
Click This Link ( ১ম পর্ব)
বিড়াল রাজকুমারকে বিদায় দিয়ে মিলি নিজের রুমে এসে ধপাস করে বিছানায় বসলো। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এত কিছু ঘটে গেল তাই মিলির ইচ্ছা করছিল এক্ষুনি ফোন করে মিনারকে সব খুলে বলতে। যেই চিন্তা সেই কাজ। বালিশের নিচ থেকে তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে মিনারকে ফোন দিল। কিন্তু মিনার ফোন ধরল না। কি করবে মিলি কিছু ভেবে পাচ্ছিল না। ওই মুহূর্তে রিং টোন বেজে উঠল।ফোন হাতে নিয়ে মিলির তো আনন্দে আটখানা হয়ে যাবার জোগাড়।মিনারের কল। কোনমতে রিসিভ বাটন চেপে ধরে বলল,” জানো, আমাদের কালো বিড়ালটা না বিড়াল থেকে মানুষ হয়ে গিয়েছে। আমি রাগ করে আছাড় দিয়েছিলাম আর সাথে সাথে মানুষ হয়ে গিয়েছে। “
মিনার অনেক কষ্টে রাগ দমন করে, ভালো একটা মুড নিয়ে মিলিকে ফোন দিয়েছিল। কিন্তু মিলির কথা শুনে তার মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।মিনার বলল,” তাই নাকি!!! তাহলে তো তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার কথা। যতদূর জানি ব্যাঙ রাজকুমার ও তাই করেছিল।দিয়েছে নাকি বিয়ের প্রস্তাব!?
“হুম দিয়েছে।কিন্তু তুমি এইভাবে কথা বলছ কেন?মনে হচ্ছে আমার কথা বিশ্বাস করো নি। সত্যি এমন ঘটনা ঘটেছে। আর আমি কিভাবে রাজকুমারের মাথা থেকে বিয়ের ভূত তাড়িয়েছি সেটার কথা শুনলে তোমার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে।“
এই বলে মিলি পুরো ঘটনা মিনারকে শুনাল। মিনারের কথা আর কি বলবো। ছেলেটা ভালো কিন্তু বেশ দেমাগি। সে মিলির কথা একটুও বিশ্বাস করল না। মিনার বলল, “ মিলি, তুমি কি চাও তোমার এই কথা আমি বিশ্বাস করি? আমাকে বলেছ ভালো কথা কিন্তু অন্য কাউকে বলো না।এক কাজ কর ভালো মতো একটা ঘুম দাও তাতে তোমার মাথাটা খুলবে।“
“ তোমার ধারনা আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি। আমার কি ঠেকা লেগেছে তোমাকে বানিয়ে বলবো। এই রকম সত্যি সত্যি ঘটেছে।“
“ ওকে, যদি বানিয়ে না বল তাহলে কালকে তোমার রাজকুমারকে ভার্সিটিতে নিয়ে এসো। তখন দেখবো।“
“ফাজলামি মারো। তোমাকে বললাম না বিড়াল রাজকুমার চলে গিয়েছে। শুনো নি?”
“তাহলে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপন দাও বা অন্য উপায় চিন্তা করো। মনে রেখ, যদি তুমি বিড়াল রাজকুমারকে আমার সামনে আনতে পারো তাহলেই তোমার কথা বিশ্বাস করবো।“
এই বলে মিনার ফোন রেখে দিল।
সন্ধ্যা হয়ে গেল। মিলি অনেক মন খারাপ করে শুয়ে আছে। তখন মাহতাব সাহেব মিলির রুমে উঁকি দিয়ে বললেন,” কিরে, তোর ন্যাওটা বিড়ালটার কোন সাড়া শব্দ যে পাচ্ছি না। গেল কই বিড়ালটা? এখন খেতে আয়। তোর মা নাস্তা দিয়েছে।“
“ বাবা, বিড়ালটা মনে হয় বাইরে ঘুরতে গিয়েছে।মাঝে মাঝে যায় তো।“ মিলি মাহতাব সাহেবকে সত্য ঘটনা বলতে পারল না।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিলির মনে হল তার সামনে বিড়াল রাজকুমার বসে আছে। মিলি চোখে একটু কম দেখে। আর ঘুম ভাঙ্গার পর পর একটু বেশিই কম দেখে। হুড়মুড় করে উঠে বসে ভালমতো দুই চোখ কচলিয়ে তাড়াতাড়ি চশমা পরে নিল। মিলি দ্বিতীয়বারের মতো আবারও আক্কেলগুডুম হল। কারণ সত্যি সত্যি সামনের চেয়ারটায় বিড়াল রাজকুমার বসে আছে। মিলি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলো। আমতা আমতা করে বলল,” আপনি? আপনি বাসায় কিভাবে ঢুকলেন?আমার তো স্পষ্ট মনে আছে আপনি হেঁটে হেঁটে চলে গেছেন।“
“ হুম, চলে গিয়েছিলাম তো। কিন্তু তোমার কথা মনে পরায় আবার চলে এসেছি। আসলে হয়েছে কি আমি তোমাকে ভুলতে পারছি না, সুন্দরী!! একে তো তোমার কাছে আমি ছয় মাস ছিলাম ,অন্যদিকে তুমি এত সুন্দর। আমি তোমাকে কিভাবে ভুলি, সুন্দরী!!”
এইসব শুনে মিলির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল,” দেখেন কথায় কথায় সুন্দরী সুন্দরী করবেন না। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে!! আর আপনি বাসায় ঢুকলেন কিভাবে?”
“সুন্দরী,আমি রাজকুমার তো তাই সুন্দরের পূজারী। আমাদের রাজপ্রাসাদে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ছিল যে কি বলবো তোমাকে! তারা নাচত, গাইতো, খেলতো।তবে তোমার মত এত সুন্দরী কেউ ছিল না।“
“ দেখেন, সুন্দর নিয়ে কথা পরে হবে। এখন বলেন আপনি বাসায় ঢুকলেন কিভাবে?”
“ আমি অদৃশ্য হতে পারি যে, সুন্দরী। রাজকুমার হওয়াতে আমাকে কিছু জাদু শিখতে হয়েছিল। যাতে আমি বিপদের মুখে অদৃশ্য হতে পারি। কিন্তু ওই ডাইনী বুড়ী আরও শক্তিশালী ছিল। তার জাদুর কাছে আমার জাদু টেকে নি। আর ডাইনীর অভিশাপে আমি বিড়াল হয়ে যাওয়াতে অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র আর কাজে লাগে নি। আর আমি শুধু নিজেকেই অদৃশ্য করতে পারি। অন্য কাউকে না। তাই অদৃশ্য হয়ে এই সাত সকালে তোমাকে দেখতে চলে এসেছি সুন্দরী!!!”
মিলি হা করে বিড়াল রাজকুমারের কথা শুনল। তক্ষুনি মিলির মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। মিলি বলল, “ আচ্ছা, এক কাজ করেন আপনি অদৃশ্য হয়ে বাইরে চলে যান। আমি নাস্তা করে কিছুক্ষণ পরেই নিচে নামবো। তারপর আপনাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাব। আমার বয়ফ্রেন্ড মিনার আপনাকে দেখতে চেয়েছে। তার ধারনা আমি আপনার কথা বানিয়ে বানিয়ে বলেছি। আজকে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়া যাবে।“
“ অবশ্যই। আমি দুই পায়ে খাড়া। কিন্তু আমার খিদা লেগেছে যে সুন্দরী। কাল বিকেল থেকে কিচ্ছু খাই নি। অদৃশ্য হয়ে খাবার চুরি করা যায় কিন্তু চুরি আমার অনেক অপছন্দ। আমার জন্য তুমি ভাল নাস্তা নিয়ে এসো।“
“ চুরি আপনার অপছন্দ!!!! যখন বিড়াল ছিলেন তখন তো সবই চুরি করতেন!!ওকে, নাস্তা নিয়ে আসব। কিন্তু আপনার নামটা তো জানা হল না। কি নাম আপনার?”
“ আমার নামটা বেশ বাহারি।“
“কিন্তু বলবেন তো? শুনে ধন্য হই!!
“ আলেকজেন্দার বো”
“ কি বললেন? আবার বলেন তো!! কি বো?”
“আলেকজেন্দার বো”
“ হা হা হা............হি হি হি...............”মিলি শুনে হাসতেই লাগল।
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে মিলি বলল, “ আচ্ছা, আপনি এখন নিচে যান। গেটের সামনে থাকবেন। আমি এক ঘণ্টার মধ্যে আসছি।“
প্রথম ক্লাসটা নাজিমুদ্দিন স্যার এর। উনার বিশেষত্ব হল উনার ক্লাসে ছেলে-মেয়েদেরকে এক সাথে বসা নিষেধ। ছেলেরা সামনে বসবে আর মেয়েরা পেছনে বসবে। আর মেয়েদের মাথায় অবশ্যই ঘোমটা থাকবে। যে মেয়ে ফতুয়া-জিন্স পরে সে ও ব্যাগে করে একটা উড়না নিয়ে আসে!! তাই ক্লাসে ঢুকার আগে মিলি আলেকজেন্দার বোকে কিছু জ্ঞান দিল। যেটার সারমর্ম হল বো কে অদৃশ্য হতে হবে না। অন্য সবার মতো বো ও ক্লাস করতে ঢুকে যাবে। কারণ মিলি চাচ্ছিল মিনার বোকে দেখে টাস্কি খায়। তাছাড়া নাজিমুদ্দিন স্যার কাউকেই অত বেশী খেয়াল করেন না। তবে অবশ্যই উল্টাপাল্টা কিছু করা যাবে না যাতে স্যার এর দৃষ্টি ওইদিকে আকর্ষিত হয়।এই সব কথা বলার পর মিলি বো কে বলল, “ তবে একটা সমস্যা থেকেই গেল। সেটা হল আপনার পোশাক!!এখন তো কেউ এমন পোশাক পরে না তাই কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবেন আপনার জরি-চুমকি ওয়ালা পোশাক পরতেই ভাল লাগে।যদিও সবাই হাসাহাসি করবে। কিন্তু আপনি পাত্তা দেবেন না। আমি আজই আপনার জন্য নতুন পোশাক কিনবো। “
“হুম। কিন্তু আমার ভয় লাগছে।“
“ভয়ের কি আছে? নাজিমুদ্দিন স্যার এর ক্লাসে অনেক মজা পাবেন। তবে উল্টাপাল্টা কিছু করবেন না। আমি একশ টাকার বাজি ধরতে পারি যে স্যার আপনাকে খেয়ালই করবে না। আর কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনি কোত্থেকে এসেছেন তাহলে বলবেন যে আপনি আমার ফ্রেন্ড। অন্য dept. এর। নাজিমুদ্দিন স্যার এর অনেক প্রশংসা শুনেছেন। আর সেজন্যই ক্লাস করতে এসেছেন।“
“ কিন্তু সুন্দরী, আমার যে বড় ভয় করছে!!“
“ আপনি রাজকুমার হলে কি হবে আপনার স্বভাব বিড়ালের মতোই!! সব কিছুতেই ভয় পান। ভয়ের কিছু নেই। আজকে মিনারকে উচিত শিক্ষা দেয়া হবে।“
“ হুম।“
কথা বলতে বলতে মিলি আর আলেকজেন্দার বো ক্লাসের সামনে চলে আসল। ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে মিলি মাথায় ঘোমটা দিল। অতঃপর, তারা ক্লাসে ঢুকল।
চলবে.................
Click This Link ( ৩য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




