somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অলৌকিক নয় লৌকিক: আলেয়া

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আলেয়া বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করার সুবিধার্থে একটি ঘটনা বলবো। ১০ বছর আগে আমি ও আমার বাবা গ্রামের বাড়িতে পূর্ণিমা রাতে মাছ ধরার জন্য হাতে একটি টর্চ লাইট নিয়ে খালের পাড়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ১২ বছর। মাছ ধরতে ধরতে হঠাৎ বাবা বলে উঠলো চল চলে যাবো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? মাত্রই তো আসলাম। বাবা বললো আশে পাশে তাকাবি না, নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটবি। এই কথা বলার পর আমার মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগে যাব কেন তাকাতে নিষেধ করছে? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে! আমি চারদিকে তাকাতে গিয়ে হঠাৎ চোখ কপালে উঠে গেলো! একি! এগুলো কি! তাড়াতাড়ি সামনে হাঁটতে থাকলাম। হাঁটতে হাঁটতে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা এগুলো কি দেখলাম? বাবা বললো এগুলো ভুতের বাচ্চা। ভুত! বাবা জিজ্ঞেস করলো ভয় পেয়েছি কি না। বাসায় গিয়ে দাদির মুখে শুনেছি পূর্ণিমার সময় রাত ১২টার পর ভূত জ্বীন পরি বাইরে আসে। রাত ১২টার পর কেউ বের হলে মানুষ এগুলো দেখতে পায়।
যারা গ্রামাঞ্চলে থাকেন তারা এই ব্যাপারটা ভালো জানেন। শুধু পূর্ণিমা রাত নয়, কেউ কেউ সাধারণ রাতেও দেখে এমন কিছু আলো উড়ছে। অনেকে সাহস করে এগিয়ে যায় ছোট্ট সুন্দর পরিটাকে ধরবে বলে। কিন্তু দূর্ভাগ্য, কাছে যেতেই আপনার উপস্থিতি টের পেয়ে আলোটা নিভে গেলো। আসলে এই আলোটা কি পরি কিংবা অলৌকিক কিছু? কি মনে হয়? এই আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে এসেও অনেকে বিশ্বাস করে ভূত, পরি বলতে কিছু আছে! না! নেই! তাহলে এটা কি? কিভাবে এটা উঠছে? এটা হচ্ছে মিথেন গ্যাস এবং ফসফিন! চলুন এখন বিস্তারিত আলোচনা করি।
ইংরেজিতে এই আলোটাকে বলে ডরষষ-ড়-ঃযব-রিংঢ়ং. বাংলায় আমরা ‘আলেয়া’ । ১৭৭৬ সালে আলেজান্দ্রো ভোল্টা সর্বপ্রথম মিথেন গ্যাস আবিষ্কার করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সন্দেহ করেছিলেন আলেয়ার আলোর মতো ভূতুড়ে ঘটনার পেছনে মিথেন গ্যাসের হাত আছে। তাঁর সেই তত্ত্বই পরে আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণা দিয়ে আরো নিখুঁত ও পরিশোধিত হয়েছে।
পৃথিবীর সব গাছপালা, পশু-পাখি, মানুষ মূলত জটিল হাইড্রোকার্বন জৈবযৌগের সমন্বয়ে গঠিত। এইসব জৈবযৌগের মূল উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। এইসব জৈবযৌগ যখন উম্মুক্ত পরিবেশে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পচতে থাকে তখন বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয় পানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কিছু পরিমাণ তাপ। কিন্তু যখন এইসব জৈবযৌগ পচার সময় উন্মুক্ত পরিবেশের অক্সিজেন পায় না তখন? ধরুন এরা খোলা বাতাসে পচার বদলে কোন পুকুর বা ডোবার পানির নিচে পচছে- কিংবা মাটির তলায়। সেই ক্ষেত্রে কি হবে? তখন বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হবে মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, ফসফিন ইত্যাদি। এই মিথেন এবং ফসফিন গ্যাস যখন পানি ছেড়ে বুদবুদের মাধ্যমে ভেসে উঠবে এবং খোলা বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসবে তখন মিথেন গ্যাস ফসফিনের সাথে বিক্রিয়া করে নীল আলো উৎপন্ন করবে যেটাকে দেখা যাবে আশেপাশের বাতাসে ভেসে বেড়াতে। ফসফিন হচ্ছে দাহ্য গ্যাস যেটা বাতাসের সংস্পর্শে এলে স্বতস্ফূর্তভাবে জ্বলে ওঠে। যখন ফসফিন বাতাসে জ্বলতে থাকে তখন এটা সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। ফলে সেই নীল আলোর চারপাশে একটা ধোঁয়ার মত অবয়ব চোখে পড়াও বিচিত্র কিছু নয়। যখন কেউ সেটাকে ধরতে যাবে তখন তার উপস্থিতিতে মিথেন এবং ফসফিন গ্যাসের মিশ্রণটা চারপাশে ছড়িয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে আলোটাও হারিয়ে যাবে। সুতরাং পরি ধরতে না পারার জন্যে দুঃখ কিংবা ভয় পেয়ে দৌঁড় মেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার কোনো কারণ নেই!
আমি তখন ছোট ছিলাম বলে বুঝতে পারিনি। যদি বুঝতে পারতাম তাহলে নিশ্চয়ই ভূত মনে করে দৌঁড় দিতামই। আর এখন যদি দেখতে পাই তাহলে ভূত কিংবা পরির ভয়ে দৌঁড় না দিয়ে পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটা বের করে সুন্দর অববয়টা ভিডিও করে রাখতাম। আর সবাইকে দেখাতাম এটা অলৌকিক কিছু নয়। এটা শুধু মাত্র মিথেন গ্যাস আর ফসফিন মিশ্রিত একটি নীল রং।
সাধারণত গ্রামের মানুষ গবাদি পশু বা অন্য কোন পশু মারা গেলে খালের পাড়ে নিয়ে গিয়ে নির্জন জায়গায় মাটিতে পুতে ফেলে। আবার কেউ কেউ মাটিতে না পুতে খালের পানিতে ফেলে চলে যায়। সেদিনই নিশ্চয়ই এমন কোন পশু খালের পানির নিচে কিংবা পাড়ের ধারে মাটির ভেতরে পচা অবস্থায় ছিল। এই মিথেন এবং ফসফিন গ্যাস যখন পানি ছেড়ে বুদবুদের মাধ্যমে ভেসে উঠেছে কিংবা মাটির তলা থেকে বাইরে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে মিথেন গ্যাস ফসফিনের সাথে বিক্রিয়া করে নীল আলো উৎপন্ন করে। আর সেটাকেই আমরা ভূত মনে করে মাছ না ধরে ভয়ে বাসায় চলে গিয়েছিলাম।
এটাকে ভূত কিংবা অলৌকিক কিছু বলে প্রতিষ্ঠিত করছেন কিছু কিছু সাহিত্যিক, যারা অল্প সময়ে খ্যাতি লাভের আশায় কিংবা অতিরিক্ত বই বিক্রির করার আশায় ভূত প্রেতের গল্প-কাহিনী লিখে থাকেন। আমাদের শিশু-কিশোররা ছোটবেলা থেকে এগুলো পড়তে পড়তে একটা সময় বিজ্ঞান পড়েও বিশ্বাস হারায় না। কিন্তু আলজান্দ্রো ভোল্টার বিজ্ঞানীরা এসে যথারীতি পুরো ব্যাপারটার অলৌকিক মাহাত্ম্যকে ভুল প্রমাণ করেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে প্রমাণ করেছেন আসলে এটা অলৌকিক কিছু নয়।
আমাদের ভূতের গল্প লেখা সাহিত্যিকদের উচিত এসব কাহিনী না লিখে শিক্ষণীয় কিছু লেখা। যা সত্য তা লেখা। ভূল বা মিথ্যে কিছু লিখে শিশুদের মনে ক্ষণিকের জন্য আনন্দ দিয়ে নিজেরা জনপ্রিয়তা পাবেন ঠিকই কিন্তু তা খুব বেশিদিনের জন্য নয়। কারণ, ভূল বা মিথ্যা ভালো কিছু বয়ে আনে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×