somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সান্নিধ্যে অনন্ত বিরহে'র কবিতা

১১ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সান্নিধ্যে অনন্ত বিরহ

আমি এখনো ঠিক বুঝতে পারিনে
তুমি কোনদিন আমাকে দেখেছ কিনা,
কোন কোন দিন যখন ভীষণ উল্লাসে
সমস্ত আধুনিকতার পশ্চাতে
মাটির বুকে প্রাচীণ গুপ্তধনের গন্ধ খুঁজে ফিরি
নিঃশ্বাসের বায়ুরা যেন বিদ্রোহী হয়ে
শুধুই আধুনিকতার ছোঁয়াচ ঢালে :
কী এমন অঢেল পরিবর্তন যে
চোখের সম্মুখে অথচ কথা বলে না উঠলে
তুমি কখনোই দেখতে পেলে না আমায় !
জানি এসব কিছুই তুমি জানবে না কখনো
উপরে অনেক পলির অকৃপণ ভালোবাসায়
আমার সাধের জীবন পড়েছে চাপা ;
স্রোতের টানে শুধু বয়েই চলেছি
এদিকে পলির পলেস্তারায় নব্যতা হ্রাস পাচ্ছে
তা কখনো ভেবে দেখিনি। সময়ের ফেরে যখন
তোমার সামনে দাঁড়াতে চাইলাম তখন বুঝলাম
পরিজনের প্রীতির পরশ প্রেমে পৌঁছাতে গেলে
হয়তোবা অবশিষ্টটাও নষ্ট হয়।

কিন্তু আজ তোমাকে লিখতে বসেছি
এই কলরব মুখর দিনে মনের ভাবনারা
মেঘের মতো উড়ে যায় দুচোখের সীমানায়।

আজ সারা দিন বর্ষারা একদল নৃত্য পাগল ময়ূরীর মতো
আমার টিনের চালাটা মাতিয়ে রেখেছে
বর্ষার এরকম আমেজ কতদিন যে উপভোগ করি না !
কৃত্রিম ভালোবাসার সুবাস যখন ফুরিয়ে যায়
প্রকৃতি তখন উদার হস্তে ঢেলে দেয় তার অকৃত্রিম ভলোবাসা।
জানোই তো
মানুষ ভালোবাসার কাঙ্গাল
আমি হয়তবা একটু বেশি।
লোভ সংবরণ করতে না পেরে দুবাহু ছড়িয়ে দিয়ে
দাঁড়িয়ে গেলাম নির্জন প্রান্তরে
অসংখ্য বৃষ্টিবিন্দু আমাকে কতবার যে ভালোবাসলো
তার কোন হিসেব নেই।
তোমাকে নিয়ে এরকম বৃষ্টিতে একদিন ভিজতে চেয়েছিলাম ;
অনেকদিন আগে ভয় পেয়ে আমার গলাটা
যেভাবে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলে, তেমনি করে
জড়িয়ে ধরে বুকে কান পেতে শুনে নেবে সেই কথা
যা কিনা কোন প্রাচীণ সভ্যতার সাক্ষ্য দেয়।
বর্ষায় তোমার সমস্ত অঙ্গে লেপ্টে থাকবে ভেজা শাড়ি
আকাশের ঘন মেঘের বর্ষারা ভালোবাসবে আমায়
ভালোবাসবে তোমায়।
কিন্তু জীবন কী আশ্চর্য দেখ
এসব শুধু কল্পনাই হয়ে রইল,
তুমি কখনো জানলেও না
বর্ষার দিনে কেউ একজন তোমাকে নিয়ে
শুনশান কোন মাঠে বর্ষায় ভিজতে থাকে ;
সে তখন কাঁদে কিনা তুমি তা জানতেও পার না
কেননা চোখের পানির আলাদা কোন রং নেই।

গত একটি বছর কী তুমুল আড্ডাবাজের মতো
সময়টা পার করলাম, এমন কোন বর্ষার দিন ছিল না
যখন আমাদের বন্ধু মহলে সময়কে তুড়ি মেরে
উড়িয়ে দিতে কিছুমাত্র সংকুচিত হতাম;
এমন এক বর্ষার দিনে তুমি স্কার্ফ মোড়া জীবনের
অবগুন্ঠন হতে আমার সম্মুখে বেরিয়ে এলে,
মোহন চৈতন্যে লাগলো অস্থির দোলা...
সেদিন কি একটুখানি লজ্জা পেয়েছি আমি ?
কেন এরকম হলো তুমি তার কিছু কি বুঝেছ ?
জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়ে পা দিয়েও বুঝতে পারি না
আর মুখস্ত নয়, চিৎ সাঁতারে এখন শুধু ভেসে যাওয়া,
ভাসতে ভাসতে স্বপ্নের রাজহংস হয়ে
সমস্ত মালিকানায় দখল নেওয়া।
শুনেছি শাড়িতে তোমাকে বেশ লাগে
চন্দন বরণ অঙ্গের উপর রেশমি শাড়ির দোল দেখে
অনিয়ম এসে মুহূর্তে আচ্ছন্ন করে স্বর্গ মর্ত সকল রাজ্য
দ্বিধায় মুড়ে থাকে মেঘ বিস্তার,
উজ্জ্বল দিন এসে লুটিয়ে পড়ে ধরণীর কোলে
সূর্যালোক উল্লাসে মাতে অথৈ দিনের।
তোমার এত কাছের মানুষ ছিলাম অথচ দেখ
সেই অবাক সূর্যালোকের উল্লাস
আমি কখনোই উপভোগ করিনি।
ভয় ছিল যদি মৃত্যুর পদধ্বণিকে আড়াল করে
আবার বেঁচে উঠতে মন চায়।

মাঝে মাঝে হঠাৎ যেয়ে উপস্থিত হতাম তোমার ওখানে
অস্থির নয়নে কেন এতদিন আসিনি সেই প্রশ্নে অভিমানীর
মতো তাকাতে, আমি অস্পুটে মন্ত্রবানী অন্তরে যপি
‘তোমার এইটুকু স্নেহের লোভেই হয়তো আসিনি।’
অতঃপর আপ্পায়নের লজ্জা ভুলে অনেক কথার হামাগুড়ি
চির পরিচিত অচেনা দুজন নীরব সময় মুখোমুখি।
এক সময় বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলে বেরিয়ে পড়ি,
তুমি ব্যালকনির গ্রিল ধরে
আমি পিছু ফিরি
না, ‘কেউ নেই মনের কাছাকাছি।’

এখনো মাঝে মাঝে করিডোরে পায়ের শব্দ পাই
চৈতন্যের মহাসাগরে ঝড় ওঠে, উৎভ্রান্ত দৃষ্টিতে
করিডোরে এসে দেখি সব শুনশান, তিনটি টব
আর সাদাকালো গোলাপের সন্তর্পন নিঃশ্বাস।
মনে পড়ে সেই কথা : যখন তুমি আসতে
শ্রাবণের সন্ধ্যার মতো মেঘদূত জমিয়ে আসতে
প্রতিদিন ঘরে বসে শুনতে পাই তোমার পদধ্বণি
মেঘমোড়া ওড়নার বাতাস এসে লাগত
আমার অনুর্ভূতির উল্লোসিত পালে
জয়োধ্বণিরা পিঠ চাপড়ে কথা বলে উঠত।
কিন্তু আজ নিশ্বাসের সরলরেখা শুধুই দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে
অনুভূতির নিঃস্ব প্রার্থনায় শুধু পিছু ফিরে চাওয়া :
তোমার এত কাছে ছিলাম বলেই হয়তবা
কোনদিন দেখলে না - আমি থাকতে পারি।

নষ্ট জীবনের অবশিষ্টাংশ বায়ুহীন সমুদ্রে
যাত্রাহীনতায় ভুগতে ভুগতে চলে যাবে
পাকস্থলির কানায় কানায় বিষাক্ত রোদের
খরতাপে পরিপূর্ণ , এখন আর চাই না
কৈশোরের ছোট্ট নদীর বহতা জীবন
বাঁকে বাঁকে আর নেই স্বপ্নের রাজহংসের
অবাধ বিচরণ। যা আমার নয় তাকে আর
তুফানের মতো ডাক দিতে চাই না ,পালহীন
নৌকা নিয়ে শুধুই স্রোতের অনুকূলে ভেসে যাওয়া।


[১৯৯৭ সাল, জুন জুলাই মাস। বাংলা ঋতু বৈচিত্রে বর্ষাকাল। । এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে ফল প্রত্যাশায় বসে আছি। কাব্য চর্চার জন্য মোক্ষম সময়। তার উপর বাড়ির পাশে আরশি নগরের হাতছানি তো আছেই। একদিন ঝুম বৃষ্টি নামে। আমি হরিহরের তীরে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজি, আর আরশি নগর খুুঁজে ফিরি। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পেয়ে যাই সান্নিধ্যে অনন্ত বিরহে’র প্রথম লাইন ‘ আমি এখনো ঠিক বুঝতে পারিনে তুমি কোন দিন আমাকে দেখেছ কিনা ’ বাড়ি ফিরে অমিতের মতো আমিও আমার নোট খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করি প্রথম যৌবনের প্রথম অনুভূতির কথা। ‘সান্নিধ্যে অনন্ত বিরহ ’ লেখার অনেক দিন পরে এসে আমার মনে হয়েছিল কবিতাটিতে হয়তো আবেগের তরলতা সরল ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এই ভেবে নিজেকে প্রবোধ দিই সতের বছর বয়েসী একটি কিশোরের প্রথম আবেগ তো কিছুটা তরল হবেই, একই সাথে প্রকাশে সরল। ]
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×