খুব ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল নিলয়ের। কিছুতেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আজ সত্যিই অবনীর সাথে দেখা হবে। এর আগেও নিলয় বেশ কয়েকবার ওকে বলেছিল দেখা করতে। কিন্তু অবনীই রাজী হয়নি। অথচ কাল অবনী নিজে থেকেই ওর সাথে দেখা করতে চাইলো। আর সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেল সে।
অনেকদিন ধরেই আলাপ মেয়েটার সাথে। অবনীর কথা, কথা বলার ধরন, হাসি সবকিছুই নিলয়কে দারুনভাবে টানে। ভীষন ভালোবাসে অবনীকে সে। অথচ আজ পর্যন্ত ওর সাথে দেখাই হয়নি। ও জানেও না অবনী দেখতে কেমন। নিলয় ওর কাছে একটা ছবি চেয়েছিল, অবনী দেয়নি। বলেছিল
: যেদিন আমাকে প্রথম দেখবে সেদিন-ই বলো আমি কেমন, আগেভাগে দেখলে পরে হয়তো দেখা করতেই চাইবেনা।
: কেন? তুমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ?
: কি জানি!!!হতেও তো পারি...
: হলে...হবে...that’s not my headache. Is it clear?
: আচ্ছা বাবা...আর রাগ করে গাল ফোলাতে হবে না।
অবনী সবসময়ই এমন ফান করে। প্রচুর দুষ্ট। কাল ও জানতে চেয়েছিল অবনীকে ও কিভাবে চিনবে, অবনী কিছুই বললোনা। তার মানে নিশ্চয়ই ওর মাথায় কোন দুষ্টবুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর এই সরলতা, দুষ্টুমি ভীষন ভালো লাগে নিলয়ের।
Just ৪টা বাজে ওকে পৌঁছাতে হবে। অবনী বলেছে ওর অপেক্ষা করতে একদম ভালো লাগে না। কিন্তু পাগলীটা কি জানে ভালোবাসার মানুষটার জন্য অপেক্ষা করার পেছনেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। থাক বুঝতে হবে না ওর...নিলয় চায় না ওর জন্য অপেক্ষা করে কেউ কষ্ট পাক। তাই আগেভাগেই সেখানে গিয়ে সে অপেক্ষা করবে। তার উপর ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাটে জ্যামের কোন মাতা-পিতা নেই, যেই কোন মুহুর্তে বিশাল লম্বা জ্যাম লেগে যেতে পারে।
ধুর, পৌনে ৪টা বাজে। এখনো সে জ্যামের মধ্যে বসে আছে। আজ অবনীর সাথে প্রথম দেখা হবে, প্রথম দিনই যদি late হয় তাহলে ও কি ভাববে। এইসব ভাবতে ভাবতে নিলয়ের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত সে হেঁটে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করে ও। আজকে রাস্তায় যেন মানুষেরও জ্যাম লেগে গেছে। হঠাৎ করে একটা ছেলে প্রচণ্ড জোরে ওকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে ছেলেটাকে গালমন্দ করতে করতে ও এগোয়।
সামনেই একটা ফুলের দোকান দেখতে পায়। লাল গোলাপ অবনীর ভীষন পছন্দের। কিন্তু শুধু ফুলের ক্ষেত্রেই। এমনিতে ও লাল রঙ দেখতেই পারে না। ফুল কিনে নিলয় দ্রুত হাঁটা শুরু করে। অবশেষে সে লেকে পৌঁছায়। কিন্তু ততক্ষণে ঘড়িতে সাড়ে ৪টা বাজে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। অবনী নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছে। কি বলবে তা ঠিকঠাক করে নিয়ে নিলয় পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে যায়, কিন্তু মোবাইলটা তার সাথে নেই…
ফুটপাত দিয়ে আসার সময় সেই ছেলেটার ধাক্কা দেয়ার কথা মনে পড়ে…তার মানে তখনই…
নিজেকে ভীষন অসহায় মনে হয়..
অপেক্ষা (পর্ব - ৩)
অপেক্ষা (পর্ব - ৪)
অপেক্ষা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





