
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার দোকানে থামতো না, আমি দোকানে যেতাম। আব্বা আমাকে পাঁচ টাকা দিতো, তার থেকে ২ টাকা আপাকে দিতাম ৩ টাকা আমি নিতাম। এটা নিয়ে কত যে ঝগড়া হয়েছে। আপা বলতো তুই সব সময় ৩ টাকা নিস আমাকে ২ টাকা দিস কেনো! আম্মাও আব্বাকে বলতো আপনি কোন হিসাবে ওদের ৫ টাকা দেন, হয় ৪ টাকা দিবেন, না হয় ৬ টাকা দিবেন। এটা নিয়ে প্রতিদিন ওরা ঝগড়া করে। এরপর অবশ্য হাইস্কুলে উঠার পর ১০ টাকা দিতো, তাতে ভাগ করতে সমস্যা হতো না।
হাইস্কুলে উঠার পর হাত খরচের চাহিদা একটু বেড়ে গিয়েছিল কিন্তু কখনোই আব্বার কাছে বলে দশ টাকার বেশি পেতাম না। আবার এই দিকে আমাদের বড় এক সুপারি বাগান ছিল। আমি সুপারি গাছে উঠতে পারতাম না তাই সুপারি চুরি করেও বিক্রি করতে পারতাম না। অগত্যা ঘরে যে সুপারি গুলি থাকতো সেখান থেকে কিছু চুরি করে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম। এরকমই একদিন চুরি করে বিক্রি করতে গিয়ে আম্মার কাছে ধরা পড়েছি। আম্মা কিছুই বললেন না, শুধু বললো চুরি যখন করবি নিজের গাছের থেকে পেড়ে চুরি কর। চোর সব সুপারি চুরি করে নিয়ে যায়। তুই নিলেও তো বলতে পারতাম ঘরের মানুষই নিয়েছে, মনেরে বুঝ দিতাম।
এরপর মনে মনে চিন্তা করলাম সুপারি গাছে উঠা শিখতে হবে, তাহলে আর হাত খরচের চিন্তা থাকবে না। বাগানে গিয়ে বেশ কয়েকবার ট্রায়াল দিয়েছি কিন্তু পারছি না। কোনমতে উপরে উঠলেও সুপারির ফানা টেনে ছিঁড়তে পারছিনা, আবার কেটেও নামাতে পারছি না।
তেমনি একদিন বিকেল বেলা সুপারি বাগানে গিয়েছি ভাবলাম দেখি গাছে উঠে সুপারি পাড়তে পারি কিনা। বাগানের যখন ঢুকেছি একটু ভিতরে গিয়ে দেখতে পেলাম আমাদের বাড়ির আমার এক চাচা বাগানের ভিতর ঘুরঘুর করছে। আমি বুঝতে পারছি চাচা আমাদের সুপারি চুরি করতে এসেছে। আমি আস্তে লুকিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম চাচা এদিক ওদিক তাকিয়ে লম্বা একটি সুপারি গাছে চোখের পলকে উঠে পড়লো। গাছের উপরে উঠে সুপারির ফানা টেনে ছিড়ে নিজের পায়ের হাটুর উপরে রেখেছে। চাচা যখনই নামতে যাবে তখনই আমি উপর দিকে না তাকিয়ে জোরে জোরে ওই গাছের নিচে গিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু আমি উপরের দিকে তাকাচ্ছি না। এদিক ওদিক কিছু খোঁজার ভান করলাম। চাচা উপর থেকে ভাবল আমি তাকে দেখিনি হয়তো উপরে না তাকালে উনি বেঁচে যাবেন। তাই তিনি উপরেই বসে রইলেন। এদিকে আমার মনে অন্য চিন্তা, আমি দেখতে চাইলাম চাচা কতক্ষণ সুপারি গাছে সুপারি নিয়ে বসে থাকতে পারে। যেহেতু সুপারি গাছের কোন ঢাল নেই সেহেতু আমি নিশ্চিত ছিলাম বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না। এরপরও চাচা প্রায় ২০ মিনিটের মত উপরে বসে ছিল। পরবর্তীতে হয়তো আর টিকতে না পেরে আস্তে করে সুপারি গাছের নিচে নামলো। আমিও এবার ঘাপটি মেরে সুপারির ফানা ধরলাম। আর বললাম আপনি আমাদের গাছের সুপারি পাড়লেন কেনো? চাচা সুপারি ফানা আমার হাতে দিয়ে বললো যা তোর আম্মাকে দিয়ে দিস। সুপারি গুলি পেকে গিয়েছে আমি ভাবলাম গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে তোদের ঘরে দিয়ে আসবো। এই বলে চাচা চলে গেলো।
বিনা পরিশ্রমে এতগুলি সুপারি পেয়ে আমি আর বাড়িতে যায়নি, সুপারি গুলিকে বাগানে সুন্দর করে ছিঁড়ে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। তখনকার সময়ে প্রায় ১৮০ টাকা পেয়েছিলাম। মোটামুটি সপ্তাহখানেক খুব ভালোই কেটেছিল।
স্মৃতি থেকে যা আজও ভাবায় আমায়(৯)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



