somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষশাসিত নারী মন

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরুষ শাসিত নারী মন
-অদ্বিতীয়া সিমু

আমি এখনো বুঝতে পারছি না আমার কি করা দরকার! খুব অবাক লাগে যখন মনে হয় কাউকে আমি গ্রহণ করতে চেয়েছি হৃদয় থেকে, আর লোকটি ছিল ধোঁকাবাজ। তাইতো সবার বাধা সত্বেও এনগেজমেন্ট ভেঙে দিয়েছি আমি।মানুষ মানুষকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারে? - ভাবতে ভাবতেই তারাশঙ্করের শ্রেষ্ঠ গল্পের বইটা খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলল ইপ্সি। ইপ্সিতা রেহমান। রাজু রেহমানের বড় মেয়ে।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুমমম ..বৃষ্টি। জানালা দিয়ে চোখ মেলতেই পাশের বাসার ছাদের গাজী ট্যাংকটা নজরে এল। গাজীর মোটকা শরীরের গা বেয়ে পড়ছে পানি। কালো আলকাতরার মত শরীর। ইপ্সি চোখ সরিয়ে নিল। ভাল্লাগছে না। কলেজের সময় হয়ে এল। আজ ক্লাশে যেতে বা লেকচার দিতেও ইচ্ছে করছে না। পাশের বাসার ছাদে আবার চোখ পড়ল। পিচ্চি মেয়েটা ভিজছে। হাত দু’টা মাঝেমাঝেই পাখির ডানার মত ছড়িয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো মাথা নাড়িয়ে ঝাড়ছে, যেন পাখির পালকগুলো ঝেড়ে নিচ্ছে পাখি। খুব মজা পেল ইপ্সি। কি যেন নাম পিচ্চির? হু, তামান্না। খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটার সংগে কথা বলতে।

-এই মেয়ে, তোমার কি স্কুল নেই?
- না, আজ বৃষ্টিতো তাই স্কুলে যাইনি।
-ও, বৃষ্টি বুঝি বাহানা!
মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠল। ঠিক যেন জলেডুবো ফুল। কি যেন বলত মারুফ ভাইয়া? ওর বড় ভাইয়া। এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। ভাইয়া বলত,
-এহ্রে, বউটুবানির ফুল, যেন এক্কেবারে বউচুবানির ফুল!
ইপ্সির খুব ইচ্ছে করছে বলতে,
-এই তামান্না, বউটুবানির ফুল, এক্কেবারে বউচুবানির ফুল..
তারপর ধরে তামান্নার গালটা টিপে দিতে ইচ্ছে করছে।
মেয়েটা ঘুরে ঘুরে নাঁচছে। ওমা, এরমধ্যে একটা বেলমাথার পুচ্চিও এসে জুটেছে! মনে হয় ওর ছোট ভাই।
-তামান্না ...... এই তামান্না ...
কে ডাকছে? নিশ্চয়ই তামান্নার মা! ইপ্সির খুব রাগ লাগছে। কেন ডাকছে? এবার দৃশ্যপটে তামান্নার মাও এসে হাজির হলো। ছাইরঙা সালোয়ার-কামিজ পড়া একজন মহিলা। বয়স কত? ৩৩-৩৪। হ্যাঁ, এমনই হবে। এরচেয়ে বেশী হবার কথা নয়। মহিলার মাথার চুলগুলো মনে হয় অভিজ্ঞতার দৌঁড়ে একদমই চলে গেছে। একদম অল্প। বাকিটুকু যা আছে তা টেনে মাথার পেছনে খোঁপা করে রেখেছে মহিলা। খোঁপাটাও যেন কত অভিজ্ঞআর ভারে নুঁয়ে পড়েছে!
-বলি ধিঙিমেয়ে, ছাদের উপর ধেই ধেই করে নেঁচে বেড়াচ্ছে! কত লোকে দেখছে! হায়রে আমার পোঁড়াকপাল!
ইপ্সি তাকিয়ে দেখছে ........
জানালার পর্দাটা দুলে উঠলো। ইপ্সি আচারের বয়ামটা ঠেলে দিল চৌকির তলায়। ফুপার জন্য বানানো। ধরা নিষেধ। তাই ইপ্সি চুপিচুপি খেয়ে নেয়। দাদী বলেছে- তোর ফুপা পুরুষমানুষ, তাই আলাদা করে তুলে রেখেছি। ধরিস না। কেন পুরুষমানুষ বলে আলাদা করে তুলে রাখতে হবে বুঝলোনা ইপ্সি! পর্দাটা আবার দুলে উঠলো। এবার তাকাতে হলো। একটা মুখ উঁকি দিল পর্দা ফাঁক করে।
-ইপ্সি .....এই .....
ফিস্ফিস করে উঠলো জানালার মুখটা। মুখে আঙুল রেখে ইপ্সি ইঙ্গিত দিল। সটকে পড়ল মুখটা। বারান্দায় এসে দাঁড়াল ইপ্সি। দেখতে পেল তিনু, কৃষ্ণ, মাসুক, তুলি....সবাই দাঁড়িয়ে ভাঙাগাড়িটার পাশে। ইপ্সির হাসি পেল। তুলি ভাঙাগাড়িটার পাশে ডাকুমাস্তানের মত দাঁড়িয়ে আছে। যেন কত বিজ্ঞ নারী! ইদানিং তুলিকে বড়বড়ই লাগে। ও ওড়না পড়া শুরু করেছে। ওকে নাকি ওর মা কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর উপর। কে শোনে কার কথা! তুলিতো ওড়নাটা কোমরে পেঁচিয়ে ফুটবল মাঠে নেমে যায়! ছেলেরা যদি পারে, তুলি কেন পারবে না? তুলিদের বাড়ি গিয়ে হোঁচট খেয়েছিল ইপ্সি। তুলির মা তুলিকে বলছিল, মেয়েরা নাকি বড় হলে বাড়ির বাইরে যেতে নেই। আর তুলি? ও? চুপিচুপি বেড়িয়ে পড়ত। কত যে ধরা খেত! সেই তুলির বিয়ে হয়ে গেল।
ইপ্সি একদিন মাঠে গোল্লাছুট খেলছে। রিকশা থেকে নামল তুলি। শশুড়বাড়ি থেকে এসেছে। সখীর আগমনে ছুটে গেল ইপ্সি। কেমন যেন ট্যারা চোখে তাকাল ইপ্সির দিকে!
-কিরে, ধিঙি মেয়ে, ছেলেদের সাথে লেগেছিস গোল্লাছুট খেলতে!
খুব অবাক লেগেছিল , তুলি কি করে বদলে গেল!
ইপ্সি যখন বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসতো, তখন মা বারবার বলে দিত- ছেলেদের কাছ থেকে দূরে থাকবি। ওদের সংগে পাল্লা দিয়ে তোকে কাজ করতে হবে না। ওরা যা পারবে তুই মেয়ে হয়ে তা পারবি না। কেন? প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে না মাকে, মনে মনে হাসে ইপ্সি। হয়ত করলেই বলবে, যদি তোমার যেমন ইচ্ছে চলতে হয় তবে বিয়ে করে চল। জামাইর অনুমতি নিয়ে চল। হায়রে, মেয়েদের নিজেদের অস্তিত্বের জন্য একজন পুরুষ সংগীর অনুমতি নিয়ে চলতে হবে! এ নাকি সমাজের নিয়ম! সমাজ পুরুষকে স্বাধীনতা দেয় নারীকে নয়। আর এ বলে খোদ নারী!

ইপ্সি অবাক হয় মা যখন বলে , তোমার বিয়ের কি প্রয়োজন? তুমিতো আছই সমাজে আমাদের মুখে চুনকালি দিতে! কেন? ওতো ভালবাসতে চায়, ভালবাসা কোথায়? যে জানোয়ারকে ও রিফিউজ করেছে, সেরকম জানোয়ারদের মাঝে! কোন জানোয়ারকে বিয়ে করতে অস্বীকার করা অন্যায়! মা অন্যায়ই মনে করে। ইপ্সি এখন বিয়ে শব্দটাকে ভয় পায়। তবু চেষ্টা করছে সব ভুলে যেতে, আবার করে নতুন করে সব সাজাতে। পারবে কি? মায়ের ডাকে চমক ভাঙল।
-ইপ্সি, কলেজ যাবি না?
-যাব মা .....
-তাড়াতাড়ি চলে আসিস, আজ বাড়িতে মেহমান আসবে।
-আসব মা।
ইপ্সি জানে কোন মেহমান আসবে। ওকে দেখতে আসবে কোন ছেলেপক্ষ। ওর কানে এল ফুপীর গলা। ছেলের বয়স ৩৬+। ডাক্তার। আর কি চায় তোর মেয়ে। ও লেকচারার, ছেলে .....। ইপ্সির বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠল। মা কি একবারও প্রশ্ন করেছে ইপ্সি কি চায়! হয়ত তা করার দরকার নেই, আসলে মেয়েরা কিছু বোঝে না। হয়ত ইপ্সিও একসময় মায়ের মতই ভাববে, কে জানে!
তামান্নাকে টানছে ওর মা। মেয়েটা যেতে চাচ্ছে না। মেয়েটার বয়স কত? ৮-৯। মেয়েটাকে ডাকছে কেন মা? ছেলেটাকে কেন নয়? এখানে পোড়াকপালের কি হল! ইপ্সির বুক ঠেলে কান্না আসছে। হাতটা আপনিই গালে চলে এল। ভিজা! ও কি কাঁদছে? কেন? ঐ পিচ্চি মেয়েটার দুঃখে, নাকি নিজের! নাকি আফসোস এই সমাজের ’পুরুষশাসিত নারী মন’ দেখে ..... কে জানে!
ইপ্সি তৈরী হচ্ছে কলেজের জন্য। কারণ, জীবন এভাবেই চলে ....



সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৭
৬৫টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×