ্বাস করব? কোনটার পক্ষেই কোন বাস্তবভিত্তিক প্রমান নেই। সুতরাং কোরআনের প্রথম আয়াত কোনটা সেটা বলতে পারছি না।

৮। কোরআনে শব্দের ব্যাবহারঃ
সকল ভাষাই পরিবর্তনশীল। আরাবিক ভাষাও এর ব্যাতিক্রম না। কোরআন অবতীর্ণের কথিত সময় থেকে আজকে প্রায় ১৪০০ বছরে আরবী ভাষার অর্থ এবং ব্যাবহার কিছু হলেও অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে। একটা ছোট উদাহরণ দেই। যেমন বাংলা বর্ণমালা আর আরবী বর্ণমালার মধ্যে মিল হচ্ছে উভয় বর্ণমালায় বড় বা ছোট হাতের বর্ণমালা (Capital Letter and Small Letter) বলে কিছু নেই। সুতরাং কোনটা প্রপার নাউন আর কোনটা কমন নাউন সেইটা বর্ণমালা দিয়ে বুঝা যায়না। ইংরেজীতে যেমন প্রপার নাউনের আগে ক্যাপিটাল লেটার দিয়ে লেখা হয় যার ফলে সহজেই বুঝা যায় এটা প্রপার নাউন, বাংলা বা আরবীতে এইরকম কোন ব্যাপার নেই। পঠন পদ্বতি দিয়েই বুঝতে হয় কোনটা নামবাচক বিশেষ্য আর কোনটা গুনবাচক বিশেষ্য। কোরআনের ১৭:১ এ বলা হয়েছে “মসজিদুল আকসা”। এটা দুইটা আরবী শব্দ। অনেকেই এটাকে নাম বাচক বিশেষ্য মনে করে বর্তমান জেরুজালেমে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ কে মনে করেন। জেরুজালেমে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ সমর্পকে আমরা প্রাপ্ত তথ্য প্রমান যেটা পাই সেটা হচ্ছে এটা কোরআন অবতীর্ণের অনেক পড়ে বানানো হয়েছে এবং নামকরণও পরে করা হয়েছে। মুলত নামটা কোরআন থেকে নেওয়া হয়েছে বলে এই কনফিউশন তৈরী হয়েছে। এই আরবী শব্দ আকসা কোন প্রপার নাউন না এবং অনুবাদযোগ্য। সুতরাং এই শব্দটাকে অনুবাদ করা উচিত।
আরেকটা উদাহরণ হচ্ছেঃ
Muslim Vs muslim। প্রথম শব্দটা নাম বাচক বিশেষ্য এইজন্য প্রথম অক্ষর ক্যাপিটাল লেটারে লেখা হয়েছে। দ্বিতিয়টা হচ্ছে গুন বাচক বিশেষ্য। এইজন্য প্রথম অক্ষর স্মল লেটারে লেখা হয়েছে। পার্থক্যটা সুস্পষ্ট। কোরআনে মুসলমানের স্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া আছে এবং ঐ সংজ্ঞা দ্বারা এইটা প্রতিয়মান হয় যে শব্দটা নাম বাচক বিশেষ্য হবে না অর্থাৎ Muslim না, বরং muslim। কোরআন অনুসারে মুসলিম কোন নাম নয়, বরং কিছু ক্রাইটেরিয়ার সমষ্টি।মুসলমান কাকে বলে? আপনি কি মুসলিম? কিন্তু ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করে এই গুনবাচক বিশেষ্য থেকে নাম বাচক বিশেষ্য পরিণত করা হয়েছে যার ফলে “মুসলমান” শব্দটা একটা অর্থহীন নামবাচক বিশেষ্যে পরিণত হয়েছে। এর স্বপক্ষে প্রমাণও আছে। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ আল -কুদসে অভিযান চালনা করার আগে প্রাথমিক দিকের গ্রীক, রোমান, আরাবিক, সিরিয়াইক কোন ম্যানুস্ক্রিপ্টে “মুসলমান “নামক কোন শব্দ পাওয়া যায়না। আরবদের কে সারাকেন্স, হাগারিয়ান, মুজাহিরিন এই সব শব্দে ডাকা হত। সুতরাং কোরআন পরবর্তী সময়ে muslim শব্দটা Muslim এ পরিবর্তিত হয়েছে। এইটা বুঝতে পারলে ধর্মভিত্তিক হানাহানি সংক্রান্ত অনেক সমস্যা অটমেটিকেলি সমাধান হয়ে যাওয়া উচিত। এই প্রপার নাউন এবং কমন নাউন সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু উদাহরণ আছে।

কোরআনে “রুহু এবং নাফস” এই দুইটা শব্দের ব্যাবহার বিভিন্ন ট্র্যাডিশনের ব্যাবহারের সাথে পার্থক্য আছে। রুহু, নাফস, বাশার, ইনসান, জ্বিন এই শব্দগুলির সঠিক অর্থ বের করতে পারলে মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে সেটা বের করা যায়। “রহমান” শব্দটা কোরআনে প্রয়োগ অনুসারে এবং আরকিওলজিকাল প্রাপ্ত ইনস্ক্রিপশনের সাথে প্রচলিত অনুবাদ “ পরম দয়ালু বা মার্সিফুল” এর সাথে খাপ খায় না। “রহমান” শব্দটা দ্বারা কোরআনে এবং ইনস্ক্রিপশনে বুঝানো হয়েছে কোন কিছু যা শক্তি মাত্তা বা ক্ষমতা নির্দেশ করে।

সময় স্বল্পতার জন্য এখানেই শেষ করছি। উপসংহার হচ্ছে কোরআনের কন্টেনেটের বাইরে কোরআন সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে খুবই কম জানি। কোরআনের উৎপত্তি বিকাশ এইসব বিষয়ে প্রচুর নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা হওয়া উচিত, যা গত ১৪০০ বছরে খুবই অপ্রতুল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৫৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×