somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানজি টু মিরামার : মিশন গোয়া - ২০১৬ (দ্বিতীয় পর্ব)

০২ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বঃ মিশন গোয়া - ২০১৬ (প্রথম পর্ব)
উত্তর গোয়া’র মারগাও রেল ষ্টেশন থেকে পানজি (গোয়ার রাজধানী) এর দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ট্রেন পৌঁছল দক্ষিণ গোয়া'র মাদগাঁও স্টেশনে। দ্রুত লটবহর নিয়ে নেমে পড়লাম, ট্যাক্সি হায়ার কাউন্টার থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলাম গোয়ারর প্রধান শহর পাঞ্জিম। রাস্তার দু’ধারে নারিকেল গাছ, তাল গাছ, কোন কোনটায় মনে পড়ে বাবুই পাখীর বাসা ছিল, এরই মাঝ দিয়ে আমাদের চারজনের দলকে নিয়ে ট্যাক্সি এগিয়ে চলল। গোয়া সম্পর্কে আমাকে একটি কথা বলতে বললে আমি বলব, শান্ত এবং নীরব। গোয়া মূলত বার, নাইট লাইফ, ক্যাসিনো, বীচ এসবের জন্য টুরিস্টদের কাছে বিখ্যাত হলেও পুরো গোয়া ঘুরে আপনার আমার কথাটি স্বীকার করতে হবে। কেননা পথঘাট, বাড়িঘর সবকিছুতেই কেমন শান্তি-স্নিগ্ধতা যেন বিরাজ করছে। হতে পারে আমার দেখার বা উপলব্ধির ভুল, কিন্তু আমি যেমনটি দেখেছি তেমনটি লিখলাম।







প্রায় ঘন্টাখানেক পর আমরা পৌঁছলাম ‘পানজি’ এ। গোয়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের রিসোর্ট রয়েছে গোয়ার প্রায় প্রতিটি বীচ এরিয়াতেই। আমরা চলে এলাম পানজি এর GTDC Panani Residency তে। এখানে ইকোনমি বা ডিলাক্স ক্যাটাগরির রুম ফাঁকা নেই, ফলে আমাদের বাজেটের মধ্যে রুম নেই। পরে রিসিপশনে থাকা ভদ্রলোককে বুঝিয় বলতেই উনি ফোন করে খোঁজ নিয়ে জানালেন যে GTDC’র Miramar Residency তে রুম আছে, ফোনেই উনি আমাদের জন্য দুটি রুম বুক করে দিলেন। উনাকে আমাদের গোয়া থেকে মুম্বাই যাওয়ার প্ল্যানের কথা বলে বাস টিকেট এর খোঁজ করতে উনি একজন’কে ফোন করে আমাদের জন্য চারটি টিকেট আনিয়ে দিলেন।



আমি ভদ্রলোকের সার্ভিসে মুগ্ধ, যদিও আমরা কিন্তু উনার হোটেলে থাকছি না। পরে হিসেব করে দেখেছি, আমাদের চারটি বাস টিকেটে উনি হয়ত শ’দুয়েক রুপী কমিশন পেয়েছেন। তাতে কি? সারারাত ট্রেন জার্নি করে এসে গোয়াতে হোটেল খোঁজাখুঁজি এবং বাসের টিকেট করতে যাওয়ার হ্যাপা থেকে বাঁচা গেল। আমি আবার বোকা ট্রাভেলার না শুধু, অলস ট্রাভেলারও কিন্তু। আসলে আমি ট্রাভেলারই না, আমি হলাম অলস টুরিস্ট।









ভদ্রলোকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্যাক্সি করে চলে এলাম মিরামার রেসিডেন্সি’তে। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম হোটেলের বাগানে। এই হোটেলটি বিশাল এলাকা নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিন্ন ভিন্ন ভবনে মোট ৬০টি রুম নিয়ে সুন্দর এই রিসোর্টে রয়েছে বাগান এলাকা, ফুড কোর্ট, কফিশপ, সুইমিংপুল সহ অবসর কাটানোর জন্য লন এরিয়া।







আমরা ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম মিরামারের প্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্ট Food Land এ। কিং ফিস ফ্রাই, লইট্টা শুঁটকি ফ্রাই, ফুলকপির মিক্সড ভেজিটেবল দিয়ে সাদা ভাত, সাথে কোমল পানীয় এবং ডেজার্ট আইটেম দিয়ে সাজানো সেট মেন্যুর নন-ভেজ থালি এবারের ট্যুরের রেস্টুরেন্টে খাওয়া সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক আহার ছিল।









লাঞ্চ শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, এর মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে দেশ থেকে খবর পেলাম, নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কাশ্মীর ট্রিপে এলাম গত বছর, তখন নানু স্ট্রোক করল। বিদেশে এলেই বুঝি এসব ঘটে। এমন কিছুর ভয়েই ঢাকা থেকে ফেরার টিকেট কাটি নাই, মাত্র গতকাল প্রায় পঁচিশ শতাংশ বেশী ভাড়া দিয়ে টিকেট করলাম।

আমাদের রুম ছিল একটা ভবনের দোতলায়। নামার সময় সিড়ির নীচে এই দম্পতি বসে ছিল। তিনদিনে বেশ কয়েকবার আমি এদের দেখে ধোকা খেয়েছি, মনে হয়েছে জীবন্ত দুইজন মানুষ বসে আছে। পুরো গোয়াতে এরকম শিল্পকর্ম চোখে পড়েছিল।



লাঞ্চের পর কিছুই করার ছিল না। রিসিপশুনে গিয়ে আগামী দুই দিনের জন্য নর্থ গোয়া এবং সাউথ গোয়া সাইটসিয়িং এর টুরিস্ট বাসের টিকেট করে নিলাম। কাউন্টার ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করতে বলল, চাইলে মিরামার বীচ হতে বিকেলবেলার এরাবিয়ান সি’তে বোট ট্রিপে যেতে পারি। সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম যাওয়া যাক, মন্দ কি। মিরামার বীচ একেবারে হোটেলের লাগোয়া। হোটেলের ডান পাশ দিয়েও একটি বিকল্প রাস্তা আছে সরাসরি বীচে চলে যাওয়ার। সেটি ধরে আমরা বীচে চলে এলাম, টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট করে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বিকেলের শুরুতে বোট ট্রিপ শুরু হল। আমরা ছাড়া মনে হয়ে নন-ভারতীয় পর্যটক ছিলই না। বোটে উঠতেই সাগরের ঢেউয়ে দুলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর শুরু হল এই বোট ট্রিপ, সাথে শুরু হল উত্তাল মিউজিক। শেষ বিকেল পর্যন্ত চলা এই বোট ট্রিপে উত্তাল মিউজিকের সাথে টিনএইজারদের নাচানাচিতে বোট দুলছিল, নাকি আরব সাগরের ঢেউ এর কল্যাণে, তা বলা মুশকিল।

গোয়ার বিখ্যাত ডলফিন নোউস বোট ট্রিপে এদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল সবার, তিনটা ডলফিনের দেখা মিলল। গোয়া লাইট হাউজ এবং তার নিকটবর্তী কিছু বিখ্যাত স্পট বোট থেকে দেখে সুর্যাস্তের আগে ফিরলাম মিরামার বিচে। এখানে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সময় কাটিয়ে বিচ লাগোয়া হোটেলে ঢুকে পড়লাম।

যার যার রুমে বিশ্রাম নিয়ে সবাই লনে বের হয়ে এলাম। কিছুক্ষণ চলল আড্ডাবাজি, এরপর সবাই মিলে রাতে ফাস্টফুড আইটেম দিয়ে ডিনার করার পরিকল্পনা করা হল। হোটেলের বিশাল চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বেশ কিছু খাবার দোকানের একটি Richie Food এ খেলাম Cheese-Salami Sandwich, Crispy Chicken Roll এবং শেষে Cafe Mocha কফি। খাওয়া শেষে রাতের মিরামার এর রাজপথ একটু ঘুরে দেখে হোটেলে ফিরে দেখি অন্যপাশের রেস্টুরেন্টে চলছে "কাবাব এন্ড বিরিয়ানি ফেস্টিভাল"!!! কেমন লাগে মেজাজটা.... যাই হোক, আগামীকালও চলবে এই আয়জোন, শুনে খুশী হলাম, সাথে সাথে সংগী সাথীদের জানিয়ে দিলাম, আগামীকালকের ডিনার হবে কাবাব এন্ড বিরিয়ানি ফেস্টিভ্যাল এর খাবার দিয়ে। এখন ঘুমাই, আগামীকাল সকালে নর্থ গোয়া ট্যুর, সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ FoodLand এর ছবিগুলো তাদের ওয়েবসাইট থেকে ধার নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×