অবশেষে সকাল হলো । দীর্ঘ রাত্রির পর একটি শীতের সকাল ।
আশপাশ কুয়াশা আর আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে ।
বেশকিছু দিন হলো দেশ জুড়ে শৈত্য প্রবাহ বইছে । হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু জনপদ ।
অনেকটা বাধ্য না হলে আজকাল কেউ বাইরে যেতে চায় না ।
ইতোমধ্যে ঠান্ডা প্রকোপজনিত রোগে মানুষ মরতে শুরু করেছে ।
ছোট্টমেয়ে 'মানসী' তার বাবা মায়ের সাথে শুয়ে আছে ।
যদিও অনেক আগেই তার ঘুম ভেঙেছে ।
দরজায় কেউ নক করেছে বলে মনে হলো ।
মাকে জানাতেই মা বললো কোনো ভিখারী হবে হয়তো ।
"কি যে পেয়েছে এরা ! সাঁঝ সকাল বুঝেনা ; হুট করে হাকডাক শুরু করে দেয় । তুমি শুয়ে থাকো ।"
তার এভাবে শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না ।
এদিকে দরজায় থেমে থেমে নক হচ্ছে-
ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্.............
ছোট্ট মেয়েটা নিঃশব্দে উঠে পড়ে ।
চেয়ার টেনে তাতে পা রেখে ছিটকিনিটা হাতের নাগালে নিয়ে আসে । দরজা খুলে দেয় ।
একটুখানি ফাঁক করে একটা অপরিচিত অবয়ব দেখতে পায় ।
ক্লান্ত জীর্ণশীর্ণ দেহে কুচকে যাওয়া চামড়া । চোখগুলো কোটরে ঢুকে গেছে । হাত-পা আর খালি গায়ের দিকে তাকালে মনে হয় একটা জীবন্ত কঙ্কাল যেন নিষ্পলক চেয়ে আছে তার দিকে ।
ছোট্ট মেয়েটা ভয় পেয়ে যায় ।
অবয়বটাকে উদ্দেশ্যে করে জিজ্ঞেস করে-
"কে তুমি ?"
অবয়বটা মুখ নাড়ে, যেন কিছু বলতে চায় ।
তার ক্ষীণ কন্ঠস্বরে শুনা যায়-
"আমি ক্ষুধা বলছি"
মেয়েটা জানতে চায়-
"কি চাই তোমার ?"
অবয়বটা বলে ওঠে-
"আমার শীতবস্ত্র চাই।"
('ক্ষুধা' অবয়বটি এদেশের দরিদ্র মানুষগুলোর পরিচয় বহন করে । দারিদ্রের যাঁতাকলে নিষ্পেশিত এই বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকট অভাব একটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যপার । ক্ষুধা যন্ত্রণায় কাতর হয়েও তারা পাথর চেপে দিনপাত করে ।
তাই শীত আসে এদের জন্য একধরনের বাড়তি যন্ত্রণার চাবুক হয়ে ।
ক্ষুধা যন্ত্রণার চেয়ে শীতের তীব্রতা কোনো অংশেই কম নয় বরং বেশিই হয়ে থাকে। )
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪