somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাণভয়ে দেশ ছাড়ছেন ব্লগার ও লেখকরা

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

●আইন প্রয়োগআইনকারী সংস্থার কাছ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে একের পর এক ব্লগার ও লেখক দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। ব্লগে লেখালেখি ও ঢাকার গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তারা বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। 'নাস্তিক ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের' তালিকা প্রকাশ করে উগ্রপন্থীরা একের পর এক হত্যা করতে থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্লগারদের মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন ইউরোপের দেশে চলে গেছেন। আরো অনেকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাদের রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাষ্ট্র কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে তারা অভিযোগ করছেন। দুটি দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাস সূত্র জানায়, প্রায় সাতজন ব্লগার তাদের দেশে যাওয়ার জন্য এর মধ্যে আবেদন করেছেন। এসব ব্লগার সম্পর্কে তথ্য পেলেও নিরাপত্তার স্বার্থে যায়যায়দিন তাদের নাম প্রকাশ করেনি। যারা এর মধ্যে বিদেশে চলে গেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ। তারা নিজেই এ তথ্য বিভিন্ন সময় নিজের ফেসবুক ওয়ালে বা ব্লগে লিখে শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানিয়েছেন।

বিদেশে পালিয়ে গেলেও ছয় থেকে সাতজন ব্লগার কোন দেশে আছেন এবং তাদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, বিদেশে পালিয়ে গিয়েও তারা উগ্রপন্থীদের হুমকিতে আছেন। বিদেশে থাকা ব্লগারদের নাম ও তাদের অবস্থান পত্রিকায় প্রকাশ না করতে শনিবার (৮ আগস্ট) গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। অন্যদিকে ব্লগার ওমর ফারুক লুক্স শুক্রবার রাতে স্কাইপে ঢাকার বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টিভিকে জানান-'বিদেশে গিয়েও তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শফিকুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পান। শফিকুল ইসলাম তাকে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে হুমকি দেন। ২০১৪ সালের ৩ জুলাই শফিকুল ফেসবুক বার্তায় লুক্সকে লেখেন- বুয়েট থেকে বৃত্তি নিয়ে ওদেশে গিয়েই তোকে হত্যা করব। তোর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে একের পর এক একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের ব্লগারদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। শুক্রবার এর সবশেষ শিকার হন নীলাদ্রী চ্যাটার্জি ওরফে নিলয়। তিনি লেখালেখি করতেন 'নীল নিলয়' ছদ্মনামে। এর আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ ও ওয়াশিকুর রহমান। কোনো ব্লগার হত্যারই এ পর্যন্ত বিচার হয়নি। এ বিষয়ে সরকার প্রায় নিস্ক্রিয় বলে ব্লগার ও মুক্তমনাদের অভিযোগ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার রাতে দাবি করেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না-এটা সঠিক নয়। অনেক বিপর্যয় ঘটানোর চেষ্টা এই জঙ্গিরা করছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।

তথ্য মতে, ঈদুল ফিতরের তিন-চারদিন আগে প্রাণের ভয়ে দেশ ছেড়ে জার্মানিতে চলে যান প্রথাবিরোধী লেখক ও প্রখ্যাত ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদ। ওই সপ্তাহে আরো তিনজন ব্লগার দেশ ছাড়েন। অভিযোগ আছে, অনন্যসহ ওই চারজন জঙ্গিদের 'ব্লগার হিটলিস্টের' পরবর্তী টার্গেট ছিলেন। তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অনন্য আজাদের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, 'জীবন বাঁচাতেই অনন্য আজাদ জার্মানিতে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চলে গেছেন। যাওয়ার পর দেশে থাকা তার বন্ধুদের ফোনে এ কথা জানিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে বিদেশে যাওয়ার আগে তিনি এ বিষয়ে বন্ধু বা পরিচিতদের কাছে কিছু বলেননি।'

জানা যায়, ঢাকায় থাকা ব্লগাররা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন। তাদের কারো জন্যই নেই সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও পুলিশের কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পাননি তারা। বছর খানেক আগে সাধারণ ডায়েরি করলেও এ পর্যন্ত থানার তদন্ত কর্মকর্তা একবারের জন্য খোঁজ নেননি আবেদনকারী অনেক ব্লগারের। হত্যার হুমকি পেয়ে ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মাহমুদুল হক মুন্সি বাঁধন গত কয়েক মাস ধরে চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি জীবন বেছে নিয়েছেন। তাকে গত বছরের আগস্টে পাঁচ দফা হত্যার হুমকি দেয়া হয় ফেসবুক ও টেলিফোনে। এরপর তিনি ঢাকার পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা এ পর্যন্ত একটিবারের জন্যও তার খোঁজ নেননি বলে জানা যায়।

ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্ম বিদ্বেষের যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা মানছেন না গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানানোর জন্যই মূলত ব্লগার ও মঞ্চের কর্মীদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার নিজের ফেসবুক ওয়ালে শুক্রবার রাতে লেখেন-'নিলয় নীল মূলত একজন এক্টিভিস্ট ছিলেন। রাজপথের পাশাপাশি অনলাইনেও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ করতেন। নারী অধিকার, আদিবাসীদের অধিকার, বিভিন্ন মানুষের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন নীল। ধর্মকে ব্যবহার করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, মসজিদে বোমা মারাসহ আইএসের মতো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ধর্মের অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। তবে ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করতে তাকে কখনোই দেখা যায়নি। যারা এই হত্যাকাণ্ড জাস্টিফাই করতে ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলছেন তারা কি বাংলাদেশে আইএস, আল-কায়েদার সমর্থক নাকি? যা বলার পরিষ্কার করে বলুন। একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে ইসলাম গেল অজুহাত তুলে হত্যা করে বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করতে চান? মানবতাবিরোধী আইএস, তালেবানের কাছে কি আমাদের ইসলাম রক্ষার দীক্ষা নিতে হবে নাকি?'

তথ্য মতে, জামায়াত নেতা ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয় ঢাকার শাহবাগে। তখন জাতীয় দুটি দৈনিক পত্রিকা ব্লগারদের কথিত 'ইসলামবিদ্বেষী' লেখা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কথিত নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামে ধর্মপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির পক্ষ থেকে তখন ৮৪ জন ব্লগারের হিটলিস্ট প্রকাশ করা হয়। গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, হেফাজতের তালিকা নিয়ে একপর্যায়ে মাঠে নামে 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম'। সংগঠনটির পক্ষ থেকে একপর্যায়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা সংক্ষিপ্ত করে ১৬ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের হত্যারও হুমকি দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উগ্রপন্থীরা প্রথমে হত্যা করে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। এরপর এ পর্যন্ত হত্যা করা হয় মোট ৫ জন ব্লগারকে।


গত ৯ আগস্ট দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত আমার লেখা প্রতিবেদন।


হা.শা.
যায়যায়দিন,
ঢাকা।
ফেসবুক- http://www.facebook.com/hasan.shantonu.7

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×