somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুইল্লা গুন্টার

২৮ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবিতে যারে দেখতাসেন অর নাম ট্রয় পোলামালু। অর দীঘল কালো কোঁকড়া-মোকড়া সুন্দর চুল দেইখা হেড এন্ড শোলডার কোম্পানির খুব লোভ লাগসিলো। হেরা ভাবলো এই ব্যাডার চুল লইয়া বিজনেস করি। এক মিলিয়ন ডলার দিয়া চুল ইনসিওরেন্স কইরা ফালাইলো। হেরে লইয়া জায়গায় জায়গায় Campaign শুরু কইরা দিলো যে তাগো কোম্পানির শ্যাম্পু মাখাইলে চুল এই ব্যাডার মতন হইলেও খুশকিমুক্ত উকুনমুক্ত থাকবো। মানুষ চিল্লা-ফাল্লা শুরু কইরা দিল। একপক্ষ ভালা গীত গাইলো, মিডিয়াতে খবর বাইর হইলো The man with million dollar hair. আরেকপক্ষ কয়, দুনিয়ার মানুষ না খাইয়া মরে আর কোম্পানি সামান্য চুলের মধ্যে মিলিয়ন ডলার ঢালে।

যাক গিয়া, ওইডা ২-৩ বছরের আগের ঘটনা আছিলো, পরে কি হইসে না হইসে আর খবর রাখবার পারি নাই। এহন যেই কাহিনী কমু হেইডা হইলো জার্মানি থাহে এক পোলা সম্পর্কে আমাগো ফেরেন্ড হয়, হের। অর নাম গুন্টার। পোলার আছিলো হেই পোলামালুর লাহান কেশ। এইডা লইয়া হের গর্বের সীমা পরিসীমা আছিলো না। অরে দেখলে মাইয়া মানুষগুলা পর্যন্ত কইতো "তোমার ঘন কালো চুলে হারিয়ে যায় মন" টাইপ কথা বার্তা। আর আমরা বাংলায় জিগাইতাম "তোমার এই সুন্দর চুলের রহস্য কি তিব্বত কদুর তেল?" পোলায় তো কিসু বুঝতো না, আমরা এইদিকে হাসি চাপাইতে গিয়া চক্ষু দিয়া পানি বাইর করতাম।

কিসুদিন পরে আমরা ঝামেলায় পইড়া গেলাম। আমাগো লগে পড়তে আইসে আরেক পোলা অর নামও গুন্টার। এই পোলায় আবার দ্যাখতে মাইয়াগো লাহান সুন্দরী। এহন আমরা বাঙ্গালিরা নিজেগোর মধ্যে যহন কথা কইতে গিয়া গুন্টারের কথা কই, তহন আবার কোন গুন্টারের কথা কইতাসি তা Description দিয়া বুঝাইয়া দিতে হইত। এই সমস্যার হাত থেইকা বাইর হওয়ার লেইগা আমরা করলাম কি দুইজনরে দুইডা নাম দিলাম। একটার নাম চুইল্লা গুন্টার, আরেকটা সুন্দরী গুন্টার। কেডা চুইল্লা আর কেডা সুন্দরী এইডা তো বুঝতেই পারতাসেন। কাহিনী শুরু এইহান থেইকাই।

চুইল্লা গুন্টার আছিলো একটু ক্রেজি টাইপ। অর কাজকাম আর কাণ্ডকারখানা দেইখা সবাই বহুত মজা পাইতো আর মজাও লইতো। একদিন এই পোলায় করসে কি হুইস্কি খাইতে খাইতে ব্যাপক টাল হইয়া গেসে, একটু পরে পরে মাতলামি করতাসে। কি যে আজগুবি কথা বার্তা জার্মান ইংলিশ মিশায়া কইতাসে কেউ তার সব কথার আগা মাথা ধরবার পারতেসিলো না। ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত আছিলাম না, কারণ আমি পোলা যেমন তেমন হই না কেন, মদ-বিড়ি-পার্টি এইগুলার মধ্যে আমি নাই। তো চুইল্লা গুন্টার নাকি বেশ কিসুক্ষন অনেক কথা কইয়া চইলা গেসে। বাকি পোলাপান গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ-ফুর্তি কইরা, নাইচ্চা গাইয়া যার যার রুমে গেসে গিয়া। হঠাৎ কইরা চুইল্লা গুন্টারের এক বন্ধু আইসা কয় চুইল্লারে তো খুইজা পাইতেসি না। অর রুম নাকি খুলা ভিতরে কেউ নাই। এইদিকে চুইল্লার কাসে অর ওই বন্ধু নাকি পেনড্রাইভ দিসিলো Lab Report আর ১টা Presentation তুইলা কিসু জায়গায় Edit কইরা দেওয়ার লেইগা যেইটা কাইলকা ভার্সিটি গিয়া না দিলে খবর আছে। পোলাপান যারা চুইল্লার লগে আছিলো সবাইরে জিগাইলেও কেউ কিসু কইতে পারলো না, কইবো কেমনে সবাই তো টাল হইয়া আছে। একটা কইলো দেখ গিয়া খাটের তলে ঢুইকা ঘুমাইয়া গেসে কিনা, আর আরেক টাল পোলায় গিয়া ঠিকই খাটের তলে খুইজা আসলো কিন্তু পাইলো না। অনেকক্ষন পরে পোলাপান আবিস্কার করলো চুইল্লা তো টয়লেটে গিয়া ঘুমায়া পরসে :D ! কি অবস্থায় ঘুমাইতেসে সেই কথা আর না বলি।

এইজন্যই চুইল্লা গুন্টাররে নিয়া সবাই একটু বেশি কথা কইতো আর তামাসা করতো। অতঃপর যা হওয়ার তাই হইলো। চুইল্লা জাইনা গেলো যে তারে চুইল্লা নামে ডাকে পোলাপান। একদিন চুইল্লা আমারে একলা পাইয়া জিগাইতেসে আমরা তারে চুইল্লা গুন্টার ডাকি ক্যান? আমি তো পরসি বিপদে। আমি কইলাম দ্যাহো ভাই তুমার চুলগুলি তো বড়ই সৌন্দর্য, তুমারে তাই আমরা আদর কইরা চুইল্লা ডাকি। কারণ বাংলাদেশে যাগো চুল খুব সুন্দর আর সিল্কি, তাগো আমরা চুইল্লা কইয়া ডাকি আর যাগো ডাকি হেরাও খুব খুশি হয় :P ! তাছাড়া দ্যাহো তুমি, আমাগো বন্ধুগোর মধ্যে দুইডা গুন্টার; গুন্টার কইয়া ডাক দিলে তোমরা দুইজনেই Yes কইয়া চিল্লাও, এই কারণে তুমারে আর তারে আলাদা নাম দিসি আমরা। চুইল্লা তো সেই হাসি দিয়া কইলো "Oh I see I see, I thought its a kind of fun because I observed when someone says Chuilla, then the rest of the people laugh." মনে মনে ভাবতেসি, আমি গেসি।

একদিন অন্য ইউনিভার্সিটির বেশ কিসু বাঙ্গালি ফেরেন্ড আইলো আমাগো লগে মোলাকাত করবার আর ভার্সিটি ঘুইরা দেখবার লেইগা। তো অগোরে লইয়া বাইর হইলাম ঘুরা-ঘুরি করতে। ঘুরতে ঘুরতে দেহি চুইল্লা আর সুন্দরী দুই গুন্টার এক লগে আইতাসে। অগোরে সবার লগে সবার পরিচয় করাইয়া দিলাম। চুইল্লা তহন কইতাসে, "You know people also call me Chuilla Guntar because of my nice hair." এক পোলায় কইলো, "What?" চুইল্লা কইতাসে, "You dont understand? Chuilla Chuilla, I am Chuilla Guntar and look here is another Guntar, so we have separate name given by our friends." এই কথা শুইনা তো সবাই একলগে অট্টহাসি শুরু কইরা দিলো। সেই হাসি আর থামে না। আমরা বাংলায় কইতেসি, "ভাইজানেরা থামেন থামেন, আজকে তো দেখি সব কাহিনী ফাঁস হইয়া যাইবো, প্লিজ ভাই আমাগো মাইর খাওয়াবেন নাকি চুইল্লারে দিয়া।" এইদিকে চুইল্লা কইতাসে, "Whats so funny man, I dont understand whats wrong with my name but I know something is wrong." অয় তো মুখ চোখ লাল কইরা ফালাইতেসিলো তখন আরেক পোলায় Defense দিলো এই কইয়া যে আমরা তো আসলে মাইয়াগো চুইল্লা কই কারণ অগো চুল সুন্দর হয়। পোলাগো এত সুন্দর চুল হইতে পারে তা আমরা কহনো জানতাম না। "Carry on man." যাক চুইল্লা দেখি এই কথা শুইনা একটু Confusion মার্কা হাসি দিয়া কইলো "ok, no problem."

অইদিনের মত বাইচা গেসিলাম, তবে পরে আমরা সবাই মিল্লা ঠিক করলাম এই নামে তারে আর ডাকা যাইবো না, কোনদিন কেয়ামত হইয়া যায় গিয়া কে জানে। যত যাইহোক, চুইল্লা হইলো জার্মানির লোকাল পোলা। অয় পোলাপান লইয়া চাইলে অনেক হাঙ্গামা করতে পারবো আর এইহানে ধর্ম-বর্ণ হাবিজাবি নিয়া কারও মনে আঘাত দিলে পুলিশ কেইস হইয়া যাওয়া অসম্ভব কিসু না। কিন্তু, দুঃখের বিষয় গাধাটা এখনো নিজেরে পরিচয় দেয়,"I am Chuilla Guntar." :'(

[N.B ইচ্ছা ছিলো অশুদ্ধ ও Informal ভাষায় একটা কিছু লিখবো, দেখি কতদূর পারি। লিখতে গিয়ে বুঝলাম এটা হবে একটা জগাখিচুড়ি। কারণ আমার মধ্যে যতটুক অশুদ্ধ ভাষাজ্ঞান আছে, তাঁর বেশি প্রয়োগ চাইলেই আমি করতে পারব না। তাছাড়া যেহেতু ময়মনসিংহে বড় হয়েছি, লেখার মধ্যে "ময়মনসিঙ্গা" টান সবচেয়ে বেশি চলে এসেছে। তবে খাটি ময়মনসিঙ্গা ভাষা (যেমন 'কথা' কে আমরা ময়মনসিংহের মানুষ বলি 'কতা') ইচ্ছাকৃতভাবে Apply করি নাই কারণ তা সবার বোধগম্য হবে না এবং ওই ভাষা আমি নিজেও ১০০% জানি না। সুতরাং অহেতুক কারও বিরক্তি উৎপাদন হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:১৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×