somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩০)

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুলশান আরার বাসাটা শান্তিনগরের বেশ ভেতরে। বাজারের পাশ দিয়ে বেশ অনেকটা দূরে যেতে হয়। রাস্তার অবস্থাও বেশ সুবিধার না। এবড়ো থেবড়ো। রিক্সা দিয়ে গেলে অনেক ঝাঁকুনি খেতে হয়। হেঁটে গেলেও আরেক বিড়ম্বনা যদি বৃষ্টি হয়ে থাকে। প্যাচপ্যাচে কাদা। এই কাদা পাড় হয়ে যাওয়া বিশাল ঝক্কি ঝামেলা। আফরোজা এই বিশাল ঝক্কি ঝামেলা ঘাড়ে করে নিয়েই গুলশান আরার বাসায় গেল। ছেলের জন্য পাত্রীর খোঁজ নেওয়াই তার উদ্দেশ্য। অনেকের কাছেই ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে বলেছে। তাদেরই কারো কাছ থেকে গুলশান আরার নাম শুনেছেন। ইনি নাকি অনেক মেয়ের খোঁজ জানেন। তবে টাকাটা একটু বেশী নেন। টাকা নিয়ে আফরোজার চিন্তা নেই। দেবেন যা লাগে। কিন্তু ছেলের বিয়ের চিন্তায় তার ঘুম হচ্ছে না আজকাল। তার ছেলেটা কি এরকমই একলা থেকে যাবে? একলা থাকাটা খুব সুখের নয়। এই ছেলেকে বুকে চেপেই সে এতগুলো বছর একলা চলেছেন। একলা মহিলার এমনিতেই অনেক রকম ঝামেলা। কিন্তু তারও তো একটা মন ছিল। অন্ধকার রাতে তার মনটাও কি কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্য হু হু করতো না!! করতো। তাই তিনি চান না ছেলে একা থাকুক। বিয়ে করুক। বাচ্চা হোক। সুখের একটা সংসার হোক তার। আফরোজা দায়ী নয় তাও ছেলেকে একটা পরিপূর্ণ পরিবারের স্বাদ সে দিতে পারেনি এ জন্য তার মনে অনেক দুঃখ। বাবার আদর। বাবা কী? বাবার দিকের কোন আত্মীয় এই ছেলে দেখেনি। নিজের বাবার কথা মনে হলে আফরোজার আরো মনটা খারাপ হয় পুলকের জন্য। আফরোজার বাবা, পুলকের নানা স্বল্পভাষী ছিলেন। কিন্তু বাবা হিসেবে সব দায়িত্ব তিনি পালন করেছিলেন। মাথার উপর বাবার ছায়া যে কতবড় অবলম্বন তা তিনি জানেন। তার ছেলে পুলক জানে না। তার কাছে মা-ই সব। মা-ই বাবা। মা-ই মা। আজকাল আফরোজার মনটা খুব দুর্বল হয়ে গেছে। নরম হয়ে গেছে।

এসব ভাবতে ভাবতে গুলশান আরার বাসার কাছে চলে আসলেন আফরোজা। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে ঠিকানা দেখলেন কাগজে। হ্যাঁ, সামনের বাড়িটাই। তিনিতালায়।
কলিং বেল টিপলেন। একটি ছোট মেয়ে দরজা খুলল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
-গুলশান আরা বেগমের বাসা?
ছোট মেয়েটি বেশ অভ্যস্তভাবে বলল-
-ভিতরে আইসা বসেন।
মেয়েটাকে নির্দেশ দেয়া আছে। মহিলা যারাই আসুক তাঁদের যেন বাইরের ঘরে বসানো হয়।

আফরোজা বসলেন।
ঘরটা ভালোই সাজানো। খালি কলর কম্বিনেশন খুব উৎকট। সব ক্যাটক্যাটে কলরের জিনিসপাতি। কলাপাতা কলরের পর্দা। ম্যাজেন্টা কলরের সোফা আর কার্পেট। ছোট মেয়েটা চা আর ঠাণ্ডা পানি এনে রেখে গেল।

৫ মিনিট পরেই গুলশান আরা ঢুকলেন। বিগলিত হাসি হেসে সালাম দিলেন। তিনি মানুষ চড়িয়ে খান। তাই সব মানুষের প্রতিই তার সমান আদব। তার আদবই তার অনেক কাস্টমার জুটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে দূর দূর থেকেও তার কাছে লোক আসে। মহিলারাই বেশি আসে।

আফরোজা ছেলের বায়োডাটা নিয়ে এসেছিলেন। দিলেন। গুলশান আরা দেখলেন, বললেন
-আপা!! আপনার ছেলে তো হীরার টুকরা। এর জন্য মেয়ে আমার খুঁজাই লাগবে না। এরকম ছেলের জন্য কত মেয়ে আছে। ঝুট ঝামেলা কিচ্ছু নাই। এক মায়ের এক ছেলে। আর বাবা সাথে নাই এটা কোন বিষয় না। এরকম বহু কেস আমি হ্যান্ডেল করসি। আপনি চিন্তা কইরেন না। আমার কাছে কিছু মেয়ের ছবি আসে। দেখেন আপনি।
বলেই ‘সমীরন’ বলে একটা ডাক দিল। সেই ছোট মেয়েটা কিছু ছবি এনে টেবিলে রেখে দিল।

আফরোজার টেবিলে পড়ে থাকা প্রথম ছবি দেখেই বিরক্তি লাগল। কিরকম গ্রাম্য চেহারার মেয়ে। আসলে মেয়েটা গ্রাম্য ছিল না। ছবি তোলার ভঙ্গিটা একটু গ্রাম্য ছিল। আর ছবির কলরটাও এই ঘরের কলরের মত।
গুলশান আরা লোক চড়িয়ে খান। তিনি আফরোজার মনোভাবটা যেন বুঝতে পারলেন। বহুরকমের মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে। মানুষের রুচিবোধ যে একেক জনের একেক রকম তা তিনি জানেন। এই রুচিবোধ এলাকা অনুযায়ী আলাদা হয়। মানুষের পড়াশোনা অনুযায়ী আলাদা হয়। অনেক বড়লোক ঘরের মহিলারা এসে এসব ক্যাটক্যাটা ছবি দেখেই খুশি হয়। আবার মধ্যবিত্ত ঘরের পড়াশোনা জানা মেয়েদের রুচিবোধ অন্যরকম।
তিনি বললেন,
-আপা, পরের থেকে দেখেন। এই ছবিটা বেশি ভালো না। মেয়ে কিন্তু দেখতে ভালো।

আফরোজা উল্টিয়ে গেলেন। বেশ কয়েকটা ছবি উল্টানোর পর একটা ছবিতে তার চোখ আটকে গেল।

গুলশান আরা আড় চোখে দেখছিলেন। ঠিক কোন ছবিটায় আফরোজার চোখ আটকে গেল তা খেয়াল করলেন তিনি।
গুলশান আরা বললেন-
-আপা!! এই পাত্রী পছন্দ কইরেন না। এদের নখড়া অনেক। এদের জন্য অন্য পাত্র খুজতেসি। এর আগে জানি কোন আজে বাজে ছেলে কে গছানোর চেষ্টা করসে তাই এরা এইবার খুব সাবধানী।

আফরোজার মুখটা সাদা হয়ে গেল। ছবিটা রীতার ছিল। রীতাকে দেখতে তিনি আর পুলক দুজনেই গিয়েছিলেন। তার পুলককে ‘আজে বাজে’ ছেলে বলেছে। কত কষ্ট করে এই ছেলেকে তিনি বড় করেছেন। নিজের সবটুকু নির্যাস দিয়ে তিনি এই ছেলেকে বড় করেছেন। তাহলে কেন তার ছেলেকে ‘আজে বাজে’ বলছে। কিসের ভিত্তিতে। সেটা কী শুধু তিনি সংসার করতে পারেননি বলে। এই দায়ভার তো তিনি সারা জীবন বয়ে বেড়িয়েছেন। কত কথা শুনেছেন। কখনো সরাসরি। কখনো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে। মেয়েরাই মেয়েদের কাটা জায়গায় খোঁচা দিতে বেশি পছন্দ করে। তাঁদের কখনো কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। কখনো এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁকে এভাবে কেউ আঘাত করতে পারেনি যতটা আজকে এই একটা শব্দ করল।

আফরোজা আর একটা ছবিও দেখলেন না। শরীর খারাপ লাগছে বলে তিনি উঠে পড়লেন।

তার ছেলেকে ‘আজে বাজে’ বলেছে। তার কত গর্ব। তার কত অহংকার তার এই ছেলে। তাঁকে ‘আজে বাজে’ বলেছে। কি ‘আজে বাজে’ কাজ করেছে তার ছেলে।

খুব ছোট একটা শব্দে এক বিশাল বড় দুঃখ নিয়ে বাসায় ফিরলেন আফরোজা। বাসায় কেউ নেই। পুলক তখনো ফেরেনি। ফেরার কথাও না। মাত্র দুপুর। আফরোজা শুয়ে পড়লেন।

পুলক বাসায় ফিরল সন্ধ্যায়। পুরো বাড়ি অন্ধকার। ‘মা’ ‘মা’ করে ডাকল সে কিছুক্ষণ। সাড়া নেই। মায়ের ঘরে গিয়ে দেখল মা শুয়ে আছে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করল পুলক। অন্যদিন মা ঘুমিয়ে থাকলে শ্বাস প্রশ্বাসের উঠা নামা দেখে সে। আজকে তা খেয়াল করেনি। করলে বুঝতে পারত আফরোজা এই পৃথিবীতে তার এত আদরের সন্তান পুলককে একদম নিঃস্ব আর একা করে দিয়ে অনন্তের পথে যাত্রা করেছেন।

পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৯
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×