somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার ভুল নাকি ভালোবাসাটাই ভুল

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ছিল টিফিন পিরিয়ড । ক্লাশ ৫ এর দুই ছেলে ছাতার আড়ালে বসে টিফিন খাচ্ছিল । তখন বর্ষাকাল চলছিল । হটাত এক মেয়ে এসে ছাতা সরিয়ে বল্ল, তোমরা ছাতার আড়ালে বসে কেন খাচ্ছ ? আমরা ত সবাই বন্ধু, এসো এক সাথে খাই । এই বলে মেয়েটি তাদের সাথে টিফিন শেয়ার করে খেতে লাগলো। ঘটনাটি অতি তুচ্ছ কিন্তু কেন জানি ওই দুই ছেলের একজন “হিমেল” ভুলতে পারে না । বার বার তার মনে সেই ঘটনাটি ভেসে উঠে।
ক্লাশ ৫ শেষে সেই মেয়েটি “জান্নাত” মেয়েদের স্কুলে আর হিমেল ছেলেদের স্কুলে ভর্তি হয়। পাশাপাশি তাদের স্কুল তবুও তাদের কখনও দেখা হয়নি, কথা হয়নি একটি বারের জন্যও । ক্লাশ ৫-১০, অনেকটা সময় চলে যায় । তবুও সেই সৃতিটা আজও হিমেলের মনে থেকে যায়, যাকে সে তিলে তিলে যত্নে মনের অনেক গভীরে লালন করতে থাকে । তাকে নিয়ে নিজের অজান্তেই আশার জাল বুনতে থাকে।
সাল ২০০৮ । সময়টা, এস এস সি পরীক্ষাই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান , ভাগ্যক্রমে হিমেল জিপিএ ৫ পায় এবং অনুষ্ঠানে যেতে দেরি করে ফেলে। ঠিক যেন সিনেমার গল্পের মত , যেই মাত্র হিমেল অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে ঠিক সেই মুহূর্তে মাইকে জান্নাত এর নাম উচ্চারিত হয় । এতদিন পরে আজ এভাবে সেই নামটি শুনে বুকের বাম পাশ বেথা করে উঠে, অজানা এক কোন কারণে সেই স্মৃতির মানুষটিকে দেখার আশায় পাগলের মত ষ্টেজের দিকে ছুটে যায় হিমেল । সেদিন তার দেখা পায়নি তবে একটা জিনিস বুজতে পারে এ আর কিছু নয় ভালোবাসা, সে জান্নাত কে ভালবেসে ফেলেছে।
এরপর শুরু হয় কলেজ । হিমেল ছিল অনেকটা লাজুক স্বভাবের, মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারত না । পারত না কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে, যদি পারত তবে বিষয়টা অনেক আগেই খেয়াল করত । কলেজের প্রথমদিকে রোল কলের জন্য হাজিরা খাতায় নিজের নাম লিখতে গিয়ে কয়েকটা পাতা উল্টে যায় এবং একটা নামে হিমেল এর চোখ আটকে যায় । সেই নামটি ছিল জান্নাতের । এটা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি হিমেল। তার সেই প্রিয় মানুস্তি তারই সাথে একি ক্লাশে বসে আছে অথছ হিমেল এতটাই ভিতু আর লাজুক ছিল যে পাশ ফিরে সেই মানুষটাকে খুঁজবে, একবার দেখবে, এটাও সে পারেনি । পরের ক্লাশের জন্য সে অপেক্ষা করতে থাকে কখন স্যার সেই রোলটি ডাকবেন আর হিমেল তার আখাংকিত মুখটাকে দেখতে পাবে ।

পরের ক্লাশে সেই মানুষটিকে দেখতে পায় হিমেল , সেই ক্লাশ ৫ এর মতই, একই মুখ, যাকে নিয়ে সে সপ্ন দেখেছে ।সেই মুহূর্তে হিমেলের চাইতে খুশী মনে হয় আর কেউ ছিল না পুর কলেজে । এরপর থেকে শুরু হয় জান্নাত কে আড়ালে আড়ালে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা । কিভাবে সে হাঁসে, কিভাবে সে কথা বলে, সে রেগে গেলে তার ভুরু টা বেঁকে যায় নাকি, সে হাঁসি দিলে দাঁত গুলোকে মুক্তার মত লাগে কিনা । এক সময় হিমেল আর থাকতে পারে না , জান্নাতের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতে থাকে । কিভাবে তার মনের কথা টা সে জানবে ?
ভীতু হবার পরও সে সাহস করে জান্নাতদের বাড়ির সামনে যায় জান্নতকে ফলো করে । হিমেল প্রতিদিন সকাল ৭-৮ টা এক পুকুর পারে অপেক্ষা করতো শুধু একবার জান্নাত কে দেখতে পাবে বলে । বেশ কয়েকবার হিমেল চেষ্টা করে সরাসরি জান্নাতের সামনে দিয়ে তার মনের কথাটা বলতে । কিন্তু সাহসে কুলাতে পারেনি আর যখন সাহস হল তখন সময় হিমেলের পাসে থাকেনি । তায় তার এক বন্ধুকে দিয়ে জান্নতকে তার মনের কথাটা জানায় । জান্নাত হিমেলের বন্ধুর কথা গুলো শুনে এবং খুব ভালভাবেই তাকে ফিরেয়ে দেয় এই বলে, সে অন্য এক জনকে ভালোবাসে ।
হিমেলের এতদিনের সপ্ন এক নিমিষেই ভেঙ্গে যায় । সেদিন সে খুব কেদেছিল । হিমেল ছিল খুব বোকা তাইত সে জান্নাতের আশা ছাড়তে পারেনি, জান্নাত তাকে ভালবাসবে না এটা জানার পরও । তার শুধু একটা কথায় ছিল, সে ভালো না বাসুক আমিতো বাসি ।
এর কিছু সময় পর জান্নাতেরা পুরো পরিবার অন্যত্র চল যায় কোন কিছু না বলেই । হিমেল অনেক চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করার কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হয়নি । শুধু এতটুকুই জানতে পারে, জান্নাতের বিয়ে হয়ে গেছে । সে সুখে আছে , সুখে থাকারই কথা । তার সুখের কথা ভেবে হিমেলও সুখী হতে চেষ্টা করে কিন্তু এটা তো হবার নয় । রাতের আঁধারে একাকিত্তের মাঝে সে কাঁদে তবে তার এ কন্না কেউ কখনও দেখেনি , দেখতে পায়নি । সময় বয়ে চলে, কলেজ শেষে বিসসবিদ্দালয়ে ভর্তি হয় হিমেল । নিজেকে অনেকটা সামলে নেয় । মনে মনে এটায় পন করে, নিজ থেকে কাউকে আর ভালবাসতে যাবে না, যদি না কেউ তাকে ভালোবেসে সামনে এগিয়ে আসে ।
………………………………………………………………………………………
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকে একটা অজানা নাম্বার থেকে কল আসে । কথা বলার পর হিমেল জানতে পারে সেটা তার এক কাজিন “খুকী” । হিমেলের মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক এর সব বই নোট সবগুলোই তার কাজিন খুকী পড়েছে আর এখন খুকী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে । তাই হিমেলের কাছে পরামর্শ চায় কিভাবে পড়বে । হিমেল সাধ্যমত তাকে পরামর্শ দেয় পড়ার ব্যাপারে ।
এভাবেই মাঝে মাঝে তাদের কথা হতে থাকে । হিমেলের একটা বদ অভ্যাস ছিল যে, সে জান্নাতের নাম তার সব বই নোটে লিখে রাখত । তো খুকী যেহেতু সেই একই বই পড়েছে তাই সে একদিন হিমেলকে, জিজ্ঞাসা করে জান্নাত কে ? হিমেল খুকীর সাথে কথা বলতে বলতে অনেকটা বন্ধুর মত হয়ে গেছিল তাই সে আগপিছ না ভেবেই জান্নাতের ব্যাপারে সব কথা বলে দেয় খুকীকে । কথা প্রসঙ্গে হিমেল এটাও বলে ফেলে যে, সে আর কোনদিন কাউকে ভালবাসবে না । আর এই কথাটা খুকীকে খুব করে নাড়া দেয়।
খুকীর পরীক্ষা শুরুর ১৫-২০ দিন আগে হটাত করে সে হিমেলের কাছে তার বন্ধুত্ব চেয়ে বসে। হিমেল বলে তারা তো বন্ধুর মতই । তখন খুকী বলে সে বন্ধুতের চাইতে আর বেশি কিছু চাই, হিমেলকে । সে হিমেলকে ভালোবাসে । সে বলে, ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি, শুধু আপনাকে আমি, খুব খুব ভালোবাসি । এটা শুনে হিমেল যেমন অবাক হয় তেমনি খুশিও হয়, এটা ভেবে, তাকেও কেউ ভালবাসতে পারে । খুকীর একটাই কথা হিমেল যদি হ্যাঁ না বলে তবে সে পরিক্ষাই দিবে না । হিমেল তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে এবং শেষ মেষ হ্যাঁ করে বসে ।
জান্নাতের কাছে প্রত্তাক্ষিত হয়েও যে হিমেল তাকে ভুলতে পারেনি সেই হিমেল খুকীর চঞ্চলতা, দুরন্তপনা, আর ভালোবাসা দেখে জান্নাতকে ভুলতে শুরু করে আর খুকীকে মনের আসনে বসিয়ে ফেলে । ভালবাসার মানুষটির সাথে কথা বলা খুনসুটি করা, তাকে রাগিয়ে দেয়া তে যে কি সুখ র আনন্দ থাকে টা হিমেল কোনদিন অনুভব করতে পারেনি আর সেগুলোই সে এখন আস্তে আস্তে অনুভব করছে খুকীর সাথে । সারা রাত জেগে কথা বলা, ভবিষ্যৎ নিয়ে সপ্ন দেখা …… দিনগুলো যেন সপ্নের মত বইতে থাকে ।

হ্যাঁ হিমেল এখন সুখ কাকে বলে সেটা অনুভব করতে শুরু করেছে । সে এই সুখটাকে হারাতে চায় না তাই অনেক সাহস একত্র করে বাসায় যায়, খুকীদের বাসায় । খুকীর মা , তার চাচীকে তার আর খুকীর সব কথা খুলে বলে । সব শুনে তার চাচী অমত করেননি তবে বলে, আগে তোমাদের পড়ালেখা শেষ হোক তারপর দুই পরিবার একসাথে কথা বলা যাবে, ততদিন পর্যন্ত কাউকে কিছু বলিও না । এটা শুনে হিমেল বাতাসে ভাসতে থাকে । তার খুশি দেখে কে ? নিজের বাসায় এসে খুকীকে কল দিয়ে সব কিছু বলে । হিমেল ভেবেছিল তার মত খুকীও খুশিতে লাফাবে কিন্তু বিধি বাম । খুকী খুশি হয়নি । সে হিমেলকে জিজ্ঞাসা করে, তার সাথে কথা না বলে কেন সে নিজে নিজে গিয়ে তার মাকে সব বলেছে ? হিমেল বলে আমি স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম, এই খুশিটাকে [ খুকীকে ] আমি হারতে চায়নি তাই এমনটি করেছি আর তোমার মা ও অমত করেননি । এটাই কি ভালো হল না দুই জনের জন্যই ?
খুকী কাঁদতে থাকে, কোন উত্তর না দিয়েই । হিমেল বার বার তাকে জিজ্ঞাস করে কি হয়েছে আমায় বল , কেন তুমি কাঁদছ? কাঁদতে কাঁদতে খুকী বলে ভাইয়া আমায় মাফ করে দিয়েন, আমি আসলে ভাবতে পারি নাই বিষয়টা এতদুর গড়াবে, আপনি সত্যি সত্যি আমাকে এতটাই ভালোবেসে ফেলবেন , আমি বুঝতে পারি নাই । আমি শুধু আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম, ওই যে আপনি বলেছিলেন আর কোনদিন কাউকে ভালবাসবেন না । তাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম আপনি আপনার কথায় থাকতে পারেন কি না ? কিন্তু ভাইয়া আমি সত্যি ভাবিনি এমন কিছু হয়ে যাবে । আমি সরি ভাইয়া, আমার বয় ফ্রেন্ড আছে । আমায় মাফ করে দিয়েন প্লিজ । আর সব কিছু ভুলে যান ।
হিমেল সেদিন বোবা হয়ে গেছিল সে কিছুই বলতে পারেনি তার মাথায় কিছু ঢুকছিল না সে শুধু শুনেই গেল । আর যখন সব কিছু বুঝতে পারল, মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হয়নি । চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি গড়িয়েছে আর বুকের ভিতর মনটা একটু বাচার জন্য ছটফট করতে করতে মরেছে ।
………………………………………………………………………………………
যে ভালবাসার জন্য সে হাহাকার করে বেড়াল সেই ভালোবাসাই তাকে নিয়ে এমন তামাশা করল যে হিমেল পুরো মেয়ে জাতিকেই অবিশ্বাস করতে শুরু করল । পড়ালেখা কোনমতে শেষ করে একটা চাকিরও জুটিয়ে ফেলল । সিদ্ধান্ত নিল জীবনে বিয়েই করবে না, যে ভালোবাসার মূল্য কেউ দেয়নি, কেন সে কাউকে ভালবাসবে, বিয়ে করবে ? কিন্তু হিমেল যে বোকা সে শুধু ভালবাসতেই জানে আর কিছু পারে না তায় ভাগ্য হয়ত তার প্রতি একটু সদয় হয়। অফিস থেকে আসার পথে, বাচ্চার কান্নার শব্দ শূনতে পায় কিন্তু আসে পাশে তো কোন বাড়ি ঘর নাই, আছে শুধু এক ডাস্টবিন । কৌতূহল নিয়েই সামনে এগিয়ে যায়, দেখতে পায় ময়লা আবর্জনার মাঝে একটা ফুটফুটে মেয়ে শিশু কাঁদছে । কি করবে হিমেল ভেবে পাচ্ছে না । বাচ্চার কান্নাটাকে উপেক্ষাও করতে পারছে না আবার তারত করারও কিছু নাই । বাচ্চাটার মুখটা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না হিলেল । আজ যদি তার আর খুকীর সন্তান হত তবে হয়ত দেখতে এমনটাই হত । বাচ্চাটার চেহারার সাথে খুকীর চেহারার অনেক মিল আছে । শেষ মেষ বাচ্চাটাকে বুকে জরিয়ে নেয় ।
আর মনে মনে ঠিক করে, যে মা তার বাচ্চাকে এভাবে ছুড়ে ফেলতে পারে সে কেমন মা ? সে কিভাবে পারল এমনটা করতে ? যে ভালোবাসা টুকু তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়ার কথা ছিল , সেই ভালোবাসা টুকু হিমেল দিবে বাচ্চা টাকে তার মা হয়ে তার বাবা হয়ে । যে ভালোবাসার মূল্য কেউ দিল না টাকে, এই অবুঝ শিশু টা হয়ত বুঝবে । এভাবেই শুরু হয় হিমেল এর নতুন জীবন । সে বাবা সে মা সে বন্ধু সে শিক্ষক সেই বাচ্চাটার আর সে বাচ্চাটা {তমা} তার পুরো পৃথিবী ।
দেখতে দেখতে ১৫ টা বছর চলে যায় । তমা এখন ক্লাশ ৯ এ পরে । স্কুল এ সবার মা তাদের সন্তানকে নিয়ে আসে কিন্তু তার মা টাকে নিয়ে আসে না। কেননা তার মা নাই তবে এটা নিয়ে তার কোন দুঃখ নাই । তার বাবাই তার সব । তার সবথেকে ভালো বন্ধু । তবুও মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে পরে । তমা অনেক বার তার বাবাকে [হিমেলকে] জিজ্ঞেস করেছে, তার মা দেখতে কেমন ছিল? হিমেল উত্তর দিত , তোর মা দেখতে অনেকটা তোর মত ছিল, চোখ গুলো খুব সুন্দর, গালে একটা তিল, অনেক লম্বা কেশ, কণ্ঠ টা একেবার বাচ্চাদের মত {খুকীর বর্ণনা} । আর জানিস সে আমাকে ভয় দেখাত যে, মাথার লম্বা চুল কেটে ছোট করে ফেলবে, কেননা আমি ওর লম্বা চূল খুব পছন্দ করতাম । এভাবেই চলছিল বাবা মেয়ের ছোট্ট সুখের পৃথিবী ।
হিমেল একদিন অফিসে ছিল, ফুফু আম্মার কল এলো , তিনি হিমেল কে তার বাসায় আসতে বল্লেন । বিকেলে অফিস শেষে ফুফুর বাসায় গেল হিমেল। জানত না তার জন্য কি অপেক্ষা করছিল সেথায় । বসার ঘরে ঢুকতেই দেখে তমা বসে আসে এক মহিলার পাশে । ভালো করে দেখতেই হিমেলের বুক লাফ দিয়ে উঠে । এ যে খুকী ! কিন্তু এ কি দশা হয়েছে ওর ! শরীর হাত সব শুকিয়ে গেছে , পাগলের মত হয়ে গেছে । কিন্তু সে তমা কে সোনামণি বলে বার বার বুকে জরিয়ে ধরছে আর কোনদিকে তার খেয়াল নাই।
খুকীর সাথে তার স্বামীও এসেছে । ফুফু আম্মা তখন কথা বলা শুরু করলেন । ঘটনাটা এমন, ইমরান আর খুকী দু জন দুজনকে ভালবাসত এবং এক পর্যায়ে খুকী প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় । এদিকে ইমারন এর পড়া শেষ হয়নি এখনও সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে কিন্তু তাদের এখনও বিয়ে হয়নি । বাসায় জানাতেও পারছে না । আবার এবরসন ও করতে পারছে না শরীরের ঝুঁকি আছে বলে । তাই দু জনে মিলে সিধান্ত নেয়, বাচ্চা জন্ম দিবে তারপর পরিবারে সবাই কে জানাবে। সিজার করে বাচ্চা জন্ম নেয়, কিন্তু ইমরান এর মনে অন্য কিছু ছিল । সে এই বাচ্চাটাকে তার ক্যারিয়ার এর পথে বাঁধা মনে করে তাই টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় । আর খুকীকে বলে যে সে মৃত সন্তান প্রসব করছে । এটা শুনে খুকী খুব ভেঙ্গে পড়ে । তবে আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠে এবং এর কিছু সময় পর ইমারান এর পরালেখাও শেষ হয়ে যায় এবং চাক্রিও পেয়ে যায় । অতঃপর ধুমধাম করে বিয়েও করে ফেলে । কিন্তু বিয়ের ১০ বছর হয়ে গেলেও কোন বাচ্চা হয় না । ডাক্তার বলে যে, তার আগের কোন অপারেশন এ এক্সিডেন্টালই তার মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে যায় । এ খবর শুনে কোন মেয়েই ঠিক থাকতে পারবে না খুকীও পারেনি আর ইমরান আফসোস করছে তার কৃতকর্মের জন্য । সে খুকীকে সব কিছু খুলে বলে । তখন থেকে দুজনে তাদের সেই ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া শিশু টিকে খুজে বেরাচ্ছে ।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক লোক মারফৎ জানতে পারে, হিমেল একটা বাচ্চা কে কুড়িয়ে পেয়েছে, কেননা সে তো বিয়েই করেনি তাহলে তার বাচ্চা আসবে কোথা থেকে । আর তমা দেখতে অবিকল খুকীর মত তাই, তমা আর খুকীর ডিএনএ টেস্ট করতে চাচ্ছে। ফুফু বলেন, তায় তোমার অনুমতি চাচ্ছে ওরা দুজন । সবকিছু শুনে হিমেল আবারও সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সে কাউকেই দেখাতে পাচ্ছে না । কি করবে সে ? যদি প্রমান হয়েই যায়, তমা খুকীর মেয়ে, তবে তমা কি তার কাছ থেকে চলে যাবে? সে কি আবারও একা হয়ে পড়বে? আর সে যদি এই টেস্ট করতেই না দেয়, তমাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যায় তবে এই পাগল প্রায় মা কি বাঁচবে , যখন সে বাঁচার একটা আশা দেখতে পেয়েছে? কি করবে এখন হিমেল? সে ভেবে পায় না ।
অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করে আর একবার সে ভাগ্যর হাতে নিজেকে ছেরে দিবে, হয় সে বাঁচবে নয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে । ডিএনএ টেস্ট করতে সম্মতি দেয় হিমেল । তার ভরসা আর যায় হোক তমা তাকে ছেরে যাবে না, তমা যে তার বুকের ধন, তাকে সে ১ মাস বয়স থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে । জন্ম না দিক, ভালোবাসা তো দিয়েছে , ভালো তো বাসে ।
অতঃপর রেজাল্ট এলো । প্রমানিত হল তমা আসলে খুকীর ই মেয়ে ।এখন তার তাদের মেয়েকে ফিরে পেতে চায় । যে মায়ের বুক গত ১৫ টা বছর ধরে হাহাকার করে আসছে তার সামনে দারিয়ে হিমেল নিজেকে খুব অসহায় বোধ করছে। কি করে সে তার সুখটাকে দিয়ে দিবে? তাহলে সে কি নিয়ে বাঁচবে? আজ আরও একবার তার স্বার্থপর হতে ইচ্ছা করছে, তার সুখ টাকে দু হাতে ধরে বুকে লুকিয়ে অনেক অনেক দূরে হারিয়ে যেতে্‌ যেখানে কেউ তার সুখকে কেড়ে নিতে আসবে না । কোন সিদ্দান্ত নিতে না পেরে হিমেল শেষ বারের মত ভাগ্যের কাছে হাত পাতল।
তমা কে বলল, সে তমার জন্মদাতা পিতা নয়, টাকে সে কুড়িয়ে পেয়েছে , এই সত্যটা কখনও বলে নি , তবে তার ভালোবাসা স্নেহর মাঝে কোন মিথ্যা ছিল না, আজও নাই আর পাশের ঘরের ওই মানুষ দুটি তার আসল পিতা-মাতা । এখন কি করবে সে? কার কাছে যাবে? তমা যে সিদ্দান্তই নেবে বিনা বাক্য বায়ে তা হিমেল মেনে নিবে




গল্পের শেষ টায় একটা হারিয়ে যাওয়া পরিবার আবার একত্রিত হয়ে গেল আর কেউ তার আগের জায়গাতেই ফিরে গেল একাকি নিঃস্বতায় যার একমাত্র সঙ্গী । এভাবেই হয়ত সবার সুখ লেখা ছিল। কেউ সুখকে খুঁজে পেয়ে আর কেউ নিজেকেই ভুলে গিয়ে । আজও দেখা যায় রাস্তার ধারের ড্রেন টার পাশে এক মাঝবয়সি পাগল নিজেই নিজের সাথে কথা বলে যাচ্ছে । সে এখন বেশ সুখে আছে, সে এখন ভালবাসতে জানে না, ভালোবাসা কি সেটাই জানে না । সুখে থেকো ভালো থেকো হে ভালোবাসার পাগল ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×