পড়ন্ত বিকাল। ফয়সাল সুইটিকে নিয়ে ধানমণ্ডি লেকে ঘুরতে এল। বিয়ের আগে তারা প্রায়ই এখানে আসতো। শুধু এখানে না, ঢাকা শহরে এমন কোন পার্ক নেই, সুইটিকে নিয়ে সে ঘুরেনি। আশ্চর্য! বিয়ের এক বছরের মাথায় ঘোরার আগ্রহ এত কমে গেল কেন? বড় আনন্দ হয়তো ছোট-খাটো আনন্দকে ম্লান করে দেয়! ফয়সাল গভীর আবেশে সুইটির উষ্ণ হাত দুটো ধরল। সুইটি রিনরিনে গলায় বলল,
বাইরে বের হলেই তুমি আমার হাত ধরো?
বাইরে অপরিচিত মানুষের ভীড়ে তোমাকে বেশি আপন মনে হয়।
সুইটি মিষ্টি করে হাসল। বলল, তাই? ঘরে আপন মনে হয় না?
ঘরে আসলে টের পাই না। মনে হয়- আপন হয়েই আছো।
ওহ, আচ্ছা! ঘরে তাই চেষ্টার দরকার নেই।
ওকে একটু রাগানোর জন্য ফয়সাল বলল,
হয়তো, যে পোষ মেনেই আছে, তাকে নতুন করে পোষ মানানোর দরকার কি?
ঠিক আছে। এখন থেকে ঘরে পোষ মানা থাকবো না। বুনো হয়ে যাবো।
বুনো হলে স্থান হবে বনে।
সুইটির মুখ কালো হয়ে গেল। রসিকতা হঠৎ সিরিয়াস টার্ন নিল। ফয়সালের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ইস্ হুট করে সে এমন একটা কথা কেন বলতে গেল!
সুইটি থমথমে মুখে বলল, আর পোষ মানা থাকলে স্থান হবে কোথায়? খাঁচায়? খাঁচার চেয়ে বন ভালো।
বন বিপদজ্জনক, খাঁচা নিরাপদ।
বুনো হলে বনের বিপদকে বিপদ মনে হবে না। মনে হবে-এটাই স্বাভাবিক।
খাঁচার ব্যাপারেও তাই। একদিন মনে হবে- খাঁচা মানেই বন্দী না, আদর-ভালবাসা।
সুইটি চিন্তিত মুখে বলল, কি জানি!
সুইটির মনের গুমোট ভাবটা কাটানোর জন্য ফয়সাল ওর নরম হাতে একটু জোরে টিপ দিল।
সুইটি ঝংকার দিয়ে উঠল,
হাত ছাড়ো। বাইরে এই ন্যাকামী আমার একদম পছন্দ না।
হাত ছাড়তে পারি এক শর্তে!
কোন শর্ত-টর্ত আমি মানতে পারবো না।
তাহলে হাতও ছাড়বো না।
আচ্ছা বল, তোমার শর্ত।
বাইরে বের হলে বছরে মাত্র দু’দিন তোমার হাত ধরবো। রাজী?
কোন দু’দিন?
যেদিন বৃষ্টি হবে এবং যেদিন বৃষ্টি হবে না।
সুইটি শব্দ করে হেসে উঠল। ফয়সালের মনে হল- এই মেয়ে ভুল করে ধুলোমাটির পৃথিবীতে চলে এসেছে। সংসারে নয়, স্বর্গেই তাকে বন্দি করে রাখা উচিত ছিল!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৯