প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যা একটা শিশুর বা মানুষের জীবনে জীবনভর প্রভাব ফেলে থাকে তার উপর ভিত্তি করে একটা সিরিজ শুরু করেছিলাম।
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
এর আগে এ সিরিজের তিনটি পর্ব লিখেছি। আজকে লিখলাম চতুর্থ এবং শেষ পর্ব। যদিও আমার ইচ্ছা ছিলো আরো দুইটি পর্ব লেখার, কিন্তু পরে বিবেচনা করে দেখলাম যা বলতে চাই তা একটি পর্বেও বলা সম্ভব।
আজকের পর্বের বিষয়বস্তু হচ্ছে একটি টিউশনি এবং আমার ব্রয়লার মুরগী হয়ে ওঠার গল্পটি।
অনেকেই ভেবেছেন হয়ত ব্রয়লার মুরগী মানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ওঠার কোন করুন গল্প হয়ত হতে পারে, একথা বলবোনা যে গল্পটি বলতে চাই তা কোন সমস্যা নয়, তবে আমার কাছে মনে হয় আমি যে গল্পটি বলতে চেয়েছি তা কোন পাঠকের সহজে অনুমান হবার কথা নয়, কারন গল্পটি আমার এবং আমিই শুধু জানি।
আমার সিরিজটি মূলত এদেশের স্কুল শিক্ষার নানা দিক তুলে ধরার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, স্কুল শিক্ষা, যা একটি শিশুর শিক্ষা জীবনে প্রথম ধাপ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ন।
স্কুলকেই গুরুত্ব দিয়েছি, স্কুলের সমস্যা, সুবিধা, শিশুর একাডেমিক, বিহেভিয়ার এইসব কে বেশী প্রাধান্য দেয়াটা ছিলো আমার মূল লক্ষ্য।
কথায় বলে সারাটা দিন কেমন যাবে তা সকাল দেখলে বোঝা যায়। তেমনি একটা ছেলে বা মেয়ে কেমন মানুষ হবে তার বীজ সে সকালবেলাতেই মানে ছোটবেলাতেই বপন হয়ে যায়।
বাবা মা, প্রতিবেশী, বন্ধু- বান্ধব, শিক্ষক এঁরাই মূলত ভূমিকা পালন করে একজন মানুষের জীবন গঠনে। এই আলোচনায় পরে আসছি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে সামান্য কিছু না বললেও বোধহয় সিরিজটি অপূর্ন থেকে যায়!
না আমি বিশ্ববিদ্যালয় কি তার কোন সংজ্ঞা দিতে চাইনা। বিশ্ববিদ্যালয় কি এ নিয়ে হাজার হাজার সংজ্ঞা বিভিন্ন বই বা নেটেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কি বা পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনা, ব্যর্থতা, হতাশা এসব বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখিতে দেশের দৈনিক গুলো একদিন বা দুইদিন বা দু চার বছর নয় প্রায় তিরিশ/চল্লিশ বছর ধরেই নানা আলোচনা, সমালোচনা চলছে।আমি করলাম একটা খুবই সাদামাটা আলোচনা, অবশ্যই নিজের কিছু অভিজ্ঞতা মিলিয়ে।
আমি পেয়েছিলাম কিছু চমৎকার শিক্ষকদের। অবশ্যই সব শিক্ষকই সমান যোগ্য ছিলেন না, ছিলেন না একই কাতারের। কিন্তু প্রায় সবারই ছিল আন্তরিক প্রচেষ্টা।
আমি যে জিনিসটা আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মাঝে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেছি সেটা হলো, কারো রাজনৈতিক পরিচয় জানতে না চাওয়া, এবং সম্পূর্ন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি বিভাগ কে পাওয়া। এটা খুব বিরল এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু এ বিষয়ে চমৎকার এ পরিবেশটি শিক্ষকদের এবং একমাত্র আমি বলবো শিক্ষকদের একান্ত ইচ্ছাতেই এ ট্রাডিশনটি ধরে রাখা হয়েছে।
প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানারকম রাজনৈতিক গন্ডগোলের জের ধরে বছরে দুই তিন মাস করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থেকেছে। তারপরও আমরা কোন সেশন জট ফেস করিনি শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিক ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টার কারনেই।
কিন্তু ভুক্তভোগী মাত্র জানেন যে সেশনজটের কারনে যদি পরীক্ষা না ও পেছায় তারপরও কি ভয়ঙ্করভাবে ছন্দপতন ঘটে একাডেমিক লাইফের।
ব্যাপারটা অনেক দুঃখজনক যে এ বিষয়রটির কোন সুরাহা এখন পর্যন্ত হচ্ছেনা। প্রায়ই নানা কারনে ক্যাম্পাস সরগরম এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস থাকছে বন্ধ হয়ে। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সুতরাং এর সকল রকমের কার্যপ্রনালী এবং সিদ্ধান্ত হবার কথা নিজস্ব। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমার কাছে মনে হয় এ জায়গায় চরমভাবে ব্যর্থ। প্রায়ই মধ্যস্হতা করতে হস্তক্ষেপ করতে হয়, হচ্ছে সরকার প্রধান কে। কিন্তু একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানকে যদি কথায় কথায় দেশের সরকার প্রধান বা অন্য কারো কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য দাঁড়াতে হয় তাহলে সে আর কেমন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান?
আমাদের হতাশ নয়নে দেখতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত হয় দলীয়ভাবে!
তাহলে এসব কি কোন বিশ্ববিদ্যালয়? নাকি আফ্রিকার জঙ্গল?
ক্লাস করতে গেলে যেখানে কান বিদীর্ন হয় মিছিলের তুমুল শব্দে, হলে থাকতে গেলে যেখানে হতে হয় লাশ সেটা কি কোন বিশ্ববিদ্যালয়?
আমার নিজের অভিজ্ঞতা হলো প্রতিবছর গন্ডগোল দেখা, এ গন্ডগোল কোন যেমন তেমন গন্ডগোল নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলো যথেষ্ট সেফ জোনে তৈরী করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি, ছেলেদের হলগুলো থেকে একেবারেই দূরত্বে, এবং একাডেমিক ভবন গুলোর কাছাকাছি। সেখানে ছেলেদের হলগুলো কি পরিমান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত হলে সেসব চিৎকার, চেঁচামেচি আমাদের কান পর্যন্ত আসতে পারে! চতুর্থ বর্ষে যখন পড়ি, সারারাত শুনেছি গুলির শব্দ, না টিয়ারশেলের শব্দ নয়, ভাববেন না আমরা টিয়াশেলের শব্দকে গুলির শব্দ ভেবেছি।ওগুলো ছিলো গুলির শব্দ। সারাটা রাত কি উৎকন্ঠাময়, কি বিভীষিকাময় গেছে কেউ সেখানে উপস্হিত না থাকলে জানবেনা কোনদিন।
এগুলোই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকলাপ ?
আর এটাই কি লেখাপড়ার চমৎকার পরিবেশ?
প্রশ্ন গুলো পুরনো আর উত্তর কারো জানা নেই।
কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন আছে, আমার যদি সামর্থ্য থাকে কালকে আমি কেনো চাইবো আমার ছেলে বা মেয়ে দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক?
অথচ আমি অথবা আমরাই কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাঁটের পয়সা দিয়ে চালাচ্ছি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন এদেশের একজন ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ারের পয়সা রয়েছে তেমনি রয়েছে একজন গরীব কৃষকের টাকা।
অথচ গরীব কৃষকটির ছেলে হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না গিয়ে কৃষক হলেই ভালো করতো।
কারন তাহলে তো তা কে লাশ হয়ে বাড়ী ফিরতে হতোনা!
যাইহোক, আমি আমার কথা বলছিলাম, আমার শিক্ষকদের কথা বলছিলাম।
আমি আমার শিক্ষকদের কল্যানে এমন অনেক গুন, চিন্তা, চেতনা অর্জন করেছি যার কারনে আমি তাঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, আছি এবং থাকবো।
তবে আমি সমালোচনা করতে চাই কিছু ব্যাপারের সমালোচনা করলেই যে সেটা নেগেটিভ কিছু, বা কাউকে খাটো করা তা কিন্তু নয়, বরং সমালোচনা আমাদের চোখ খুলে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়াশোনা করেছে, তখন যতটা মনে হয়েছে, সেখান থেকে পাস করে বের হবার পর সেটা আরো বেশী মনে হয়েছে।
যেমন, কেনো আমার শিক্ষকরা এতো বেশী রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড?
মানে আমরা যেদিন প্রথম ক্লাস শুরু করেছিলাম সেদিন থেকেই কিন্তু স্যাররা মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্ট অনেক টাফ একটা ডিপার্টমেন্ট এবং পড়াশোনা না করলে সোজা থার্ডক্লাস! আরেক স্যার বলতেন থার্ডক্লাস কি? পাস ও জুটবেনা!
এবং প্রতিবছর বিপুল পরিমানে ছাত্রদের থার্ডক্লাস পাওয়াটা এ ডিপার্টমেন্টের একটা ট্রেন্ড। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম প্রচুর স্টুডেন্ট থার্ডক্লাসের চিন্তায় আপসেট থাকে সারাবছর। অনেকেই রেজাল্ট খারাপ করে ডিপ্রেজড। যতটা না আমরা চিন্তায় ছিলাম তারচেয়ে বেশী স্যারদের কথাবার্তায় আশাহত হলাম। যদিও পরে আর সমস্যা হয়নাই। এটা ঠিক কোয়েশ্চেন রিপিট না হওয়ার ট্রাডিশন, কোয়েশ্চেনের উত্তর না পড়ে মূল জিনিসটা পড়ার এবং বোঝার, কম বেশী সারা বছর বইয়ের টাচে থাকার অভ্যাসটা আমাদের উপর বাড়তি প্রেসার ছিলো বলেই আমরা অভ্যাসগুলো করেছিলাম। কিন্তু আমি আরেক সেন্সে এটার বিরোধী, কারন আমার কাছে মনে হয় বিশ্ববিদ্যাকয়ে পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটা ভালো নম্বরভিত্তিক সার্টিফিকেট পাওয়া নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধুমাত্র ক্লাসে যাওয়া আসা, ধরাবাধা ক্লাসের বই পড়া নয়।
আমাদের শিক্ষকরা আমাদের বই সবসময়ই পড়তে বলতেন, কিন্তু ঘুরেফিরেই সাহিত্যকেন্দ্রিক কিছু। ইংরেজীতে পড়লে যে শুধু হিস্ট্রি অব ইংল্যান্ড পড়লেই হবে তা তো নয়!
আমরা তখন এটা প্রায়ই বলতাম যে আমরা তো বাংলাদেশের হিস্ট্রিই ভালো করে বুঝিনা!
এখন বুঝি হিস্ট্রি অব ইংল্যান্ড পড়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ন, বাংলাদেশের ইতিহাস তো আমাকে জানতেই হবে কারন সবার আগে আমি বাংলাদেশী।
কিন্তু পাশাপাশি একজন শিক্ষিত মানুষের জানা উচিৎ টোটাল ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রির নিদেনপক্ষে সিনোপসিস!
আজকের চায়না কবে কিভাবে স্বাধীন হলো, এজায়গায় কি করে আসলো,ইউরোপের কথা যদি বলি জার্মানি ইজ ভেরী ইমপরট্যান্ট।
মিডল ইস্ট কেনো বাদ গেলো?
কানাডা, আর আমেরিকার ইতিহাস অল্প সময়ে পড়া যায় কিন্তু গর্বের সাথে বলতে হয় যে আমরা পড়িনা!
শুধু ইতিহাস নয় এরকম আরো অনেক ব্যাপার আছে, একটা সময় বুঝিইনি যে এসব পড়া উচিৎ। আর এখন যখন পড়তে চাই তখন ভাবতে হচ্ছে চাকরি নিয়ে, তখন ভাবতে হচ্ছে বিসিএস গাইড নিয়ে।
বিসিএস গাইড কিন্তু কোন জ্ঞান আহরনের বই না এটা মাথায় রাখতে হবে। ইতিহাস জানতে হলে ইতিহাসের বইয়ের চেয়ে বেশী কার্যকর বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের লেখা অটোবায়োগ্রাফী, বা বায়োগ্রাফী, এবং তাঁদের লেখা বাদবাকি বইগুলো।
আমি শুধু পুরনো লেখকদের কথা বলবোনা, প্রায়ই বিভিন্ন লেখক নিরন্তর নতুন নতুন বই আনছেন, সেগুলোও আমাদের সাথে সাথে অন্তত কিছু সিলেক্টেড চ্যাপটার পড়া উচিৎ।
আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি যে এতোক্ষন এসব বলছি, কোথায় গেলো সে ব্রয়লার মুরগী!!
জি সে ব্যাপারেই আমি আসছি এখন।
ব্রয়লার মুরগী কি তা তো সবাই জানেন, খাঁচায় বন্দী, মাংসলো শরীর কোন দৌড়ঝাঁপ পাড়েনা! ভিটামিন খাওয়ানো হয় নিয়মিত আরো বেশী ফুলিয়ে তোলার জন্য।
আমি নিজে ছিলাম একসময় ব্রয়লার মুরগী।
মানে?
মানে এটা একটা উপমা ব্যবহার করেছে তা হয়তো বুঝতেই পারছেন।
আমরা যে যুগে জন্মেছি তখন বাবা মা দের মাত্র একটি বা সর্বোচ্চ দুটি সন্তান। খাবার নিয়ে একটা বাচ্চার পিছনেই বাবা মা খা খা খা খা করে ঘুরেছে। আর আমরা খাবার মুখে নিয়ে ফেলে দিয়েছি।
আমার ধারনা সারাক্ষন খা খা খা খা না করলেও আমরা ঠিকি ক্ষুদা লাগলে সময়মত খেতাম।
ছোটবেলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতিটা কাজে বাবা মা এতো বেশী পিছন পিছন ঘুরেছে যে আমি টোটালী পরনির্ভরশীল একটা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছিলাম। এবং একটা সময় পুরোপুরি হাপিয়ে উঠেছিলাম, চরম বিরক্তও ছিলাম বলা যায়।
যখন ছোট ছিলাম তখন হেল্পের অবশ্যই দরকার ছিলো, কিন্তু একটা বয়সের পর বাবা মা যদি মনে করতে থাকে ছেলেমেয়ের প্রতিটা কাজ নিজ হাতে বাবা মা করে দিবে আমি বলবো সেটা তাহলে চরম ভূল করবে, এবং পরে পস্তাবে, এভাবে কোন ছেলে মেয়ে পরিপূর্ন মানুষ হতে পারেনা।
আমি স্কুলে পড়ার সময় কোন টিচারের বাসায় পড়তে যাইনি, সবসময় বাড়তি টাকা দিয়ে টিচার বাসায় এসেছে, কারন আমি নাকি যেতে পারবোনা, আমি জানি আমি ল্যাংড়া, লুলা, র্নিবুদ্ধি ছিলাম না আমি যেতে পারতাম। আমি কখনোও মা ছাড়া কোথাও যেতাম না তাহলে নাকি আমি হারিয়ে যাবো, যেখানেই যেতাম কিছুক্ষন পর আমাকে আমার মা ডাকতে থাকতো সনি কই, সনি কই !
মানুষমাত্রই স্বাধীন ভাবে চলতে চায়, এভাবে আমার ন্যাচারাল জগত টা হ্যামপার হতো।
ফলাফল আমি একসময় হলাম চরম বিরক্ত।
কলেজে কেন দেরী, এই ৫ মিনিট কই ছিলে , কি করলে, তোমার বইয়ের মাঝখানে কি! আমি দেখি!
আমি খুব ভালো করেই জানি বইয়ের মাঝখানে কোন প্রেমপত্র না, বইয়ের মাঝকানে ক্লাস রুটিন।
কিন্তু ফলাফল কি হলো? এতো অকারন সন্দেহ বাতিকতার কারনে আমি হলাম বিরক্ত, আমার আস্হার জায়গা নষ্ট হলো
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যখন সময় আসলো তখন আব্বুর প্রথম পছন্দ আর্মি। না আমার পরীক্ষা দেয়া দূরে থাক, ফর্মই তোলা হয়নি আমার মায়ের অদ্ভুত যুক্তির জেদের জন্য।
ঠিক আছে সেকেন্ড চয়েস যেহেতু লিটারেচার সেহেতু রবীন্দ্রভারতী বা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোটা ছিলো আব্বুর ইচ্ছা। সেটাও হয়নি।
এমনকি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত পরীক্ষা দেইনি। না, জাহাঙ্গীরনগরেও না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আমাকে আমার মা এবং মামা বললেন আমার নাকি কোন কিছুর দরকার হলে কষ্ট করে সেটা শুধু একটু মামা কে জানাই, উনিই সব দিয়ে যাবেন, আমার কোন কষ্ট করতে হবেনা।
আমি কোন কাজ করতে গেলেই আমাকে শুনতে হতো আমি কেনো নিজে করতে গেলাম, অমুক, সমুক, অবশ্য পরবর্তীতে ফলাফল হয়েছিলো এমন যে আমি মোটামুটি আর কথাই শুনতাম না!
শুনলে অবাক হবেন, আমার হল পর্যন্ত কাঁচাবাজার করে দিয়ে যাবার রেকর্ডও আমার মামার আছে!!
সেসময় ৫/৬ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে কাজলা বাজারে যাওয়া যেতো, অথচ শহর থেকে কাঁচাবাজারও আমার হলে এসেছে!!
এভাবে কি কোন মানুষ মানুষ হতে পারে?
আমার কাছে মনে হয়না। এভাবে আমার অনেক কাজ করার অভ্যাস কোনদিন ছিলোনা। আমার কোনদিন কোন কাজ শেখা হতো না যদি না আমি নিজে ইচ্ছা করতাম, তবে সত্যি বলতে আমি পদে পদে অনেক ভুগী, ঐসব অভ্যাসের জন্য আমি অনেক চড়া দাম গুনি এখন। স্বাভাবিক, মানুষ অভ্যাসের দাস। একটা দীর্ঘ সময় আমার পায়ের কাছে সব রেডি করে এনে ফেলা হয়েছে, সে অভ্যাস কি এখন আমাকে ভোগাবে না?
আমি অনেক ভুগেছি, ভুগছি।
আমি চাইনা আমার মত করে কেউ সাফার করুক।
ছেলেমেয়ে সে যেই হোক একটা বয়সের পর তার নিজের কাজটা নিজে করতে দেন, কারন জীবনটা অনেক বেশী কঠিন, আপনি যা করছেন তা কোন ভালোবাসার প্রকাশ নয়, প্রত্যেকটা মানুষকে একদিন না একদিন নিজের কাজ নিজে করে খেতে হবেই, এর কোন মাফ নাই!
টিউশনির গল্পটা এরকম, আমার সাবজেক্ট টা টিউশনি করানোর জন্য খুবই উপযুক্ত ছিলো, কিন্তু আমি রাজশাহীতে কোনদিন এটা করিনাই আমার মা আর মামার ভয়ে।
মামার বাড়ী রাজশাহী, মামা ঠিকি একদিন আমাকে কোথাও দেখে ফেলবে আর মা সেটা জানার পর লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দিবে!
ঢাকায় আসার পর আমি দুইটা স্কুলে চাকরি করেছি,প্রথম যে স্কুলে ছিলাম সেখান থেকে বের হয়ে আমার হাতে অনেক অবসর থাকতো, সেসময় দুইটা স্টুডেন্ট কে পড়াতাম একই বাসায়।
এই টিউশনি করতে গিয়ে আমাকে রীতিমত চোখের পানি ফেলতে হয়েছে। বড়আব্বুর বাসায় থাকতাম তখন, উনি বললেন আমরা কি এতই নিচু ফ্যামিলির যে টিউশনি করতে হবে!
বড়আম্মু বললো, অ্যানম্যারেড মেয়ে টিউশনি করবে কেনো? যে শুনবে বলবে ছি ছি।
মামী ফোন করে বললো তোমার মামা বলেছে, টিউশনি করা বাদ দিতে, টিউশনি করলে কোনদিন বিয়ে হবেনা!
আমার মা বললো তুমি কি গরীব ফকিরের মেয়ে যে টিউশনি করতে হবে?
আর জীবনেও কোনদিন টিউশনি করবানা, এই আমি বলে দিলাম!
কয়েকমাস আগে আমি আব্বুকে বলেছিলাম তোমরা ( যদিও আব্বু আমাকে কিছুই বলেনি) চেয়েছিলে যে আমি যেনো ব্রয়লার মুরগী হই, তো আমি সেটা হয়েছি।
আমার সিরিজটা শেষ।
কার কেমন লাগলো জানাবেন,আর পরিশেষে বলবো
Keep in Mind Life is not bed of Roses
উৎসর্গ
শ্রদ্ধেয় এনামুল হক স্যারকে......
অধ্যাপক
ইংরেজী বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
স্যার কেনো এই অকালে আমাদের ছেড়ে গেলেন?
আপনি শুধু একজন ভালো শিক্ষক বা ভালো মানুষ নন, আপনি ছিলেন এককথায় হিরকখন্ড।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




