somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ইভটিজিং : একটি ঘটনা ও প্রতিকার

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুপুর ১২.৩০ মিনিট। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় আক্তারুজ্জামান সেন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আমার ডান পাশে আরো দুই কলেজ ছাত্রী দাঁড়িয়েছে। আমাদের সামনে উল্টো দিক থেকে রাস্তা পার হয়ে ৩জন চশমা পরা বালক এগিয়ে আসছে। মেয়ে দুটোকে দেখে এমন ভাব নিয়েছে যেন দুনিয়াতে আর কোনো স্মার্ট বালক নেই, তারাই আছে। তিন জনের মধ্যে সামনের বালকটি চোখ থেকে চশমা হাতে নিয়ে মেয়ে দুটোর চোখে চোখ রেখে হাত তুলে হাই ডার্লিং বলে ডাক দিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেল। দুই মেয়ে হঠাৎ অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনে কোনো মেয়েকে ইশারা দিচ্ছে কিনা!
আমিও তাকালাম পেছনে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। ছেলেগুলো দুষ্টু হাসি দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে। পরে শুনতে পাচ্ছি মেয়ে দুটা এক জন আরেক জনকে বিভিন্ন রকম কথা বলছে। হঠাৎ আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, বাজে ছেলে দেখতেও লাগছে ইভটিজারের মতো। এমন সময় পাশ থেকে একজন বলছে, আর বলবেন না ভাইয়া, এই ছেলেগুলো আমাদের কলেজের সামনে গিয়েও আমাদের বিভিন্ন কথা বলে। এমন দিন নেই যে দিন ওরা আমাদের ডিস্টার্ব করে না। অন্য মেয়ে বলছে, মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ঘর থেকে বের না হই। আমি চুপ করে থাকতে না পেরে বললাম, তাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন তো আপনারা। দেশে ইভটিজিং বিষয়ে কঠোর আইন আছে, কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ কম। আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই বলেই ইভটিজাররাও সুযোগ পাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইভটিজিং বন্ধ করতে হলে কী করতে হবে? প্রতিকার কী? প্রতিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদ। এই ধরেন আপনারা দুজন। আপনারা দুজন প্রতিদিনই এই তিন ইভটিজারদের কাছে ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন। আপনারা সাথে সাথে প্রতিবাদ না করে সহ্য করে থাকেন বলেই সাহস পাচ্ছে। আপনারা যদি ওদের ভয়ে চুপ করে থাকেন তো ওরা সুযোগ আরো পাবে। একদিন দেখবেন হয়তো তারা আপনাদের হাত ধরে টানাটানি করছে। আপনাদের মধ্যে ভয় কাজ করতে করতে সেদিনও আপনারা চুপ করে থাকবেন। হয়তো একদিন মুখে মুখোশ লাগিয়ে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বাসার সামনে রেখে যাবে। তখন আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। এখন থেকে সোচ্চার হোন। প্রতিবাদ করুন। আগামীকাল যখন এই সময় ইভটিজিং করবে তখন নিচের দিকে তাকিয়ে আর দুজনের মধ্যে সমালোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে সবাইকে একটা করে থাপ্পর লাগিয়ে দেবেন। এটা না করতে পারলে মুখে যা আসবে তা বলে অপমান করে দেবেন। এরপর তারা যদি ভদ্র পরিবার সন্তান হয়তো দ্বিতীয় দিন থেকে আপনাদের পেছনে আর লাগবে না। বাজে মন্তব্য করবে না।
তৃতীয় দিন থেকে যদি আবার এগুলো করে তাহলে আইনের আশ্রয় নেবেন না হয় কলেজের অধ্যক্ষকে বিচার দেবেন। প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনমত গড়ে তুলবেন। ক্লাশ বর্জন করবেন। প্রয়োজন হলে ধর্মঘট ও মিছিল সমাবেশ করবেন। ভুক্তভোগী আপনারা। আপনারা মেয়ে বলে নরম হয়ে থাকলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। এই দেশে ইভটিজারদের সংখ্যা হাতে গোনা নগণ্য। আপনাদের সংখ্যা বেশি। আপনারা সোচ্চার হলে তাদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আমার বক্তব্যে তাদের উত্তর পেলাম। আপনি ঠিক বলেছেন, আগামীকাল থেকে আর চুপ থাকবো না। ওদের উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
এভাবে যদি আমাদের দেশের প্রত্যেক নারী ইভটিজারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাহলে ইভটিজিং এর হার অনেকটা কমে যেতে পারে। আমাদের সামাজিক চরম অবক্ষয়ের নিদর্শন এই ইভটিজিংয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নৈতিকতাবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলাবোধের অভাব। আরেকটি বড় অভাব হচ্ছে সঠিক আইনের। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ডসহ ২০০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নং ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানির জন্য দশ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আইন প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রচণ্ড শিথিলতা রয়েছে। ইভটিজারদের শাস্তি দিলে এবং কড়া নজরদারিতে রাখলে এ ধরনের পুচকি বালকরা ঠাণ্ডা হতে পারে।
এতে তারা আরো বেশি সুযোগ পাচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগসহ আরো কঠোর শাস্তির বিধান করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইভটিজিং স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লংঘন। তাই এ অপরাধের জন্য মানবাধিকার লংঘনের শাস্তির ব্যবস্থাসহ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে।

লেখক: আকাশ ইকবাল
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৪৩
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×