★একজন প্রশ্ন করেছিল - ✍️আশিন ধর্মপাল
"কেউ যদি আপনাদের পবিত্র ত্রিপিটক পুড়িয়ে ফেলে তাকে আপনি কি করবেন?"
তাকে বলেছিলাম "কিছুই করব না৷ কারণ আমাদের ধর্ম বইয়ের পাতায় থাকে না বা অক্ষরের মধ্যেও থাকে না৷"
—"তাহলে আপনাদের ধর্ম কোথায় থাকে?"
"আমাদের ধর্ম থাকে আচরণ এবং প্রতি পালনের মধ্যে৷"
—"যদি বই-ই না থাকে তাহলে জানবে কেমন করে?"
"ধর্ম জিনিসটি বই থেকে পাওয়ার নয়৷ ধর্ম জিনিসটি সম্পূর্ণ প্রকৃতিগত (মহামানব বুদ্ধ তিনি নিজেই এই ধর্ম লাভ করেছিলেন প্রকৃতি থেকে) যে অন্তর থেকে সৃষ্টির সকল প্রাণীর প্রতি করুণাশীল, অহিংসা পরায়ণ সেতো আপনা হতে এমনিতেই প্রকৃতির ধর্ম পালন করছে৷ যে নিজেকে অন্যায় অপকর্ম হতে দূরে রাখে, ঘৃনা, পরশ্রী কাতরতা হতে দূরে রাখে সেতো বুদ্ধের পথেই চলছে৷ সে উপরে যেটাই নিয়ে থাকুক অন্তরের ধর্মতো প্রকৃতির আসল ধর্মই ধারণ করে আছে৷ আর যা প্রকৃতির ধর্ম, পৃথিবীর প্রত্যেক জ্ঞাণীগণেই আচরণ করেন সেটাই যে বৌদ্ধ ধর্ম৷"
—"আপনাদের ধর্মে কি মানবের জীবন বিধান সম্পর্কে বলা আছে?"
"হ্যাঁ, তবে শুধু মানব নয়৷
সৃষ্টির সকল প্রাণীর প্রতি কেবল একটা বাক্যই বলেছেন৷ আর সেটা হলো "আত্মকে ও মনকে নিয়ন্ত্রন করো" কারণ যার মনটাই নিয়ন্ত্রিত তার সবকইছুই নিয়ন্ত্রিত৷ মনের অনিয়ন্ত্রনের কারণেই আকাশসম চাওয়া, অগ্নিসম ক্রোধ, হিংসা.....র আবির্ভাব৷ অনিয়ন্ত্রিত মনই সকল কুকর্মের জনক৷ যার মন নিয়ন্ত্রিত তিনি শান্ত, দান্ত৷ আর মনকে নিয়ন্ত্রনের উপায় জিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জ্ঞাত তিনিই ধীর পন্ডিত৷ সকল ধর্মের অগ্রগামী এই মন৷
তাই বৌদ্ধ ধর্মে ত্রিপিটক পোড়ানোর দায়ে কাউকে মৃত্যু দণ্ড এমনকি তিল পরিমানও আঘাত করা হয় না৷
যে প্রকৃতির ধর্মকে মানে, প্রকৃতির লীলাকে জ্ঞাণের সহিত গ্রহণ করে, প্রকৃতির রূপকে জ্ঞাণ চক্ষুতে বিচার বিশ্লেষণ করে, প্রকৃতির অসার অনিত্যতাকে দর্শন করে, প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা নিগুঢ় দুঃখকে দর্শন করে পরম সত্য জ্ঞাণকে অন্বেষণ করে সে বৌদ্ধ ধর্মকে আপনা হতেই পালন করে৷
যারা কেবল দৈহিক বিধি বিধানকেই ধর্ম মানেন তারা ঠিক সুন্দর ফলের মতো, যার কেবল খোলশটাই সুন্দর৷ ভিতরের অংশ মূল্যহীন কিংবা পোঁকা ধরা৷
সত্বার দৈহিক নয়, মানসিক সৌন্দর্যতাই প্রকৃত সৌন্দর্য৷
সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৫৮