somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শিক্ষা অর্জনে রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়

১৮ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুদের জাতির আগামী দিনের কর্ণধার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। শিশুর ধারণ ক্ষমতা অনুসারে শিক্ষা দিলে সে একদিন কালজয়ী বিশেষজ্ঞ হতে পারবে। আনন্দের মাঝেই শিশুর শিক্ষাজীবনের অবস’ান। পারিবারিক কঠোর শাসন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিকূল পরিবেশ, শিশুর শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয়। শিশুর মনের আনন্দই তার দেহমনের শক্তির মূল উৎস। আনন্দ ও শিশুবান্ধব পরিবেশ ছাড়া তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ অসম্ভব। বিপরীতে সে হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক।
প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ এই শিক্ষা আমাদের দিন দিন স্বার্থপর ও বিচ্ছিন্ন করে তুলছে। শিশু-কিশোরদের এই শিক্ষা থেকে বের করে আনতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবারের বিশেষ ভূমিকা থাকা উচিত। স্বার্থপরতার শিক্ষা আমাদের গোটা সমাজ জুড়ে ছড়িয়ে আছে যা আমাদের নিষ্পাপ শিশু মনকে গ্রাস করছে । পরিবারগুলোতেও শেখানো হয় আগে নিজে বাঁচো। পরে অন্যদের বাঁচাও। বড় হয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করে ভাল চাকরি-বাকরি করে নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করো।
এভাবে স্বার্থপরতা শিশুমনকে ক্রমাগত গ্রাস করে দিচ্ছে। আমি প্রায়ই খেয়াল করেছি, পরিবারে যে ছেলেটি একটু পরোপকারী, তার সম্পর্কে আজকালকার মা-বাবাদের বলতে শোনা যায়- আমার এই ছেলেটা একটু বোকা! নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়াচ্ছে! আবার অনেক সময় দেখা যায়, শিশু-কিশোররা সহপাঠীদের বিপদ আপদে এগিয়ে এলে বলে, এই ছেলেটা টাকা রাখতে জানে না, বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না। আর যে ছেলেটা নিজের স্বার্থের ষোল আনা বোঝে তার স্বীকৃতি মেলে বুদ্ধিমান হিসাবে। তাকে নিয়ে বাবা-মা’রা গর্ব করে। কিন’ মা বাবা’রা এটা বোঝার চেষ্টা করে না যে, ঐ বুদ্ধিমান ছেলেটা যখন বড় হয়, সংসার হয়, তখন নিজেরটাই দেখতে থাকে। অনেক সময় বুদ্ধিমান খেতাব দেওয়া সেই বাবা-মায়ের দায়িত্বও নিতে অস্বীকার করে। প্রমাণ আজকালকার বৃদ্ধাশ্রমগুলো।
সামর্থবান পরিবারগুলোর দিকে চেয়ে দেখুন, পরিবারে স্নেহমমতার বন্ধন হারিয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা প্রত্যেকেই যে যার মতো। সন্তানের দিকে নজর দেওয়ার সময়টুকু নেই। সন্তানের শৈশব একঘেঁয়েমি হয়ে উঠে। এই একঘেঁয়েমির কারণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। কোনো সিদ্ধান্তই সঠিক ভাবে নিতে পারে না।
অনেক পরিবার আছে, সন্তানদের এমন ভাবে ভোগে-সুখে বড় করে তুলছে, যা চাইছে তা তো দিচ্ছেই, যা চাইছে না তাও দিচ্ছে। চরিত্র কি? এটা শেখায়নি, শিখিয়েছে, খাও দাও ফুর্তি করো। যার ফলে বড় হয়ে সেই শিশুরা বড় ধরণের অন্যায় করতেও ভয় পায় না। কারণ তাঁর পেছনে সমর্থন দেয়ার মতো পরিবার আছে।
প্রতিনিয়ত দেশে নারী নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা চলছে। এই খবরগুলো এখন সবসময়ই আমরা পাচ্ছি। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন’ আমরা কী এই অপরাধগুলো সমাজ থেকে দূর করতে পারছি? সরকার পারছে? শুধু শাস্তি দিয়েই একে মোকাবেলা করা যাবে না। যে সমাজব্যবস’া, যে সামাজিক পরিবেশ এই চরিত্রের জন্ম দেয় তাকে ধ্বংস করতে হবে। মূল জিনিসটা না পাল্টালে, আইন করে শুধু কিছু অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যাবে, কিন’ অপরাধ রোধ করা যাবে না। প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা। শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ করে তুললে সে কখনও অন্যায় অপরাধ করবে না। সুস’ সামাজিক পরিবেশ থেকেই মানুষের চরিত্র গড়ে ওঠে।
আজ যে শিশু বিদ্যালয়ে পড়ছে, তার বিকাশের উপযোগী পরিবেশ কি তার চারপাশে আছে? আমরা কি লেখাপড়াকে তার কাছে আনন্দ সহকারে উপস’াপনের কোনো আয়োজন করেছি? আমরা তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছি পাঠ্য পুস্তকের বোঝা। দশজনকে পিছনে ফেলে কি ভাবে সামনে এগোতে হবে তা-ই শেখাচ্ছি তাকে। রবীন্দ্রনাথের ‘তোতা পাখি’র সেই গল্পের মতো। তোতা পাখিকে শিক্ষিত করতে চায় রাজা। সারাক্ষণ বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ানো হচ্ছে পাখিটাকে। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, শিক্ষা কেমন হচ্ছে? বলল, খুব শিক্ষিত হচ্ছে। দিন রাত বিদ্যে ভরে দিচ্ছে তার মধ্যে। এর ফলে একদিন তোতা পাখিটি মারা গেল। শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হলে তাদের সামনে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে সাথে আমাদের পরিবারকেও সেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মনে করি, আনন্দ ও শিশু বান্ধব পরিবেশ ছাড়া তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ অসম্ভব।
আনন্দমূলক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের এডুকেশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে। ইংরেজি এডুকেশন শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো শিক্ষা। এডুকেশন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ থেকে। ল্যাটিন ভাষায় ৩টি মৌলিক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায়। এর একটি হলো ঊফঁপধৎব. এই ঊফঁপধৎব শব্দের অর্থ হলো লালন করা, পরিচর্যা করা, প্রতিপালন করা। অর্থাৎ শিশুকে আদরযত্নের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার নামই হলো শিক্ষা। এতদিন শিক্ষা বলতে বুঝানো হতো শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করা বা শাসন করা। শিশুকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে বিদ্যা দান করার যে পদ্ধতি তা আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল, তাকেই শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
কিন’ আধুনিক শিক্ষাবিদরা এ ধরনের শিক্ষাকে সংকীর্ণ শিক্ষা হিসেবে অভিহিত করেছেন। শিশুর ওপর জোর করে বিদ্যা চাপিয়ে দেয়ার নাম শিক্ষা নয়। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো প্রকৃত শিক্ষা। আমাদের শিশুদের ব্যাগের বোঝা বাড়ছেই। রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস’া ও পরিবারগুলো এক প্রকার জোরপূর্বক বিদ্যা চাপিয়ে দিচ্ছে শিশুদের। এই কারণে শিশুরা আনন্দ করা বা খেলাধুলার জন্য সময় পায় না। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, ‘এডুকেশন ইজ দি চাইল্ড’স ডেভেলপমেন্ট ফ্রম উইদইন’ অর্থাৎ “শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত আত্মবিকাশ”।
আমরা মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ, সৃজনশীলতায় পূর্ণ মানুষ তৈরি করতে পারছি না। এর জন্য দায়ী যেমন আমাদের শিক্ষাব্যবস’া, রাষ্ট্র ও সমাজের বিদ্যমান ব্যবস’া । ঠিক একইভাবে দায়ী আমাদের পরিবারগুলোও। মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ এবং নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর, যা মানুষকে পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে নামিয়ে ফেলে। আর মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মযার্দায় অধিষ্ঠিত রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ২:০২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×