somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় কোচিন, বিদায় কেরালা - (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১৭)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল রাতের কোচিন শহরের সাথে আজকের সকালের কোচিন শহরের মিল পেলাম না। ব্যস্ত রাজপথ সেই সকালবেলাতেই। যদিও ঘুম থেকে বেশ দেরী করে উঠলাম, আয়েশী ঢঙ্গে বিছানা ছাড়তে ছাড়তে প্রায় সকাল নয়টা। আর এতটুকু আয়েশ করবোই না বা কেন? গত একসপ্তাহে টানা পাঁচদিন ভোররাতে বের হয়ে সন্ধ্যে পেড়িয়ে রাতের বেলা হোটেলে ফিরেছি, না হয়েছে তেমন রেস্ট, না ঘুম। একরাত আগে হাউজবোটে আরাম করে ঘুমিয়েছি, ফের এদিন ঘুমালাম। ফ্রেশ হয়ে সবাই হোটেলের ডাইনিং এ চলে এলাম, শেষ গেস্ট হিসেবে আমাদের দল নাস্তা সারতে সারতে দশটা পেড়িয়ে গেল। আসলে, আমাদের কেরালা ভ্রমণ এর শেষদিন ছিল এদিন। তেমন কোন প্ল্যান নেই, সারাদিন ফ্রি-টাইম। তাই বেশ রিলাক্স মুডে সবাই সময় পার করার সিদ্ধান্ত। নাস্তা শেষে ফের বিছানায় গড়াগড়ি আর টিভি দেখে বেলা বারোটার পর হোটেল হতে চেক আউট করলাম।



আমাদের এই ট্যুরের কেরালা পার্ট এর সার্বক্ষনীক ড্রাইভার কাম গাইড, মিঃ বিনয় পি জোশ যথারীতি সকাল থেকেই তার গাড়ী নিয়ে তৈরি ছিলেন। আমরা বের হয়ে তার গাড়ীতে মালপত্র চালান করে দিয়ে বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলাম। প্রথমেই ফের চলে এলাম সেই জেটি ঘাটে। এখানে ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে চলে এলাম ব্যাক সাইড হোলসেল মার্কেটে। গতকাল বিকেলেও এসেছিলাম এখানটায়। আমাদের পুরাতন ঢাকার চকবাজার অথবা বঙ্গবাজারের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে।












এখানকার একটি রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকপদের জুস, মিল্ক শেক, স্ন্যাক্স ইত্যাদি বিক্রি হয়। গতকাল সন্ধ্যায় খেয়েছিলাম সফেদা ফলের মিল্ক শেক, স্থানীয় নাম “চিক্কু”। সেই রকম স্বাদ, বারবার খেতে মন চাইবে। তাই ফের খেলাম, অন্যরা অন্যপদ বেছে নিল। আমি যখন এই পোষ্ট লিখছি, জিহবায় জল আসছে। আহারে, সেই “চিক্কু” মিল্ক শেক খাইতে না পারায় চিক্কুর দিয়া কান্না কইরতে মন চাচ্ছে ;)













যাই হোক, এরপর লোকাল মার্কেটে বিক্ষিপ্তভাবে টুকটাক কেনাকাটা করে সময় কাটিয়ে দুপুরের খাবারের জন্য আবার গেলাম ঐ চিক্কুরওয়ালা :P খাবারের দোকানটায়। কলাপাতার থালি আছে, আছে কেরালা বিরিয়ানি। কেরালা’য় এই কদিনে কেরালা অনেক পদই চেখে দেখা হয়েছে। পুরাতন ঢাকার বিরিয়ানি খেয়ে অভ্যস্ত এই জিহবা, দিল্লী’র কারিমস’ এর বিরিয়ানিকে পাশ মার্ক দেয় নাই; সেখানে কেরালায় খাব বিরিয়ানি!!! হুহ... নাহ, থাক টেস্ট করেই দেখি না, না মজা হলে খাব না... এমনভাব নিয়ে বিরিয়ানি’র অর্ডার দিলাম। কলাপাতায় মোড়ানো বিরিয়ানি এল, খুব ঘ্রাণ ছড়াচ্ছিল এমন নয়। কলাপাতা’র ভাঁজ খুলে প্রথম একনলা মুখে দিতেই চোখ বন্ধ হয়ে এল... “আহ... দ্যাটস কলড বিরিয়ানি...”। আমার জীবনে অনেক বিরিয়ানি খাইছি, তার মধ্যে টপ টেন এমনকি টপ ফাইভেও রাখা যায় এই বিরিয়ানি’কে। আবার কোচিন এলে এই বিরিয়ানি আর চিক্কু মিল্কশেক মিস করা যাবে না। নেক্সট পর্ব থাকবে কেরালা’র খানাপিনা নিয়েঃ “ফুড ডি খাইয়ালা, থুক্কু কেরালা ;) ”। নয়দিনের ট্যুরের সকল কেরালা’র খানাপিনা’র ছবি নিয়ে পোস্ট।







খাওয়া শেষে ফের অলস ঘোরাঘুরি শেষে বিকেলের দিকে রওনা হলাম, এরনাকুলাম রেলস্টেশনের পানে। শেষ বিকেলে এরনাকুলাম এসে বিদায় দিতে হবে আমাদের ড্রাইভার মিঃ বিনয় পি জোশ’কে। কেমন এক মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়েছি এই নয়দিনে। চোখের কোনে লুকানো মুক্তোর দানা উঁকিঝুঁকি দিতে চাইছিল। নিজেকে সামলে নিলাম। আসলে আমার ভারত ভ্রমণে পাওয়া সবচেয়ে বেস্ট ড্রাইভার কাম গাইড। ভদ্রলোককে ড্রাইভার বলতে কেমন বাঁধে। প্রায় সাতবছর আমেরিকায় কাটিয়ে বিদেশ ফেরত এই ভদ্রলোক নিজের টাকায় ২০১৩ মডেলের টয়োটা ইনোভা কিনে টুরিস্ট কার হিসেবে চালান, মাসে ১৫-২০ দিন। বিশাল জায়গা নিয়ে তার বাংলোবাড়ি টাইপ আবাস রয়েছে, স্ত্রী-কণ্যা নিয়ে থাকেন। আমাকে গতদু’দিন ধরে বলছেন, সঙ্গীসাথীদের বিদেয় দিয়ে তার সাথে তার বাসায় যেতে, আরও দিন তিন’চার থেকে যেতে কেরালায়। আমায় নিয়ে ঘুরে বেড়াবে আরও কিছু স্পট। কিন্তু দলনেতা কি দল ছেড়ে রয়ে যেতে পারে? তার সাথে ফোন নাম্বার, মেইল আর ফেবু লিংক দিয়ে বিদায় নিলাম আমরা রেল স্টেশন গেট থেকে।



















আমাদের ট্রেন রাত সাড়ে দশটায়, এরনাকুলাম থেকে মাদগাও, গোয়া স্টেশনগামী “রাজধানী এক্সপ্রেস”, যা গোয়া হয়ে চলে যাবে। আমরা স্টেশন এর লকার রুমে আমাদের ব্যাগপত্তর জমা রেখে ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে বের হয়ে গেলাম এরনাকুলামে ছোটখাট দর্শন এ। এরনাকুলাম কোচি থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত মূল শহরতলী। এরনাকুলাম’কে কেরালার বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। কারণ, কেরালা হাই কোর্ট, কোচিন কর্পোরেশন এর হেড অফিস, কোচিন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে নানান বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এই এরনাকুলাম হতেই। এই এরনাকুলাম মূলত মূল শহরতলী কোচিন এর বর্ধিত নগরায়ন এ গড়ে ওঠা শহরতলী, যা পরবর্তীতে প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে; ঠিক কলকাতার সল্টলেক বা ঢাকার বারিধারা বা উত্তরা’র মত। রাত নয়টা নাগাদ ফিরে এলাম স্টেশনে, রাতের শহর তেমন একটা দেখা হল না। এরপর ষ্টেশনের ফ্রেশরুমে ফ্রেশ হয়ে ফাস্টফুড কিনে রাতের খাবার সেরে অপেক্ষায় রইলাম গোয়াগামী ট্রেনের। আগামী তিনদিনের ট্যুর প্ল্যান গোয়া’তে, সেখান হতে মুম্বাই। কিন্তু এর মাঝেই রয়েছে আরও অনেক গল্প। তারমধ্যে অন্যতম ঘন্টাখানেকের মাঝে শুরু হতে যাওয়া ট্রেন ভ্রমণ অন্যতম। সেই গল্প থাকছে সিরিজের আগামী পর্বে; তার আগে পরবর্তী পর্বে কেরালা খানাপিনা স্পেশাল পোস্ট, আগেই বলেছি। (চলবে)

আগের পর্বগুলোঃ
যাত্রা শুরুর গল্প (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০১)
ট্রানজিট পয়েন্ট কলকাতা... অন্যরকম আতিথিয়তার অভিজ্ঞতা (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০২)
অবশেষে কোচিন - তৃতীয় রাতে যাত্রা শুরুর স্থানে (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৩)
ডেস্টিনেশন মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৪)
মুন্নার টি মিউজিয়াম (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৫)
মুন্নার ভ্রমণ - মাতুপত্তি ড্যাম এবং ব্লোসম পার্ক (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৬)
ইকো পয়েন্ট এবং টপ ষ্টেশন অফ মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৭)
ট্রিপ টু কুলুক্কুমালাই... (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৮)
পেরিয়ার লেক - ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি (থিক্কাদি - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৯)
শিকারা রাইড এন্ড সানসেট এট ব্যাকওয়াটার (কুমারাকোম - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১০)
কোভালাম সী বিচ (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১১)
কন্যাকুমারী দর্শন (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১২)
কেরালা ব্যাকওয়াটার হাউজবোটে একদিন - (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১৩)
আলিপ্পে টু কোচিন - (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১৪)
কোচিন শহরে ঘোরাঘুরি (সেইন্ট ফ্রান্সিস চার্চ এবং ব্যাসিলিকা চার্চ) - (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১৫)
কোচিন শহরে ঘোরাঘুরি (২য় খন্ড) - (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১৬)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×