জীবনে বড় বড় অসঙ্গতি কিন্তু জানান দিয়েই আসে। ছন্দার কথা ছাড়া যে একদম কোন অসঙ্গতিই যে রিমকির ব্যাপারে পুলকের চোখে পড়েনি তা কিন্তু না। পড়েছিল। কিন্তু আবেগের যে তীব্রতা আর রিমকির তাঁকে আশ্বস্ত করা। এসবই তাঁকে সেইসব অসঙ্গতিকে এড়িয়ে যেতে বাধ্য করেছে। কারণ সম্পর্ক যে রকমই হোক বিশ্বাসই যদি না থাকে তাহলে কিসের সম্পর্ক!!
কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ সরল নয়। আজকে যদি রিমকি অনিকের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়। আজকে যদি অনিক রিমকিকে ঘনিষ্ঠভাবে কাছে চায়। রিমকি যদি যায়ও। তবে কি এটাকে সাদা চোখে বিশ্বাসভঙ্গ বলা যাবে!!! যাবে না। এসবই পুলক জানে। জেনে শুনে সে কেন এরকম একটা সম্পর্কে জড়াল সে? এই প্রশ্নের কী উত্তর হয়!! সারা দুনিয়াটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আঁকড়ে থাকার মত কিছু পাচ্ছিল না পুলক। রিমকিকে পেয়েছে সে। কিভাবে ছাড়বে সে একে!! যত অসঙ্গতিপূর্ণই হোক না কেন শেষ তো সে দেখবেই।
আরেকটা জায়গাতে সে মিলাতে পারছে না। রিমকিকেও দোষ দিতে পারছে না। দেড় মাস হয়ে গেল তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাত দিন। অনিকের আবির্ভাব শুধু ফোনে। সে বলে সে কোথায় আছে। রিমকিও বলে কোথায় আছে। ব্যস!! কেউ কাউকে ডাকে না। কাউকে দেখতে চায় না। পুলকের আরো মনে হয় যে সে যা করছে ঠিক করছে। কারণ সম্পর্ক সেও করেছে। যতদিনই যাক। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য অন্যরকম। কি জানি!! সে তো আর স্বাভাবিক না। অসামাজিক মানুষ। তাঁর কাছে তাঁর প্রিয় মানুষের অস্তিত্ব অন্যরকম। অনিকদের মত স্বাভাবিক মানুষদের কথা হয়তো আলাদা।
তো বিপরীত দিক থেকে কোন বাঁধা না আসাতে পুলকের নৈতিক বাঁধাটা অনেক শিথিল। মাঝে মাঝে সে কোন বাঁধা অনুভব করে না। সে রিমকিকে নিয়ে স্বপ্ন বোনে। সে রিমকিকে ছুঁয়ে থাকে। রিমকির কাছে থাকে। রিমকিও ওঁর কাছে সরে আসতে থাকে। গভীর থেকে গভীরে।
দুজন একসাথে সন্ধ্যা থেকে রাতের সময়টা ঘুরে বেড়ায়। অফিস থেকে নামার সময় ফোন করলে যতক্ষণ পুলক রিমকিকে চোখে দেখতে না পায় ফোন ছাড়ে না। ধরেই থাকে। রিমকি সিঁড়ি দিয়ে নামে। রাস্তায় আসে। পুলক রিমকিকে দেখেও ছাড়তে চায় না ফোন। রিমকি ধমক দিয়ে ফোন রাখায়। এসব পাগলামি রিমকিকে আলোড়িত করে। আবার হঠাৎ হঠাৎ রিক্সায় উঠে রিমকির সিগারেট খেতে চাওয়া আর পেশাদার সিগারেটখোরদের মত আড়াল করে সিগারেট খাওয়া দেখতেও পুলকের দারুণ লাগে। তারপর পুলক যখন রিমকিকে নামিয়ে দিয়ে আসে ওঁর বাসার কাছে। রিমকি ঘুরে ঘুরে ওকে দেখে। পুলক দাঁড়িয়ে থাকে রিমকির এই বার বার ফিরে ফিরে তাকানো ভঙ্গিটা দেখার জন্য। রিমকিও বার বার রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বটার দিকে ফিরে ফিরে তাকায়। একেবারে চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত।
এভাবেই চলছিল সবকিছু। জীবনের কাহিনীতে মোচড় আসল অন্যদিক দিয়ে। দেড় মাসের সম্পর্কের পর পুলক আর রিমকি দুজনেই জানতে পারল যে অনিক তাঁদের সম্পর্কের কথা আগাগোড়াই জানে।
ইদানীংকার সম্পর্কে একে অপরের প্রতি খুব বেশী স্বচ্ছতা রাখতে গিয়ে প্রেমিক প্রেমিকার নিজস্বতা বলতে একে অপরের কাছে কিছু থাকে না। তাঁরা একে অপরের সাথে শরীর থেকে শুরু করে নিজের ফেসবুক পাসওয়ার্ড, ইমেইল আইডি সবই শেয়ার করে। রিমকির পাসওয়ার্ডও অনিকের কাছে ছিল। তাই অনিক প্রথম দিন থেকেই রিমকি আর পুলকের মধ্যে কি ঘটছে তা জানত। সবকিছু জানার পরেও সে কেন এতদিন চুপ ছিল তা আপাতদৃষ্টিতে রহস্যময়ই বটে। কিন্তু বেশীদিন তা আর আড়ালে থাকল না।
মানুষ তাঁর নিজের মনের হদিস কতটুকু রাখে!! কতটুকু রাখা সম্ভব!! মানুষ পরিস্থিতির দাস। মানুষ ভাবে যে এরকম হলে বড়জোর এরকম হবে। কিন্তু যখন সত্যিই এরকম কিছু ঘটে তখন সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করে যে তাঁর মনের মধ্যে যা হচ্ছে তা সে এর আগে কখনো অনুভব করেনি। প্রতিনিয়ত মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে, খুঁজে পায়। এই আবিষ্কারের, খুঁজে পাওয়ার যেন শেষ নেই। দম্ভ করে যে মানুষ এতদিন বলে আসত যে “আমি হলে কখনোই এই ধরনের কাজ করতাম না।“ সেই মানুষই যখন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সেই ধরনের কাজ করে বসে যা তাঁর চোখে এতকাল অমার্জনীয় অপরাধ ছিল, তখন সে নিজের কাছে ছোট হয়ে যায়। আরো ছোট হয় সেই মানুষটার কাছে যাকে সে কিছু না বুঝেই আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। তাই দূর থেকে মানুষের বিচার করে ফেলা খুব সহজ। কিন্তু সেই মানুষের মনটা বোঝা বড়ই কঠিন। তা পুরুষেরই হোক। নারীরই হোক। পুলকের হোক। রিমকির হোক। অনিকেরই হোক।
৭ বছরের সম্পর্কে অনিক একজন স্বেচ্ছাচারী প্রেমিক ছিল। ‘স্বেচ্ছাচারী’ শব্দটা শুধু প্রেমের বেলায় বললে তাঁর চরিত্রের প্রতি অন্যায় করা হবে। অনিক পুরোপুরি তাঁর ইচ্ছা অনিচ্ছা অনুযায়ী জীবন চালাতে পছন্দ করে। সেখানে অন্য কারো ইচ্ছা অনিচ্ছার গুরুত্ব নেহাত নেই বললেই চলে। সে তাঁর মা-ই হোক, ভাই-হোক আর রিমকি-ই হোক। একমাত্র বাবার কথাটা সে সরাসরি ফেলে দেয় না। ফেলে দিতে পারে না। রিমকিকে সে ভালোবাসে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করে বোঝাতে হবে তা সে কখনো অনুভব করে না। প্রত্যেক ঝগড়ার পরে তাঁর চিরাচরিত সংলাপ থাকত, “কারো থাকতে ইচ্ছা করলে থাকবে, না থাকতে ইচ্ছা করলে চলে যাবে। এখানে তো জোর জবরদস্তির কিছু নাই।“ নির্লিপ্তভাবে ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বরে সে এসব বলতে পারত।
সেই অনিক যখন দেখল রিমকি অন্য কারো সাথে জড়িয়ে গেছে। তখন সে কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে বসে রইল। এত বছরে অনেক কিছুই ঘটেছে। অনেক রাগ অভিমান রিমকির জমেছে। কিন্তু বার বার সে অনিকের কাছেই ফিরে গেছে। অনিককে কখনো নিজের দোষের জন্যও রিমকির কাছে গিয়ে সরি বলা লাগে নাই। রিমকিই প্রতিবার তাঁর কাছে এসেছে। নত হয়েছে। এতে রিমকিকে অনেকটা নিজের সম্পত্তি বলে ভাবতে শুরু করেছিল সে। অবচেতনভাবেই। সেই নারী যে কখনো তাঁকে ছেড়ে অন্য কারো প্রতি আকর্ষিত হতে পারে তা মেনে নিতে বেশ অনিচ্ছুক ছিল সে। সব বুঝেও বুঝতে চাইছিল না।
ঠিক দুই মাস পরে তিক্ত কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অনিক রিমকিকে জানাল সে সব জানে। একদম শুরু থেকে। সবটা।রিমকিও সব স্বীকার করে নিতা।অনেকদিন থেকেই বলতে চাইছিল সে। অনিশ্চিত অনৈতিক অসম্পূর্ণ সম্পর্কের যদি সেটা শেষ হত, তাহলেও হত। কোনটাই শেষ হল না। অনিক রিমকির সম্পর্কও না। পুলক রিমকির সম্পর্কও না। বরং জটিলতার শুরু হল এখান থেকেই।
পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link পর্ব-৩৬ Click This Link পর্ব-৩৭ Click This Link পর্ব-৩৮ Click This Link পর্ব-৩৯ Click This Link