somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরের পরকাল ত্যাগ আর মানুষের মনে বিশ্বাসের মড়ক

০৭ ই এপ্রিল, ২০০৬ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

1.
দুর্যোগ নামে পৃথিবীতে ঈশ্বরের হাত ধরে প্রকৃতির রূপে আর প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ লোক ও প্রাণী। মানুষের কেউ কেউ অবিশ্বাসী ছিল নিশ্চয়ই কিন্তু প্রাণীদের? সুনামি আসে নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের জল থেকে দক্ষিণ এশিয়া ও পাশর্্ববর্তী অঞ্চলে আর মারা যায় অজস্্র নিষ্পাপ শিশু-নারী-পুরুষ-পশু-পক্ষী-কীট-পতঙ্গ। এ হত্যাকান্ডের পেছনে যদি থাকতো মানুষের হাত তবে তাকে চিহ্নিত করা হতো সর্বশ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী হিসেবে। কিন্তু ঈশ্বর এই বিরাট ধ্বংসযজ্ঞের পরও থেকে যান পরম করুণাময়। বিশ্বাসীরা চোখ বুঁজে হাতে তুলে নেয় জপমালা আর গুণকীর্তন বাড়িয়ে দেয় অযুত লক্ষ নিযুত গুণে বরং তার কাছেই মুক্তি চায় এই ধ্বংস থেকে আর জানতে চায় বান্দার কী অপরাধ? বিশ্বাসীদের মন ও চোখ বড় তীব্র তারা সাগরের জলে আর আকাশের মেঘে দেখতে পায় ক্রোধান্ধ ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড -এর শুভনাম।

2.
কেন এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাঠান ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড, কেনো এই গজব পৃথিবীর গরীব কোণায়, কেনো গজব পৌঁছায় না যেখানে ধনীরা বাস করে নিরাপদ সীমানায়? গরীবের ঈশ্বর কেন শুধু পরীক্ষা এই অসহায় বান্দার? যেমন বলা আছে ধর্মগ্রন্থের হরফে হরফে অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে আমরা নামাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নিশ্চয়ই তিনি পাঠিয়েছেন সুনামি দক্ষিণ এশিয়ায়, নিশ্চয়ই তিনি ভূমিকম্প ঘটিয়েছেন সাধের পাকিস্তানে, নিশ্চয়ই তিনি সাগরের শান্ত পানিকে উত্তাল করেছে ন হারিকেন ক্যাটরিনা হয়ে আঘাত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে। যদিও ধনী, সাদা ও অবিশ্বাসীদের দেশেই হয়েছিল আঘাতটি কিন্তু ধ্বংসের কবলে পড়েছে গরীব, কালো ও বিশ্বাসীরা। সমুদ্র কূলের বিপদজনক জায়গা ছাড়া যাদের বসবাসের ভূমি কেনার সামর্থ্য নেই। তিনি নিশ্চয়ই জানতেন শিশুটি ঘুমিয়ে আছে ঘরের মধ্যে। নাকি এই সত্য তার রাডারে ধরা পড়েনি যে তার নাম জপতে জপতে বৃদ্ধ, বৃদ্ধারা যারা সরকারের সরে যাবার আদেশকে পালন করতে না পেরে আশ্রয় নিয়েছিল ঘরের চিলেকোঠায় এবং সেখানেই ঘটে তাদের কষ্টকর সলিল সমাধি। মরিস বুকাইলি এত বিজ্ঞান বুঝলো আর ঈশ্বরকে সরবরাহ করলো না একটি আধুনিক রাডার। যারা মারা গেলো, যারা ঘর হারালো, যাদের কোল শূন্য হলো, যারা ধ্বংস্তুপের মধ্যে আটকে থাকলো দিনের পর দিন আর মানুষ এসে যন্ত্র দিয়ে কেটে উদ্ধার না করা পর্যন্ত কেউ তাদের উদ্ধারে সিং্গা ফুঁকলো না। শুধু ধ্বংসের সিংগা থাকে, বিশ্বাসীরা কল্পনায় উদ্ধারের কোনো সিংগা থাকে না। এরা সবাই অবিশ্বাসী বলে কি এই গজব? নাকি তারা ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড এবং আরো তাবৎ পরমশক্তিতে চরম বিশ্বাসী বলে এই গ্রিনকার্ডের লটারি। চলে আয় আমার কাছে! তারা তো তাদের জীবনভর ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এর কাছে প্রার্থনায় নতজানু হয়েছে, শতনামে ডেকেছে তাকে, মুগ্ধ হয়েছে তাঁর ক্ষমতার ফুলঝুড়ি দেখে আর শুধু কাঙালের মত চেয়েছে নিজেদের দীর্ঘ জীবন। শুধুমাত্র, কেবলমাত্র অবিশ্বাসীরাই সাহসের সাথে বলে অনিবার্য সত্যটি: এই সব দরিদ্র লোকেরা বৃথাই জীবন কাটিয়ে গেছে তাদের কল্পিত বন্ধুর ভরসায়। আর ভুল ব্যাকরণে আজীবন মেনে গেছে তাদের ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড সর্বজ্ঞানী/সর্বশক্তিমান এবং পরম করুণাময়।

3.
ধর্মগ্রন্থের পাতায় পাতায় বর্ণনা আছে তার শক্তির, বলা আছে তার আদেশ ছাড়া নড়ে না একটি পাতা, উড়ে না একটি ধূলি কণা। পৃথিবীর তাবৎ সংবাদ আছে সেসব হরফে বিশ্বাসীদের জন্য, আছে সমস্ত গোপন রহস্যের আগাম ইঙ্গিত। পৃথিবীর, মানুষের, প্রাণী আর উদ্ভিদের আগাম ভাগ্য লেখা আছে সেখানে আর জানা আছে ঈশ্বরের। নিশ্চয়ই ধর্মগ্রন্থে বলা আছে যখন আমরা তোমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য গজব নামাবো আকাশ থেকে তখন তোমরা কিছুতেই রক্ষা পাবে না। কিন্তু না ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এ বিশ্বাসীরা না তিনি স্বয়ং আমাদেরকে আগাম কোনো সাবধান বাণী পাঠান। এতগুলো প্রাণ, এত সম্পদ, সব তিনি নিশ্চিহ্ন করে দেন দেখাতে নিজের ক্ষমতা। এবং কাউকে ইশ্বর তাদের ধ্বংসের পরিকল্পনা আগাম জানান না। আবহাওয়াবিদরা তাদের হিসাব-নিকাশ আর স্যাটেলাইটের ছবি দিয়ে প্রকৃতির কাছ থেকে আগাম সংবাদ জোগাড় করে মানুষকে সাবধান হতে বলেন। বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানী যারা খোদার সাথে খোদকারী করে, ঈশ্বরের মারণ-ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষকে এই ধ্বংসযজ্ঞ হতে সরে যাওয়ার জন্য প্রণোদনা দেয়। তারপরও যারা বেঁচে যায় তাদের শতকরা আশি ভাগ জানায় যে এই ঘটনা ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এর প্রতি তাদের বিশ্বাসকে করেছে আরো দৃঢ় ।

4.
এদিকে যারা ইশ্বরের বাড়িতে গিয়েছিল পূণ্যের আশায়, জীবনকে সংশোধনের আশায়, তারাও রক্ষা পায় না। শয়তানকে পাথর ছুঁড়তে থাকে তারা অসীম বিশ্বাসে আর তাদের বিশ্বাসের তীব্রতা প্রমাণের জোশে কল্পিত শয়তান নয় বাস্তবের বিশ্বাসীরা পায়ের নীচে চাপা পড়ে মরতে থাকে একের পর এক। কল্পনার শয়তান অমরত্ব নিয়ে টিকে থাকে ঈশ্বর/ আলস্নাহ/ভগবান/গড-এর মত। সর্বশক্তিমান তিনি শয়তানকে ধ্বংস করতে না পেরে গছিয়ে দেন মানুষের হাতে। আর তারা যখন শয়তান নয় নিজেদের মৃতু্যকে ডেকে আনে তখন যথারীতি তিনি থাকেন নিশ্চুপ। এরা সবাই বিশ্বাসী। এমন নয় তারা অবিশ্বাসী বলে তাদের উপর নেমেছে গজব। বরং তারা তো এসেছে এ বিশ্বাস নিয়ে যে ঈশ্বরের বাড়ি দেখে পুরাবে মনস্কাম। কত ধর্মীয় প্রথা তারা মেনেছে বিনাবাক্যে, প্রিয় ঈশ্বরের বাক্যকে প্রতিষ্ঠা দিতে অবলীলায় ধরেছে অস্ত্র পরষ্পরের বিরুদ্ধে, বিরোধী মতের মানুষদের প্রাণ নিতে দ্বিধা করেনি ঈশ্বরের নামে, আর তাদের নারীরা আবৃত রেখেছে নিজেদের তার ইচ্ছায় ও নির্দেশে। তবু তারা নিজ দলের মানুষের চাপে প্রাণ হারাতে থাকে যেখানে ধ্বংস হওয়ার কথা শয়তানের। কিন্তু না কোনো ঈশ্বর না কোনো আল্লাহ না কোনো ভগবান না কোনো গড এগিয়ে আসেন কল্পিত শয়তানের সাথে রক্ত-মাংসের মানুষের এই অসম বৈরিতায়। তবে কি শয়তান জয়ী হয়? তবে কি ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড ছেড়ে গেছেন বিশ্বাসীদের? না কি তিনি মৃতু্যবরণ করেছেন কোনো আগাম সংবাদ না দিয়ে। এই প্রাণপাত, এই অশ্রুসজল দু:খগাঁথার পরও বেঁচে যাওয়া বিশ্বাসীদের একজন নু্যনতম একজনও তার বিশ্বাস হারায় না ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এ। বরং তারা ভাবতে থাকে তাদেরকে রক্ষা করেছেন ঈশ্বর অসীম কৃপায়।

5.
শুধু অবিশ্বাসীরাই বুঝতে পারে বিশ্বাসীদের এই আত্মপ্রবঞ্চনা ও স্বার্থপরতা। কেবল অবিশ্বাসীরাই বুঝতে পারে এরকম একটি ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা যখন মনে করে দয়াবান ঈশ্বরই তাদের বাঁচিয়েছেন তখন তা কতটা অমানবিক শোনায়। যখন এই একই ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড দুধের শিশুদেরকে ডুবিয়ে মারেন তাদের মায়ের কোলে, তখন কতটা হিংস্র হয়ে উঠেন তিনি তার প্রেমাকাঙ্খি আর মোহেমুগ্ধ নরম-দিল সুফি দারবিশদের বুকেও । নিশ্চয়ই তাদের কিতাবে লেখা আছে সমকামী আর অত্যাচারীদের ধ্বংসের আশ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে সীমালঙ্ঘনকারী অবিশ্বাসীদের শায়েস্তার ব্যবস্থা। কিন্তু এরা যে প্রবল বিশ্বাসী, দরিদ্র সাধারণ মানুষ। কি করে নিশ্চুপ থাকেন দয়াময় ঈশ্বর? নাকি তিনি মৃতু্যবরণ করেছেন কোনো আগাম সংবাদ না দিয়ে। দেবদূতেরা ছুটিতে ছিল আর পৃথিবীতে ছিল না নিউ এডিশনের পয়গম্বর।

6.
শুধু অবিশ্বাসীরাই জানে জীবন কত মূল্যবান। শুধু নিজের জন্য নয়। পুত্র মূল্যবান পিতার কাছে, মাতা মূল্যবান কন্যার কাছে, শিশু মূল্যবান দম্পতির কাছে, নেতা মূল্যবান দেশের কাছে, দার্শনিক মূল্যবান পৃথিবীর কাছে। শুধু অবিশ্বাসীরাই জানে কাল্পনিক ভবিষ্যতের চেয়ে পার্থিব এই জীবন অনেক অনেক মূল্যবান। বিশ্বাসীরা ঘিরে রেখেছে পৃথিবীর বাস্তবতাকে এক অদৃশ্য পরকালের কল্পকাহিনী দিয়ে। ইহকালে বেঁচে থাকাতেও তারা দেখে ঈশ্বরের দয়া আর মৃতু্যবরণেও দেখে ঈশ্বরের মায়া। শুধু অবিশ্বাসীরাই জানে এমন অকস্মাৎ মৃতু্য কতনা হৃদয় বিদারক, কত প্রাণে রক্তক্ষরণ হয় একেকটি মৃতু্যতে। বরং যাদের হৃদয় হওয়ার কথা আকাশের মত অসীম তারাই বুঝতে পারে না কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া এই প্রাণপাত নিরেট অর্থহীন। তবে কি ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড-এর হৃদপিন্ডে গন্ডগোল ঘটেছে অবিনাশী ভাইরাসের প্রকোপে নাকি আগাম কোনো সংবাদ না দিয়ে তিনি ত্যাগ করেছেন বিশ্বাসীদের পরকাল ।

7.
অবশ্যই বিশ্বাসীরা বলে ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড দায়ী নন মানুষের দুর্ভোগের জন্য। হয় তা মানুষেরই ডেকে আনা ধ্বংস আর তার সাথে মিশে আছে শয়তানের প্ররোচনা। যদি তাই হয়, তবে কি করে বুঝি তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং উপস্থিত সর্বত্র? অসহায়, দুর্বল, সীমিত ক্ষমতার মানুষকে এত বড়ো দুর্যোগের জন্য কি করে দায়ী করেন তিনি? কি এমন তাদের পাপের বোঝা যাতে ঈশ্বরকে খুলে দিতে হয় তার স্বর্গের নর্দমা? নাকি এ সন্দেহই সত্যি যে শয়তান, মানুষ আর বিজ্ঞানীদের কারসাজিতে তিনি হারিয়েছেন তার অসীম ক্ষমতা? বিশ্বাসীরা উত্তর খুঁজে পান না আর অবিশ্বাসীরা জর্জরিত করে তাদের প্রশ্নবাণে। জরুরি, তাই ভীষণ জরুরি এই প্রশ্নের সমাধান। ধর্মবিশ্বাসীরা এ প্রশ্নের উত্তরের দোলাচলে আছে এক গভীর সংকটে। যদি তিনি থাকেন, যদি মর্ত্যে পাঠানো শেষ পয়গম্বর সংবাদ দিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বেঁচে থাকেন, তবে হয় তিনি এসব প্রাকৃতিক দুযের্াগ থামাতে কিছুই করতে পারেন না-অক্ষম, অথবা ক্ষমতা থাকলেও তিনি কিছু করবার মত প্রয়োজন বোধ করেন না-নিষ্কর্মা , হৃদয়হীন। নাকি ঈশ্বর, যদি বেঁচে থাকেন, হয় হয়ে পড়েছেন অক্ষম বা পড়েছেন শয়তানের ধোঁকায়।

8.
অবশ্যই বিশ্বাসীরা বলে যে মানুষের যুক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায় না ঈশ্বরকে। মানুষের নৈতিকতাবোধ, জীবন-মৃতু্য, ঘৃণা-ভালবাসা, ইত্যাদি মূল্যবোধও আরোপ করা যায় না তার ওপর। কিন্তু মানুষের গুণাবলী দিয়েই বিশ্বাসীরা বর্ণনা করে ঈশ্বরের ক্ষমতা। আর মানুষের ছোট-খাটো তুচ্ছ সব আচরণে ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড এতই আগ্রহী যে সমকামীদের বিছানা, নারীদের হাইহিলের আওয়াজ সবই তাকে বিব্রত করে তোলে। আর প্রার্থনায় নত হয়ে তাকে ডাকতে হয় মানুষের দেয়া সব গুণাবলী ধরে। যদি তিনি থাকেন, যদি এখনও তার ধড়ে প্রাণবায়ু থেকে থাকে, তবে তিনি এই বিপুল ব্রহ্মান্ডের কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না এমনকি মানুষকে পরিচালনা করার যোগ্যতাও হারিয়েছেন তিনি। যে পরম বিশ্বাসে সব দায়িত্বের ভার তার কাঁধে চাপিয়েছিলো মানুষ তার পর্বে পর্বে তিনি দেখিয়েছেন ব্যর্থতা। নাকি যোগাযোগহীন আমরা কোনো খবর পাইনি উধর্্বলোক থেকে যে, আগাম কোনো সংবাদ না দিয়ে তিনি ত্যাগ করেছেন পরকাল ।

9.
পৃথিবীর দার্শনিকরা আরেক সম্ভাবনার কথা বলেন, যদিও তা যৌক্তিক তবু বিশ্বাসীদের জন্য খুবই অসন্তুষ্টির যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এক মানবিক কল্পনা। যেমন সুখ, দু:খ, আনন্দ-বেদনা বিরাজ করে মানুষের মনে তেমনি তিনিও বাস করেন বিশ্বাসীর কল্পনার জগতে। আর পৃথিবীর বাকী সব প্রাণ ও বস্তু তার কোনো ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও অনুসরণ করে না। আর কোনো প্রাণী নারীদের চেহারা ঢেকে দেয় না পর্দায়, নতজানু হয় না উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম বা পূবে, প্রকাশ্যে যৌনতায় লিপ্ত হয় এবং মানে না কোনো উপাসনালয়। যা, যা..। বিশ্বাসীদেরই ঢিল ছুঁড়তে হয় সঙ্গমরত কুকুর-দম্পতির দিকে আর তাদের সরিয়ে দিতে হয় ঈশ্বরের বাড়ির ত্রি-সীমানা থেকে। এত যে নিয়ম, এত যে প্রথা, প্রার্থনার রীতি-নীতি, জীবন যাপনের নানা নির্দেশ সবই তার বিশ্বাসী মানুষের জন্য, অন্য প্রাণীরা তার কোনো কেয়ারই করে না। শুধু অবিশ্বাসীরাই এসব ইশারা ধরতে পারে এবং বুঝতে পারে তথাকথিত ঈশ্বর/ আল্লাহ/ভগবান/গড নিজে কিছুতেই বিচলিত হন না, নড়ে চড়ে বসেন না বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই অংশ নেন না। বাস্তবিক তিনি বড় নির্জীব ও ক্লীব। তার হয়ে সব কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দল-বিভক্ত বিশ্বাসীরা। তারাই জানান দেয় তার বিশ্বাসের, তারাই জানান দেয় তার নির্দেশের, তারাই তরবারি ধরে তার ইশারা বাস্তবায়নে।
তারাই তার জন্য, তার বিশ্বাস প্রতিষ্টা করার জন্য আজরাইল হয়ে যায় পৃথিবীতে, আর বইয়ে দেয় রক্তগঙ্গা।

10.
আর শুধু অবিশ্বাসীরাই পৃথিবীতে মানুষের কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে চিন্তিত হয় আর এসবকে মূল্য দেয় বিশ্বাসের চেয়ে বেশি। বিশ্বাসীদের আছে কল্পনার অনন্ত পরজীবন। সবাই মৃতু্যবরণ করে এবং হারায় সব প্রিয় মানুষ ও বস্তু। তারচেয়ে করুণ এই সত্য যে, বেঁচে থাকতে মানুষ ভোগ করে অযৌক্তিক নানা যন্ত্রণা। তার বিশ্বাস, তার ধর্ম, তার এই যন্ত্রণার সাথে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িত - ধর্মের ঘৃণা, ধর্মের যুদ্ধ, ধর্মের প্রবঞ্চনা, ধর্মের ইন্দ্রজাল। পৃথিবী জুড়ে ধর্মের যা কল্যাণ তাকে ছাড়িয়ে গেছে অকল্যাণের দীর্ঘ তালিকা। আর এই অকল্যাণ থেকে বাঁচাতে আর কোনো পুরুষ প্রেরিত হবেন না উধর্্বলোক থেকে। উধর্্বলোকের কোনো কথারই প্রমাণ মেলে না, তাই যেমন বিশ্বাস করা যায় না কল্পিত সব রূপকথায় তেমনি অক্ষম, সীমিতবুদ্ধির মানুষ বিশ্বাস না করে জড়াতে চায় না কোনো সমস্যায়ও। বিশ্বাসের মড়ক লাগে মানুষের মনে, কে বাঁচাবে তাকে এই দোলাচল থেকে, উধর্্বলোকের সাথে তার কীভাবে ঘটবে যোগাযোগ? এই যে জানা গেলো, আগাম কোনো সংবাদ না দিয়ে ঈশ্বর ত্যাগ করেছেন পরকাল। এ কথায়ই কি তবে আনতে হবে বিশ্বাস? কে সঠিক জানে উধর্্বলোকের খবর আর কার কথায়ই আঁকড়ে রাখা যায় প্রাচীন বিশ্বাস? না কি যারা মর্ত্যের কথা বলে, উধর্্বলোকের কোনো রূপকথার ধার ধারে না, আমাদের চিরচেনা পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ছুঁয়ে সত্যবাণী করে উচ্চারণ, তাদের কথাই ঠিক আজন্ম যে, তিনি এক রূপকথার কল্পনা, মানুষের মনেই তার বাস, মানুষের মনেই তার জন্ম এবং মৃতু্য, মানুষের মনের আরসে রাখা কুরসি ভিন্ন অন্য কোথাও তিনি আসলে কখনও ছিলেন না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×