somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রোম রাজ্য

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একদিনেই কিন্তু গড়ে ওঠেনি ঐতিহাসিক এই রোম।ইতিহাস নিয়ে যা লেখালেখি করেন তাদের সকলের জানা আছে রোম আসলে কতটা যে প্রাচীন আর কতটা যে মহিমান্বিত।তারপরও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কীভাবে রোমের জন্ম হলো ? কীভাবে গড়ে উঠলো এমন এক শহর আর এখান থেকেই পরবর্তীতে জন্ম হয়েছে কালজয়ী সব সৃষ্টির ?রোমের জন্ম নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই জানতে হবে রোমুলাস এবং তার ভাই রেমাসের কথা। যদিও রোমের গোড়াপত্তন নিয়ে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত আছে তার মধ্যে রোমুলাস রেমাসের কিংবদন্তীই সবচাইতে জনপ্রিয়। অবশ্য তাতেও আছে নানান মত বিরোধ। রোমুলাস আর রেমাসের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় আলকিমাস নামক এক সিসিলিয়ান ইতিহাসবিদের লেখায় খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে।রোমুলাস আর রেমাস কিংবদন্তীর শুরু হয় প্রকাস বা প্রকা নাম্নী এক ল্যাটিন রাজা থেকে তিনি ছিলেন অ্যালবা লংগা এর রাজা।


প্রকাসের ছিল দুই ছেলে, নুমিটর এবং অ্যামালিয়াস। নুমিটর বড় এবং সে সিংহাসনের আইনগত উত্তরাধিকারী। এই ধরনের অন্যান্য গল্পে যা হয় এখানেও তার ব্যতিক্রম নয় বরং তাই হলো ছোট ভাই অ্যামালিয়াস তা সহ্য করতে পারলেন না। রাজ্যের কোষাগারের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তিনি বড় ভাইকে সরিয়ে নিজে সিংহাসন দখল করে নিলেন আর অন্যদিকে নুমিটরের স্থান হলো একটি ছোট্ট খামারে। আর নুমিটরের বংশধরদের কেউ যেন কখনো সিংহাসনের দাবি করতে না পারেন সেজন্য হত্যা করা হলো নুমিটরের ছেলেদের,সেই সঙ্গে নুমিটরের মেয়ে, রিয়া সিলভিয়াকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো দেবী ভেস্টা'র মন্দিরে, ভেস্টার ভার্জিন হিসেবে। ‘ভেস্টার কুমারী’রা ছিল দেবী ভেস্টার পূজারিণী, আজীবন কুমারী থাকাই ছিল যাদের নিয়ম। রাজত্বের ভাগীদারদের একে একে যাতে তাদের পিতৃ পরিচয় নিয়ে আছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা আর বিতর্ক। কোনো কোনো বর্ণনায় দেখা যায় রোমুলাস আর রেমাসের বাবা হিসেবে অর্ধ দেবতা অর্ধ মানুষ হারকিউলিসকে তবে রোমানদের কাছে রিয়া সিলভিয়ার স্বামী হিসেবে যুদ্ধদেবতা মার্সের কাহিনীই বেশি গ্রহণযোগ্যতা।


তবে একটা বিষয় হল ইতিহাসবিদ লিভি, তিনি ছিলেন একটু বাস্তববাদী। তার মতে রোমুলাস আর রেমাসের বাবা কোনো এক অজানা ব্যক্তি যে কিনা রিয়া সিলভিয়াকে ধর্ষণ করে তার গর্ভবতী হওয়ার দায় চাপিয়ে দেন ঐশ্বরিক সত্ত্বার উপরে।তবে রোমুলাস আর রেমাস
যে মায়ের দিক থেকে নুমিটরের বংশধর সেটা নিয়ে কারো কোনও সন্দেহ নেই।রিয়া সিলভিয়ার গর্ভধারণ এবং যমজ ছেলের জন্মদানের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যামালিয়াস আর তনি নির্দেশ দেন দুই সন্তানসহ ভাতিজী রিয়াকে হত্যা করার। তবে এখানে কাহিনীর ভিন্নতা পাওয়া যায়। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয় যায় যে অ্যামালিয়াসের নির্দেশ ছিল রিয়া সিলভিয়াকে তার সন্তানসহ টাইবার নদীতে ফেলে দেওয়ার যাতে করে তারা ডুবে মারা যায়। আদেশ অনুসারে সিলভিয়া এবং রোমুলাস ও রেমাসসহ বাচ্চা রাখার ঝুড়িটি নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

অন্যদিকে আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে সন্তানদের বাবা দেবতা মার্স বা হারকিউলিসের ভয়ে অ্যামালিয়াস আদেশ দেন রিয়া সিলভিয়াকে বন্দী করার এবং রোমুলাস আর রেমাসকে টাইবার নদীতে ফেলে দেয়ার। অ্যামালিয়াসের ধারণা ছিল কোনো অস্ত্র
বা তরবারি কিংবা অন্য কোনও জিনিস দিয়ে না মেরে, অন্যভাবে মারলে হয়ত দেবতার রোষ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।তারপর
রোমুলাস এবং রেমাসকে নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য এক চাকরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু এখানে ঘটলো অন্যরকম,রাখে আল্লাহু মারে কে,সেই শিশুদের দেখে তাদের প্রতি চাকর লোকটির মায়া হলো।
তাই সে রোমুলাস এবং রেমাসকে না মেরে একটি ঝুড়িতে করে টাইবার নদীতে ভাসিয়ে দিলেন।
রোমুলাস আর রেমাসের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে একটি ঝুড়ি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ।


তারপর টাইবার নদীর দেবতা টাইবারনিয়াসের কৃপায় দুই ভাইয়ের ঝুড়িটি ভাসতে ভাসতে আটকে গেল এক ডুমুর বা কারো মতে জলপাই গাছের শেকড়ে। সেখানে তাদের খুঁজে পেল এক মাদী নেকড়ে। এই মাদী নেকড়ে তার গুহায় নিয়ে গিয়ে দুই ভাইকে স্তন্যপান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখলো। তারপর তাদের খোঁজ পেল নিঃসন্তান ফাউস্টালাস।ফাউস্টালাস ছিল অ্যামালিয়াসের রাজ্যের এক মেষপালক। দেবতার আশীর্বাদ মনে করে রোমুলাস আর রেমাসকে সে নিয়ে এল নিজ বাড়িতে আর দুই ভাইকে তুলে দিল তার স্ত্রী লরেনশিয়ার হাতে। লরেনশিয়া দুই ভাইকে পরম আদরে লালন-পালন করতে লাগলো। দুই ভাইয়ের নাম রাখা হলো রোমুলাস আর রেমাস।


তারপর বহু বছর কেটে গেল আর দুই ভাই ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো আর একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়লো তাদের দস্যিপনা। রেমাসের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই ভাই দস্যুদের কাছ থেকে জিনিসপত্র চুরি করে আশপাশের গরীবদের দান করতে লাগলো। তবে একদিন এক দস্যু রেমাসকে ধরে ফেললো এবং নিয়ে যায় রাজা অ্যামালিয়াসের কাছে বিচারের জন্য। অ্যামালিয়াসের সামনে দস্যু রেমাসকে ফাঁসালো রাজার ভাই নুমিটরের মেষ চুরির দায়ে। এত ছোট বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে অ্যামালিয়াস তাদের পাঠিয়ে দিল নুমিটরের কাছে।ছেলেটার চেহারা দেখা মাত্রই নুমিটরের তাকে চিনে ফেলল, আর পালক বাবাকে নিয়ে ভাইকে উদ্ধার করতে আসা রোমুলাসের চেহারা দেখে তার আর সন্দেহই থাকলো না যে এই দুই ছেলে তার নাতি তার মেয়ে রিয়া সিলভিয়ার যমজ সন্তান, তারপর সব কাহিনী শুনে রোমুলাস আর রেমাস দুই ভাই নানাকে নিয়ে ছুটলেন অ্যামালিয়াসের কাছে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য,অ্যামালিয়াসকে হত্যা করে নানাকে আবার বসালেন অ্যালবা লংগার সিংহাসনে।তারপর নানার নির্দেশেই দুই ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নতুন এক নগরী নির্মাণে। আর তখনই শুরু হয়ে যায় বিরোধ।


কোনো কোনো বর্ণনায় লেখা আছে দুই ভাইয়ের বিরোধের শুরু হয় নতুন রাজ্যের অবস্থান নিয়ে,আবার কিছু ইতিহাসবিধদের মতে নতুন রাজ্যের রাজা কে হবে তা নিয়ে। যাই হোক,তারপর দুই ভাই ঠিক করলেন দেবতারাই তাদের বিরোধের মীমাংসা করে দিতে পারবেন আর তাই রোমুলাস যান প্যালাটাইন পাহাড়ে আর রেমাস অ্যাভেনটাইন পাহাড়ে। রেমাস সেখানে আকাশে ছয়টি শকুন বা পাখি দেখেন, অপরদিকে রোমুলাস দেখতে পান বারোটি শকুন বা পাখি। যেহেতু রোমুলাস বেশি শকুন বা পাখি দেখেছেন তাই রোমুলাসের অনুসারীরা তাকেই বিজয়ী বলে ধরে নেন,কিন্তু রেমাস প্রথম শকুন বা পাখি দেখেছেন এই যুক্তিতে তাকেই বিজয়ী বলে ঘোষণা করে রেমাসের অনুসারীরা।তারপর বিরোধের মীমাংসা না করেই রোমুলাস তার রাজ্য বানাতে শুরু করলেন প্যালাটাইন পাহাড়ের চারপাশে পরিখা খনন করে তিনি প্রাচীর তৈরি করতে থাকেন । রোমুলাসকে ব্যঙ্গ করতে রেমাস সেই দেয়ালে এক লাফেই চড়ে বসেন। ভাইয়ের এহেন স্পর্ধা দেখে প্রচণ্ড রাগান্বিত হন রোমুলাস আর হত্যা করেন রেমাসকে। অবশ্য অন্য বর্ণনায় দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় আর তাতে নিহত হয় রেমাস। ইতিহাসবিদ লিভির বর্ণনা অনুসারে লোকদের বিশ্বাস দেয়ালে লাফ দেওয়া মাত্রই দেবতাদের ইচ্ছায় নিহত হন রেমাস। আর তারপর নিজের নামে রোমুলাস প্রতিষ্ঠা করেন নিজের রাজ্য, রোম। লিভির মতে রোমের প্রতিষ্ঠা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালের ২১ শে এপ্রিল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×