কিছু তথা কথিত মমিন মঙ্গল শোভা যাত্রা কেন হারাম তার ঠিকুজি গত বিশ্লেষন করেছেন নিম্ম রুপ এবং যেহেতু এটা হিন্দু ধর্মের অনেক রিচুয়ালের সাথে মিলে যায় তাই এটা হারাম --
মঙ্গলশোভাযাত্রা জিনিসটা কি ?
(ক) মঙ্গল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। ১। কল্যাণ ২। সাপ্তাহিক দিবস নাম। ৩। সৌরজগতের একটি গ্রহের নাম। সাধারণত মঙ্গলের এ তিনটি অর্থই ব্যবহৃত হয়। তবে মঙ্গল শব্দটির শক্তিশালী একটি ধর্মীয় দিক রয়েছে। সনাতনী ধর্মাচারে মঙ্গল শব্দের বহু কীর্তি বিদ্যমান। এবার দেখা যাক, হিন্দু ধর্মাচারে মঙ্গল শব্দের ধর্মীয় রূপ-রেখা কি ?
১। মূর্তিপূজক সম্প্রদায়ের নিকট মঙ্গলদেবতা নামে একজন দেবতা রয়েছে। মঙ্গল হলো, যৌনতা, যুদ্ধ এবং শক্তির দেবতা।
২। হিন্দু ধর্মের মধ্যযুগীয় আখ্যান কবিতাকে মঙ্গলকাব্য নামে অভিহিত করা হয়। যে কাব্যে দেবতাদের আরাধনা হয়, মাহাত্ম্য ও গুণকীর্তন করা হয়, যে কাব্য শ্রবণে মঙ্গল হয় এবং যে কাব্য গৃহে রক্ষিত হলে মঙ্গল হয় তাকেই মঙ্গলকাব্য নামে অভিহিত করা হয়। মঙ্গলকাব্য আবার তিন শাখায় বিভক্ত। মনসামঙ্গল, চণ্ডিমঙ্গল ও অন্যদামঙ্গল।
৩। পূজোর সময় যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় মঙ্গলঘট।
৪। বিশেষ পূজার জন্য যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয় তাকে বলা হয় মঙ্গলপ্রদীপ।
৫। পূজার সময় মঙ্গলপ্রদীপ ঘুরিয়ে যে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো হয় তাকে বলা হয় মঙ্গল আরতি।
৬। হিন্দু ধর্মাচারে বিশেষ একটি পূজা রয়েছে যার নাম মঙ্গল পুজা।
৭। হিন্দু ধর্মে বিবাহের প্রথম আচারের নাম হলো মঙ্গলাচরণ।
৮। হিন্দু ধর্মে বিবাহকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে বর কণেকে চিড়ে ও দধি আহার করানো হয়, যাকে দধিমঙ্গল নামে অভিহিত করা হয়।
৯। হিন্দু ধর্ম মতে বিপদ হতে রক্ষাকামনায় প্রিয়জনের মণিবন্ধে যে সূত্র বেঁধে দেয়া হয় তাকে বলা হয় মঙ্গলসূত্র বা রাখি।
১০। সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে যে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় তাকে বলা হয় মঙ্গলশোভাযাত্রা।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এখন ঐ সমস্ত জিনিস যেহেতু হিন্দুদের রিচুয়ালে আছে সুতরাং ওটা পালন করা হারাম ---- এবার আমরা দেখি হিন্দুদের পুজার সাথে মুসলমানদের নামাজের কিছু মিল এবং ম্যাচিং
১) হিন্দুরা পুজার আগে আহবান করে এবং সেটা মুসলমানরা ও আহবান করে তাহলে কি এই আহবান জানান কি ঠিক ( নাউযুবিল্লাহ ) ------ উল্লেখ হিন্দুরা উলু ধবনি দিয়ে আহবান করে , মুসলমানরা আজান দিয়ে আহবান করে
২) হিন্দুরা পুজার আগে পানি দিয়ে হাত পা মুখমন্ডল ধুয়ে পবিত্র হয় ঠিক তেমনি মুসলমানরা পানি দিয়ে ওজু করে পবিত্র হয়
৩) হিন্দুরা তাদের ডিভাইন থেকে মন্ত্র পাঠ করে পুজা করে , মুসলমানরা তাদের ডিভাইন থেকে সূরা পাঠ করে নামাজ পরে ( এখানে ডিভাইন থেকে পাঠ করটা মিলে যাচ্ছে)
৪) হিন্দুরা পুজার সময় পদ্মাসনে এবং বজ্রাসনে বসে , মুসলমানরা নামাজে বসার আসনটাও বজ্রাসনের মত ( এখানে আসনটা মিলে যাচ্ছে )
৫) হিন্দুরা পুজার সময় ধুপ জালায়। আগরবাতি জালায় , গোলাপ পানি ব্যবহার করে ---- মুসলমানরা আগরবাতি গোলাপ পানি ব্যবহার করে ....। ( এখানে ও কিছু জিনিস মিলে যাচ্ছে )
৬) হিন্দুরা পরিষ্কার কাপড় পরে পুজা করে , মুসলমানরা ও পরিস্কার কাপড় পরে নামাজ পরে । ( এখানেও মিলে যাচ্ছে )
আমাদের প্রশ্ন তথা কথিত মমিন ভাইদের কাছে --- এই যে নামাজের অনেক কিছুর সাথে হিন্দুদের অনেক কিছু মিলে যাচ্ছে তাহোলে কি এই দুটোকে কি এক বলা যায় ? যদি না যায় তাহোলে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রার ভিতর হিন্দুদের পূজা বা শরিক করা খুজেন কি করে ।
এবার আসা যাক হজ্জের বিষয় নিয়ে
যে প্রথাগুলো আরবের পৌত্তলিক ধর্ম ছিল এবং এখন ইসলাম ধর্মে ও আছে
(১)কুরাইশরা ইসলাম পূর্ব কালে কাবা ঘরকে পবিত্র জ্ঞান করত তাদের একটা উপাসনালয় হিসাবে। দুর দুরান্ত থেকে লোকজন সেখানে আসত পবিত্র ধর্মীয় ভ্রমন উপলক্ষ্যে। তারা সেখানে এসেই প্রথমে কাবা ঘরের চার পাশে সাত বার ঘুরত। বর্তমানে যারাই হজ্জ বা ওমরা উপলক্ষ্যে কাবা ঘর পরিদর্শনে যায় তারা ঠিক একই ভাবে কাবা ঘরের চারপাশে সাত বার ঘোরে।
(২) এসময় তীর্থ যাত্রীরা তাদের মস্তক মুন্ডন করত, অর্থাৎ মাথা থেকে চুল ফেলে দিত। বর্তমানের হাজীরাও সেটা করে থাকে।
(৩) তারা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়া দৌড়ি করত , হাজীরাও সেটা করে।
(৪)তীর্থ যাত্রীরা কাবার দেব দেবীদের উদ্দেশ্যে পশু বলি দিত , মুসলমানরা পশু কুরবানী দেয়।
(৫) কুরাইশরা কাবার ভিতরকার কাল পাথরকে চুমু খেত, যা ইসলামে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে হজ্জ কালে।
এবার মমিনরা জবাব দিন মঙ্গল শোভা যাত্রা কেন হারাম ---- পৈতালিক কুরাইশদের তীর্থ যাত্রার কিছু কালচার এখন মুসলমানদের হজ্জের রিচুয়ালের সাথে মিলে যাচ্ছে তাই বলে কি ঐ দুটো জিনিস এক ( নাউযুবিল্লাহ ) ।
যদি এক না হয় তাহোলে মঙ্গল শোভা যাত্রা কেন হারাম ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২১