somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যোসেফ স্টালিনের হাতঘড়ি ও মতামত দমনে তথ্য আইন

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

● যোসেফ স্টালিনের হাতঘড়ি খোয়া গেছে! সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনি তখন রক্ষাকর্তা! খবরটা নি:সন্দেহে সাংঘাতিক! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর হয়ে ওঠেন। তারা মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে দশ-বারোজনকে গ্রেপ্তার করেন! ওই দশ-বারোজনই 'স্বীকার' করেন, ঘড়ি চুরির কথা! ঘড়ি একটি, অথচ দশ-বারোজন আইন শৃঙ্খলার লোকের কাছে আলাদা আলাদা স্বীকার করেন, তিনিই নাকি চুরি করেন! পরে অবশ্য জানা যায়, স্টালিনের ঘড়িটি আসলে চুরিই হয়নি, নিজের কক্ষেই আছে। ঘটনাটা সত্য নয়, স্টালিনের শাসনামল নিয়ে প্রচলিত হাস্যরসের গল্প।

স্টালিন আমলের আইনশৃঙ্খলার সদস্য আর এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের (সবাই নন) মধ্যে প্রায়ই পার্থক্য খোঁজে পান না বিশেষজ্ঞরা। এরকম সদস্যের কাছে 'রিমান্ড সেলে দেয়া স্বীকারোক্তির জবানবন্দি'র উপর ভিত্তি করে 'শেয়ারবাজার আদালত' পরিচালনা, 'তথ্য প্রযুক্তি আইন' বাস্তবায়ন করা প্রায় ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। অথচ তাই হচ্ছে। শেয়ার বাজার নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর 'দায়ে' গত ৩ আগস্ট দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় একজনকে। এর আগে ফেসবুকে অপপ্রচারের 'দায়ে' আরো কয়েকজনের সাজা হয় তথ্য প্রযুক্তি আইনে।

দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা প্রকৃত অর্থে দোষী হয়ে থাকলে রায়ের বিষয়ে সদ্য জন্ম নেয়া কোনো শিশুরও অভিযোগ থাকার কথা নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় কয়েকজনের সাজা হয়েছে (সবার নয়, কয়েকজনকে সাজা দেয়ার মানে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা বা আইনের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা), সেই প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন আসে, শেয়ার বাজারের হাজার কোটি টাকা লুটপাটের কথা বললেই কি 'অপপ্রচার' হয়ে যাবে? কারো রাজনৈতিক সমালোচনা করলেই তা রাষ্ট্রের কাছে 'অপরাধ' বলে গণ্য হবে? অভিযোগ ওঠেছে, শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে 'অনাকাঙ্খিত সমালোচনা'র পথ বন্ধ করতেই আদালত গঠিত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার লোকেরা মাঠে নেমেছেন।

হ্যাঁ, ফেসবুকের অপব্যবহার হচ্ছে, উগ্রপন্থী, রাজনৈতিক গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিলের জন্য ফেসবুকসহ অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছে। ধর্মান্ধরা ফেসবুক ও অনলাইনমাধ্যমকে ব্যবহার করছে ধর্মান্ধতা ছড়ানোর কাজে। কাজটা সবাই করছি না। অনেকে মত প্রকাশ করছি, চিন্তাগুলো বন্ধুদের কাছে তুলে ধরছি, ভাবনাগুলোর কথা বলছি। চিন্তা, মত প্রকাশ ও ভাবনার স্বাধীনতা আমাদের নিজস্ব, সংবিধান স্বীকৃত!

প্রায় সময় অনেকে ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ তুলে ধরছি, বন্ধুকে আঘাত করছি। এগুলো অসামাজিক বটে, তবে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়। কারো বন্ধুর সঙ্গে তার খারাপ সম্পর্কের জন্য রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে না। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের অসামাজিক আচরণ, বেয়াদবির জন্য অভিযুক্ত ভাইকে রাষ্ট্র আইনের মুখোমুখি করতে পারে না। কষ্ট, যন্ত্রণা পেলে সাধারণ মানুষ প্রায় সময়ই তার সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে। আপনজনদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টগুলোর কথা মানুষ যুগ যুগ ধরেই সমাজের অন্যজন, পাশের জনদের কাছে বলে আসছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যারা বলছেন, তারা তাই অন্যায় কিছু করছেন না নিশ্চয়ই!

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে নাগরিকদের নানা মত প্রকাশ করার জন্য সব দরজা, জানালা খোলা থাকে। এজন্যই গণতন্ত্র এতো প্রত্যাশিত। আর সব দরজা, জানালা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মুক্ত বাতাসে ফিরে আসার জন্য মানুষ দরজা, জানালা ভেঙে ফেলে। কথাটা যে কোনো রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণির মনে রাখা দরকার। তাছাড়া অনলাইনে 'সরকার বিরোধী মত' দমন করে ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে দেশটাকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। নানা মত প্রকাশের পথ খোলা রাখতে হবে। তবে যারা প্রকৃত দোষী, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচার, কুৎসা, উগ্রবাদ ছড়াচ্ছেন, তাদের বিচারের দাবি অবশ্যই জানাচ্ছি।

হা.শা.
দৈনিক যায়যায়দিন,
ঢাকা।●

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×