আমাদের দেখা হবে আর কোনদিন ?
মনে হয় না...
আবার এটা মনে হয়, যে কোন নারীর মধ্যে আমি তোমায় এখনো খুঁজে বেড়াই ।
হুমম...মনে আছে সেই বৃষ্টিতে ভেজার সন্ধ্যা
তোমাকে বলেছিলাম- নদী মেঘ হয়ে ফিরে আসে আকাশে...
আকাশের সব নীল কষ্ট নিয়ে উড়ে যায় শঙ্খচিল
প্রজাপতি ভুলে যায় তার শূয়োপোকা জীবনের কথা
কিছুই থাকেনা আগের মতন
তবু আমি থাকব তোমার জন্য...
নীলা...
আমার নীল সুখ তুমি
এই কথা বলে একটা চুমু খেতে গিয়ে কফির মগ উল্টে পরেছিল
মানে তুমি লজ্জায় একটু সরতে গিয়ে তোমার হাত লেগে ভেঙে পরেছিল কফির মগ ।
মনে পড়ে নীল ?
আমার নীল...
আজ থেকে তোমাকে নীল বলে ডাকব ।
আজ আমরাও যেন সেই কফির মগের মত চূর্ণ-বিচূর্ণ
তবু কথা হয় এখানে । স্মৃতি তর্পণ করি
এক ধরণের সুখ খুঁজি
সময় যাপন...
কিন্তু জানি , যদি বলি দেখা কর তুমি দেখা করবে না !
হয়ত আমিও...
তবু মজার ব্যাপার কি জানো- তুমি যে রাস্তা দিয়ে ছুটে চল
আমি সেই রাস্তার ধারে ঘাস ফুল হয়ে ফুটে থাকি
তুমি যে দুপুরে একাকি অনুভব কর
আমি সেই দুপুরে তোমার জানালায় মিষ্টি রোদ্দুর হয়ে থাকি
তুমি যদি আজ টিভিতে শাহরূখ খান লাইভ অনুষ্ঠান দেখ
জেনো, আমি তোমার চোখের পাপ্রীর অপলক চেয়ে থাকা !...
নীল...মানুষ খুব একা !
কত ছোট আমাদের জীবন
কতকিছু করা হল না এই জীবনে...
পাওয়া হল না
তবু ভাবি, এই বেঁচে থাকা কত সুন্দর
আবার ভাবি কেন এই বেঁচে থাকা একটা সুন্দর মুহূর্তকে যদি ছুঁতে না পারি ?
সেই সন্ধ্যা সেই বর্ষা...
সেই তোমার-আমার ভেজা
আহাঃ...আমরা চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারব না জীবনে
শুধু এরকম মিথ্যে...শুধুই মিথ্যে কাব্য করে যাব...
দেব্-এর চিঠিটা পড়া শেষ করে নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল আনীলা । সত্যিই মানুষ খুব একা ! গভীরভাবে দেব্ কে ভাবার চেষ্টা করল সে...
প্রত্যেকটা মানুষই খুব একা । দেব্ কি খুব একা ? প্রোফাইল ইনফো তে লেখা- কমপ্লিকেটেড আবার ছবির এ্যালবাম এ পারিবারিক ছবি...। আনীলা কিছুটা দ্বীধান্বিত । নিজেকে বোঝালো- দেব্ ব্যাক্তিগতভাবে যা খুশি হোক তাতে তার কোন মাথাব্যথা নেই...এখন দেব্-এর সাথে যে কাল্পনিক কাব্য-খেলায় মেতেছে সে খেলার তাল ঠিক রাখার জন্য মনোযোগি হতে হবে । আনীলা খেলাটা খুব এনজয় করছে । আজ ক্লাসে একটুও মন বসে নি । শুধু ভেবেছে বাসায় ফিরে কখন পিসি অন করে দেব্-এর চিঠি পড়বে । নিজের এরকম কান্ড দেখে নিজের কাছেই অদ্ভুত মনে হল তার । দেব্-এর প্রতি ভালো লাগাটা ক্রমেই বাড়ছে...
এ এক অন্য রকম প্রেম ! কোনভাবেই হয়ত সংজ্ঞায়িত করা যায় না । আনীলার পাঁচ বছর আগের কথা মনে পড়ল । অনূপের সাথে প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটি...। বৈখাখী মেলায় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে পরিচয় হয়েছিল দু'জনের । অনূপের কথা মনে পড়তেই আবারো বুকটা হুহু করে উঠল তার । পুরোনো কষ্ট কে এক পাশে সরিয়ে রেখে দেব্ কে চিঠি লিখতে বসল আনীলা-
অবলিলায় নিষ্ঠুরের মত কথা বলার অভ্যাস
এখনো ছাড়তে পারনি !
এ জন্যই তোমার ওপর খুব রাগ হয়...
আমি কি শুধুই অতিত ?
কেন দেখা হবে না আমাদের.....?
প্রতিদিন পথ চলতে গিয়ে শত মুখের ভীড়ে
আজও তোমার মুখ খুঁজি !
ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো ?
ভালোবাসা কি বাষ্পিত মেঘ হয়ে দূরের আকাশে হারিয়ে যায় ?...
তুমি খুব নিষ্ঠুরের মত বলতে পার !
তোমার চুমুর ভয়ে আর কফির মগ ভাঙব না ।
এখন আমি বেশ বড় হয়েছি ।
তখন কি ছোটই না ছিলাম !
আমার ঠোঁট দু'টো তোমার ঠোঁটের দখলে নিয়ে
আমার লজ্জা ভাঙিয়ে দিতে
আর আমি তোমাকে ঠেলে সরিয়ে দিতাম...
সত্যিই কি আমরা সেই কফি-মগটার মত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছি ?
ক্লাস ছিল
এই কিছুক্ষণ আগে ঘরে ফিরলাম ।
আবার সেই এক ঘেয়ে টেবিল-চেয়ার, বিছানা বালিশ...
কম্পিউটার খুলেই তোমার চিঠিটা পেলাম । টের পেলাম দু'ফোটা
অদৃশ্য জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল ।
আমাদের যাপিত জীবন কি এভাবেই যাবে !
.....একা !
খুব একা একাই কেটে যায় কৃষ্ণপক্ষ-শুক্লপক্ষ !
একা একাই কেটে যায় ঋতুর দিনগুলো...
আমাদের দেখা না হওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক ?...
আমরা কি শুধুই অতিত !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




