somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নর্থ গোয়া ডে ট্রিপ (শেষাংশ) - মিশন গোয়া - ২০১৬ (চতুর্থ পর্ব)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









আমাদের গোয়া ট্রিপের দ্বিতীয় দিনে ছিল নর্থ গোয়া সাইট সিয়িং। গোয়া মূলত নর্থ আর সাউথ এই দুই অংশে বিভক্ত হয়েছে। আমরা আগের পর্বে গোয়া’র নর্থ সাইড এর কোকো বিচ, ফোর্ট আগুডা এবং লাইট হাউস, আনজুনা বীচ ভ্রমণের গল্প করেছি। আনজুনা বীচে এসে আমাদের আগের পর্ব শেষ হয়েছিল। গোয়া মূলত ছোট ছোট অনেকগুলো সী-বীচ নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একেকটা বীচের একেক রকম বৈচিত্র। যাই হোক আমরা আনজুনা বীচ হতে হতে গেলাম ভাগাতোর সি বীচ। আমাদের টুরিস্ট বাস এখানে থামিয়ে আমাদের গাইড আধঘন্টা সময় দিল এই সৈকতে ঘুরে বেড়াতে।









ভাগাতোর সী-বীচ গোয়া সর্ব-উত্তরের বারদেজ এ অবস্থিত; এই ভাগাতোর বীচ এর দক্ষিণে রয়েছে আনজুনা সী-বীচ। এই ভাগাতোর সী-বীচ’কে বলা হয় গোয়া’র প্রথম হিপ্পিদের ডেরা। গোয়া’তে নানান দেশের ড্রাগস ডিলারদের আনাগোনা রয়েছে, রয়েছে হিপ্পিদের দল। আর এই সকল বিদেশী থেকে শুরু করে সাধারণ বিদেশী পর্যটক; সকলের কাছে জনপ্রিয় এই ভাগাতোর সী-বীচ। ২০০৭ সাল থেকে এই ভাগাতোর সী-বীচ এ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল “Sunburn Festival” যা মূলত মিউজিক, নানাবিধ বিনোদন, বৈচিত্রময় খাবারের সমাহার, শপিং সহ নানান আয়োজনে ভরপুর একটি জমকালো আয়োজন। CNN এর ২০০৯ সালের জরিপ অনুযায়ী এটি ছিল বিশ্বের সেরা দশটি ফেস্টিভ্যাল এর একটি। চারদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নানান মঞ্চে নানান শিল্পী কুশলী’রা পারফর্ম করেন। ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এই উৎসব গোয়ার এই ভাগাতোর বীচেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে তা পুনেতে শিফট করা হয়েছে। ভাগাতোর সী-বীচ দুইটি অংশে বিভক্তঃ বিগ ভাগাতোর আর লিটল ভাগাতোর। বিগ ভাগাতোর অংশটি মূল সমুদ্রতটের পাশে, যেখানে কার পার্কিং এবং নানান দোকান-পাট ছড়িয়ে রয়েছে। আর লিটল ভাগাতোর অপেক্ষাকৃত শান্ত, প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবেষ্টিত। ভাগাতোরে রয়েছে অনেকগুলো বার এবং ডিজে ক্লাব। আর এসব কারনে একে ডিস্কো ভ্যালী’ও বলা হয়ে থাকে।

Sunburn Festival সম্পর্কে আরও জানতে ঢুঁ মারুনঃ Sunburn Festival







উপরের ছবি তিনটি নেট হতে সংগৃহীত

আমি আগে থেকে সকল তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে ট্যুরে গিয়েছিলাম বলেই জানি, এই বীচের পাশেই রয়েছে চাপোরা ফোর্ট, এখানেই "দিল চাহ তা হ্যায়" সিনেমার শুটিং হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সেখানে যাওয়া হবে না, ৩৫ মিনিটের যাত্রা বিরিতি, শুধুমাত্র সৈকত ভ্রমণের জন্য। আমি হুট করে সিদ্ধান্ত নিলাম মিনিট পাঁচেক সময়ের জন্য হলেও এই ফোর্ট দেখব। কাউকে না বলে, ফোর্ট এর রাস্তা ধরে দৌড় লাগালাম। দৌড়ে দৌড়ে প্রায় ৫০০ মিটারের বেশী উঁচুতে থাকা ফোর্টে পৌঁছতেই মিনিট পনেরো শেষ। যখন সেখানে পৌঁছলাম, তখন হাপাচ্ছি আর বুকের ধুকপুক হাই বিটে চলছে। কিন্তু চারিধারের দৃশ্য পুরো বিমোহিত করে দিল। সামনে সুবিশাল আরব সাগর, নীচে পাথুরে সৈকতের তীরে সারি সারি নারিকেল গাছ ছায়া ফেলছে সাগরের নীল জলে। বিপরীত দিকে গোয়া'র ব্যাকওয়াটার এর জলাভূমি। দ্রুত কিছু ছবি তুলে দ্রুত নামতে শুরু করলাম। যখন বাসে এসে উঠলাম, তখন আমি ছাড়া সবাই হাজির, মাত্র পাঁচ মিনিট দেরী হয়ে গেছে।









গোয়া’র বারদেজ এলাকার চাপোরা নদীর তীর ঘেঁষে এই ফোর্ট নির্মিত হয় ১৫১০ সালে পূর্তগীজদের গোয়ায় আগমনের পরে, যদিও এখানে আগে থেকে একটি ফোর্ট এর অংশ বিশেষ ছিল। ১৬৮৩ সালে সম্রাট আকবর তার পিতার শত্রু মারাঠাদের সাথে জোট করে বারদেজ হতে পূর্তগীজদের বিতাড়িত করে এই ফোর্ট দখল করে নেই। বর্তমান ফোর্টটি ১৭১৭ সালে পুরানো দূর্গ’র জায়গায় নির্মিত হয়। এর নির্মাতা ছিলেন পারনেম এর শাসক মহারাজা সামন্তাদি যে ছিল পূর্তগীজদের পুরাতন শত্রু। পরবর্তীতে এটি মারাঠাদের দখলেই চলে আসে। এখান হতে সূর্যাস্ত উপভোগ্য বিধায় বর্তমানে শেষ বিকেল বেলায় মুখর হয়ে ওঠে এই ফোর্টটি। ২০০১ সালে বলিউড মুভি “দিল চাহতা হ্যায়” এর শুটিং এখানে হওয়ার পর থেকে এখানে জনসমাগম অনেক বেড়ে যায়। অনেকে এই ফোর্টটিকে সেই সিনেমার নামে চিনে থাকে।










ভাগাতোর সী-বীচ ভ্রমণ শেষে লাঞ্চ ব্রেক। দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে মধ্যাহ্ন বিরতি রইল লাঞ্চের জন্য। প্রায় আধঘন্টার বিশ্রাম শেষে আবার শুরু হল এই ডে-ট্রিপ। পরবর্তী গন্তব্য, কালাংগুট সী-বীচ। বিখ্যাত কালাংগুট বিচ, এক্কেবারে আমাদের কক্সবাজারের মত অবস্থা, লোকে লোকারণ্য, কি ভারতীয়, কি ভিনদেশী... পর্যটকদের জন্য কালাঙ্গুট যেন এক টুকরো স্বর্গ। পাম আর নারকেল গাছ এ ছাওয়া ছবির মত সুন্দর, চার মাইল দীর্ঘ আরব সাগর ঘেঁষে ছড়িয়ে থাকা সৈকত। এর দক্ষিণ দিকে ক্যানডলিম গ্রাম আর উত্তরের দিকে রাস্তা চলে গেছে বাগা’র দিকে। গোয়া অন্যতম মূল সৈকত এলাকা হল কালাংগুট। মাল্টিপ্লেক্স, নানান তারকা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, ডিসকো সবই রয়েছে এখানে। এর সার্বিক সৌন্দর্য আর সুবিধা বিবেচনা করে একে গোয়ার ‘সৈকতের রানী’ বলে অভিহিত করা হয়। সারা বছরই স্থানীয় এবং বৈদেশিক পর্যটক এ মুখরিত থাকে এই সমুদ্র সৈকতটি।











এখান হতে আমরা গেলাম মাপুসা’র “কালাচা সী-বীচ” এলাকায়। এটি একটি ছোট্ট সৈকত, যা মূলত মিষ্টি পানির লেগুনের জন্য এটি বিখ্যাত। এই সৈকতের দক্ষিণে রয়েছে একটি সুউচ্চ পাহাড় যেখান হতে প্যারা গ্লাইডিং এবং হ্যাং গ্লাইডিং করা যায়। আরাম্বল সৈকত হতে পায়ে হেঁটে এই বীচে চলে আসা যায়। বিকেলবেলা এখানকার আকাশে ডজনখানেক প্যারাগ্লাইডার দেখতে পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। মূলত প্যারাগ্লাইডিং এর জন্যই পর্যটকেরা এখানে ভিড় করে থাকে। এই বীচ’কে অনেকেই উত্তর গোয়া’র সবচেয়ে সুন্দর সৈকত হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।











পরের গন্তব্য ছিল পানজিম, যেখানে আমরা প্রথমদিন এসেই পৌঁছেছিলাম। সেখানে কিছু গেস্ট ড্রপ করে সন্ধ্যে নাগাদ আমাদের নামিয়ে দিল মিরামার বীচ সংলগ্ন আমাদের হোটেল “মিরামার রেসিডেন্সি”তে। মিরামারে ফিরে হোটেলে গিয়ে ক্যামেরা, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন এগুলো রুমে রেখে হোটেলের পেছনের সৈকতে চলে গেলাম সমুদ্র স্নানে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত নোনা জলে ভিজে সৈকতে বসে রইলাম। সন্ধ্যের পর হোটেলে ফেরা। বিকেলের নাস্তা হিসেবে চিকেন রোল আর হট চকলেট খেয়ে বসে রইলাম এশিয়া কাপ টি-টুয়েন্টি'র ফাইনাল খেলা দেখতে টিভি সেটের সামনে। বাংলাদেশ জিতে গেলে কত মহানন্দ হত, ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের বিজয়ে হাত তালি দেয়া যেত সজোরে।





সবশেষে রাতের খাবার খেলাম সেই বিরিয়ানি ফেস্টিভালে (পুরাই ভুয়া), চাউমিন আর প্রন বিরিয়ানি দিয়ে। এখন ঘুমাতে হবে, আগামীকাল সাউথ গোয়া হান্টিং শেষে রাতের গাড়িতে মুম্বাই রওনা হব।

এই সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
মিশন গোয়া - ২০১৬ (প্রথম পর্ব)
পানজি টু মিরামার : মিশন গোয়া - ২০১৬ (দ্বিতীয় পর্ব)
নর্থ গোয়া ডে ট্রিপ (প্রথমাংশ) - মিশন গোয়া - ২০১৬ (তৃতীয় পর্ব)

আগের ভারত ভ্রমণের সিরিজগুলোঃ
কাশ্মীর ভ্রমণ সিরিজ
দিল্লি-সিমলা-মানালি সিরিজ
কেরালা ভ্রমণ সিরিজ

কম খরচে ভারত ভ্রমণ সিরিজঃ
কম খরচে ভারত ভ্রমণ - প্ল্যান ইউথ বাজেট ডিটেইলস সিরিজ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×