গল্পঃ বৃত্তহীন (৫ম পর্ব)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বৃত্তহীন (১ম পর্ব)
বৃত্তহীন (২য় পর্ব)
বৃত্তহীন (৩য় পর্ব)
বৃত্তহীন (৪র্থ পর্ব)
আবারো ঢাকায় ফিরে এলাম কাল ।
জ্যাম , শব্দ দুষণ , মেট্রো ব্যবস্থা...
তোমার চিঠি পেয়ে মনে হলো , এই ভীড়ে কেউ যেন আমার হাতটা ধরল ।
দেব্-এর চতুর্থ চিঠি পড়ছে আনীলা । পড়তে পড়তে আপ্লুত হয়ে উঠল । এই ভীড়ে কেউ যেন আমার হাতটা ধরল ! লেখাটা পড়তেই শিহরণ বয়ে গেল শিরায় শিরায় । দেব্ লিখেছে-
খুব একাকিত্ব কাজ করে আমার
খুব গ্লানি...
খুব বিষাদ,খুব অপমানে কেবলই আমার চোখের সামনে মাথা নুয়ে ফিরে আসার ছবি ভাসে !
তুমিতো সবই জানো
আমার সুস্থতা নিয়ে ভাবো ।
তুমি মিষ্টি মেয়ে , আগের মতন...নিষ্পাপ শুভ্র অবয়ব । সেখানে নেই কোন কালো দাগ ।
আর আমার সেই দাসের মত অবস্থা...!
সেই দাস !
গল্পটা বলেছিলাম তোমাকে ?
কেমন যেন বিভ্রান্ত লাগছে আনীলার । পিসির সামনে থেকে চোখ সরাল । মাথাটা খানিকটা ঝিম ঝিম করছে । দু'রাত ধরে ঘুম হচ্ছে না । আজ ক্লাসেও যায়নি । অনেক দেরিতে বিছানা ছেড়েছে । সে ঘুমিয়ে থাকলে কেউ তাকে বিরক্ত করে না । বাড়িতে লোক বলতে তার ফুপু আর একজন কাজের মেয়ে । দেব্ কিসের গল্প লিখেছে ? কি অদ্ভুত এক নেশার মধ্যে যে বুদ হয়ে আছে নিজেও বুঝতে পারছে না । দু'জনই দু'জনের সাথে অভিনয় করছে । এ এক অন্যরকম অভিনয় । ঢক ঢক করে দু গ্লাস জল পান করল সে । তারপর মাথাটা শান্ত করে চিঠিটা পড়তে শুরু করল...
এক ছিল দাস । তাকে কিনে নিল এক বণিক । সেই দাসের কাজ ছিল বণিকের পক্ষাঘাতগ্রস্থ , নির্বাক , বোধশক্তিহীন মেয়ের দেখাশুনা করা । মেয়েটি বিছানায় শুয়ে থাকত । আলো-অন্ধকার চিনত না । দাস , মেয়েটির সেবা করতে লাগল । মেয়েটি যেন তার বাবার কাছে শুধুই মাংসপিন্ড। দাস মেয়েটিকে গোসল করাতো , তার সব ধরণের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করে দিত । বিনিময়ে বণিক দাস কে দু'বেলা খেতে দিত । প্রথম দিকে কাজ করতে তার ভালো লাগত না । কিন্তু ধীরে ধীরে সে মেয়েটির সেবা করতে করতে তার প্রেমে পড়ে গেল । মেয়েটি ঘুমালে তার জন্য ফুল কুড়িয়ে এনে তার শিয়রে ছড়িয়ে রাখত । মেয়েটিকে ফুল চেনাতো , রঙ চেনাতো । পূর্ণিমায় জানালার ধারে নিয়ে গিয়ে চাঁদ চেনাতো । সকালে পাখি চেনাতো । মেয়েটি ঠোঁট বিড়বিড় করে কথা বলার চেষ্টা করত । এভাবে, এক সময় মেয়েটি আগুন আর জলও চিনল । ধীরে ধীরে ফিরতে লাগল তার অনুভুতি । একদিন মেয়েটি দাস কে জড়িয়ে ধরল । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ! দাস, মেয়েটি কে চুম্মন করল ।...
অপার্থিব এক আনন্দধারা বইতে লাগল তার ভুবনে । তার কাছে সবকিছু মায়াময় মনে হলো ।
মনে হলো তার দাস জীবন সার্থক । তার প্রেম সার্থক ! দু'জন দু'জন কে জড়িয়ে ধরে রাখল অনেকক্ষণ...
হঠাৎ দরজা খুলে গেল । ভেতরে প্রবেশ করল বণিক । দু'জন কে এই অবস্থায় দেখে সে দাসের উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গেল । বন্দী করা হলো দাস কে ! আর এদিকে মেয়ে সুস্থ হওয়ায় বাড়িময় শুরু হলো উৎসব...
এটুকু পড়ে থামল আনীলা । মাথার ঝিমঝিমানিটা বেড়েই চলেছে । দেব্ কেন এই গল্পটা লিখছে ? কি বোঝাতে চাইছে ? কিছুই বুঝতে পারছে না সে । চিঠিটা শেষ করা দরকার । মাথা ঠান্ডা করে আবার পড়তে লাগল-
উৎসব শেষ হলো মধ্যরাতে । চারদিকে সুনশান নিরবতা । দাসকে আনা হলো বিচারালয়ে । পিঠে পড়ল একশ একটা বেত্রাঘাত । তারপর কিছু মুদ্রা হাতে দিয়ে ভোর হওয়ার আগেই তাকে তাড়িয়ে দেয়া হলো । দাসের সমস্ত পিঠে আঘাতের চিহ্নগুলো কালো হয়ে গেল ! মেয়েটি ঘুমাচ্ছিল । শেষ বিদায় নেয়া হলো না তার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে । সেই থেকে দাস হাটছে অচেনা পথে...
নীল, গল্পটি শেষ ।
আমরা জানি না ঘুম ভাঙার পর মেয়েটির কি হবে ! দাসের জন্য কি তার খুব কষ্ট হবে নাকি সে সব ভুলে যাবে ? কিছুই জানা হবে না...
আমিও সেই দাসের মত অচেনা পথে হাটছি উদভ্রান্তের মত । আমার সারা শরীরে কালো দাগ !
আমি কি কোনদিন তোমাকে চুম্মন করতে পারব নীল ?
আমি নেহায়েতই দাস । আমার তোমাকে জড়িয়ে ধরা মানায় না । দাসের ভালোবাসতে নেই !
তুমি শুধু ভালো থেকো ।
চাঁদ খুঁজো
ফুল খুঁজো
খুঁজে নিও আগুন...
মানুষের সাথে মানুষের ভীড়ে !
চিঠিটা পড়ে মন খারাপ লাগছে আনীলার । দেব্ এভাবে কেন লিখলো ? দেব্ কি খুব দুঃখী ? ঠিক বুঝতে পারছে না সে । মনে হচ্ছে অভিনয় করতে গিয়ে অজানা অচেনা পথে গড়িয়ে চলেছে দু'জনেই । কিন্তু এ চিঠির জবাবে কি লিখবে সেটাও বুঝতে পারছে না । ওই মেয়েটির মধ্যে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করল সে । মাথা ঠান্ডা করে কি-বোর্ডের বাটনগুলো চাপতে লাগল...
আচ্ছা বলতো , তুমি আর আমি কি আলাদা ?
তোমার সমস্ত শরীর আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে ।
সেখানে কালো দাগ থাকলেও সেতো আমারি দাগ !...
আমাকে প্রেম শিখিয়েছ তুমি । কেমন করে ভালোবাসতে হয়
তা কি আমি আগে কখনো জানতাম বল ?
...আমার সব কিছুইতো তুমি !
আমার দেব্ !
স্নিগ্ধ ভোর...
টুপটাপ করে শেফালি ঝরে পড়ছে টিনের চালে ।
শিশিরে মাখামাখি.....
আর আমি-
তোমার নগ্ন বুকে তখনো ঘুমিয়ে ।
আমার এলো চুলে মৃদুভাবে আঙুল বুলাচ্ছ...
অলস চোখ খুলেই... তোমার মিষ্টি হাসি মন ছুঁয়ে দিল ।
আবেশে জড়িয়ে ধরলাম তোমাকে !
তারপর.....
তোমার ইচ্ছে করে না দেব্ ?
এরকম ভোর আমার যে খুব পেতে ইচ্ছে করে !
খুব...
খুব পেতে ইচ্ছে করে !
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।