চ
INTERNATIONAL BUSINESS TIMES
বোকো হারাম,ISIS (Islamic State Of Iraq & Syria)এবং ইছলাম: মৌলবাদ-মুক্ত আন্দোলন “শারিয়া আইন আল্লাহ প্রদত্ত আইন” এই ভ্রান্ত-বিশ্বাষকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে।
By Ludovica Iaccino
June 23, 2014 17:20 BST
উদ্যোক্তা- হাসান মাহমুদ
অনুবাদক ও প্রকাশক- আঃ হাকিম চাকলাদার
Imamganj was one of the targeted areas of Radical Free Village movementHasan Mahmud - Muslims Facing Tomorrow
যখন কিছু কিছু গোষ্ঠী ,যেমন ইরাকের ISIS, নাইজেরিয়ার বোকোহারাম, নিজেরাই নিজেদের ইছলামিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত দাবী করিয়া শারীয়া আইন প্রতিষ্ঠার অভ্যুত্থানের লেবেল লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর কার্যকলাপ আরম্ভ করিয়া দিল, তখন কেহ কেহ যুক্তি দেখাইয়া প্রমান করে দিল যে এই সকল ইছলামিক নাম ধারী গোষ্ঠী মূলতঃ ইসলামের জন্য কিছুই করতেছেনা।
শারীয়া বিশেষজ্ঞ হাসান মাহমুদ যিনি কানাডার Muslims Facing Tomorrow (MFT) সংস্থার জেনারেল সেক্রেটারী ও, শারীয়া আইন আল্লাহ প্রদত্ত আইন এই ভ্রান্ত ধারনাকে ধুলিস্মাৎ করে দেওয়ার লক্ষ্যে মৌলবাদ-মুক্ত-গ্রাম আন্দোলন আরম্ভ করিয়াছিলেন।
হাসান মাহমুদ INTERNATIONAL BUSINESS TIMES (IBT) মুখপাত্রকে বলেন, মৌলবাদীদের মেরুদন্ড এই “শারীয়া আইন” এমন এক বস্তু, যে মুসলমানেরা ইছলামের নাম দিয়া যত রকমের অপরাধ করে তার মূলে থাকে এই “শারীয়া আইন” প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের দাবী, অথচ অদ্ভুত হলেও আসলে সেই “শারীয়া আইন” নিজেই মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কোরানের আইনকেও লংঘন করে, মানবাধিকার ও নারী অধিকার আইনকেও লংঘন করে।
“শারীয়া আইন” কে কোরানের সংগে সম্পর্কচ্ছেদ করে দেওয়ার লক্ষে, Muslims Facing Tomorrow (MFT) সদস্যরা বাংলাদেশে ৪ টি গ্রামে পুস্তক বিতরন ও মুভী The Divine Stone,দেখিয়ে জনগনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তথা কথিত “শারীয়া আইন” কী ভাবে ইছলামকে অপহরণ করেছে।
হাসান মাহমুদ এই The Divine Stone মুভীটায় দেখিয়েছেন, একটি গ্রামে জনগন অপরাধ দূর করার লক্ষ্যে “শারীয়া আইন” প্রবর্তন করিলে, কী ভাবে তারা আরো অধিক জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, এবং পরিশেষে তারা আবার সামাজিক ধর্ম নিরপেক্ষ আইনে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।
.
হাসান মাহমুদ বলেন,”এই গ্রামগুলীতে প্রতিদিন মুভী দেখানো হত এবং দর্শকেরা বই পড়ে আরো অধিক জানতে আরো বেশী আগ্রহান্বীত হইত। এরপর যেটা ঘটল তা হল এই যে, সেখানে ধীরে ধীরে, অথচ শান্তিপূর্ণ ভাবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে উঠল।
তখন গ্রামবাসীরা গর্বের সহিত স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে নিজ হাতে তৈরী ব্যানার “মৌলবাদ মুক্ত গ্রাম” বা ‘জঙ্গীবাদ মুক্ত গ্রাম” গ্রামে খাড়া করিল।“
(উপরে ইমামগঞ্জ গ্রামের এই ব্যানারটি তারই একটি চিত্র)
MFT মনে করেন, জনগনের মধ্যে “শারীয়া আইন” এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সজাগ করানো অত্যন্ত পরিশ্রম সাধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কাজ হলেও ফলাফলটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
হাসান মাহমুদ আরো বলেন, ‘আন্দোলনটি জাতীয় মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।কিছু কিছু ইমামেরা ও তরুন মৌলবাদীরা প্রথম দিকে আন্দোলনটির বিরোধীতা করলেও বর্তমানে তারা এই কাজে যোগদান করে এর পক্ষে কাজ করতেছে, যা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল। এবং এটা আমাদের কেবল মাত্র আরম্ভ।“
(পত্রিকার অনুবাদ সমাপ্ত)।
সূত্র ও লিংক- Click This Link
এবার শারীয়া সম্পর্কে আপনাদেরও তো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন আছে।
শারীয়ার আইনে আইনে বিরোধ
শারিয়া আল্লাহর আইন হলে আইন একটাই হতো, চার-পাঁচ রকম হতো না। বিভিন্ন
শারিয়ার মধ্যে পার্থক্য, বিরোধ বা উল্টো আইনও থাকত না। কিন্তু শারিয়ার
আইনগুলোতে শত শত মারাত্মক স্ববিরোধীতা আছে। এই পরস্পর-বিরোধীতা মাঝে
মাঝেই করুণ ও হাস্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে।
খুনের অপরাধে মির্জা তাহিরকে পাকিস্তানের শারিয়া কোর্ট (১) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ১৯৮৯ সালে, (২) সেটা বদলে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড দিয়েছে ১৯৯৪ সালে, (৩) সেটা বদলে নিরপরাধ হিসেবে ছেড়ে দিয়েছে ১৯৯৬
সালে, (৪) আবার ওই একই অপরাধে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার করে দ্বিতীয়বার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে
১৯৯৮ সালে, (৫) তার প্রাণভিক্ষার আবেদন বাতিল করেছে ২০০৩ সালে, এবং (৬)
অবশেষে তাকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিয়েছে ২০০৬ সালে। বেচারা মির্জা তাহির শারিয়ার এই
জগাখিচুড়ির শিকার হয়েছে ১৭ বছর জেলখানায় বন্দী থেকে (খবর বি-বি-সি’র)।
ইমাম শাফি’র বিখ্যাত কেতাব ‘রিসালা’-তে আছে ঃ “ইমাম শাফি ইমাম মালিকের
মতামতের সাথে অপ্রত্যাশিতভাবে ভিন্নমত পোষণ করিতেন” (পৃঃ ১৩)। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি ঃ
১। অমুসলিমদের কাছে কোরাণ বিক্রী নিষিদ্ধ (শাফি’ই আইন নং শ.১.২.ব)।
এ-আইন লঙ্ঘন করে সুরা ওয়াক্বেয়া, আয়াত ৭৯ − “পাক-পবিত্র ছাড়া আর কেউ একে
স্পর্শ করবে না।” এতে মুসলিম-অমুসলিম কিছু বলা হয়নি কারণ কোরাণ তো এসেছেই
অমুসলিমদেরকে মুসলিম বানানোর জন্য। ও-আইন প্রয়োগ হলে ভাই গিরিশচন্দ্র
কোরাণের প্রথম বাংলা অনুবাদ করতে পারতেন না, নবীজীর প্রশংসা করতে
পারতেন না ডঃ রাধাকৃষ্ণ, গান্ধিজী, গুরু নানক থেকে শুরু করে ডঃ মরিস বুকাইলি,
ডঃ কেনেথ মূর, বার্ট্রাণ্ড রাসেল, মাইকেল হার্ট্জ প্রমুখ অসংখ্য পশ্চিমা দার্শনিক
বিশেষজ্ঞগণ।
হানাফি আইনে অমুসলিমদের কাছে কোরাণ বিক্রী বৈধ।
২। যদি দৈহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চারজন বয়স্ক মুসলমানের চাক্ষুষ প্রমাণ না থাকে তাহলে
সন্তান ধারণ করলে মালিকি আইনে কুমারীকে চাবুক ও বিধবাকে পরকীয়ার অপরাধে
প্রস্ত রাঘাতে মৃত্যুদণ্ড হয়। কিন্তু হানাফি আইনে তারা বেকসুর খালাস পায় − (বি-ই-আ ১ম
খণ্ড, পৃঃ ২৯৯ এবং পেনাল ল’ অব্ ইসলাম পৃঃ ৭১)। আল"ার আইনে এমন হয় না।
৩। অবিবাহিতদের পরকীয়ার জন্য চাবুকের শাস্তি। সেই পরকীয়াতে কন্যা জন্মালে
তাকে সেই পিতা হানাফি আইনে বিয়ে করতে পারবে না কিন্তু শাফি’ আইনে পারবে
(প্রিন্সিপল্স্ অব্ ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্স − ডঃ হাশিম কামালি, পৃঃ ২৯।
৪। বিবাহিতা নারী পরকীয়া করলে হানাফি আইনে আজীবন কারাবাস, কিন্তু
হাম্বলি, শাফি’ ও মালিকি আইনে মৃত্যুদণ্ড।
৫। হানাফি আইনে নারী-মুরতাদের আজীবন কারাবাস কিন্তু হাম্বলি, শাফি’ ও
মালিকি আইনে মৃত্যুদণ্ড।
৬। সাক্ষী থাকুক বা না থাকুক গোপন বিবাহ মালিকি শারিয়ায় অবৈধ, কিন্তু সাক্ষী
থাকলে অন্য মজহাবে বৈধ। সূত্র ঃ বিশ-¦ শারিয়াদলের বর্তমান প্রধান নেতা ডঃ ইউসুফ
কারজাভি − − Click This Link
(Inquiry and Analyses Series –No. 291)
৭। কোনো অবিবাহিত বা অবিবাহিতা পরকীয়ার শাস্তির পর তওবা করলে অন্যান্য
মামলায় শাফি’ আইনে তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে, কিন্তু হানাফি আইনে নেয়া যাবে না”
(“মুসলিম জুরি¯প্র“ডেন্স অ্যাণ্ড কুরাণিক ল’ অফ (াইম্স্” পৃঃ ১৪৬)।
৮। কেউ অন্যায় অপবাদ দিয়ে শাস্তি পাবার পর তওবার পরে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য
(শাফি’-মালিকি-হাম্বলি আইন)। কিন্তু হানাফি আইনে নয় −(বি-ই-আ ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৮২৫)।
৯। বোবার সাক্ষ্য স্পষ্ট হলেও হানাফি, শাফি’ ও হাম্বলি আইনে গ্রহণযোগ্য নয়,
তবে মালিকি আইনে গ্রহণযোগ্য − (বিধিবদ্ধ ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৩)।
১০।হানাফি আইনের সাথে অন্যান্য আইনের বহু বিরোধের অন্যতম কারণ হলো ঃ
“হানাফি মতে মুহসান হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া অন্যতম শর্ত, কিন্তু অন্যান্য
আইনে তা নয়” (বিধিবদ্ধ ৩য় খণ্ড পৃঃ ৩৭০)।
১১।রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি বাকি সব আইনে মৃত্যুদণ্ড কিন্তু হানাফি আইনে আজীবন
কারাগার − ডঃ হাশিম কামালি, পৃঃ ৩০।
১২।ইমাম আবু হানিফা প্রস্তাব করেছিলেন মানুষ মাতৃভাষায় নামাজ পড়–ক। পরে
শারিয়াপন্থীদের চাপে তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন −ডঃ হাশিম কামালি, পৃঃ ১৯।
১৩।কোনো অমুসলিমকে খুনের অপরাধে কোন মুসলিমের প্রাণদণ্ড হবে না −
(Web address- Click This Link )
বই ও ভিডিও এর লেখক ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য, দ্বীন রিসার্চ সেন্টার হল্যাণ্ড-এর রিসার্চ এসোসিয়েট, মুসলিমস ফেসিং টুমরো‘র জেনারেল সেক্রেটারী, ফ্রিমুসলিমস কোয়ালিশন-এর ক্যানাডা প্রতিনিধি, আমেরিকান ইসলামিক লিডার শীপ কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং খুলনা‘র “সম্মিলিত নারীশক্তি”র উপদেষ্টা। শারিয়ার ওপরেবই “শারিয়াকি বলে, আমরা কি করি” ওআন্তর্জাতিক প্রশংসিত ডকু-মুভি “হিল্লা“, “নারী” ও “শারিয়া প্রহেলিকা” – লণ্ডনও টরন্টো‘র স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা ক্লাসে দেখানো হয়।
লেখকের নিজস্ব সাইটঃ http://www.hasanmahmud.com/2012
হাসান মাহমুদের বই “ শরীয়া কী বলে আমরা কী করি”http://www.hasanmahmud.com/2012/index.php/books/53-sharia-ki-bole-amra-ki-kori
হাসান মাহমুদের বই ডিভিডি DIVINE STONE-
Click This Link
সূত্র-
“শারীয়া কী বলে আমরা কী করি” পৃষ্ঠা-৫৭
হাসান মাহমুদ
লিংক- http://www.hasanmahmud.com/2012/files/Books/ShariaKiBoleBook.pdf