somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

3. তলা'আল বাদরু 'আলাইনা (আমাদের মাঝে পূর্ণ চাঁদের উদয়)

২৪ শে মে, ২০০৬ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বাংশ পড়ুনঃ Click This Link ]

=দু'টি প্রহর এবং একটি ভোর=

প্রিয়জন, তাও যদি হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, জগৎসমূহের জন্য রহমত স্বরূপ একজন, বুঝতেই পারছেন মনের আনন্দ তখন কোন পর্যায়ের, তিনি আজ দুনিয়াতে নেই, তথাপি প্রিয়জনের প্রতি এই ভালবাসা মানব মনের চিরন্তন বহিঃপ্রকাশ- তার কত কিছুই তো তিনি ছেড়ে চলে গেছেন আমাদের জন্য, উত্তরাধিকার। সেসবের প্রত্যেকটিই অনুভবের অলিন্দে সৃষ্টি করে আমাদের প্রতি তার অগাধ ভালবাসার প্রতিকৃতি, মনের যখন অবস্থা এই, তখন কখনো কখনো ভুলে যাই 'তিনি নেই'।

'হায়! আমি যদি পৃথিবীতে আসতে পারতাম তার জীবদ্দশায়' -ভাবনার এমন ধারার পাশাপাশি আরেকটি ভাবনাও উঁকি দেয় মনের আবেগী পর্দাখানি কিঞ্চিত সরিয়ে- সেদিনের 'আমি' যদি হতাম আবু জাহ্ল, আবু লাহাব আর উত্বার সাথী, যদি হতাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধবাদী! তখনি দয়াময় আল্লাহর প্রতি সিজ্দাবনত মন বলে উঠেঃ 1400 বছর পরের আমাকে তিনি পরিচয় করিয়েছেন তাঁর প্রিয় মানুষটির সাথে, আমার অন্তরে সৃষ্টি করে দিয়েছেন তার প্রতি অঢেল ভালবাসা, আমার চেতনাকে তার আদর্শের অনুসরণে সর্বদা সতর্ক-আত্মসমালোচক (যদিও দূর্বল মানুষ বলে তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করতে পারছি না) বানিয়ে কত বড় অনুগ্রহ করেছেন তিনি আমার প্রতি; আল-হামদুলিল্লাহ্।

আমার নাম রেখেছিলেন নানাজান (তার কবরজীবনের প্রশান্তি আমার দো'আর একটি অংশ) 'ফজলে এলাহি', যার অর্থ দাঁড়ায় 'মা'বূদের অনুগ্রহ', (উপরে যার উল্লেখ করলাম) এরচেয়ে বড় অনুগ্রহ তো আমি আমার জীবনের দ্বিতীয়টি খুঁজে পাই না; তবে আরেকটি অনুগ্রহের আকুল প্রত্যাশী আমি আমার প্রতিপালকে, সে না হয় অন্য কখনো বলা যাবে আর যদি বলে যাওয়ার সুযোগ না পাই তো আমার প্রস্থানই তার জানান, ইনশাআল্লাহ্।

তো এই প্রদ মানসিকতার মাঝে কাটালাম মদীনায় আমার প্রথম রাতের দু'টি প্রহর। যে অজানা প্রায় ঠিকানাটি নিয়ে এসেছিলাম, তার খোঁজে খোঁজে এখন মধ্যরাত। এজন থেকে সেজন, এ দোকান থেকে ও দোকান, এ রাস্তা ও রাস্তা করে যে মানুষটির পর্যন্ত পৌঁছুলাম, তার সাথে আমার সাক্ষাত এবং পরিচয় জীবনে এই প্রথম। কিন্তু একজন অজানা-অচেনাকে এভাবে সাদরে-আদরে বরণ করা দেখে আমি সত্যিই আভিভূত হলাম আর যেন গিলে গিলে খাচ্ছিলাম ইসলামের সৌন্দর্য্য-সৌহার্দ সুধা। যেন রূহের জগতে ছিল আমাদের পরম বন্ধুত্ব, পৃথিবীতে আমাদের শরীরের সাক্ষাত হয়নি তবু যেন অন্তরের সাক্ষাত বহুদিনের পুরোনো।

আদর্শ মানুষের অন্তরেই প্রথম বাসা বাঁধে আর সমআদর্শের অন্তরগুলোকে বুঝি দেহের অজান্তেই খুঁজে-পেতে গড়ে তোলে বন্ধুত্বের 'শীসা ঢালা প্রাচীর', নইলে আমার অন্তর কেন কাঁদে ফিলিস্তিনের ভাইদের রক্ত-ঝরা ব্যাথায়, ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মীর কেন আমার অন্তরের অবাধ্য ক্ষত; অথচ তাদের প্রতিটি অন্তর আর অন্তরবাহক দেহের সন্ধান পাওয়া আমার ক্ষুদ্র জীবন-কালে অসম্ভব, অচিন্তনীয়।

ভোরের প্রথম আঁধারে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আরেকটি কণ্ঠের আহ্বান কানে এল; আমার মেজবান ভাইয়ের। ফজরের পর ঘরে ফেরা পথে পরিচিত হলাম মদীনায় অবস্থারত আরো ক'জন আলেম ও আদর্শ-পথের সুদৃঢ় পথচারীর সাথে। সকলের কাছ থেকেই সম-আচরণে আমি সত্যিই মুগ্ধ; মূলতঃ আমার পরিপূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণের [অর্থাৎ, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইসলামে প্রবেশ কর পুরোপুরিভাবে...(প্রথমাংশ)" (সূরা আল-বাকারাহ্ ঃ 208)] পর ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের সাক্ষাত এই প্রথম বাস্তবতায় দেখলাম। এ ভ্রাতৃত্ববোধকে মানবতাবোধেরও অনেক উর্ধ্বে দেখতে পেলাম। প্রায় অর্ধরাত পর্যন্ত খোঁজা-খুঁজির পরিশ্রমের পর রাতের কয়েক ঘন্টা ঘুম ছিল নিতান্তই অপর্যাপ্ত, তাই আরো পুষিয়ে নেয়ার আশায় আবার বিছানার আশ্রয় নিলাম। হঠাৎ,
-ঘুমিয়ে পড়েছেন?
-না ভাই, জেগে আছি এখনো, আসুন।
-আপনার সাথে তো এখনো পরিচয়ই হলো না, আলাপ করতে চাই।
-অবশ্যই, বসুন।

শুরুটা ছিল এভাবেই অনেকটা। তারপর পরিচয়, জানা-শোনা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক সব খোঁজ-খবরই নিলেন এবং দিলেন। বলে কয়েও যে বন্ধুত্ব পাতানো যায়, এটাই ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। অনেক কথা হলো, কিন্তু সেদিনের কথাগুলো থেকে একটি ব্যাপারই আমার আজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকলো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, তার ফলাফল এবং আমাদের শিক্ষিতদের হতাশায় বিচলিত আমি ছিলাম মোটামুটি শিক্ষার প্রতি বিতৃষ্ণ, অথচ সেদিনের সেই মেজবানের খুব সহজ-সরল কিছু যুক্তি আমার ধারণার অস্বচ্ছ ভিত আমূল পাল্টে দিল, শিক্ষা অর্জনে এবং দানে তার এই পরামর্শগুলো আমার অনেক মূল্যবান পাথেয় হয়ে আছে।

চিন্তার এই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে অনেকেই মুক্তচিন্তার কথা তুলতে পারেন অর্থাৎ, বলতে পারেন যে, 'ইসলামের মোহেই তো ঢাকা আপনার চিন্তা-চেতনা, তাই একটু মুক্তচিন্তা খাটিয়েই দেখুন না'। কিন্তু মুক্তচিন্তার অধিকারী (?) যারা, তাদের কাছ থেকে যখন এর সংজ্ঞা শুনি, তখনি মনে হয় যেন এটা মুক্তচিন্তার সংজ্ঞা নয়; বরং চিন্তার জগা-খিচুরী অথবা চিন্তার কোন একটা ধারার প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ। আমি মনে করি- চিন্তার লাগামহীনতাই মুক্তচিন্তা নয়, যদি কেউ সেটাই প্রমাণ করতে চায়, তাহলে বলবো আমাদের শিশুরা এবং উম্মাদরাই সবচেয়ে বড় মুক্তচিন্তাবিদ কারণ, তাদের চিন্তাতেই কোন লাগাম থাকে না, যাচ্ছে-তাই চিন্তা করে বসে আর সব কাণ্ড ঘটিয়ে বসে বিবেচনায় অপরিপক্ক শিশু এবং বিভ্রান্ত-বিবেচক উম্মাদরা; বরং বলবো- 'সুস্থ-গঠনমূলক-পরিচ্ছন্ন চিন্তার স্বাধীনতাই হচ্ছে মুক্তচিন্তা'।

মূলতঃ মুক্তচিন্তার সঠিক সংজ্ঞার সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই কারণ, বিশ্বাসী তার বিশ্বাসের নীতিমালার আওতার মধ্যেই এর চর্চা করবে, এর বাইরে গেলে সে আর বিশ্বাসী রইল না এবং অবিশ্বাসী তার অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতেই পারে আর ইসলাম তো বিশ্বাসের প্রশ্নে কারুর প্রতিই চাপ প্রয়োগ করে না। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যই তাকে করেছে জগতের আর সব ধর্ম ও বাদ-মতবাদ থেকে আলাদা; ইসলাম তো একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম এবং এটা মানুষেরই জন্য, আর তাই এমন কোন প্রশ্ন বা চিন্তা যা মানব চিন্তায় আসতে পারে এবং তা যত মুক্তই হোক না কেন ইসলাম তার সময়োপযোগী সঠিক জবাব দানে সক্ষম, ইসলামের সংবিধান আল-কুরআনের সবচেয়ে বড় মু'জিযা হওয়ার এটাই বড় প্রমাণ জ্ঞানীদের চিন্তা-চেতনায়। এই ছিল আমার মদীনায় আগমন-পরবর্তী ভোরের অর্জন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ১:২০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×