somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই লেখাটি লিখেছিলাম ভারতকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ হারালো.. অজ্ঞাত কারনে লেখাটি প্রকাশিত হয়নি

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আব্দুন নূর তুষার

আমার দেখা এ পর্যন্ত খেলাগুলির মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতের খেলাটিকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে। কেন সেটি এক এক করে বলি।

১. প্রথমে বলি যে আমি একসময় ক্রিকেট খেলতাম। আমার ছোটভাইও খেলতো এবং সে আমার চাইতে ভালো খেলত কিন্তু খেলার মাঠে মাথা গরম করে আউট হয়ে যেত। বল করত চমৎকার। এখন সে কানাডায়। শেষ খেলেছি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পিকনিকে। টেনিস বলের ক্রিকেট এবং ভালোই খেলেছি।
২. বাংলাদেশের প্রথম খেলার আগে সেটম্যাক্সে মন্দিরা বেদীর ঈষৎ নগ্ন কাঁধ প্রদর্শন করে প্রতিদিন হাজির হওয়াটা যতটা আমোদের, তার চাইতে তার বাক্যবর্ষণ বেশী আমোদিত করে আমাকে। তিনি এবং চারুশর্মা পরিহাস করে বললেন ভারত ব্যাটিং প্র্যাকটিস করবে এবং লোয়ার অর্ডারে যারা খেলবে তারা আজ চাইলে শপিং করতে পারে কারন আজ তাদের মাঠে নামতে হবে না।
৩. আরো বললেন বাংলাদেশ রান তাড়া করে জেতে না। যেহেতু ভারত আগে ব্যাট করছে তাই ম্যাচটা আগে আগে শেষ হবে কারন রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ আগেই আউট হয়ে যাবে।
৪. মন্দিরার কথা শুনে মন খারাপ করে খেলা দেখতে বসে প্রথম বল থেকে মন ভালো করে দিলেন মাশরাফি। তার বলের মুভমেন্ট এবং পেস ছিল অসাধারন। শিশু মনে হচ্ছিল উথাপ্পা আর শেহওয়াগকে। শেহওয়াগের উইকেট উপড়ে ফেলার পর বুঝলাম সেদিন অন্য এক বাংলাদেশ খেলছে।
৫. আগের দিন মারা গেছেন মানজারুল ও সেতু। বিটিভিতে ক্রিকেট ক্রিকেট নামে যে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও নির্মান করি আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান গতি মিডিয়া, সেখানে অমরা সবাই কালো ব্যাজ ধারন করেছি ঐদিন। মনে হলো মানজারুল মনে হয় মাঠে বসে খেলা দেখছে।
৬. সৌরভ এক পাশে আকড়ে ধরে থাকলেও এক এক করে চলে গেল শচীন, যুবরাজ, দ্রাবিড় আর ধোনী। ভালোই লাগছিল খেলার ফাকে ফাকে ভারতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন। আমাদের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পর্যন্ত হাইজ্যাক করেছে ওরা পেপসির বিজ্ঞাপনে। হাসছিলাম বিড়ালের বাঘ হবার তীব্র বাসনা দেখে।
৭. শেষ পর্যন্ত ভারত ১৯১রানে অলআউট। ৫০ ওভার খেলতেও পারেনি। মন্দিরার মুখটা দেখে মনে হলো বীরত্ত্ব দেখাতে চলে যাই সেটম্যাক্সে। বলি “ওহে দ্বিতীয় সারির নায়িকা, ভারতীয় দল যদি তোমার কাঁধে ভরদিয়েও খেলত, তাহলেও বোধহয় এর চেয়ে ভালো খেলত।”
৮. এরপরও এই মেয়েটির তেজ কমে না। বলে বাংলাদেশের জন্য ১৯১ অনেক বড় টার্গেট। খেলার শেষ হাসি হাসবে ভারত। আবার বলে বাংলাদেশ এর ওয়ার্ল্ড কাপ এর রেকর্ড শোচনীয়। গতবার কানাডার সাথে হেরেছে এর চেয়ে কম টার্গেটে।
৯. আহারে কি খেলল তামিম। সাকিব আল হাসান। আহা মুশফিক। আমার মুখে ফিক করে হাসি আর চারূ শর্মার মুখে চুন। আর প্রিয় মন্দিরার হাসি নেই, কেঁদেকেটে চোখ মুছে উপস্থাপনা করতে বসেছে।
১০. এই খেলাটি সেরা খেলা কারন এখানে পুরো বিশ্বকাপের পরিকল্পনা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বদলে গেছে বুকিদের বাজীর দর। বদলে গেছে ভারতের শ খানেক টিভি চ্যানেলের রেটিং। বদলে গেছে পেপসি, কোক, ভিসা, সানফিস্ট সহ সব পণ্যের বিজ্ঞাপনের ধারা। শাহরুখ এর পাঞ্জা লড়া হাত দেখে বিরক্ত হতে হচ্ছে না আমাদের। প্রতি ঘরে শচিনের মতো বিরক্তিকর শব্দ শুনতে হচ্ছে না আর। এবার আমরা বানাবো বিজ্ঞাপন, প্রতি ঘরে মাশরাফি। আমাদের রিয়াজ কিংবা ফেরদৌস পাঞ্জা লড়বে আর আমাদের বাঘ নিয়ে তামাশা করবে না পেপসি।
১১. এটি সেরা খেলা কারন আমাদের দেশ নিয়ে অপমানজনক কথা বলার আগে দশবার ভাবতে হবে মন্দিরা বেদীর মতো স্কন্ধসর্বস্ব উপস্থাপিকাকে। ডিন জোনসের মতো মধ্যম মানের খেলোযাড়রা আর বিরক্তি প্রকাশ করতে পারবেন না আমাদের ফিল্ডিং কিংবা বোলিং নিয়ে। যারা বলেছিলেন মাশরাফির সব উইকেট জিম্বাবুয়ে আর কেনিয়ার বিপক্ষে তাদের মুখে শেহওয়াগের উইকেটটা ঠেসে দিয়েছে সে।
১২. এটি সেরা খেলা কারন এই খেলা আমাদের জাতিকে এই মার্চ মাসে আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে বিজয়ের সেই অনাবিল আনন্দকে। যে বিজয়ের প্রত্যাশায় ১৯৭১ এ সংগ্রাম শুরূ করেছিলাম আমরা।
১৩. সবচেয়ে ভালো লেগেছে হেরে যাওয়া ভারতীয় দর্শক প্রমান করেছে কত অসভ্য আচরন হতে পারে একটি ক্রিকেট পরাশক্তির সমর্থকদের। নিজেদের বড় সভ্য মনে হয়েছে তাদের পাশে।
১৪. এবার বলি শেষ কথা। এটি সেরা খেলা কারন আমরা জিতেছ্।ি বাংলাদেেেশর সব খেরাই সেরা খেলা কারন আমরা যখন খেলি তখন আমাদের ১৫ কোটি মানুষের পতাকা উঁচু হয় এমন উচ্চতায় যেখানে আমাদের সব স্বপ্ন আকাশের রংধনু হয়ে যায়। আমরা বুঝি, আমরা পারি, পেরেছি, পারবো। আমরা জিতেছি, জিতবো, জিততেই থাকবো।
২৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×