somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাশূন্য ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা নিতান্তই অর্থহীন?

০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শূন্যের রয়েছে ইতিহাস। অনেকের কাছে শূন্যের তো বিন্দুমাত্রই মূল্য নেই। তারা বলে শূন্যের আবার ইতিহাস হয় নাকি? তারা শূন্যের মানে বোঝে পরীক্ষার খাতায় শূন্য পাওয়া। শূন্য তো শূন্যই, শূন্য কি ছোট বড় হয় নাকি? এরা তো শূন্য মানে পরীক্ষার খাতার শূন্য বোঝে। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা মহাশূন্যের কথাও জানে। তারপরও তারা মনে করে মহাশূন্য নিয়ে গবেষণা করে এত অর্থ ব্যয় করা অর্থহীন। আসলে কি তাই?
শূন্যের মর্ম গণিতবিদেরা বোঝেন। আবার পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে শূন্যের মর্মতো হীরার থেকেও দামি। যারা মহাশূন্য মর্ম কি তা বোঝেন না কিংবা স্বীকার করতে চান না, তাদের জন্য বলছি, গোটা মহাবিশ^ই জড়িয়ে আছে শূন্যের চাদরে। তারা হেলাফেলা করতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানী ও গনিববিদদের কাছে এ এক মহিমান্বিত সংখ্যা।
সেদিন ফেসবুকে এক ইউজার লিখেছেন, “এই যে আমরা চাঁদে গেছি, মঙ্গলে যাওয়ার চেষ্টা করছি, এর জন্য যে অঢেল অর্থ ও সময় ব্যয় করছি- এসবের দরকার কী? এই অর্থ আর সময় মহাশূন্যে না ঢেলে পৃথিবীতে ঢাললে তো আমরা পৃথিবীকে এতো দিনে স্বর্গ বানিয়ে ফেলতে পারতাম। পৃথিবীরই যেখানে অনেক কিছু উদঘাটন করা বাকী, সেখানে শত শত আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে আমরা কেন এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি?”
তার কাছে মঙ্গলগ্রহে পানি পাওয়ার ঘটনা নিতান্তই তুচ্ছ। এতো দূরের বসবাস অযোগ্য গ্রহে পানি থাকলেই কী আর না থাকলেই বা কী! হয়তো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ মেশিনে চতুর্থ বারের মতো ধরতে পারার ঘটনাও তার কাছে অর্থহীন।
আমার মনে হয় মহাশূন্য গবেষণার দর্শন এবং মহাকাশ গবেষণায় মানবজাতির অর্জন নিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে কিছু সত্য তুলে ধরার এখনই সময়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেখানে প্রতিনিয়ত দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নিশ্চিতভাবেই মহাশূন্যে আমাদের বিভিন্ন অভিযান আমাদের কৌতূহল ও রোমাঞ্চপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ। আর এর অন্যতম প্রয়োজনীয়তা হলো আমাদের প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখা। যেকোনো সময় কোনো বড় গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, কিংবা বড় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাতে আমাদের মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মোটেই অবাক ব্যাপার না। আপনি যে পৃথিবীর কথা ভাবছেন কেউ হয়তো আমাদের জন্য নিখুঁতভাবে গড়ে দিয়েছে, সেই পৃথিবীতে এই পর্যন্ত পাঁচটি গণ-বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৯% প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। তার মধ্যে অনেক মানব প্রজাতিও আছে।
মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নাসা(NASA) খুবই সুপরিচিত একটি সংস্থা। এটি যেখানে আমেরিকার গর্ব, সেই খোদ আমেরিকারই বহু লোক মনে করে নাসার ফান্ডিং বন্ধ হওয়া উচিৎ। কিন্তু নাসার অনেক কর্মকান্ডই কিন্তু মনুষ্যত্বের পক্ষে।
নাসার প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট পৃথিবীকে সর্বক্ষণ প্রদক্ষিণ করছে। নাসার গবেষকরা সেসব স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্য থেকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে। সে সব তথ্য ব্যবহার করে জলবায়ু, আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে আরও ভাল ভবিষ্যতবাণী করার উপায় বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। নাসার পৃথিবী সংক্রান্ত গবেষণার একটি অংশ হল জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নজর রাখা এবং আমাদের সতর্ক করে দেওয়া। অথচ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে যেসব কথা শোনা যায় তার জন্য কিন্তু নিজেদের সৃষ্টির সেরা জীব দাবী করা মানুষেরাই অনেকাংশে দায়ী।
এছাড়া বর্তমানে যোগাযোগ প্রযুক্তির যে অভাবনীয় উন্নতি তা অনেকটা সম্ভব হয়েছে মহাকাশ গবেষণার পথ ধরেই। বিমান উড়ার সময়ে নিখুঁতভাবে দিক নির্ণয় এবং সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর উপর অনেকখানি নির্ভর করে। মহাকাশ গবেষণা না থাকলে হয়তো আমরা এতো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা পেতাম না। ইন্টারনেট সুবিধার কথা না হয় বাদই দিলাম।
সেই সাথে পৃথিবীর কক্ষপথে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে থাকা গবেষকদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন, জিরো গ্রাভিটিতে শরীরের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি থেকে মানব দেহের জীববিজ্ঞান সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এবং তা চিকিৎসাবিজ্ঞানকেও অগ্রসর করছে। এছাড়া LED, Infrared Ear Thermometer, কৃত্রিম অঙ্গ, উন্নত সিমুলেশন, উন্নত খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রভৃতি এসেছে মহাকাশ গবেষণার পথ ধরে।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এসে আমাদের মহাশূন্যের দিকে যাত্রার শুভ সূচনা। তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রযুক্তি ব্যাপক উন্নত হয়েছে। আমাদের জ্ঞানের পরিসীমা আরও বৃস্তিত হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখছি কোনো এক সময়ে আমরা হয়তো আন্তঃনক্ষত্রিক ভ্রমণে বের হবো। আর এই যাত্রায় আমাদের পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হলো মঙ্গল গ্রহের মাটিতে পা রাখা। তাই বলা যায় মহাশূন্য ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা নিতান্তই অর্থহীন নয়।

তথ্যসূত্র:

1) Click This Link

2) Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:২৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×