somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়ন্ত বিকেলের গল্প...

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লাল সূর্যটি পশ্চিম আকাশে হারিয়ে যাবার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ কালো করে সন্ধ্যা নেমে আসবে। আমি আনমনা হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ একটি ঝটকানিতে চোখের সামনের সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল। না তেমন কিছু হয়নি, কারো হাত লেগে চোখ থেকে চশটা কোথাও পরে গেছে। আজকাল চোখের সমস্যাটা বেশ বেড়েছে। চশমা ছাড়া কিছুই ঠিকমত দেখতে পাই না। কোথায় খুঁজবো এখন চশমাটা! এই ভেবে সামনে তাকাতেই মনে হলো ঝাপসা একজোড়া চোখ মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের কোণে সামান্যটুকু হাসি। চেহারাটাও অস্পষ্ট। ঠিকঠাক কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তবুও কেন জানি না মানে হচ্ছে ঐ চোখ দুটির চাহনি আমার বড়ই চেনা, খুব বেশি চেনা। ধুর, জেগে জেগে দিবা স্বপ্ন দেখছি! হঠাৎই একটা মেয়েলী কন্ঠ বলে উঠলো এই নাও। তোমার চশমাটা। বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন দেখছি না। চশমাটা নিয়ে চোখে পরতেই আমি তো অবাক। অনন্যা!

সেই অনন্যা যার মায়াবী চোখ দুটি একসময় রোজ আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।না জানি ঐ দুচোখে কতইনা স্বপ্ন বুনতো। অথচ আমি কখনো চোখদুটির দিকে ঠিকভাবে তাকিয়েই দেখিনি। দেখতে দেখতে চারটি বছর পার হয়ে গেছে। অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম অনন্যা আমাকে পছন্দ করতো। শুধু তাই নয় রীতিমতো ভালোবেসে ফেলেছিলো ,কিন্তু কখনো বলে উঠতে পারেনি।

চার বছর পর আবার দেখা। অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই লিকলিকে মেয়েটা এখন বেশ খানিকটা মোটাসোটা হয়ে গেছে, মাথায় আগের মতো আর স্কাফ পরে না তাই চুলগুলো মুক্ত আকাশে স্বাধীনতার জানান দিচ্ছে। আগে সবসময় জামা নয়তো টি-শার্ট পরতো ,আজ শাড়ি পরেছে। এই প্রথম অনন্যাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম। ওকে দেখতে এতটাই সুন্দর লাগছে যে, আগে কখনো দেখলে হয়তো আগেই প্রেমে পড়ে যেতাম।সবকিছুই চেঞ্জ। শুধু একই রকম রয়ে গেছে ওর চোখ দুটি ।যে চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে আগে কখনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করেনি, কিন্তু আজ কেন জানিনা খুব ইচ্ছা করতেছে। মনে হচ্ছে আমি প্রতিটি মুহূর্তে শুধু এই চোখদুটিকেই খুঁজে বেড়িয়েছি।অথচ কি অদ্ভুত, এই চোখদুটিই একসময় পাগলের মতো আমাকে খুঁজতো।

হঠাৎ অনন্যা বলে উঠলো হ্যালো মি. এভাবে হা করে কি ভাবছেন? এতদিন পর দেখা কিছুতো বলেন। এতক্ষনে আমার হুশ ফিরে আসলো। মনে মনে ভাবলাম শুধু কিছু নয় অনেক কিছুই বলবো আজ। আজ রূপকথার রাজকুমারীর সেই মায়াবী চোখদুটির গল্প শোনাবো যে চোখদুটিকে আমার অবচেতন মন সবসময় খুঁজে গেছে।

অনন্যা কেমন আছো বলতেই পেছন থেকে কেউ একজন অনন্যা বলে ডাক দিল। অনন্যার কাছে জানতে পারলাম ওর নাম রাহুল, অনন্যার হাসবেন্ড। গত দুই মাস আগে ওদের বিয়ে হয়েছে। আরও অনেক আগেই নাকি ওদের বিয়ে হয়ে যেতো কিন্তু অনন্যা কখনো বিয়েতে রাজি হয়নি। চার বছর ধরে নাকি সে কোনএকজনের মিথ্যা অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু পরিবারের চাপে শেষমেশ বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে।

"তাইনাকি! কোন রাজকুমারের অপেক্ষায় ছিলে?"
অনন্যা কথা ঘুরিয়ে নিল ,শুধু বললো সেকথা বলার সময় ফুরিয়ে গেছে। আমি নির্বাক হয়ে গেলাম, কি বলবো ভেবে পেলাম না। মনের ভেতরে ভালোবাসার কুঁড়িটি ফুল হয়ে ফোঁটার আগেই ঝরে পরে গেছে। সেই না বলা গল্পটি আর বলা হলো না, কখনো আর বলা হবে না।

রাহুল অনন্যাকে আবার ডাক দিয়ে বললো হাতে বেশি সময় নেই তাড়াতাড়ি চলে এসো। পরে কখনো কথা হবে বলে অনন্যা চলে গেলো। আমি অপলক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকলাম আর মনে মনে ভাবলাম যদি এভাবে চলেই যাবে তবে সামনে এসেছিলে কেন? একটু একটু করে অনন্যা দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

পরে কখনো কথা হবে বলে সেদিন অনন্যা চলে গিয়েছিল , কিন্তু সেই "পরে কখনো" সময়টা আর আসে নি। এরই মাঝে আরো সাতটি বছর পার হয়ে গেছে। আর কোনদিন অনন্যার সঙ্গে দেখা হয়নি। মনকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু অবুঝ মন নতুন কোনো চোখের প্রেমে পরতে নারাজ। এখনো আমার অক্লান্ত চোখজোড়া সেই না বলা গল্পের চোখদুটিকেই খুঁজে চলেছে। পৃথিবীতে নাকি একই রকম দেখতে একাধিক মানুষ থাকে! তাই মন আজও বিশ্বাস করে সে কোনএকদিন নিশ্চয় অনন্যাকে খুঁজে পাবে, হয়তো প্রথম অনন্যাকে নয়, দ্বিতীয় অনন্যাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×