হাতির ঝিলের ছোট ফুটওভার ব্রিজে দুইজন মানব-মানবী দাঁড়ানো। পুলক আর রিমকি। খুব বাতাস। রিমকির খুলে রাখা চুল উড়ছে। পুলক মুগ্ধ নয়নে ওকে দেখছে।
রাতের বেলা। অনেক বাতাস। দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। মাঝে মাঝে একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ পুলকের খুব হাসি পেল। এ ধরনের দৃশ্য বাংলা টেলিফিল্মে দেখা যায় যে নায়ক নায়িকা দুইজন দুইদিকে ফিরে একে অপরের সাথে কথা বলছে। পুলকের খালি মনে হত এদের সমস্যা কী!! এরা স্বাভাবিক মানুষের মত কথা বলতে পারে না!! এরকম ত্যারা ব্যাকা হয়ে কথা বলার কী মানে!! অথচ এখন মনে হচ্ছে এটাই ঠিক।
হঠাৎ রিমকি বলল-
- আমি অনিককেই বিয়ে করব। সম্পর্কের দায়বদ্ধতা থেকে আমাকে তাই করতে হবে। কিন্তু ও কখনো জানবে না আমার ভেতরে কতটা তোলপাড় করে আমি ওঁর সাথে থাকব। একজনের বুকে শুয়ে আমি আরেকজনের কথা ভাবব।
পুলক কিছু বলল না। কী বলার থাকতে পারে তাঁর এখানে? সে শুনে যায়।
রিমকি বলে যায়।
- আমার সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে তোমার কাছে চলে আসতে ইচ্ছা হচ্ছে।
রিমকির চোখ টলমল করছে।
পুলক ওঁর গালে হাত রাখল। সেই স্পর্শ। অনেকক্ষণ এরা যেন এইভাবে স্ট্যাচু হয়ে রইল। রাস্তা দিয়ে যাওয়া কিছু মানুষ এই দৃশ্য দেখল। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত ছেলেগুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বাকিরা যে যার মত চলে গেল।
রিমকির যতই পুলকের কাছে চলে আসতে ইচ্ছা হোক। একটা বিশাল দায়বদ্ধতা অনিকের প্রতি তাঁর আছে। একজন বন্ধু হিসেবে। একজন প্রেমিক হিসেবেও। ৫-৭ বছরের সম্পর্কে কত ভালো-খারাপ মুহূর্ত। কত স্মৃতি। চাইলেই এসবকে তুচ্ছ করা যায় না। যা হচ্ছে তা তো একদিক দিয়ে অন্যায়ই। কিন্তু অনিক তাঁকে কথা বলার সেই সুযোগ দিচ্ছে না। ওঁর সাথে কথা হয়ে উঠছে না।
রাতে অনিক ফোন দিল নিয়ম অনুযায়ী।
- কী অবস্থা? কী কর?
- এই তো মাত্র ফিরলাম। শুয়ে আসি।
- আজকাল খুবই ব্যস্ত থাক মনে হয়!!!
- তা তো একটু থাকি-ই। অফিস করে বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়।
- না!!! আজকাল ব্যস্ততাটা একটু অন্যরকম।
রিমকি কিছুটা চমকে উঠল। অনিক কি কিছু বুঝতে পারছে? ও তো এরকম খোঁচাখুঁচি করে না। তক্ষুনি ওঁর মনে হল অনিককে তাঁর সব খুলে বলা উচিৎ।
- দেখ অনিক!! খোঁচাখুঁচি করে তো লাভ নাই। আসো সামনা সামনি কথা বলি। আমি তোমার বাসার সামনে আসতেসি। তুমি নামো। আমরা কথা বলি।
- না! আমি তোমার সাথে কোন কথা বলব না।
- আমি আসতেসি। তোমার ইচ্ছা হলে নেমো। নইলে নেমো না। কিন্তু আমি আসতেসি।
অনিক ফোন কেটে দিল।
রিমকি রিক্সা করে অনিকের বাসার দিকে গেল। রিমকির চোখ জ্বলছে। ফোনা বাজছে। পুলক। ফোন ধরল রিমকি। পুলককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বলল,
- পুলক!! তোমাকে আমি কিছুক্ষণ পরে ফোন দেই? ওকে।
রিমকি অনিকের বাসার সামনে পৌঁছে গেছে। রিমকি ফোন দিল অনিককে। অনিক ফোন ধরল।
- আমি তোমার বাসার নিচে।
- আমি তো বলসি আমি নামবো না। তা তুমি বাসার নিচে থাক বা জাহান্নামে থাকো।
- আমি তোমার বাসার নীচে অনিক। একবার নামো!!
- আমি নামবো না।
রিমকি রিক্সা ঘুরাতে বলল।
এদিকে পুলক রিমকির গলা শুনেই বুঝেছে কিছু একটা ঘটেছে। তাঁর খুব অস্থির লাগতে থাকল। সে আর পারল না। সে রিমকির বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। ওকে এসএমএস করে রাখল। আমি তোমার বাসার সামনে। কিছুক্ষনের মধ্যে রিমকি রিক্সা করে ফিরল।
পুলকের হঠাৎ করে প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল।
- এত রাতে তুমি কোথায় গেসিলা?
- অনিকের সাথে দেখা করতে।
- সেটা কি দিনে করা যেত না? তোমাকে কী এসব পাগলামি করেই যেতে হবে?
পুলকের চোখ জ্বলছে। সেখানে রাগ উৎকণ্ঠা সব ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। সে রিমকিকে বলল-
- তুমি বাসায় যাও। আমরা পরে এই নিয়ে কথা বলব। যাও বাসায় যাও।
চিৎকার দিয়ে বলল পুলক।
রিমকির চোখে পানি চলে আসল। একদিকে একজন মানুষের উদাসীনতা। অন্যদিকে আরেকজন মানুষের উৎকণ্ঠাভরা চাহনি। রিমকির জন্যে।
পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link পর্ব-৩৬ Click This Link