somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

.........জীবন তুমি সাক্ষী

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন এই লেখাটা লিখতে শুরু করি তখন আমার সামনে বিস্তর পড়ালেখা পড়ে আছে । সামনে পরীক্ষা ।আমার উচিত কোমর বেঁধে পড়ালেখা করা । আমি বোধ হয় তাই করছিলাম । কি যেন হলো আমার পড়ালেখা সব চুলোয় গেল । এই 'কি যেন হলো'র কথা কিছুক্ষন পরে বলি । আগে বলি এই গল্পটা লেখার চিন্তা কিভাবে এলো ।


কাল রাতে শুয়ে ছিলাম । ঘুম আসছিল না । এটা ওটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে একসময় কিছুদিন আগে ঘটা এই ঘটনার কথা মাথায় চলে আসে । ভাবলাম এরকম একটা মন ভোলানো গপ্প তো লেখাই যায় । কিছু বাস্তবতার মিশেল থাকলো আর কিছু কল্পনা । হোক ! তারপরো এরকম একটা গল্প লিখলে ফৌজদারী আদালতে আমার নামে বিচার বসবে না নিশ্চয়ই ।


রাতের ভাবনা দিনে সিদ্ধ হচ্ছে । আচ্ছা আমি এরকম একটা গল্প কেন লিখছি ? মনকে সান্তনা দেওয়ার জন্য ? হয়তোবা !



আমি এতোদিন গল্প,কবিতা,উপন্যাস কিংবা নাটকেই এরকম চিত্র দেখতে পেয়েছি । আমার নিজের জীবনে যে এরকম একটা দুপুর আসবে আমি হয়তো কল্পনা করেছি ঠিকই কিন্তু কখনো বিশ্বাস করি নিই । সেই দুপুরে আমার আঠারোটি বসন্ত পেরিয়ে আসা মনের যে কি এক অবস্থা হয়েছিল আমি তা কি করে বোঝাই ?



না আমি বোঝাতে পারবো না । হয়তো বোঝাতে চাই-ই না । বোঝাতে
গেলে লোকে হয়তো একে গল্পের কোন কাহিনী ভেবে বসবে । আমি চাই না । বোঝাতেও চাই না । কিছুই করতে চাই না । আমি শুধু দ্রুত কিছু কথা লিখে ফেলতে চাই । লোকে বিশ্বাস করার হলে করবে,আমার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করবে,না হয় করবে না ।



দুপুর নাকি মৌন হয়,রুক্ষ হয়,উদাস হয় । নিজে উদাস হয়,অন্যকে উদাস করে । দুপুর নাকি নীরব হয় । আমার গল্পকে পরিপূর্ণ করার জন্যই বোধ অয় সেদিন দুপুরটাও নীরব ছিল । বাসার সামনের আজন্ম-ব্যস্ত রাস্তাটাও কেমন নীরব হয়ে থাকলো সেদিন দুপুরে । না সেদিন কোন ধান্দাবাজ কাকও ডেকে উঠে নিই ।



আমি আমার বারান্দায় এসে যখন দাড়ালাম দেখলাম পাশের বারান্দায় বেগুনি কামিজের এক মেয়ে আমার বারান্দার দিকে পিঠ দিয়ে ডান দিকে মাথা কাত করে হাতে পেন্সিল নাচাতে নাচতে কোলের উপর রাখা বই পড়ছে । শীতের দুপুর ছিল ।তার শুষ্ক চুলগুলোর দিকে আমি বেহায়ার মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম । অদ্ভূত ! সেদিন পাশের বিল্ডিংয়ের কাচ্চা বাচ্চাদেরও কোন শব্দ নেই । হয়তো তাদের শিশু মনেরও চাওয়া ছিল 'কাহিনী তুমি এগিয়ে যাও ।'



আমি মেয়ের বর্ণনা দিতে ভুল করেছি । স্মৃতির দোষ দিয়ে লাভ নেই । আমি যখনই কারোর বর্ণনা দিতে যাই হয় ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি না অথবা লোকে মজা পায় না । না পাক ! আমি লোককে মজা দিতে এই গল্প লিখছি না । আমি নিজেকে শান্তনা দিতে গল্পটা লিখছি ।


আমি কাহিনীতে ফিরে যাই । মেয়ের গায়ে তখন শাল । আমি এতটুকু লিখে একটু দম নিলাম । এবার কল্পনাতে ডুব দেওয়ার সময় এসেছে......



আমি এতোদিন টিভি বা গল্পেই দেখছি এরকমভাবে কোন মেয়েকে বই পড়তে । নিজের চোখের সামনে একটা পনের-ষোল বছরের মেয়েকে এভাবে দেখে কিছুক্ষন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকলাম । আর আমার পড়ালেখা সেখানেই চুলোয় গেল । আমি শুধু এক মুহূর্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম ।



বলা হয়ে থাকে মানুষ নাকি তার মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে । আমার মন আমাকে কোন জাদুমন্ত্র পড়ে শোনালো কে জানে ! আমি কিছুক্ষন পর নিজেকে তাদের বাসার সামনে খুজে পেলাম । আমি প্রেমের গল্পের লেখক হলে বলতাম তার প্রতি অকৃত্তিম কোন টানই আমাকে এভাবে টেনে এনেছে । আমি লেখক নই । প্রেমের গল্পের তো নয়ই । আমি সজ্ঞানেই তাদের বাসার বেল বাজাই । দরজা খুলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।




কি বলবো আমি ? এতোক্ষন পড়ার নামে বিড়বিড় করে তার বলা সব কথা যে আমি আড়াল থেকে শুনেছি এসবই বলে দিব ? নাকি পড়ালেখা খোঁজ নিব?



নাহ ! আমি কিছুই বললাম না । হাত নাড়িয়ে শুধু বুঝালাম পরে আসবো । আমি ক্যাবলার মতোন পেছনে হাটা শুরু করলাম । মেয়ে দরজা থেকে বিস্ময় মাখা মুখে আমার হেঁটে যাওয়া দেখছে ।
অসম্পূর্ণ গল্পের অসম্পূর্ণ সমাপ্তি ।



নাহ ! এভাবে লেখাটা ঠিক হয় নিই । গল্পের বালক-বালিকা অল্প বয়সী । তাদের বয়স কম,আবেগ বেশি । তাদের আবেগকে এভাবে লুকানোর চেষ্টটা ব্যর্থ হচ্ছে বারবার । আবার নতুন করে শুরু করি.........




সেদিন বিকেলে বারান্দায় দাড়ানোর পর সে হয়তো আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরেছিল । আমি তখন আড়ালেও যাই নিই । সেও বিড়বিড় করে কিছু বলে নিই । সে শুধু পিছনে ফিরে একবার তাকালো । আবার বইয়ের মধ্যে ডুবে গেল ।




আচ্ছা সেদিন সে কি বই পড়ছিল ? পাঠ্যবই ?
পাঠ্যবই হলে তো বইয়ের দিকে মুখ ঘুরিয়ে,'ভালোবাসি তোমায়' বলা সম্ভব ছিল না । পাঠ্যবইয়ে কি এসব অল্প বয়সী প্রেমের কথা লেখা থাকে নাকি ? নাকি আমাকেই বলেছিল ?



তার 'ভালোবাসি তোমায়' শুনে আমার বয়স্ক মনের কোন এক কর্নার থেকে বেয়াদব কোন আবেগ আমাকে বলতে বাধ্য করেছিল ''আমিও'' । আচ্ছা এরপর কি সে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়েছিল ? তার চোখ কি ভেজা ছিল ? নাকি এসবই কাহিনী পরবর্তী আমার কল্পনা ? কি জানি !



আমাকে ভালোবাসার তো কোন কারণই নেই । তাদের তিন ভাইবোনের কাছেই আমি সমান জনপ্রিয় বড়ভাই । ঘরোয়া আড্ডায় হয়তো কখনো তার সাথে আমার গায়ে ধাক্কা লেগেই ছিল । কিন্তু আমি তো আমার মনকে বারবার ধমক দিয়ে বলেছি আমি তার বড়ভাই ছাড়া আর কিছুই না । নাকি আমার পাথর চাপা মনের কোনখানে তার জন্য ভালোবাসা জমা ছিল ? নাহলে তার হাতের স্পর্শ আমার মনে ভালোলাগার উদ্রেক কেন করবে?



যাই হোক ! তার ছলছল চোখ দেখে কি আমি ইতস্তত বোধ করছিলাম ? হয়তোবা !



আমি কখনোই সপ্রতিভ ছিলাম না । ভীড়ের আড়ালে থাকতাম । সবার সামনে সাহস করে দু একটা কথা বললেও অস্পষ্টতার কারনে বোঝা যেত না । সেই আমি তার সিক্ত চোখের সামনে ধীর স্থির অটল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবো-এমনটা হতেই পারে না ।




সে হয়তো তখন আস্তে করে বলেছিল, '' কবে থেকে ?'' আমি তখন কিছুই ''শুনি'' নিই। কিছুই বলি নিই ।




নাহ ! কাহিনীকে আর এভাবে আগাতে দেওয়া যায় না । কারণ আমি প্রেমের গল্পের লেখক নই । আমি বাস্তবতার কাঙ্গাল । এবার বাস্তবতায় ফেরা যাক............



আমি দরজা খুলে তাকে দেখার পর আড়ালে চলে গেলাম । ছিচকে চোরের মতোন দেয়ালের আড়ালে নয় । লোকচক্ষুর আড়ালে । আবার মনের কোন এক অশ্লীল আবেগ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করছিল । আমি আগে শুধু গল্প উপন্যাস বা নাটকেই এরকম দেখেছি । বাস্তবে দেখবো ভাবি নিই । আর আজ যখন দেখার সুযোগ পেলাম বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থাকতে খুব ইচ্ছে করছিল ।



সে যখন ফিরে তাকালো তখন দেখলো পাশের বাসার আঠারো বছরের 'ভাইয়াটা' তার দিকে চোখ ডুবিয়ে তাকিয়ে আছে । বেয়াদব ! নিশ্চয়ই বেয়াদব ! হোক একসময় খুব ঘনিষ্ঠ ছিল । এখন তো দুজনই বড় হয়েছে ।




বই খাতা গুছিয়ে যখন উঠে যাচ্ছিল তখন একটাবার পিছনে তাকিয়ে বলেছিল, ''আগে তো ভালোই ভেবেছিলাম ।''




আমি তখন শুন্য হাতে দাঁড়িয়ে আছি । আমার অসম্পূর্ণ গল্পের অসম্পূর্ণ সমাপ্তি ।



ভাবছি এরপর যখন আবার দেখা হবে তখন কি তার চোখে আগের মতোন শ্রদ্ধা থাকবে নাকি নতুন অভিশাপের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থাকবে ? আবার যখন দেখা হবে আমি জানি তখন ওর চোখে শুধু ঘৃনার আগুন লেগে থাকবে ।




আমি ঘৃনা বা শ্রদ্ধা কোনটারই যোগ্য না । আমি মধ্যম শ্রেনীর মানুষ । খারাপ না,তাই বলে ভালোও না । একাকী বাসায় আমারো কুচিন্তা মাথায় আসে । কুকর্ম করার সময় সৃষ্টিকর্তার ভয়ও আসে । আত্মদ্বন্দ্ব আর অন্তদ্বন্দ্বের বেত্রাঘাতে জর্জরিত এক 'কিশোর' আমি । বড় কঠিন এই সময়.........জীবন তুমি সাক্ষী ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×