বিদুৎ চলে গেছে। ফ্যানটি এখনও
ঘুরছে। আসাদ বেডের উপর চিৎ হয়ে
শুয়ে তাকিয়ে আছে ফ্যানের
দিকে। ফ্যানের ঘোরার গতি
ক্রমেই কমে আসছে। একসময় ফ্যানটির
ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। ঘোরার জন্য
যে শক্তি দরকার তা এখন নেই,তাই
থেমে গেছে। আসাদও ঘোরে।
ফ্যানের মতই ঘোরে। তবে ফ্যান
ঘোরে সম্পূর্ন অন্যর জন্য আর সে
ঘোরে নিজের জন্য। মাস্টার্স
শেষ প্রায় ছয় মাস হতে চলল। এখনও
কপালে একটি চাকরি জোটেনি।
গতকালও বাবা ফোন দিয়ে
বলেছে,কিরে কী অবস্থা। আসাদ
বুঝতে পারে না সে তার বাবাকে
কোন অবস্থার কথা বলবে।
টিউশনিটাও নেই। ছাত্রের ফাইনাল
পরীক্ষা চলছে। এসময় নতুন টিউশনি
পাওয়াও মুশকিল। এদিকে রিমির
বাসায়ও পাত্র দেখার হিড়িক পরে
গেছে। দেখবেইতো। তারাতো আর
তার মত শিক্ষিত বেকারের হাতে
মেয়ে তুলে দিতে পারে না।
শিক্ষিত বেকার কথাটি আসাদের
কাছে অদ্ভূদ লাগে। শিক্ষিতরা
বেকার হবে কেন! মূর্খ
প্রতিবন্ধীদের বেকার হওয়া মেনে
নেয়া যায়। শিক্ষিত
প্রতিবন্ধীরাও বেকার হওয়ার কথা
না। তবুও সে বেকার। রিমিও আজকাল
কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আগে
প্রতিদিন ফোন দিত, এখন দেয় না।
আগে অন্তত একবার হলেও দেখা
করতো, এখন করে না। জিঙ্গেস করলে
নানা অজুহাত দেখায়। অথচ আগে এই
অজুহাতগুলো রিমি প্রতিদিন জয়
করত। এসেই তার কৌশল করে বের হওয়ার
গল্প বলতো। কিছুদিন আগেও এসেই
বললো, "জানো আজ বাসা থেকে
নিচে নামতেই দেখি ভাইয়া সামনে।
কী করবো বুঝে উঠছিলাম না। ভাইয়া
বলল,"কই যাস?"
চট করেই আমার নিতু আপুর কথা মনে
পরে গেল। বললাম,নিতু আপুর সাথে
একজায়গায় যাব,আপু আসতেছে।
ভাইয়া আর কিছু না বলে বাসায় চলে
গেল। নিতু আপুকে ভাইয়া খুব পছন্দ
করেতো তাই নিতু আপুর কথা বললে
ভাইয়া খুব নরম হয়ে যায়।" এ কথা বলেই
রিমি হো হো করে হেসে উঠলো। সেই
হাসি এখনও আসাদের কানে বাজে।
রিমি এখন বাসায় অজুহাত দেখায়
না,আসাদের কাছে অজুহাত দেখায়।
আচ্ছা আসাদ যদি রিমির জায়গায় হত
তাহলেও কী সে এরকম করতো? আসাদ
বুঝতে পারে না।
আজও একটি ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে
আসাদ। ইন্টারভিউ শেষ করেই বাসায়
এসে ক্লান্ত দেহে বেডের উপর চিৎ
হয়ে শুয়ে পরে। শুয়ে শুয়ে এসব
ভাবতে থাকে। একসময় বন্ধ ফ্যানের
নিচেই তার চোখ দুটি জড়িয়ে আসে।
সাথে সাথেই সপ্নের দেশে চলে
যায় আসাদ। যে সপ্নে আছে শুধু
রিমি আর আসাদ। রিমি এসে বকাবকি
শুরু করে। এই আসাদ উঠো,উঠো বলছি।
সন্ধ্যার সময় কেউ ঘুমায় না-কি!
রিমি কাউকে বকা দিলে তার চোখ
দুটি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা
বড় হয়ে যায়। ঘন ঘন চোখের পলক পরতে
থাকে। তখন রিমিকে আর রিমি মনে হয়
না। মনে হয় স্বর্গের কোন অস্পরী।
ঘুমের ঘোরেই আসাদ বলে উঠে,উঠবো
না। তুমি আরো বকা দাও। বকা দিলে
তোমাকে আর রিমি মনে হয় না। মনে
হয়......। একথা শেষ না করতেই দরজায়
টোকা পরে। আসাদের ঘুম ভেঙ্গে
যায়। সে রিমিকে খোঁজে।
আশেপাশে কোথাও রিমি নেই। আসাদ
স্বাভাবিক হওয়ার পর দরজা খোলে।
কাজের বুয়া আসে। মেসে আজ
বাজার করার দায়িত্ব আসাদের ছিল।
সে এখনও কোন বাজার করেনি।
বুয়াকে বলে কিছুক্ষন থাকার
জন্য। সে নিচে যাচ্ছে বাজার
করতে। কিছুক্ষনের মধ্যই ফিরে
আসবে। আসাদের মেস পাঁচতলা
বাড়ির ছাদে। এখানে কয়েকটি রুম
করে শুধু ব্যাচেলরদের ভাড়া
দেয়া হয়। আসাদ পাঁচতলা থেকে
নিচে নামে। বাড়ির নিচে নামতেই
দেখে একটি বিয়ের গাড়ী। গাড়ীটি
নানারকম কাঁচা ফুল দিয়ে
সাজানো। গাড়ির সামনের অংশে
গাঁদা ফুল দিয়ে লেখা,শুভ বিবাহ।
আসাদের শুভ বিবাহ ব্যাপারটি খুব
একটা পছন্দ হয় না। তার মতে,
বিয়েতো সবসময়ই শুভ। এটা আবার
লিখে প্রকাশের দরকার কী! আসাদ
ভাবে তার বিয়ের গাড়ীতে লেখা
থাকবে,"আসাদ-রিমির স্বাধীনতা
দিবস"। কারন এখন তারা পরাধীনভাবে
প্রেম করছে। বিয়ের পর
স্বাধীনভাবে প্রেম করবে। তাই এই
লেখা। গাড়ীর পেছনের সীটে বর আর
কনের মাঝে একটি ছোট বাচ্চা বসে
আছে। বাচ্চাটি দেখতে খুব সুন্দর।
বর অথবা কনের খুব কাছের কেউ হবে
হয়ত। আব্দার করেছে বর-কনের মাঝে
বসবে। তারা সে আব্দার উপেক্ষা
করতে পারেনি। এতে অবশ্য কিছুটা
সুবিধাও হয়েছে। বর-কনে একেবারে
পাশাপাশি বসলে হয়ত কিছুটা
অস্বস্থিবোধ করতো। এখন আর তাদের
মাঝে সে অস্বস্থিটা নেই।
আসাদ বাজারের কথা ভুলে যায়। সে
একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসে।
দোকানদারকে চা-সিগারেট দিতে
বলে। আসাদ সাধারনত সিগারেট খায়
না। তবে মাঝে মাঝে খায়। আজ
খাবে। বিয়ের গাড়িটি যতদূর দেখা
যায় সে তাকিয়ে থাকে। আসাদেরও
এরকম করে বিয়ে করার শখ। এ শখ হয়ত
একদিন পূরন হবে। তবে তখন হয়ত তার
পাশে রিমি থাকবে না,অন্য কেউ
থাকবে। সেই অন্য কেউটা কে আসাদ
জানেনা। আসাদ সিগারেট ধরিয়েই
এসব ভাবতে থাকে। সে সিগারেটে
একটি টানও দেয়নি। কিন্তু
সিগারেট ঠিকই অনেকটা পুড়ে ছাই
হয়ে গেছে। অনেক পাওয়া-না
পাওয়ার মধ্যও আসাদের জীবন তার
নিজের গতিতেই এগিয়ে চলছে। অার
এভাবে চলতে চলতেই সিগারেটের মত
জীবনও একসময় নি:শেষ হয়ে যাবে।
অবশিষ্ট থাকবে শুধু ছাইয়ের মত
কিছু স্মৃতি। এই স্মৃতিও হয়ত হঠাৎ
একদিন দমকা বাতাসে উড়ে যাবে।