somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের আক্রোশ মেটানোই যদি মনুষ্যত্ব হয় তবে পশুত্ব কাকে বলে?

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষ, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। একমাত্র এই মানুষের মাঝেই আছে মনুষ্যত্ব নামক এমন এক বস্তু যা দৈহিক মানুষটাকে একটু একটু করে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ মানুষ করে গড়ে তোলে। আর এই মনুষ্যত্ব নামক বস্তুটি যখন মানব অন্তরে পরিপূর্ণতা লাভ করে একমাত্র তখনই তাকে পশু শব্দটি থেকে আলাদা করা যায়। অপরদিকে এই মনুষ্যত্বহীনতার নামই হলো পশুত্ব, যা একজন মানুষকে মানসিক ভাবে পশু করে তোলে। মনুষ্যত্ব সাধনার দ্বারা অর্জন হলেও পশুত্ব অর্জন করতে হয় না। অন্তরের মনুষত্ব লোপ পেলেই পশুত্ব প্রকটতা লাভ করে। আর বাঙালিতো বিনাপয়সার আলকাতরাও খায়। তাই বর্তমান সমাজে বেশিভাগ মানুষের আচরণে মনুষত্বের তুলনায় ফ্রি ফ্রি পশুত্ব রূপটায় বেশি দেখা যায়।

মনুষ্যত্ব শব্দের সঠিক বিশ্লেষণ করতে গেলে নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা চলে আমরা ৯৮% মানুষই একেকটি পশু। হয়তো কেউ হিংস্র নেকড়ে আবার কেউ শান্ত বিড়াল। কিন্তু পশু তো পশুই। এখন অবশ্যই আপনি আমাকে রাগান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করবেন আপনার এত বড় সাহস আপনি নিজে পশু বলে কিছু না জেনেই সবাইকে পশু বলছেন।
আপনাকে স্বাগতম, আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দেবো বলেই তো আজ লিখতে বসেছি।

প্রথমত, আমি সবাইকে পশু বলিনি। আমি সেই মহান ২% মানুষকে বাদ দিয়ে রেখেছি যারা নিজেরা অন্যায় তো করেই না, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে । এবার আসুন বাকি ৯৮% এর কথায়। আপনি বুকে হাত রেখে বলুন তো আপনার সামনে কয়টি অন্যায় হয়েছে আর আপনি কয়টায় প্রতিবাদ করেছেন? কি, ২-১ টা ছাড়া আর খুঁজে পাচ্ছেন না তো? আপনাকে আর কি বলবো আমার নিজের অবস্থাই তো তাই, আমাদের বেশিভাগ মানুষেরই অবস্থা তাই। ও আমি তো ভুলেই গেছি আমরা তো আবার শান্তি প্রিয় মানুষ। আমরা অন্যায় হয়ে যাওয়ার পর প্রদীপ হাতে আলোর মিছিল করতে জানি, আমরা অন্যায় ঠেকাতে জানি না। আমরা হাজারো বিশ্বজিৎ, রাজনের মৃত্যুর দৃশ্য দর্শক হয়ে উপভোগ করতে জানি কিন্তু প্রতিবাদ করতে জানি না। আমাদের কাছে তো সামান্য একটা জীবনের চেয়ে শান্তিই বড় তাই না?

প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই খুন, ধর্ষণের খবর দিয়ে পাতা ভরা থাকে। আমাদের পশুত্ব রুপটাও এতটাই নিকৃষ্ট যে, পশু বললে ওই চারপেয়ে পশুদের অসম্মান করা হবে। নেকড়ে তো শিকার করে পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য। তবুও ক্ষিধেই মারা গেলেও তো স্বজাতিকে খুন করে না। আর আমাদের মনের জ্বালা এতটাই বেশি যে, তা মেটানোর জন্য আমরা নেকড়ের চেয়েও হিংস্র হয়ে উঠি। আমাদের নিকৃষ্টতা এতটাই নিচু পর্যায়ের যে, মনের পশুটার যৌন ক্ষুধা মেটানোর জন্য আমরা আজ আর ছোট শিশুটিকেও রেহায় দেই না, আমরা বাবার সামনে মেয়েকে লাঞ্চিত করতে দ্বিধা করি না। কি ভাবছেন, আমি তো এসব করিনি? কিন্তু ভাই আমিতো এসবের প্রতিবাদও করিনি তাই না? অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী। ও আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা তো আবার শান্তি প্রিয় মানুষ। আমরা মশাল হাতে শান্তির মিছিল করতে জানি আমরা ধর্ষণ রুখতে জানি না। আমাদের কাছে তো একটা মেয়ের সতীত্বের চেয়ে শান্তিই বড় তাইনা?

এবার নিশ্চয় ভাবছেন আমরা তো প্রতিবাদ করেছি? একবার ভেবে দেখুনতো আমাদের প্রতিবাদে হয়তো কিছু লোকের শাস্তি হয়েছে, কেউ ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছে কিন্তু বিশ্বজিৎ জীবন ফিরে পায়নি, সতীত্ব ফিরে পায়নি সেই ধর্ষিত মেয়েটি। প্রতিদিন এরকম শত শত বিশ্বজিৎ কোন না কোন ভাবে জীবন দিচ্ছে, শত শত মা, বোন , শিশু সতীত্ব হারাচ্ছে। আমরা কি পারতাম না একটি খুন একটি ধর্ষণও ঠেকাতে। অবশ্যই পারতাম, কিন্তু আমি নিজেও তো পশুই। কেউ নেকড়ের মতো শিকার করছে আর আমরা গরু ছাগলের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি। আর অন্যায় হয়ে যাওয়ার পর বিচার চাই, বিচার চাই বলে গলা ফাটাচ্ছি।

এই উদহারণগুলো কি যথেষ্ট নয় আমাদের পশু বলার জন্য? আমাদের ৯৮% মানুষের মনুষত্বের রূপই যদি এমন হয় তবে পশুর পশুত্ব নামক যে বৈশিষ্ট্য আছে তার সংজ্ঞা কি আমার জানা নাই।

আমরা সবাই মিলে চাইলেই পারি মনের পশুত্বকে পরিহার করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে । সবাই প্রতিবাদ করতে শুরু করলে ১৬ কোটি মানুষের বলিষ্ঠতার কাছে কখনোই ওই সামান্য কিছু মানুষ অন্যায় করার সাহস পাবে না। হয়তো এটাই সময় জাগ্রত হওয়ার।
ধুর এসব বলে লাভ কি? আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা হলো শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা প্রদীপ হাতে আলোর মিছিল করতে জানি , অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে নয়। আমাদের কাছে তো প্রতিবাদের চেয়ে শান্তিই বড় তাই না?

উৎসর্গঃ সেইসব ভাইয়া ও আপুদের যারা আমার প্রথম পোস্টের প্রশংসা করে পরবর্তিতে লেখার জন্য আমাকে উৎসাহিত করেছিল। তাদের অনুপ্রেরণাকে পুঁজি করেই হয়তো আজ এইটুকু লিখতে পারলাম। হয়তো তাদের অনুপ্রেরণা টুকু না পেলে কখনোই আর আমার লেখা ২য় কোন পোস্ট আপনাদের চোখে পড়তো না। আমি তাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সামনে আমার পরীক্ষা সবাই আমার জন্য দোআ করবেন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। "আল্লাহ হাফেজ"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×