somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাণীতে অমরত্ব আছে, মানবেও আসছে শীঘ্রই

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মৃত্যুই সত্য। মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি কেউ। পৃথিবীর জন্ম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত প্রাণী এই পৃথিবীর বুকে এসেছে সব কিছুই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে বা হচ্ছে। মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাওয়া কি সম্ভব? এই প্রশ্ন অনেকে করে থাকে। আবার যারা করে তাদের কেউ কেউ পাগর বলে আখ্যাও দেয়। তবে এই কৌতূহল নিয়ে শত-সহ¯্র বছর বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছে। মানুষের মুখে তাই উঠে এসেছে অমরত্ব লাভের কথা। মানুষ কি আদৌ অমরত্ব লাভ করতে পারবে?
সে প্রশ্নের উত্তর সব সময়ই ছিল- ‘না’। কিন্তু অমরত্ব লাভের চেষ্টায় মানুষকে নিবৃত্ত করতে পারেনি কিছুই। প্রতিনিয়ত এ নিয়ে গবেষণা চলছে। সুন্দর পৃথিবীতে একটি মুহূর্ত বেঁচে থাকার প্রেরণাই এ গবেষণার মূল চালিকাশক্তি। অমরত্ব লাভের জন্য কত মানুষ কত পথে হেঁটেছে তা ঘুরে-ফিরেছে বহু রূপকথায়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান রূপকথায় বিশ্বাস করে না। যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা ও প্রযুক্তির সম্মিলন মানুষকে বহু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। জন্মিলে মরিতে হবে। এমন বাক্য আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। তাছাড়া অনেক ধর্মগ্রন্থে এটাই উল্লেখ করা আছে। আমরা যারা ইশ্বরে বিশ্বাস করি তারা তো অমরত্বকে বিশ্বাস করবোই না। আর আমরা যারা বিশ্বাসী না তারা বিজ্ঞানের অসম্ভবকে সম্ভবের প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। বিজ্ঞানীরা বলছে, ভবিষ্যতে মানবের অমরত্ব সম্ভব।
একটু বিস্তারিত জানতে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। ভার্চ্যুয়াল অমরত্ব লাভ সম্ভব বলেই মনে করেন, এ মতবাদে বিশ্বাসী একদল বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ একত্র হয়েছিলেন গ্লোবাল ফিউচার-২০৪৫ ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে। সম্মেলনের উদ্যোক্তা রুশ বিলিয়নিয়ার দিমিত্রি ইতসকভ।
খ্যাতিমান বিজ্ঞান আর কল্পবিজ্ঞান জগতের মাঝামাঝি তার বিচরণ। সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছিলেন নন্দিত বিজ্ঞানী রে কার্জওয়েল, পিটার ডায়াম্যান্ডিস ও মারভিন মিনস্কি। সম্মেলনে আরও হাজির ছিলেন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতারা। এ মুহূর্তে ইতসকভ বাহিনীর এ ধারণাকে কল্পবিজ্ঞান মনে হতে পারে। তবে, স্নায়ু বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য উন্নতির কল্যাণে মস্তিষ্কের কার্যক্রম রেকর্ড করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের আংশিক পুনর্গঠনেও সফল হয়েছেন তারা। মস্তিষ্কভিত্তিক কম্পিউটার তৈরিতেও অনেকখানি এগিয়ে গেছেন প্রযুক্তিবিদরা। একে তারা বলছেন ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই)। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ককলিয়ার ইমপ্লান্টকে বিশেষ ইলেক্ট্রোডের সহায়তায় জুড়ে দেওয়া হয় কম্পিউটারের সঙ্গে।
বছর খানেক আগে এ ধরনের একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে জন্মবধির এক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো শব্দ শুনতে পান। অনেক বিজ্ঞানী আবার ‘বিসিআইকে’ মেরুদ- শুকিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ব্যবহার করছেন। কার্জওয়েলের অন্যতম পরিচয় তিনি গুগলের প্রকৌশলী বিভাগের পরিচালক। তার মতে, ২০৪৫ সালের মধ্যেই ক্ষমতায় মানুষের মস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে প্রযুক্তি। সৃষ্টি হবে নতুন ধরনের অতি বুদ্ধিমত্তার, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন সিংগুলারিটি।
অন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, ২১০০ সালের মধ্যেই মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে রোবট। মুরের নীতি অনুযায়ী, প্রতি দু’বছর অন্তর কম্পিউটিং ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এদিকে বেশকিছু প্রযুক্তির কল্পনাতীত উন্নতি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জেনেটিক সিকোয়েন্সিং ও ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ। কার্জওয়েল বলেন, অতি রক্ষণশীল হিসাব অনুযায়ী মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ১০০ কোটি গুণ বাড়ানো সম্ভব। ইতসকভ ও অন্য ট্রান্সহিউম্যানিস্টরা সিংগুলারিটিকে ধরছেন ডিজিটাল অমরত্ব হিসেবে।
এতো গেল মানবজাতির অমরত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার কথা। এরই মধ্যে বিজ্ঞান অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। এটাও হয়তো একদিন সম্ভব করে দেখাবে। তবে, একটা কথা সত্য যে মানুষের অমরত্ব অর্জনে একটু সময় লাগলেও প্রাণী জগতের এমন কিছুু প্রাণী আছে যারা সত্যিকার অর্থে অমর। যাদের জন্ম আছে তবে মৃত্যু নেই।
ইতিমধ্যেই আমরা অনেকেই জানি পৃথিবীতে বেশ কিছু প্রাণের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন যাদের আসলে স্বাভাবিকভাবে কখনই মৃত্যু হয় না, অর্থাৎ তারা অমর। তারা জন্ম ঠিকই নেয় কিন্তু তাদের আর মৃত্যু হয়না। কয়েকবছর আগে বিজ্ঞানীরা ভূমধ্যসাগরে এবং জাপান সাগরে এক প্রজাতীর জেলিফিস আবিষ্কার করেছেন যার নাম ‘টুরিটোসিস ডোরনি’ (ঞঁৎৎরঃড়ঢ়ংরং ফড়যৎহরর) এবং তারা দাবী করেছেন এই প্রজাতীর জেলিফিস কখনই মৃত্যুবরণ করে না।
শুধু তাই নয়, এই জেলিফিস নিয়ে গবেষণা করা একদল বিজ্ঞানী তাদের আবিষ্কার করা জেলিফিস যে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে তার উপরে বেশ কিছু প্রতিবেদন লিখে তা প্রমাণ করেও দেখিয়েছেন। বর্তমানে ‘হাইড্রা’ এবং ‘ট্রেডিগ্রেন্ট’ এর মতো এই ‘টুরিটসিস ডোরনি’ (ঞঁৎৎরঃড়ঢ়ংরং ফড়যৎহরর) এই পৃথিবীর আর একটি প্রাণী যা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে অমর প্রাণী হিসাবে পরিচিত। এই অমর জেলিফিশ সম্পর্কে এখানে যঃঃঢ়ং://রসসড়ৎঃধষ-লবষষুভরংয.পড়স/ আরো জানতে পারবেন। এই ছোট ছোট জেলিফিশ গুলি নিজেরাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য শরীরের কোষ তৈরি করতে পারে। অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা নিজেদের শরীরের কোষ পুনরুউৎপাদন করার এক অনন্য ক্ষমতা রাখে যে কারনে প্রাকৃতিক ভাবে তাদের কখনই মৃত্যু হয় না। পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ফলে যে তাপমাত্রার উৎপত্তি হয় সেই তাপমাত্রায় এই ‘ট্রেডিগ্রেন্ট’ মরে না।
এই প্রজাতীর জেলিফিসেরা তাদের যৌন পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর নিজেকে সম্পূর্ণভাবে একটি যৌন অপূর্ণাঙ্গ, ঔপনিবেশিক পর্যায়ে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে। এই ‘টুরিটোসিস ডোরনি’ নামের অন্যান্য জেলিফিস হাইড্রাদের মতো তাদের শরীরের প্লানুলা ব্যবহার করে আবারও তাদের শরীরের নতুন কোষ তৈরি করে থাকে। এই প্লানুলাগুলি থিতিয়ে পড়ে সমুদ্রের তলের সাথে সংযুক্ত হয়ে এবং পলিপ-এর একটি উপনিবেশ তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে তারা এই পলিপগুলি ব্যাবহার করে থাকে। এই পলিপগুলি ব্যাপকভাবে শাখা-প্রশাখাপূর্ণ একটি বিন্যাস গঠন করে যা সাধারণত অন্যান্য বেশিরভাগ জেলিফিস প্রজাতির মধ্যে দেখা যায় না।
তাদের সেই পলিপ থেকে মেডুসা নামে পরিচিত সদ্য জন্ম জেলিফিস পলিপ থেকে কুঁড়ি নিস্বরণের মাধ্যমে মুক্তভাবে সাতার কাটার জীবন পায় এবং এক সময় আবারও যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। যৌন পরিপক্ব অবস্থায় তারা খুব দ্রুত অন্য প্রজাতির জেলিফিস শিকার করে। সমস্ত পলিপ এবং একটি নির্দিষ্ট প্লানুলা থেকে উদ্ভুত সকল জেলিফিস জেনেটিকভাবে অভিন্ন ক্লোন হয়।
একটি ‘অমর জেলিফিস’ যখন আবারও পরিবেশগত চাপ বা শারীরিক অচলবস্থার সম্মুখীন হয় অথবা, অসুস্থ হয় বা বয়স্ক হয়ে পড়ে তখন নিজেকে আবারও পলিপ পর্যায়ে রূপান্তরিত করে একটি নতুন পলিপ উপনিবেশ তৈরি করতে পারে।
কোষ উন্নয়ন প্রক্রিয়া ট্রান্সডিফারেন্সিয়েশন-এর মাধ্যমে এটি সম্ভব হয় যা কোষের ডিফারেন্সিয়েশন অবস্থার পরিবর্তিত করে নতুন ধরনের কোষে রূপান্তরিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে তাত্ত্বিকভাবে, অনির্দিষ্টকাল ধরে এবং কার্যকরভাবে এই প্রক্রিয়া চলতে পারে বলে ‘অমর জেলিফিস’ জৈবিকভাবে অমর।
প্রকৃতিতে অধিকাংশ অমর জেলিফিস শিকারের বশীভূত হয় অথবা বিভিন্ন রোগের কারনে মেডুসা পর্যায় থেকে পলিপ অবস্থায় পরিবর্তন হতে না পেরে মারা না গেলে তাদের কখনই মৃত্যু হয়না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:১৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×