ভুমিকা : সমাজের সবচে শোষিত শ্রেণীর নাম হলো “বয়ফ্রেন্ড” শ্রেণী। ক্রমাগত গার্লফ্রেন্ডের কুঠারাঘাতে জীবন ধারন করা এই শ্রেণী সমাজের সবচে অবহেলিত শ্রেণীও বটে। গরু ছাগল ভেড়া কিংবা গাধার মত বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ বয়ফ্রেন্ডও আছে। এমনকি এ সংখ্যা গাধার সংখ্যাকেও ছড়িয়ে গিয়েছে বলে জানা যায়। সমাজে সবচে বেশী স্ট্রাগল করা শ্রেণীর নাম হলো "বয়ফ্রেন্ড" শ্রেণী। এরা দুবেলা দু মুঠো প্রেমের জন্য গার্লফ্রেন্ডের কাছে প্রতিনিয়ত শোষিত হয়ে আসছে। মাত্র কিছুদিন আগেই প্রাণী বিজ্ঞানীরা বয়ফ্রেন্ডদের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব আবিস্কার করলে শেষ পর্যন্ত গার্লফ্রেন্ডের মধ্যস্থতায় তা ভেস্তে যায়। কারন বিজ্ঞানী নিজেই একজন বয়ফ্রেন্ড। দুধরনের বয়ফ্রেন্ড বাংলাদেশে দেখা যায়। এক. শোষিত অথবা গার্লফ্রেন্ডওয়ালা বয়ফ্রেন্ড, দুই, গার্লফ্রেন্ডের খোঁজে বয়ফ্রেন্ড। প্রথমজন গার্লফ্রেন্ড দ্বারা শোষিত হয়ে গার্লফ্রেন্ডের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করার চেষ্টা করছে এবং সুযোগ পেলে অন্য কাউকে গার্লফ্রেন্ড বানানোর পায়তারা করে।
বর্ণনা : বয়ফ্রেন্ড দেখতে অনেকটা ছাগলের মত। লতাপাতা যাই খাক না কেন খুঁটি গার্লফ্রেন্ডের হাতেই থাকে। তবে বয়ফ্রেন্ডের লতাপাতা খাওয়া বিষয়ক অনুমতি গার্লফ্রেন্ড থেকে নিতে হয়। প্রত্যেক বয়ফ্রেন্ডেরই আবশ্যিক একটি করে গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। তবে একাধিক,দুইয়ের অধিকও নিয়ে অনেকে চলে।বয়ফ্রেন্ডের দুটি হাত,দুটি পা, একটি নাক এবং দুটি চোখ থাকলেও ঠোঁট তাদের সবচে কর্মক্ষম অঙ্গ! গার্লফ্রেন্ড দ্বারা নির্যাতিত বয়ফ্রেন্ডরা তাদের গার্লফ্রেন্ড টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত বাবার পকেট মারে,বন্ধু থেকে ধার করে।
স্বভাব : স্বভাবগত দিক থেকে বয়ফ্রেন্ডের প্রধান চয়েজ বন্ধুর সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড। ডেটিংয়ে বের হলে এরা সাধারণত নিজের গার্লফ্রেন্ডের চেয়ে অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে বেশী সাচ্ছ্বন্দবোধ করে। ডেটিং প্লেস হিসাবে এরা রেষ্টুরেন্ট থেকে পার্কের চিপা বেশী পছন্দ করে। তাছাড়া সকল বয়ফ্রেন্ডদের ডেটিং প্লেস হিসাবে প্রথম পছন্দ লিটনের ফ্ল্যাট। এ নিয়ে গার্লফ্রেন্ডদের সাথে সামান্য মতবিরোধ দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রায়শ দুপক্ষের মিলন(?) ঘটে! অবসরে তারা গার্লফ্রেন্ডদের বিষেদাগার করে। নিজেদের বান্ধবীর কাছে “গার্লফ্রেন্ডটা কেন তোর মত হলো না” বলে আফসোস করার পাশাপাশি টোপ ফেলার চেষ্টাও করে। একটা আবশ্যিক গার্লফ্রেন্ডের পাশাপাশি এরা আরেকটি “সময় কাটানো” গার্লফ্রেন্ড পেতে চায়। এছাড়া পুরো বছর নিজের টাকায় গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে এবং চাইনিজে খাওয়ানোর পর বছরে একবার যদি গার্লফ্রেন্ড একদিন ফোন দেয় অথবা চা খাওয়ায়, তবে প্রত্যেক বয়ফ্রেন্ড বন্ধু মহলে “আমারতো টাকা খরচ হয়না, সব ও দেয়” বলে প্রচার করে। বয়ফ্রেন্ডরা সাধারণ ভীতু প্রকৃতির হয়। বাবা মায়ের চেয়ে এরা গার্লফ্রেন্ডকে বেশী ভয় পায়। বিজ্ঞানীদের মতে জানা যায় বয়ফ্রেন্ডদের চোখে বিধাতা অন্যরকম এক লেন্স দিয়ে দিয়েছেন যার কারনে বয়ফ্রেন্ডদের চোখে তার গার্লফ্রেন্ড ছাড়া পৃথিবীর সকল মেয়েই মহাসুন্দরী।
কর্মক্ষমতা : যদিও প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কর্মক্ষমতা তবুও বয়ফ্রেন্ডদের কিছু আবশ্যিক কর্মক্ষমতা থাকে। গার্লফ্রেন্ডদের পরীক্ষা আগে তাদের নোট এবং সাজেশন কালেকশন করা। গ্রীষ্মকালে গার্লফ্রেন্ড যদি মুলাভর্তা খেতে চায় তবে বিশ্ব ভু-খন্ড তন্নতন্ন করে মুলা নিয়ে আসাও বয়ফ্রেন্ডদের প্রধান কাজের মধ্যে পড়ে। এছাড়া গার্লফ্রেন্ডের ছোট ভাইয়ের ভর্তি ফি জমা দেয়া, তোমার জন্য চাঁদ,সূর্য্য,আকাশ,মাটি,ওসামা বিন লাদেন এনে দিবো বলে গার্লফ্রেন্ডকে খুশী করাও বয়ফ্রেন্ডদের আবশ্যিক কাজ।
তবে বর্তমান বাংলাদেশের বয়ফ্রেন্ডদের প্রধান এবং একমাত্র কাজ বন্ধুর খালি ফ্ল্যাট খোঁজা!
প্রিয় খাবার, প্রিয় স্থান: বয়ফ্রেন্ডদের প্রিয় খাবার চুমু, প্রিয় স্থান গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁট। তারা গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁটে প্রতিদিন ভ্রমণ করতে চায়। কিন্তু সুযোগের অভাব ভ্রমণ ইচ্ছেটা প্রতিদিন হয় না।
উপকারিতা : আদিকাল থেকে বয়ফ্রেন্ড একটি উপকারি সামাজিক জীব। সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গার্লফ্রেন্ডদের ইউনিভার্সেটি বা কলেজে যাওয়ার সঙ্গী এই বয়ফ্রেন্ড। গার্লফ্রেন্ডের শপিংয়ে যে ছায়ার মত থেকে গার্লফ্রেন্ডকে সঙ্গ দিয়ে দেশ অথবা জাতিকে একাকীত্বে হাত থেকে রক্ষা করে যে মানুষটি তার নামই বয়ফ্রেন্ড।
অপকারিত : বয়ফ্রেন্ডদের মত এক উপকারি জীব পৃথিবীতে কম জন্ম নিয়েছে। তবুও কিছু অপকার এরা করে থাকে। দুতিন জন গার্লফ্রেন্ডওয়ালা বয়ফ্রেন্ডরা প্রায়শ তাদের গার্লফ্রেন্ডদের সঠিক নাম এবং কি করে সেটা ভুলে যায়। ফলে সৃস্টি হয় সামাজিক জটিলতার। যার উপর ভর করে ধ্বংস হতে থাকে এক একটি সম্পর্ক। যার কারনে আরও নানান ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। সবচে বড় সমস্যা হলো তার ক্ষমতা থাকার পরও বংশ রক্ষা করতে পারে না!
উপসংহার: বর্তমান বয়ফ্রেন্ডদের দুরবস্থার কারনে মা-বাবা তাদের ছেলেকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে ভয় পান, দাদা-দাদী চাঁন না তাদের নাতি বয়ফ্রেন্ড হয়ে নির্যাতিত হোক। তবুও বয়ফ্রেন্ডদের স্ট্র্যাগল এবং জীবনের লক্ষের প্রতি অধ্যাবসায়ের কারনে প্রায় প্রতিটি পুরুষই বয়ফ্রেন্ড হবার যোগ্যতা অর্জন করে।বয়ফ্রেন্ডের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে যেমন কবিতা আছে, কবিতা আছে সম্ভাবনা নিয়ে
কবি বলেছেন “
“দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তরও পারাবার হে
হইতে হবে এক গার্লফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড তোমারে
দুলিতেছে গার্লফ্রেন্ড,ফুঁসিতেছে নাক,ভুলিতেছি বয়ফ্রেন্ড নিঃশ্বাস
ছিড়িয়াছে চিঠি,কে করিবে প্রীতি,আছে কার বিশ্বাস?
কে আছো বয়ফ্রেন্ড,করে ডিপেন্ড, চুমিবে ভবিষত
এ রাগ বড় ভারী,দিতে হবে পাড়ি,হইবে লাভবান”
গার্লফ্রেন্ড