somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ফিরে আসা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গভীর রাতে ঘড়ির টং টং শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মৌরী পাশে নেই। ওয়াশরুমে গেছে ভেবে আমি শুয়ে রইলাম, কিন্তু অনেকটা সময় হবার পরও যখন মৌরী রুমে আসলো না তখন মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভয় কাজ করল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা সতের মিনিট! আমি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বসি, বিছানা থেকে নেমে দ্রুত ওয়াশরুমে দিকে থেকে এগিয়ে যাই, মৌরী ওয়াশরুমে নেই, তবে কোথায় গেল মৌরী?

বাসার বাকিরুম গুলো একে একে খুঁজেও পেলাম না মৌরীকে, তবে কি মৌরী ছাদে গিয়েছে? আমি দৌড়ে ছাদে উঠে পড়লাম, কিন্তু মৌরীকে ছাদেও পেলাম না। ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু করলো সেইসাথে গলাটাও কেমন যেন শুকিয়ে আসলো। এত রাতে কোথায় গেলো মৌরী ভাবতে ভাবতে যখন আমি ছাদের শেষ কর্ণারের রেলিংটা ধরে দাঁড়ালাম! তখন আমার চোখ আটকে গেল বাগানের দোলনা টার দিকে। মৌরী দোলনাটার সামনে হাঁটুগেড়ে বসে একা একা হাসছে।

আমি দৌঁড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে বাগানে দিকে ছুটে চললাম। আমি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকবার মৌরী মৌরী বলে ডাক দিলাম, কিন্তু আমার কথায় ওর কোন মনোযোগ নেই ও একা একা হেঁসে চলেছে, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মৌরীর কি তবে হ্যালুসিনেশন হলো? নাকি খারাপ অন্য কিছুর দৃষ্টি পরল? রাতের বেলা গ্রামে অনেক খারাপ কিছুই দেখা যায়।

আমি ওর পিঠে হাত রাখতেই ও চমকে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। আমি বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু মৌরীর জ্ঞান ফিরল না। মৌরী কে নিয়ে এসে ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিলাম। অবশিষ্ট রাত টুকু মৌরীর পাশে বসে কাটালাম। মৌরী একটু পরপর হেঁসে উঠছে আমার কাছে কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো মনে হল। খারাপ কোন কিছুর নজর পরল না তো ওর উপর খুব টেনশন হতে লাগল।

অবশেষে ফজরের আযান দিতে মৌরী চোখ মেলে তাকালো, আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। আমার দিকে তাকিয়ে মৌরী বলল কখন উঠলে? ওর কিছু মনে নেই দেখে আমি আর কিছু বললাম না যদি ভয় পেয়ে যায়। এইতো মাত্রই উঠলাম, মৌরী আর কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে গেল। অল্প সময়ের ভিতর ওযু করে ফিরে আসলো। অস্বাভাবিক ব্যবহার না দেখে আমি ওকে রেখে মসজিদে চলে আসলাম নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে একবার ভাবলাম হুজুরের সাথে কথা বলব বিষয়টা নিয়ে পরক্ষণেই চিন্তা করলাম হ্যালুসিনেশন হতে পারে। যদি আবারও এমন হয় তবে ঢাকায় ফিরে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো। ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।

রুমে ঢুকতে মৌরী বলে উঠলো চলো না বাহিরে থেকে হেঁটে আসি, আমি কখনো গ্রামের বাড়িতে এত সকালে হাঁটিনি। আমি ওর হাত ধরে বললাম চলো। মৌরীর অতীত জীবনের কোন কিছুই মনে নেই, সাত বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় মৌরী অতীতের সবকিছু ভুলে গেছে। বিয়ের পর দুটো বছর কেটেছে ওর এ বাড়িতে তার কোন কিছুই মনে নেই। দুজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে পুকুরঘাটে বসতেই মৌরী বলে উঠলো, আবির আমার কাছে পুকুরঘাট টা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, মনে হচ্ছে আমি আগেও এসেছি এখানে।

- কি যে বলোনা তুমি আগে কি করে আসবে?
- মৌরী হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ আমারই ভুল।

আমি আচ্ছা চলো বাসায় ফিরে যাই, তারপর দুজন হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরে আসলাম। আমি চাইনা মৌরী তার ভয়ংকর অতীতকে মনে করতে পারুক। সকালের খাবার খেয়ে দুজন মিলে প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। দুপুরে খাবার খেয়ে আমি একটা জরুরী কাজে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়িতে ঢুকতেই দেখি মৌরী পুতুল হাতের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে আর হাসছে। আমি ওর সামনে যেয়ে বললাম সন্ধ্যার সময় বাহিরে বসে আছো কেন? মৌরী কোন উত্তর দিচ্ছে না দেখে আমি জোরে ওর নাম ধরে ডাক দিলাম। মৌরি লাফিয়ে উঠলো, আমি ওকে ধরে বললাম কি হয়েছে তোমার?

- মৌরী, কই কিছু নাতো।
- আচ্ছা চলো রুমের ভিতর যাই বলে ওর হাত ধরে নিয়ে চললাম। হাত ধরে বাসার ভিতরে ঢুকছি আর মৌরী বার বার পিছু ফিরে তাকাচ্ছে। আমার খুব ভয় লাগছে তবে কি মৌরীর অতীতের কিছু মনে পড়ছে? না এটা কি করে সম্ভব ডাক্তারের কথা অনুযায়ী মিরাক্কেল না ঘটলে কোনদিন ওর স্মৃতি ফিরে আসবেনা।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি সাত বছর আগে সেদিন ওর কথা শুনলে হয়তো আজ ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতো। অতীতের দিনগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশে নেই, ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে মৌরী সেখানেও নেই। আমার বুঝতে আর বাকি রইল না মৌরী কোথায় আছে, আমি দৌড়ে ছুটে গেলাম বাগানে। আমি যা ভেবেছিলাম তাই মৌরী দোলনায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি কয়েকবার ডাক দিতে মৌরী লাফিয়ে উঠে বলতে শুরু করল আমার মেয়ে আমার মেয়ে। আমি মৌরীর হাত ধরে বললাম কি সব বলছো তুমি? মৌরী এ দিক সে দিক তাকিয়ে বলল আমার সাথে একটা মেয়ে ছিল|

- তুমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছো,
- আমি সারারাত ওর সাথে কথা বলছি এটা কি করে স্বপ্ন হতে পারে?
- দেখো এই বাড়িতে কোন বাচ্চা মেয়ে নেই,
- তুমি হয়তো ঠিকই বলেছ আমি স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন এতো বাস্তব হয়, যদি সত্যিই আমার একটা মেয়ে থাকতো।
- আমি মৌরীকে বললাম ঘরে চলো, তুমি এরকম উলটাপালটা কথাবার্তা বললে আমি তোমাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাব।
- মৌরী আমার হাত চেপে ধরে বলল কি যে বলো, আমি স্বপ্নই দেখেছি। আমি আর কোনো কথা বাড়ালাম না।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুমের ভিতরে একটা বাচ্চা আমাকে বাবা বলে ডেকে উঠলো। সে বলতে শুরু করল বাবা আমি ফিরে এসেছি ,আমি তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বসলাম। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছিনা।

বারান্দা থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে, আমি সেদিকে ছুটে গেলাম মৌরী পুতুল নিয়ে খেলছে আর হাসছে।
- মৌরী কি হয়েছে তুমি হাসছো কেন?
- দেখছো না আমি আমার মেয়ের সাথে খেলছি,
- কোথায় মেয়ে কার মেয়ে তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
- তুমি কি দেখতে পারছ না আবির এইতো বসে আছে,বলেই মৌরী পাশে তাকালো আমার দিকে ফিরে বললো তোমাকে দেখে চলে গিয়েছে।
- এখানে কেউ ছিলই না।
- ছিল আবির তুমি দেখতে পাওনি ও আমার মেয়ে, আমাকেও বলেছে।
- পাগলামি কোরো না মৌরী, তোমার মেয়ে কোথা থেকে আসবে? আমাদের কোনো সন্তান নেই তুমি ভুলে গিয়েছো?
- কিন্তু আবির ও যে বললো আমার মেয়ে।
- তোমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে মৌরী।
- না আবির আমার কোন হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না তুমি সত্যি করে বলো আমার মেয়ে না ওইটা? বল আবির আমার অতীতের কোনো কথা মনে নেই কেন সত্যি করে বলো তুমি? আমি কেন মা হতে পারবো না বলো।
- মৌরী ডাক্তার বলেছে তুমি মা হতে পারবেনা সে কথা তুমি ভুলে গিয়েছো?
- আমি ভুলিনি কিন্তু কেন হতে পারব না আমারতো কোন সমস্যা নেই,

- আমি আর সত্য গোপন করতে পারলাম না তাই বলতে শুরু করলাম, তোমার কোন দোষ নেই, আর তুমি মা হতে পারবে যদি আল্লাহ চায়। সাত বছর আগে যখন তুমি সন্তানসম্ভবা ছিলে একদিন বাগানের দোলনায় দোল খাওয়ার সময় আমি তোমাকে ধাক্কা দেই, তখন তুমি দোলনা থেকে পরে যাও। আর সাথে সাথে তোমার পেটের সন্তান টা নষ্ট হয়ে যায়। তারপর কেটে গেলে সাতটি বছর তোমার অতীতের কোন কিছুই মনে নেই সেদিনের পর থেকে।

মৌরী আমার হাত চেপে ধরে বলল ও আসছে আবার আসছে বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।আমি অনেকবার ডাকতেও যখন মৌরীর জ্ঞান ফিরে আসলো না তখন দ্রুত মৌরীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসলাম। ডাক্তার এসে বলল সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান আপনি বাবা হতে চলেছেন। আমি আনন্দে ছুটে গেলাম মৌরীর পাশে। মৌরী বলতে শুরু করল আমি এখানে কেন?

আমিও মৌরীর হাত চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে চুপিচুপি বললাম তুমি মা হতে চলেছো। মৌরী আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো সত্যিই আবির? আমি ওকে বললাম হ্যাঁ। সেদিন থেকে আমি বিশ্বাস করি এই পৃথিবীতে মিরাক্কেল বলতেও কিছু হয়। কখনো কখনো কেউ ভিন্ন রূপে, ভিন্ন ভাবে ফিরে আসে।

লেখক: Md. Shahriar Hossain এমডি শাহরিয়ার হোসাইন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×