somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩৫)

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু মানুষ আবেগ দেখাতে পারে না। বা পারলেও দেখাতে পছন্দ করে না। আবেগ দেখানোকে তারা দুর্বলতা মনে করে। এদের মধ্যে অনেকে এরকম ভাবতেও পছন্দ করে যে তাঁদের মধ্যে হয়তো আবেগ নেই। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্যি যে এই ধরনের মানুষদের মধ্যেই নির্ভেজাল আবেগের অস্তিত্ব বেশী থাকে। তাঁর প্রকাশও ঘটে এমনভাবে যাতে তারা নিজেরাও অবাক হয়ে যায়। যেরকম অবাক পুলক হচ্ছে।

প্রেমিক পুরুষ ভাবার মত কোন গুণাবলী পুলকের আছে বলে তাঁর কখনো মনে হয়নি। রীতার সাথে সম্পর্কের পর সে বুঝেছিল যে আসলেই প্রত্যেক মানুষের মাঝেই হয়তো প্রেম লুকানো থাকে। সেই প্রেম প্রকাশিত হয় সেই প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে।

পুলকের একটা ডায়েরি ছিল। সেই ডায়েরিতে সে রীতাকে চিঠি লিখত। যখনই তাঁর রীতার কথা মনে হত। তখন-ই লিখত। রীতাকে তো আর সব সময় পাওয়া যেত না। মাঝে মাঝে ডায়েরিটা রীতাকে দেখাত। রীতা পড়ত। আবেগাপ্লুত হত। এমন কিছু লিখা থাকত না। আবেগের সময়ের বেশীরভাগ কথাই পরে পড়লে খুবই লজ্জা লজ্জা লাগত পুলকের। তাও লিখত। চিঠি লিখার সময় তাঁর মনে হত সে যেন সে যেন রীতার সাথে কথা বলছে। আর রীতা চুপ করে শুনছে।

জীবন অদ্ভুত। সেই ডায়েরি পড়ে আছে ঘরের কোণে। অনাদরে। অবহেলায়। ধূলায়। কিন্তু আজো পুলক চিঠি লিখছে। রিমকিকে। কতদিন পর পুলকের মন আবেগে দ্রবীভূত। কতদিন পর পুলকের বুকে দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজ হচ্ছে। এত দ্রিম দ্রিম আওয়াজ যেন কখনো বাজেনি।

সেইদিনের সেই ডাকের কোন ব্যাখ্যা পুলক খুঁজে পায়নি। সেই ডাকের প্রত্যুত্তরে রিমকির সাড়া দেওয়ার ব্যাখ্যাও রিমকি পায়নি। খালি বুঝেছিল বুকের এমন এক জায়গায় স্পর্শ পেয়েছে যে জায়গাটা অবশ হয়েছিল। পা ঝিম ঝিম করলে যেমন হাজার চিমটি দিয়েও পায়ের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। বুকের ঐ জায়গাটাও যেন অনেকদিন ধরে অবশ হয়েছিল। হঠাৎ করে ঝিম ঝিম শেষ হয়ে গেলে পায়ে যেমন শিরশিরানি দিয়ে পায়ের অস্তিত্ব ফিরে আসে। পুলকের ডাকে যেন ঠিক ওইভাবে বুকের ঐ অবশ জায়গাটার অস্তিত্ব ফিরে এসেছিল। একই সাথে খুব আনন্দ আর খুব বেদনা হয়েছিল রিমকির। আনন্দ নিজের হারানো অনুভূতির অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ার। আর দুঃখ হল ঠিক যে জায়গা থেকে ডাকটা আসার ঠিক সে জায়গা থেকে ডাকটা না আসায়।

‘নীতিবোধ’ খুবই কৌতুকময় একটা ব্যাপার। জীবনে সুবিধাজনক জায়গায় থেকে এই নীতিবোধকে কোলে নিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষেরা অনেক ঠিক বেঠিকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। কিন্তু আসলে এই নীতিবোধ যে কতটা ঠুনকো তা মানুষ তখনই বুঝে যখন তাঁদের নীতিবোধের সাথে প্রবল আবেগের সংঘর্ষ হয়। যেমন হয়েছে পুলক আর রিমকির।

খালি চোখে, মোটা দাগে সবাই দেখবে রিমকি আর অনিকের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় মানুষ হিসেবে পুলকের আগমন। হয়তো পুলক পুরুষ বলে ক্ষমা পেয়ে যেতেও পারে এই সমাজের কাছে। কিন্তু কেউ কি রিমকি কে ক্ষমা করবে? করবে না। কেউ দেখবে না পুলকের শূন্যতা। কেউ দেখবে না রিমকির অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি। কেউ দেখবে না কি আশ্চর্য অবর্ণনীয় এক সম্পর্কে তাঁরা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। কেউ না। পুলক আর রিমকি যদি এখানে না থাকত তাহলে তারাও বুঝত না।

সেইদিনের ঐ ডাকের পর কফি খেতে গিয়ে আগের দিনগুলোর মত কথা যেন জমে উঠছিল না। দুজনেই চুপ। রিমকি তখনো রাতের সেই ডাকের আবেশে আবেষ্টিত। তাঁর খালি মনে হচ্ছে শেষ কবে অনিক তাঁকে ডেকেছিল। একটু আবেগ নিয়ে। একটু নরম হয়ে। কবে!!! স্মৃতির পাতা তন্ন তন্ন করেও তো খুঁজে পাচ্ছে না রিমকি। সবসময় রিমকি-ই ডেকেছে। আকুল হয়ে। একবারের জন্যও অনিক ডাকেনি। একটা সময় রিমকিও ডাকা বন্ধ করে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই। তাতেই হয়তো বুকের ভিতরের ঐ জায়গাটা অবশ হয়ে গিয়েছে। আজ অনেকদিন পর অন্য এক পুরুষের ডাকে শরীর অবশ হয়ে এল।

এসব ভাবতে ভাবতেই হয়তো রিমকির চোখ পানিতে ভরে গিয়েছিল। পুলক এক দৃষ্টিতে রিমকিকে দেখছে। রিমকির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছল ছল করছে কিন্তু পানি পড়ছেনা। অবশেষে এক ফোঁটা পানি মোটা দাগে গড়িয়ে পড়ল। পুলক হাত বাড়িয়ে রিমকির চোখের পানি মুছতে গাল স্পর্শ করল। পুলকের হাত রিমকির গালে স্পর্শ হতেই যেন রিমকি শিউরে উঠল। রিমকির শিউরে ওঠা দেখে পুলক চমকে গিয়ে হাত সরিয়ে নিতে গেল। কিন্তু রিমকি পুলকের হাত ওঁর গালে চেপে ধরল।

আরেকটা মুহূর্ত। ব্যাখ্যাহীন।

পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×